ঢাকা ০৮:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিল্লা বিয়ে বনাম নারীর অপমান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৪৮:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ মে ২০১৬
  • ২৭৮ বার

হিল্লে বিয়ে মুসলিম ধর্মের একটি অন্যতম বিষয়। যদিও এ নিয়মটি বাংলাদেশ মুসলিম পারিবারিক আইনে কার্যকর নেই। কিন্তু নিজেকে সত্যিকার অর্থে মুসলিম বলে দাবি করলে হিল্লে বিয়ে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
বর-কনের মধ্যে তালাক হলে, অবশ্যি এভাবে না বলে বর তার বউকে তালাক দিলে, কেননা ইসলাম ধর্ম পুরুষকেই তালাক প্রদানের একচ্ছত্র অধিকার দিয়েছে, পরবর্তী সময়ে আবার এই বউকে নিয়ে সংসার করতে চাইলে অন্য এক পুরুষের সাথে বউটিকে বিয়ে দেয়ার পর তালাক হলে তবেই আগের বর তার বউকে পুনরায় বিয়ে করার মাধ্যমে বৈধ বউ হিসেবে ফিরে পেয়ে সংসার করতে পারবে।
বিষয়টিকে নারীরা অপমানজনক মনে করে। অপমানজনক মনে করে উল্লেখিত বরটিও। অপমানজনক মনে করে যে কোন মানবতাবাদী পুরুষও। বোধকরি সেজন্যেই হিল্লে বিয়েটি বাদ দিয়ে সরাসরি তালাকপ্রাপ্ত বউকে পুনর্বার বিয়ে করার মাধ্যমে সংসার করার সুযোগ পায় বরটি বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থায়।
তবে আমি অন্যরকম করে ভাবতে চাই। হিল্লে বিয়েটি ঝামেলাপূর্ণ হবার কারণে বাদ হতে পারে, অপমানজনক মনে করার কারণে নয়।
বিষয়টি এবার বিপরীত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি———
”ধরে নিলাম নারীর একচ্ছত্র অধিকার রয়েছে তালাক দেবার। নারী যদি তার বিবাহিত পুরুষটিকে তালাক দেয় এবং পরবর্তী সময়ে আবার ঐ পুরুষটিকে নিয়েই সংসার করতে চায় তাহলে উক্ত পুরুষকে অন্য কোন নারীর সাথে বিয়ে দিয়ে, নির্দিষ্ট সময় পর এই নারী পুরুষটিকে তালাক দিলে পূর্বোক্ত নারী তার পুরুষটিকে পুনর্বার বিয়ে করে সংসার করতে পারবে।”
ঠিক তখনো কিন্তু নারী এটাই ভাবতো যে, নারীকে অপমান করার জন্যেই এ ব্যবস্থা অথবা ভাবতো পুরুষটিকে অন্য নারীর সাথে সহবাসের এক চমৎকার সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে।
দুটি ব্যবস্থাতেই নারী অপমানিত বোধ করে অথবা অধিকারহীন মনে করে নিজকে।
প্রচলিত মুসলিম হিল্লে বিয়ে ব্যবস্থায় নারী এভাবে ভাবতে পারে না যে হিল্লে বিয়ের মাধ্যমে তাকে আরেকটি পুরুষের স্বাদ পাবার সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। অথচ ভাবতে পারতো। যেহেতু প্রচলিত হিল্লে বিয়ে ব্যবস্থায় নারী নিজেকে অপমানিত এবং অধিকার বঞ্চিত ভাবছে, তাহলে তো অবধারিতভাবেই বিপরীত ব্যবস্থায় নিজকে ভাগ্যবান ভাবার অবকাশ রয়েছে, তা সত্ত্বেও নারী তা ভাবতে পারছে না। কেন?
আসলে বিপরীত ব্যবস্থাটি নারীর দ্বিতীয় স্বাদ অর্থাৎ লাভ অথবা পুরুষটিকে তিরস্কার করা হলো এ হিসেবে ভাবতে পারবে না (যেমন করে প্রচলিত ব্যবস্থায় ভেবে নেয়া হয় পুরুষ তালাক দিয়ে ভুল করলো আবার সে ভুলের তিরস্কার হিসেবে নারীটিই প্রায়শ্চিত্ত করলো) কেন তার কারণ নারীকে তার শরীরকে কেবলই লুকোতে বলেছে ধর্ম, সমাজ এমনকি আইনও (ধর্ষণের সঙ্গা পড়লে বোঝা যায়)। নারীকে অবদমনের জন্যে উৎসাহিত করা হয়েছে ক্রমাগত।
নারীর জৈবিক চাহিদা এবং চাহিদা পূরণের বিষয়টিকে লজ্জার, বেহায়াপনার- এমনভাবে মগজে প্রতিস্থাপিত করে দেয়া হয়েছে। নারীকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। শিক্ষাহীন করে রাখা হয়েছে। মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার সবকটা পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
নারীকে ভাবতে শেখানো হয়েছে- তুমি শুধু নারী, অন্য যে কোন প্রাণীর থেকে সামান্য বেশী, তোমার অধিকার কম, তোমার জৈবিক চাহিদা পুরুষের জন্যে উপাদেয়-প্রয়োজনীয়, কিন্তু তোমার নিজের জন্যে লজ্জার। ঠিক এ কারণেই, নারীর এই আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণেই নারী প্রচলিত হিল্লে বিয়েটিকে লাভের না ভেবে অপমানের মনে করে। আর আমি নিশ্চিত বিপরীত ব্যবস্থায় পুরুষ হিল্লে বিয়েতে পুলক অনুভব করতো, অপমানজনক মনে করা তো দূরের কথা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হিল্লা বিয়ে বনাম নারীর অপমান

