দক্ষিণাঞ্চলে তুলার আবাদ ও উৎপাদনে আশার আলো দেখাচ্ছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃষিতে খাদ্যপণ্য উৎপাদনে সাড়ে ৭ লাখ টন উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে পাট আবাদ সম্প্রসারনের পরে এখন তুলাতেও আশার আলো দেখাচ্ছে। তুলা উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে বরগুনার আমতলীতে একটি সম্প্রসারন উপকেন্দ্র স্থাপন করে বরিশাল, ঝালকাঠী এবং পটুয়াখালী ও বরগুনার বিভিন্নস্থানে তুলা আবাদ কর্মসূচী গ্রহন করেছে। গত রবি মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রায় ২৫-৩০টি প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করে সরেজমিনে কৃষকদের হাতে কলমে তুলা আবাদ প্রযুক্তি ও বীজ হস্তান্তর করা হয়েছে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শামিম দক্ষিণাঞ্চলে তুলা আবাদ নিয়ে গবেষনা শুরু করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পসেও এবার গবেষনা খামারে তুলার আবাদ করেছেন ড. শামিম। তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক কৃষিবীদ মোঃ আক্তারুজ্জামান দক্ষিণাঞ্চলে তুলা উৎপাদনে আশাবাদ ব্যাক্ত করে বিষয়টি নিয়ে গবেষনা সহ বোর্ডের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন।
দেশে বর্তমানে প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে বছরে প্রায় ২ লাখ বেল তুলা উৎপাদন হয়ে থাকে। যা চহিদার মাত্র ২ ভাগেরও কম বলে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এ প্রেক্ষিতে কৃষি মন্ত্রনালয় দেশে তুলার আবাদী জমি ও উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। একইসাথে দেশে উচ্চ ফলনশীল তুলার আবাদী জমি বৃদ্ধির পাশাপাশি দক্ষিনাঞ্চলের বিশাল অনাবাদী জমিকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। দক্ষিণাঞ্চলে খরিপ-২ মৌসুমে আমান ধান ঘরে তোলার পরে বিপুল পরিমান জমি অনাবাদী থাকছে। এ অঞ্চলে গত খরিপ মৌসুমে ৭ লাখ ১২ হাজার ৬৯০ হেক্টরে আমন আবাদ হলেও রবি মৌসুমে বোরো আবাদের পরিমান ছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টরের কিছু বেশী। এর বাইরে শীতকালীন শাকসবজি, গম, ভুট্টা ও তরমুজ সহ আরো প্রায় ১ লাখ হেক্টরে নানা রবি ফসল আবাদ হলেও ৫ লাখ হেক্টরই অনাবাদী থাকছে।
কৃষি মন্ত্রালয় দক্ষিণাঞ্চলে রবি মৌসুমে বিপুল কৃষি জমি অনাবাদী থাকা নিয়ে যথেষ্ঠ উদ্বিগ্ন। এরই প্রেক্ষিতে তুলা উন্নয়ন বোর্ড দেশের দক্ষিনাঞ্চলে কম থেকে মাঝারী লবনাক্ত ও খরা এলাকায় তুলা চাষ সম্প্রসারনের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাইব্রিড জাতের তুলাচাষ শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচীর আওতায় গত বছর বরিশাল সদর ও বাবুগঞ্জ সহ ঝালকাঠীর গাবখান এলাকা এবং বরগুনার আমতলী সহ সন্নিহিত কিছু এলাকায় পরিক্ষামূলকভাবে তুলার আবাদ শুরু হয়েছে। গত বছর বরিশাল ও ঝালকাঠীতে বেশ কিছু জমিতে তুলা আবাদে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় পুরোটাই অর্জিত হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের মাঝারী লবনাক্ত জমিতে প্রদর্শনী প্লট স্থাপন করে কৃষকদের হাতে কলমে উৎপাদন কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে চাচ্ছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড ইতোমধ্যে লবন সহিষ্ঞু জাত সহ ২০টি উচ্চ ফলনশীল তুলার জাত উদ্ভাবন করেছে। বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আরো নুতন জাত উদ্ভাবন সহ চাষীদের কাছে আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তরের পাশাপাশি দেশে তুলার উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে কাজ করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
আর তারই ধারাবাহিকতায় বরিশাল ও খুলনা সহ উপক’লীয় উচু ভ’মি সহ নদী তীরবর্তি কম থেকে মাঝারী লবনাক্ত জমিতে তুলার আবাদ সম্প্রসারনে কর্মসূচী গ্রহন করেছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। এতেকরে আগামী ১০বছরে দেশে তুলার আবাদী জমির পরিমান আরো অন্তত দশ হাজার হেক্টর বৃদ্ধি করা সম্ভব বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর