ঢাকা ১০:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরমের রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়ার উপায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৪:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২
  • ১৫৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গ্রীষ্মকালে কিছু রোগ দেখা দেয়। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও জীবনাচারে কিছু বদল আনলে এসব রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

অতিরিক্ত গরম সব সময়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত তাপ যে কোনো বয়সের বিশেষ করে শিশু ও যাদের বয়স ৬০-এর কাছাকাছি বা তার চেয়ে বেশি তাদের ঝুঁকি এ সময় সবচেয়ে বেশি থাকে।

গরমে শারীরিক অস্বস্তি ও নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। একটু সচেতন হলেই আমরা এসব রোগবালাই থেকে দূরে থাকতে পারি। তবে সময়মতো সচেতন না হলে অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গ্রীষ্মকালীন রোগ ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও মাদ্রাজের শ্রী বালাজী মেডিকেল ইউনিভর্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর ডা. এইচ, এন, সরকার।

প্রতিটি ঋতু তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে। প্রতিটির একটি কমনীয় এবং উপভোগ্য দিক রয়েছে, সেসঙ্গে একটি অস্বস্তিকর এবং ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। গ্রীষ্মকালও এর ব্যতিক্রম নয়। গ্রীষ্মের গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়া অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে আমরা এগুলো এড়াতে পারি।

গ্রীষ্মকালে শরীর অতিরিক্ত ঘামের মাধ্যমে তাপ নির্গত করে মূল তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা করে। ফলে শরীরে তরলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যাকে আমরা পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন বলি। পানিস্বল্পতার লক্ষণগুলো হলো-

সব সময় তৃষ্ণার্ত অনুভব করা

অল্প এবং গাঢ় আভাযুক্ত প্রস্রাব

মাথাব্যথা

দিশেহারা ভাব

নিয়মিত বিরতিতে প্রচুর পানি পান করে আমরা এই লক্ষণগুলো প্রতিরোধ করতে পারি। কচি ডাবের পানি বা ‘লস্যি’ও পান করতে পারি। তরমুজ, আঙুর, পেঁপে বা আমের মতো অনেক পানিযুক্ত ফল খেতে পারি যা আমাদের শরীরের পানিকে পুনরায় পূরণ করতে পারে।

ডিহাইড্রেশনের ফলে গ্রীষ্মকালে মাথাব্যথা একটি সাধারণ ব্যাপার, যা গ্রীষ্মকালীন মাথাব্যথা নামে পরিচিত। পানিস্বল্পতা পূরণ করে মাথাব্যাথা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

গরমে মৃদু থেকে তীব্র তাপজনিত রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এটি সূর্যালোক-সম্পাতের কাল এবং পরিশ্রমের মাত্রার ওপর নির্ভর করে। এগুলো হলো-

গরম তাপমাত্রায় অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে প্রচুর ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে লবণ (সোডিয়াম) বেরিয়ে যাওয়ার ফলে বেদনাদায়ক পেশি সংকোচন ঘটে। লবণবিহীন শুধু পানি পান করলে এটি আরও বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে শরীরের মূল তাপমাত্রা (core temperature) বৃদ্ধি পায় না। লক্ষণগুলো দেখা দিলে খাবার স্যালাইন খেলে দ্রুত উপশম হয়।

গরম আবহাওয়ায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে শরীরের বাইরের দিকের রক্তনালি প্রসারণের ফলে রক্তচাপ কমে যায়, ফলে মস্তিষ্কে কম রক্ত প্রবাহিত হয়, তখন কোনো ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। তখন ওই ব্যক্তিকে ছায়ার নিচে সরিয়ে নিতে হবে এবং ফ্যান চালিয়ে দিলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।

গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ পরিশ্রম করলে তাপ নিঃসরণ ঘটে। প্রচুর ঘাম এবং অপর্যাপ্ত লবণ ও পানি প্রতিস্থাপনের ফলে কোর (মলদ্বার) তাপমাত্রা ৩৭০ থেকে ৪০০-এর মধ্যে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা দেয়-

ত্বক গরম এবং ঘাম হয়

মাথাব্যথা, দুর্বলতা, ক্লান্তি, বিরক্তিভাব

ডিহাইড্রেশন, দ্রুত নাড়ির গতি

এ রকম পরিস্থিতিতে রোগীকে তাপ থেকে ছায়ায় নিয়ে যেতে হবে। কাপড়-চোপড় খুলে ঠান্ডা পানি স্প্রে করে ফ্যান ছেড়ে শীতল করতে হবে। পানিস্বল্পতা পূরণের জন্য খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে বা শিরায় স্যালাইন দিতে হবে। চিকিৎসা না করা হলে, তাপ নিঃসরণ হিট স্ট্রোকে পরিণত হতে পারে।

হেই ফিভার এক ধরনের অ্যালার্জি। এটি বিশেষত গ্রীষ্মের শুরুতে দেখা যায়, যখন ফুল ফোটে এবং পরাগ আপনার শরীরের সংস্পর্শে আসে। এর লক্ষণগুলো হলো-

নাক আটকে যাওয়া এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া

কাশি এবং হাঁচি

নাক দিয়ে পাতলা পানি পড়া

ক্লান্তি এবং জ্বর

বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করে পরাগের সংস্পর্শ এড়িয়ে এটি প্রতিরোধ করতে পারি। যদি এটি ঘটে, তবে ফেক্সোফেনাডিনের মতো অ্যান্টিহিস্টামিন দ্বারা উপসর্গগুলো হ্রাস করা যেতে পারে। আপনি যদি অ্যালার্জি প্রবণ হন, তবে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন, কিছু ওষুধ হাই ফিভার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

গ্রীষ্মের শুরুতে হাঁপানির আক্রমণ বেশি দেখা দেয় যখন ফুল ফোটে এবং ফুলের রেণু বাতাসে উড়ে বেড়ায়, বিশেষ করে অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে। আপনার যদি হাঁপানি থাকে আপনি বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করে পরাগের সংস্পর্শ এড়ানোর মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে পারেন।

ফ্লু গ্রীষ্মের দিনের একটি সাধারণ রোগ। দুইভাবে এটি হতে পারে। খাদ্য ও পানিবাহিত জীবাণুর মাধ্যমে।

গ্রীষ্মকালে খাদ্যে বিষক্রিয়া বেশি হয় যখন সালমোনেলা এবং ক্লোস্ট্রিডিয়ামের মতো কিছু বিপজ্জনক অণুজীব খাদ্যে বৃদ্ধি পায়।

খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ হলো-

পেট ব্যথা

বমি বমি ভাব এবং বমি

ডায়রিয়া

জ্বর

কম রান্না করা মাংস, কাঁচা শাকসবজি, মাছ এবং ফাস্ট ফুড এড়িয়ে এটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। যদি এটি ঘটে খাবার স্যালাইন খাবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা এবং টাইফয়েড

ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা এবং টাইফয়েড হলো পানিবাহিত রোগ যা গ্রীষ্মের মাসগুলোতে বেশি দেখা যায় এবং দূষিত খাবার বা পানি এড়িয়ে চলার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়।

ঘামাচি : গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে সাধারণ চর্মরোগগুলোর মধ্যে একটি হলো ঘামাচি। ঘামাচি বাচ্চাদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদের হয়। ত্বকে লাল ফুসকুড়ি হয় এবং এটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর হতে পারে এবং অতিরিক্ত চুলকানির কারণ হতে পারে। এ অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন একজন ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে ঘামে এবং ঘামে। ভেজা কাপড় ত্বকে ঘষতে থাকে যার ফলে ফুসকুড়ি এবং চুলকানি হয়। ঘামাচি থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে ত্বক শুষ্ক রাখতে হবে। ঘর্মাক্ত জামাকাপড় সময়মতো পরিবর্তন করুন এবং ত্বককে শুষ্ক রাখতে ভালো ঘামাচি পাউডার ব্যবহার করুন।

যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য সূর্যালোতে কেউ থাকেন, তখন ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি (UVA, UVB) সূক্ষ্ম ত্বকে প্রবেশ করে সানবার্ন নামক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এ অবস্থায় ত্বক শুষ্ক ও লাল হয়ে যায় এবং চুলকায়। সঙ্গে বমি বমি ভাব, জ্বর বা ঠান্ডা থাকতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে পোড়া গুরুতর, সেখানে ফোস্কা পড়তে পারে এবং অবস্থার উন্নতি হলে ত্বকে খোসা উঠতে পারে। রোদে বেরোনোর প্রায় ২০ মিনিট আগে একটি শক্তিশালী (এসপিএফসহ) ভালো সানস্ক্রিন লোশন প্রয়োগ করতে পারেন। এ ছাড়া ত্বকের আর্দ্রতা সঠিকভাবে বজায় রাখুন।

গ্রীষ্মে ব্রণ হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। কারণ শরীর ঠান্ডা রাখতে শরীরে বেশি ঘাম তৈরি করে। ঘামের অতিরিক্ত উৎপাদন সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলোকে ত্বককে আর্দ্র রাখতে আরও তেল উৎপাদন করতে উদ্দীপিত করে, ফলে সেবেসিয়াস গ্রন্থিমুখ আটকে যায় এবং ব্রণ সৃষ্টি করে। দিনে বারবার মুখ ধোয়া ত্বককে তেলমুক্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে। ফলে ব্রণ কম হবে।

 

হাম একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি, সর্দি এবং গায়ে লাল লাল দানা। শিশুরা সাধারণত হামে আক্রান্ত হয়। হামের টিকা এবং আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শ এড়ানোর মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যায়।

মাম্পস একটি ছোঁয়াচে এবং মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ, যা গ্রীষ্মকালে ব্যাপক আকার ধারণ করে। এটি সংক্রমিত ব্যক্তি যখন হাঁচি বা কাশি দেয় তখন প্রতিবেশীদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। কানের সামনের প্যারোটিড গ্রন্থিকে আক্রান্ত করে, যার ফলে গ্রন্থি ফুলে যায়, ব্যথা এবং জ্বর হয়। মাম্পস ভ্যাকসিন এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ানোর মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যায়।

গ্রীষ্মের অন্যতম মারাত্মক রোগ হলো চিকেন পক্স। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। জলবসন্তে সারা শরীরে ছোট ছোট পানিভর্তি ফোস্কা দেখা দেয়। জলবসন্ত সাধারণত ছোট শিশুদের আক্রান্ত করে; কখনো কখনো প্রাপ্তবয়স্ক লোক, ডায়াবেটিসের রোগী, ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের হতে পারে। এ সংক্রামক রোগটি বায়ুবাহিত কণার মাধ্যমে ছড়ায় যা সংক্রমিত ব্যক্তি কাশি বা হাঁচি দিলে বা সরাসরি সংক্রমিত ব্যক্তির সহচার্যে এলে ছড়ায়। কখনো কখনো সংক্রমণ সুপ্ত থাকতে পারে যতক্ষণ না সংক্রমণ করার জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া তৈরি হয়।

চিকেনপক্সের ভ্যাকসিন নিয়ে এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সহচার্য এড়িয়ে জলবসন্ত প্রতিরোধ করা সম্ভব।

মশার কামড়ে সংক্রমিত রোগ (Infections caused by mosquito bite)

মশার কামড়ে সংক্রমিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়াও গ্রীষ্মকালে বেশি দেখা যায়, কারণ এটি মশার প্রজনন মৌসুম। মশা নিধন, তাদের প্রজনন স্থান অপসারণ এবং মশার কামড় এড়ানোর মাধ্যমে এ রোগগুলো প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

চোখ ব্যথা বা কনজাক্টিভাইটিস হলো ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা অ্যালার্জির ফল, যা কনজাক্টিভার প্রদাহের সৃষ্টি করে এবং ৪-৭ দিন থাকে। চোখ ব্যথা করে এবং লাল হয়ে যায়। এগুলো সাধারণত ভাইরাস দিয়ে হয় এবং এটি একটি সংক্রামক রোগ। যদি পরিবারের এক ব্যক্তির এটি হয়, তবে সবারই হতে পারে। চোখ স্পর্শ করার আগে হাত ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ। দিনে কয়েকবার ঠান্ডা পানি দিয়ে আক্রান্ত চোখ ধুলে আরাম পাওয়া যায়।

গ্রীষ্মকালীন বিষণ্নতা (Summer depression)

