ঢাকা ০৭:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে ৫ গুণ বেশি ফলন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪১:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ মে ২০২২
  • ১৫৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আমাদের রয়েছে ৪৫ লাখ হেক্টরের বেশি জলসীমা। বর্তমানে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা। ভাসমান বেডে বেশি জৈব সারের কারণে জমিতে প্রচলিত চাষের তুলনায় ফসল দ্রুত বাড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রায় ৩-৫ গুণ বেশি ফলন পাওয়া যায়।

জলাবদ্ধ এলাকায় বেড বা ধাপে সবজির চাষ করে এলাকায় সবজির চাহিদা মিটিয়ে স্বল্প সময়ে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় চাষিরা আগ্রহ প্রকাশ করেন। গোপালগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলাসহ আরও অনেক জেলা বর্ষা মৌসুমে বিরাট অংশ জলাবদ্ধ থাকে। সেখানে বছরে প্রায় ০৬ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এ সময়ে সেখানে কোনো কৃষি কাজ থাকে না, ফসল হয় না, মানুষ বেকার জীবন-যাপন করে।

জলমগ্ন কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ আগাছায় ঢাকা থাকে। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা নিজেদের প্রয়োজনে নিজেরাই উদ্ভাবন করেছেন ভাসমান কৃষি কার্যক্রম। এসব জেলার জলমগ্ন এলাকাগুলো কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ আগাছায় আচ্ছন্ন রয়েছে বিশেষ করে বিভিন্ন বিল, হাওড়, নালা, খাল ও মজা পুকুর। সেখানে এখন বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে স্তূপ করে প্রয়োজনীয় মাপের ভেলার মতো বেড তৈরি করে ভাসমান পদ্ধতিতে বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও মসলা উৎপাদন করছেন অনায়াসে।

বন্যা ও জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি এবং ক্ষেত্র বিশেষে আপদকালীন সময়ে আমন ধানের চারা উৎপাদন সম্প্রসারণে নতুন যুগের সূচনা করেছে। কৃষি সমৃদ্ধির নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। আস্তে আস্তে জলাবদ্ধ এলাকায় এ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হচ্ছে।এ বছর কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উদ্যোগে বন্যাকবলিত এলাকায় ভাসমান বেডে আমন ধানের বীজতলা করা হয়। এ যাবত অন্তত ৮০০টির বেশি ভাসমান বেডে আমন বীজতলা করা হয়েছে।

 

ভাসমান বেডে ধানের বীজতলা করলে পানিতে ডুবে থাকা জমি থেকে পানি নেমে যাবার পরপর কিংবা ডুবোজমি জেগে উঠার পর দেরি না করে ২০ থেকে ২৫ দিন বয়সী আমনের চারা মূল জমিতে লাগানো যায়। এতে সময় নষ্ট হয় না, সময়ের সাথে সমন্বয় করে আমন আবাদ করা যায়। আমন ফলনেও তেমন ব্যাঘাত ঘটে না। বৃষ্টি আর বন্যার কারণে যেখানে আমনের বীজতলা করা যায় না সেখানেও বর্ষা বা বন্যার পানি টান দিলে সময় নষ্ট না করে ভাসমান বেডে উৎপাদিত আমন ধানের চারা দিয়ে যথাসময়ে এসব জমিতে আমন আবাদ কর যায়।

এতে সময় সাশ্রয় হয়, বহুমুখী লাভ হয়। এ প্রযুক্তিটি ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভাসমান বেড তৈরির প্রধান উপকরণ কচুরিপানা। এছাড়া টোপাপানা, শেওলা, বিভিন্ন ধরনের জলজ আগাছা, দুলালিলতা, ধানের খড় বা ফসলের অবশিষ্টাংশ, আখের ছোবড়া, সডাস্ট ব্যবহার করে ভাসমান বেড তৈরি করা যায়। পরিপক্ব গাঢ় সবুজ রঙের বড় ও লম্বা কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করলে বেডের স্থায়িত্ব বেশি হয়।

যেখানে দুলালিলতা পাওয়া যায় না সেখানে দুলালিলতার পরিবর্তে পাটের তৈরি দড়ি দিয়ে বল মেডা তৈরির করা হয়। এছাড়া নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া চারা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।ভাসমান বীজতলার ক্ষেত্রে অন্য স্বাভাবিক বীজতলার মতোই বীজের হার প্রতি বর্গমিটারে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম হবে। এক্ষেত্রে এক বিঘা জমি রোপণের জন্য ৩৫ বর্গমিটার বা প্রায় ১ শতক ভাসমান বীজতলার চারা ব্যবহার করা যায়।

চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিনের হলে চারা উঠিয়ে মাঠে রোপণ করা যেতে পারে। এতে ধানের চারা উৎপাদনের জন্য আর মূল জমি ব্যবহার করতে হয় না। জমি ব্যবহার সাশ্রয়ী হয়। জেগে উঠা খালি জমিতে তাড়াতাড়ি কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এভাবে তৈরি চারা অন্যসব স্বাভাবিক চারার মতোই রোপণ করতে হবে এবং পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা অন্য স্বাভাবিক বীজতলার চারার মতোই হবে।

উৎপাদিত চারা অন্য সব স্বাভাবিক চারার মতোই ফলন দেয়। পানিতে ভাসমান থাকার জন্য এ বীজতলায় সাধারণত সেচের দরকার হয় না, তবে মাঝে মধ্যে প্রয়োজনে ছিটিয়ে পানি দেয়া যেতে পারে।সাধারণত বর্ষায় বন্যাকবলিত এলাকায় বীজতলা করার মতো জায়গা থাকে না। তাছাড়া বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চারা তৈরির প্রয়োজনীয় সময় থাকে না। কচুরিপানা ও জলজ আগাছা দিয়ে তৈরিকৃত বেডে অনায়াসে আপদকালীন সময়ে আমনের অংকুরিত বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করা যায়।

তবে বীজ ছিটানোর আগে বেডের ওপর ২-৩ সেন্টিমিটার পরিমাণ পুকুরের তলার কিংবা মাটির পাতলা কাদার প্রলেপ দিয়ে ভেজা বীজতলা তৈরি করতে হবে। বন্যার পানিতে যেন ভাসমান বেড ভেসে না যায় সেজন্য ভাসমান বীজতলার বেডকে দড়ির সাহায্যে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে হবে। ছিটানোর পর সতর্ক থাকতে হবে যেন পাখি বা অন্য কিছু বীজগুলো নষ্ট করতে না পারে।ভাসমান বেডে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে বলে সমতল ভূমির তুলনায় ঘন করে বীজ বপন বা চারা রোপণ করা যায়।

বন্যার শেষে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এসব ভাসমান বেড যখন মাটির ওপর বসে যায় তখন তা ভেঙে জমিতে বিছিয়ে বা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে সফলভাবে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা যায়।

এছাড়া, মৌসুম শেষে পচা কচুরিপানা ফল গাছের গোড়ায় সার হিসেবে ব্যবহার করে ফলের উৎপাদন বাড়ানো যায়। ফল গাছের গোড়ায় পচা কচুরিপানা ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো যায়। আমাদের দেশে চাষযোগ্য জমিতে যে পরিমাণে জৈবসার ব্যবহার করা দরকার সেভাবে দেয়া হচ্ছে না।

এ অবস্থায় দেশের নিম্ন অঞ্চলের জলাবদ্ধ এলাকার কচুরিপানা ব্যবহার করে সবজি ও মসলা উৎপাদন করলে নিরাপদ সবজি ও মসলা উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি জোগানের পাশাপাশি বর্ষাকালীন আমন ধানের চারা উৎপাদনসহ পচা কচুরিপানা জমিতে জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা ও উৎপাদন শক্তি বাড়বে, উৎপাদন বাড়বে এবং জৈবকৃষি বা পরিবেশবান্ধব কৃষি বাস্তবায়নে মাত্রিক অবদান রাখবে।

জমি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া যায়। পতিত জমি ব্যবহারে সুযোগ থাকে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে কৃষক ভাইয়েরা ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে বহুমাত্রিক কাজ করে কাক্সিক্ষত ফলন পেয়ে অধিকতর লাভবান হতে পারবেন। ভাসমান বেডে এ কার্যক্রমে সময় সাশ্রয় হবে, ফসলী জমি আগাম কাজে লাগানো যাবে, খরচও বাঁচবে, লাভ বেশি হবে এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি উৎপাদনে আরো বেশি সম্প্রসারিত হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি চাষে ৫ গুণ বেশি ফলন