আপডেট টাইম : ১২:৪৮:২৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৭ মে ২০১৬

হিল্লে বিয়ে মুসলিম ধর্মের একটি অন্যতম বিষয়। যদিও এ নিয়মটি বাংলাদেশ মুসলিম পারিবারিক আইনে কার্যকর নেই। কিন্তু নিজেকে সত্যিকার অর্থে মুসলিম বলে দাবি করলে হিল্লে বিয়ে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
বর-কনের মধ্যে তালাক হলে, অবশ্যি এভাবে না বলে বর তার বউকে তালাক দিলে, কেননা ইসলাম ধর্ম পুরুষকেই তালাক প্রদানের একচ্ছত্র অধিকার দিয়েছে, পরবর্তী সময়ে আবার এই বউকে নিয়ে সংসার করতে চাইলে অন্য এক পুরুষের সাথে বউটিকে বিয়ে দেয়ার পর তালাক হলে তবেই আগের বর তার বউকে পুনরায় বিয়ে করার মাধ্যমে বৈধ বউ হিসেবে ফিরে পেয়ে সংসার করতে পারবে।
বিষয়টিকে নারীরা অপমানজনক মনে করে। অপমানজনক মনে করে উল্লেখিত বরটিও। অপমানজনক মনে করে যে কোন মানবতাবাদী পুরুষও। বোধকরি সেজন্যেই হিল্লে বিয়েটি বাদ দিয়ে সরাসরি তালাকপ্রাপ্ত বউকে পুনর্বার বিয়ে করার মাধ্যমে সংসার করার সুযোগ পায় বরটি বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থায়।
তবে আমি অন্যরকম করে ভাবতে চাই। হিল্লে বিয়েটি ঝামেলাপূর্ণ হবার কারণে বাদ হতে পারে, অপমানজনক মনে করার কারণে নয়।
বিষয়টি এবার বিপরীত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি———
”ধরে নিলাম নারীর একচ্ছত্র অধিকার রয়েছে তালাক দেবার। নারী যদি তার বিবাহিত পুরুষটিকে তালাক দেয় এবং পরবর্তী সময়ে আবার ঐ পুরুষটিকে নিয়েই সংসার করতে চায় তাহলে উক্ত পুরুষকে অন্য কোন নারীর সাথে বিয়ে দিয়ে, নির্দিষ্ট সময় পর এই নারী পুরুষটিকে তালাক দিলে পূর্বোক্ত নারী তার পুরুষটিকে পুনর্বার বিয়ে করে সংসার করতে পারবে।”
ঠিক তখনো কিন্তু নারী এটাই ভাবতো যে, নারীকে অপমান করার জন্যেই এ ব্যবস্থা অথবা ভাবতো পুরুষটিকে অন্য নারীর সাথে সহবাসের এক চমৎকার সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে।
দুটি ব্যবস্থাতেই নারী অপমানিত বোধ করে অথবা অধিকারহীন মনে করে নিজকে।
প্রচলিত মুসলিম হিল্লে বিয়ে ব্যবস্থায় নারী এভাবে ভাবতে পারে না যে হিল্লে বিয়ের মাধ্যমে তাকে আরেকটি পুরুষের স্বাদ পাবার সুযোগ তৈরি করে দেয়া হয়েছে। অথচ ভাবতে পারতো। যেহেতু প্রচলিত হিল্লে বিয়ে ব্যবস্থায় নারী নিজেকে অপমানিত এবং অধিকার বঞ্চিত ভাবছে, তাহলে তো অবধারিতভাবেই বিপরীত ব্যবস্থায় নিজকে ভাগ্যবান ভাবার অবকাশ রয়েছে, তা সত্ত্বেও নারী তা ভাবতে পারছে না। কেন?
আসলে বিপরীত ব্যবস্থাটি নারীর দ্বিতীয় স্বাদ অর্থাৎ লাভ অথবা পুরুষটিকে তিরস্কার করা হলো এ হিসেবে ভাবতে পারবে না (যেমন করে প্রচলিত ব্যবস্থায় ভেবে নেয়া হয় পুরুষ তালাক দিয়ে ভুল করলো আবার সে ভুলের তিরস্কার হিসেবে নারীটিই প্রায়শ্চিত্ত করলো) কেন তার কারণ নারীকে তার শরীরকে কেবলই লুকোতে বলেছে ধর্ম, সমাজ এমনকি আইনও (ধর্ষণের সঙ্গা পড়লে বোঝা যায়)। নারীকে অবদমনের জন্যে উৎসাহিত করা হয়েছে ক্রমাগত।
নারীর জৈবিক চাহিদা এবং চাহিদা পূরণের বিষয়টিকে লজ্জার, বেহায়াপনার- এমনভাবে মগজে প্রতিস্থাপিত করে দেয়া হয়েছে। নারীকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে রাখা হয়েছে। শিক্ষাহীন করে রাখা হয়েছে। মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার সবকটা পথ রুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
নারীকে ভাবতে শেখানো হয়েছে- তুমি শুধু নারী, অন্য যে কোন প্রাণীর থেকে সামান্য বেশী, তোমার অধিকার কম, তোমার জৈবিক চাহিদা পুরুষের জন্যে উপাদেয়-প্রয়োজনীয়, কিন্তু তোমার নিজের জন্যে লজ্জার। ঠিক এ কারণেই, নারীর এই আর্থ-সামাজিক অবস্থার কারণেই নারী প্রচলিত হিল্লে বিয়েটিকে লাভের না ভেবে অপমানের মনে করে। আর আমি নিশ্চিত বিপরীত ব্যবস্থায় পুরুষ হিল্লে বিয়েতে পুলক অনুভব করতো, অপমানজনক মনে করা তো দূরের কথা।