আপডেট টাইম : ০৭:৪১:১৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। আমাদের রয়েছে ৪৫ লাখ হেক্টরের বেশি জলসীমা। বর্তমানে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা। ভাসমান বেডে বেশি জৈব সারের কারণে জমিতে প্রচলিত চাষের তুলনায় ফসল দ্রুত বাড়ে এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রায় ৩-৫ গুণ বেশি ফলন পাওয়া যায়।

জলাবদ্ধ এলাকায় বেড বা ধাপে সবজির চাষ করে এলাকায় সবজির চাহিদা মিটিয়ে স্বল্প সময়ে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় চাষিরা আগ্রহ প্রকাশ করেন। গোপালগঞ্জ, বরিশাল, পিরোজপুর, সাতক্ষীরা, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলাসহ আরও অনেক জেলা বর্ষা মৌসুমে বিরাট অংশ জলাবদ্ধ থাকে। সেখানে বছরে প্রায় ০৬ মাস পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এ সময়ে সেখানে কোনো কৃষি কাজ থাকে না, ফসল হয় না, মানুষ বেকার জীবন-যাপন করে।

জলমগ্ন কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ আগাছায় ঢাকা থাকে। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা নিজেদের প্রয়োজনে নিজেরাই উদ্ভাবন করেছেন ভাসমান কৃষি কার্যক্রম। এসব জেলার জলমগ্ন এলাকাগুলো কচুরিপানা ও অন্যান্য জলজ আগাছায় আচ্ছন্ন রয়েছে বিশেষ করে বিভিন্ন বিল, হাওড়, নালা, খাল ও মজা পুকুর। সেখানে এখন বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে স্তূপ করে প্রয়োজনীয় মাপের ভেলার মতো বেড তৈরি করে ভাসমান পদ্ধতিতে বছরব্যাপী বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও মসলা উৎপাদন করছেন অনায়াসে।

বন্যা ও জলাবদ্ধপ্রবণ এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি এবং ক্ষেত্র বিশেষে আপদকালীন সময়ে আমন ধানের চারা উৎপাদন সম্প্রসারণে নতুন যুগের সূচনা করেছে। কৃষি সমৃদ্ধির নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। আস্তে আস্তে জলাবদ্ধ এলাকায় এ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হচ্ছে।এ বছর কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উদ্যোগে বন্যাকবলিত এলাকায় ভাসমান বেডে আমন ধানের বীজতলা করা হয়। এ যাবত অন্তত ৮০০টির বেশি ভাসমান বেডে আমন বীজতলা করা হয়েছে।

 

ভাসমান বেডে ধানের বীজতলা করলে পানিতে ডুবে থাকা জমি থেকে পানি নেমে যাবার পরপর কিংবা ডুবোজমি জেগে উঠার পর দেরি না করে ২০ থেকে ২৫ দিন বয়সী আমনের চারা মূল জমিতে লাগানো যায়। এতে সময় নষ্ট হয় না, সময়ের সাথে সমন্বয় করে আমন আবাদ করা যায়। আমন ফলনেও তেমন ব্যাঘাত ঘটে না। বৃষ্টি আর বন্যার কারণে যেখানে আমনের বীজতলা করা যায় না সেখানেও বর্ষা বা বন্যার পানি টান দিলে সময় নষ্ট না করে ভাসমান বেডে উৎপাদিত আমন ধানের চারা দিয়ে যথাসময়ে এসব জমিতে আমন আবাদ কর যায়।

এতে সময় সাশ্রয় হয়, বহুমুখী লাভ হয়। এ প্রযুক্তিটি ইতোমধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভাসমান বেড তৈরির প্রধান উপকরণ কচুরিপানা। এছাড়া টোপাপানা, শেওলা, বিভিন্ন ধরনের জলজ আগাছা, দুলালিলতা, ধানের খড় বা ফসলের অবশিষ্টাংশ, আখের ছোবড়া, সডাস্ট ব্যবহার করে ভাসমান বেড তৈরি করা যায়। পরিপক্ব গাঢ় সবুজ রঙের বড় ও লম্বা কচুরিপানা দিয়ে বেড তৈরি করলে বেডের স্থায়িত্ব বেশি হয়।

যেখানে দুলালিলতা পাওয়া যায় না সেখানে দুলালিলতার পরিবর্তে পাটের তৈরি দড়ি দিয়ে বল মেডা তৈরির করা হয়। এছাড়া নারিকেলের ছোবড়ার গুঁড়া চারা তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়।ভাসমান বীজতলার ক্ষেত্রে অন্য স্বাভাবিক বীজতলার মতোই বীজের হার প্রতি বর্গমিটারে ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম হবে। এক্ষেত্রে এক বিঘা জমি রোপণের জন্য ৩৫ বর্গমিটার বা প্রায় ১ শতক ভাসমান বীজতলার চারা ব্যবহার করা যায়।

চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিনের হলে চারা উঠিয়ে মাঠে রোপণ করা যেতে পারে। এতে ধানের চারা উৎপাদনের জন্য আর মূল জমি ব্যবহার করতে হয় না। জমি ব্যবহার সাশ্রয়ী হয়। জেগে উঠা খালি জমিতে তাড়াতাড়ি কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন করে বেশি লাভবান হওয়া যায়। এভাবে তৈরি চারা অন্যসব স্বাভাবিক চারার মতোই রোপণ করতে হবে এবং পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা অন্য স্বাভাবিক বীজতলার চারার মতোই হবে।

উৎপাদিত চারা অন্য সব স্বাভাবিক চারার মতোই ফলন দেয়। পানিতে ভাসমান থাকার জন্য এ বীজতলায় সাধারণত সেচের দরকার হয় না, তবে মাঝে মধ্যে প্রয়োজনে ছিটিয়ে পানি দেয়া যেতে পারে।সাধারণত বর্ষায় বন্যাকবলিত এলাকায় বীজতলা করার মতো জায়গা থাকে না। তাছাড়া বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর চারা তৈরির প্রয়োজনীয় সময় থাকে না। কচুরিপানা ও জলজ আগাছা দিয়ে তৈরিকৃত বেডে অনায়াসে আপদকালীন সময়ে আমনের অংকুরিত বীজ বপন করে চারা উৎপাদন করা যায়।

তবে বীজ ছিটানোর আগে বেডের ওপর ২-৩ সেন্টিমিটার পরিমাণ পুকুরের তলার কিংবা মাটির পাতলা কাদার প্রলেপ দিয়ে ভেজা বীজতলা তৈরি করতে হবে। বন্যার পানিতে যেন ভাসমান বেড ভেসে না যায় সেজন্য ভাসমান বীজতলার বেডকে দড়ির সাহায্যে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখতে হবে। ছিটানোর পর সতর্ক থাকতে হবে যেন পাখি বা অন্য কিছু বীজগুলো নষ্ট করতে না পারে।ভাসমান বেডে উদ্ভিদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান প্রচুর পরিমাণে থাকে বলে সমতল ভূমির তুলনায় ঘন করে বীজ বপন বা চারা রোপণ করা যায়।

বন্যার শেষে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এসব ভাসমান বেড যখন মাটির ওপর বসে যায় তখন তা ভেঙে জমিতে বিছিয়ে বা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে সফলভাবে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করা যায়।

এছাড়া, মৌসুম শেষে পচা কচুরিপানা ফল গাছের গোড়ায় সার হিসেবে ব্যবহার করে ফলের উৎপাদন বাড়ানো যায়। ফল গাছের গোড়ায় পচা কচুরিপানা ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো যায়। আমাদের দেশে চাষযোগ্য জমিতে যে পরিমাণে জৈবসার ব্যবহার করা দরকার সেভাবে দেয়া হচ্ছে না।

এ অবস্থায় দেশের নিম্ন অঞ্চলের জলাবদ্ধ এলাকার কচুরিপানা ব্যবহার করে সবজি ও মসলা উৎপাদন করলে নিরাপদ সবজি ও মসলা উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি জোগানের পাশাপাশি বর্ষাকালীন আমন ধানের চারা উৎপাদনসহ পচা কচুরিপানা জমিতে জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করলে জমির উর্বরতা ও উৎপাদন শক্তি বাড়বে, উৎপাদন বাড়বে এবং জৈবকৃষি বা পরিবেশবান্ধব কৃষি বাস্তবায়নে মাত্রিক অবদান রাখবে।

জমি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া যায়। পতিত জমি ব্যবহারে সুযোগ থাকে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে কৃষক ভাইয়েরা ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে বহুমাত্রিক কাজ করে কাক্সিক্ষত ফলন পেয়ে অধিকতর লাভবান হতে পারবেন। ভাসমান বেডে এ কার্যক্রমে সময় সাশ্রয় হবে, ফসলী জমি আগাম কাজে লাগানো যাবে, খরচও বাঁচবে, লাভ বেশি হবে এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি উৎপাদনে আরো বেশি সম্প্রসারিত হবে।