জলবায়ুর পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কিছু মানুষের মেজাজ পরিবর্তন হতে পারে। কিছু কিছু মানুষ গ্রীষ্মকালে বিচ্ছিন্নতায় ভোগে। তাপমাত্রা কমে গেলে বর্ষা এলে বিষণ্নতা কেটে যায়।

অতিরিক্ত গরম থেকে জন্ডিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি

জন্ডিস আরেকটি মারাত্মক রোগ যা গ্রীষ্মের মাসগুলোতে বেশি দেখা যায়। দূষিত খাবার বা জল গ্রহণ করলে যে কারও জন্ডিস হতে পারে। হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাস দূষিত খাবার বা জল-এর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং সংক্রমিত ব্যক্তির মল দ্বারা পানি বা খাবার দূষিত হয়। জন্ডিস গুরুতর হয়ে উঠতে পারে এবং জীবনকে বিপন্ন করতে পারে। জন্ডিসের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

ত্বক এবং চোখের হলদে ভাব

হলুদ রঙের প্রস্রাব

চুলকানি ইত্যাদি।

এ সংক্রমণ এড়াতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো এ ধরনের সংক্রমণের সংস্পর্শ এড়ানো অর্থাৎ দূষিত খাবার বা পানি এড়ানো। হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করুন।

গরমে হিট স্ট্রোক থেকে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে

যখন শরীরের মূল তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে বেড়ে যায়, তখন হিটস্ট্রোক ঘটে এবং এটি একটি জীবন হুমকির অবস্থা। হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো-

রোগীর ত্বক খুব গরম অনুভূত হয় এবং ঘাম থাকে না

মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি

মাংসপেশি কাঁপুনি এবং বিভ্রান্তি

উত্তেজিত বা জ্ঞান হারানো।

হিটস্ট্রোক একটি জরুরি অবস্থা এবং এর মৃত্যুর হার বেশি। তাই অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

প্রতিরোধ : যতটা সম্ভব, দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ গরমের সময় বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন। যদি বাইরে যেতে হয়, তবে হলকা কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে বের হবেন। প্রখর রোদে ঘোরাঘুরির পরিবর্তে ঠান্ডা জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন।

এসব সমস্যা থেকে কীভাবে নিজেকে দূরে রাখবেন

যেহেতু গ্রীষ্মকাল চলছে, সতর্ক থাকুন এবং উষ্ণ ও গরম আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। নিরাপদ গ্রীষ্মের জন্য অতিরিক্ত তাপের বিরুদ্ধে নিম্নবর্ণিত উপায়গুলো অবলম্বন করুন।

প্রচুর পানি পান করুন এবং নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে বাড়িতে এবং ভ্রমণের সময় ডাবের জল এবং লেবুর শরবত পান করুন। সারা দিনে কমপক্ষে ১০-১২ গ্লাস তরল পান করুন।

ঢিলেঢালা, হালকা রঙের পোশাক পরুন। কারণ গাঢ় রঙের পোশাক বেশি তাপ শোষণ করে এবং আঁটসাঁট পোশাক আপনার শরীরকে ঘামতে দেয় না। হালকা এবং শোষণকারী সূতার পোশাক ব্যবহার করুন।

ভ্রমণের সময় বা বাহিরের কাজকর্মের সময় ভারী পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন; প্রয়োজনে ছায়াস্থানে বিশ্রাম করুন।

শিশুকে কখনোই প্রখর সূর্যের সংস্পর্শে থাকা গাড়িতে বসে থাকতে দেবেন না এবং ছায়ার নিচে গাড়ি পার্ক করার চেষ্টা করুন।

সূর্যের রশ্মির কারণে রোদে পোড়া হলে আরামের জন্য বরফের প্যাক এবং ব্যথা উপশমকারী মলম প্রয়োগ করুন।

হাত সঠিকভাবে ধুয়ে নিন ও খাবার তৈরি এবং পরিবেশন করার সময় সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। খাদ্য ও পানিবাহিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কোনো খাদ্যদ্রব্য স্পর্শ বা রান্না করার আগে হাত ধুয়ে নিন। যখনই ওয়াশরুমে যাবেন তখন হাত ধুয়ে নিন।

গ্রীষ্মের দিনে আধাসিদ্ধ খাবার এবং রাস্তার খাবার খাবেন না। তরমুজ, শসা, আখ এবং আমের মতো তাজা রসালো ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন।

দুপুরের রোদের সময় বাড়ির জানালা বন্ধ রাখুন, যাতে তাপ বাড়ির ভেতরে আটকে না যায়।

খাবার স্যালাইন (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন)-এর মজুত হাতে রাখুন। এগুলো সহজেই কিনতে পাওয়া যায়। যদি না পাওয়া যায়, আপনি নিজে এগুলো বাড়িতে তৈরি করতে পারেন।

চোখের ব্যথা এড়াতে এবং সংক্রমণের বিস্তার এড়াতে, হাত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখুন, ব্যথা কমাতে পরিষ্কার জল দিয়ে চোখ বারবার ধুয়ে নিন।

MMR (হাম, মাম্পস, রুবেলা) টিকা দিয়ে এদের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আপনি বা আপনার সন্তানকে এ ৩টি সংক্রমণের বিরুদ্ধে টিকা দেয়া না থাকলে, দ্রুততম সময়ে টিকা নেওয়া উচিত।

মশা তাড়ানোর ওষুধ প্রয়োগ করুন এবং মশার প্রজনন স্থান এড়িয়ে চলুন।

কমপক্ষে ১৫ এসপিএফ (সান প্রোটেক্টর ফ্যাক্টর)সহ সানস্ক্রিন প্রয়োগ করে ত্বককে ঢেকে রাখুন এবং সুরক্ষিত রাখুন।

খুব বেশি সময় সূর্যের তাপ-এক্সপোজার এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে দুপুর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত, যখন সূর্যের রশ্মি সরাসরি লম্বাভাবে পড়ে।

ভ্রমণের সময় বা বাহিরের কার্যকলাপের জন্য সানগ্লাসসহ ক্যাপ পরে সূর্যের তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। টুপি এবং সানগ্লাস ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মিকে মুখের সংবেদনশীল স্থানে আঘাত করা থেকে বাধা দেবে এবং মুখকে সতেজ ও বলিরেখামুক্ত রাখবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

গরমের রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়ার উপায়

আপডেট টাইম : ১০:৪৪:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গ্রীষ্মকালে কিছু রোগ দেখা দেয়। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন ও জীবনাচারে কিছু বদল আনলে এসব রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

অতিরিক্ত গরম সব সময়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত তাপ যে কোনো বয়সের বিশেষ করে শিশু ও যাদের বয়স ৬০-এর কাছাকাছি বা তার চেয়ে বেশি তাদের ঝুঁকি এ সময় সবচেয়ে বেশি থাকে।

গরমে শারীরিক অস্বস্তি ও নানা রোগ-ব্যাধি দেখা দেয়। একটু সচেতন হলেই আমরা এসব রোগবালাই থেকে দূরে থাকতে পারি। তবে সময়মতো সচেতন না হলে অনেক সময় তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গ্রীষ্মকালীন রোগ ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও মাদ্রাজের শ্রী বালাজী মেডিকেল ইউনিভর্সিটির ভিজিটিং প্রফেসর ডা. এইচ, এন, সরকার।

প্রতিটি ঋতু তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আসে। প্রতিটির একটি কমনীয় এবং উপভোগ্য দিক রয়েছে, সেসঙ্গে একটি অস্বস্তিকর এবং ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। গ্রীষ্মকালও এর ব্যতিক্রম নয়। গ্রীষ্মের গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়া অনেক স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে আমরা এগুলো এড়াতে পারি।

গ্রীষ্মকালে শরীর অতিরিক্ত ঘামের মাধ্যমে তাপ নির্গত করে মূল তাপমাত্রাকে স্বাভাবিক সীমার মধ্যে রাখার চেষ্টা করে। ফলে শরীরে তরলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে, যাকে আমরা পানিস্বল্পতা বা ডিহাইড্রেশন বলি। পানিস্বল্পতার লক্ষণগুলো হলো-

সব সময় তৃষ্ণার্ত অনুভব করা

অল্প এবং গাঢ় আভাযুক্ত প্রস্রাব

মাথাব্যথা

দিশেহারা ভাব

নিয়মিত বিরতিতে প্রচুর পানি পান করে আমরা এই লক্ষণগুলো প্রতিরোধ করতে পারি। কচি ডাবের পানি বা ‘লস্যি’ও পান করতে পারি। তরমুজ, আঙুর, পেঁপে বা আমের মতো অনেক পানিযুক্ত ফল খেতে পারি যা আমাদের শরীরের পানিকে পুনরায় পূরণ করতে পারে।

ডিহাইড্রেশনের ফলে গ্রীষ্মকালে মাথাব্যথা একটি সাধারণ ব্যাপার, যা গ্রীষ্মকালীন মাথাব্যথা নামে পরিচিত। পানিস্বল্পতা পূরণ করে মাথাব্যাথা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

গরমে মৃদু থেকে তীব্র তাপজনিত রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এটি সূর্যালোক-সম্পাতের কাল এবং পরিশ্রমের মাত্রার ওপর নির্ভর করে। এগুলো হলো-

গরম তাপমাত্রায় অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে প্রচুর ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে লবণ (সোডিয়াম) বেরিয়ে যাওয়ার ফলে বেদনাদায়ক পেশি সংকোচন ঘটে। লবণবিহীন শুধু পানি পান করলে এটি আরও বৃদ্ধি পায়। এ ক্ষেত্রে শরীরের মূল তাপমাত্রা (core temperature) বৃদ্ধি পায় না। লক্ষণগুলো দেখা দিলে খাবার স্যালাইন খেলে দ্রুত উপশম হয়।

গরম আবহাওয়ায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে শরীরের বাইরের দিকের রক্তনালি প্রসারণের ফলে রক্তচাপ কমে যায়, ফলে মস্তিষ্কে কম রক্ত প্রবাহিত হয়, তখন কোনো ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। তখন ওই ব্যক্তিকে ছায়ার নিচে সরিয়ে নিতে হবে এবং ফ্যান চালিয়ে দিলে রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।

গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় দীর্ঘক্ষণ পরিশ্রম করলে তাপ নিঃসরণ ঘটে। প্রচুর ঘাম এবং অপর্যাপ্ত লবণ ও পানি প্রতিস্থাপনের ফলে কোর (মলদ্বার) তাপমাত্রা ৩৭০ থেকে ৪০০-এর মধ্যে বৃদ্ধি পায়, যার ফলে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো দেখা দেয়-

ত্বক গরম এবং ঘাম হয়

মাথাব্যথা, দুর্বলতা, ক্লান্তি, বিরক্তিভাব

ডিহাইড্রেশন, দ্রুত নাড়ির গতি

এ রকম পরিস্থিতিতে রোগীকে তাপ থেকে ছায়ায় নিয়ে যেতে হবে। কাপড়-চোপড় খুলে ঠান্ডা পানি স্প্রে করে ফ্যান ছেড়ে শীতল করতে হবে। পানিস্বল্পতা পূরণের জন্য খাবার স্যালাইন খেতে দিতে হবে বা শিরায় স্যালাইন দিতে হবে। চিকিৎসা না করা হলে, তাপ নিঃসরণ হিট স্ট্রোকে পরিণত হতে পারে।

হেই ফিভার এক ধরনের অ্যালার্জি। এটি বিশেষত গ্রীষ্মের শুরুতে দেখা যায়, যখন ফুল ফোটে এবং পরাগ আপনার শরীরের সংস্পর্শে আসে। এর লক্ষণগুলো হলো-

নাক আটকে যাওয়া এবং চোখ দিয়ে পানি পড়া

কাশি এবং হাঁচি

নাক দিয়ে পাতলা পানি পড়া

ক্লান্তি এবং জ্বর

বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করে পরাগের সংস্পর্শ এড়িয়ে এটি প্রতিরোধ করতে পারি। যদি এটি ঘটে, তবে ফেক্সোফেনাডিনের মতো অ্যান্টিহিস্টামিন দ্বারা উপসর্গগুলো হ্রাস করা যেতে পারে। আপনি যদি অ্যালার্জি প্রবণ হন, তবে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন, কিছু ওষুধ হাই ফিভার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।

গ্রীষ্মের শুরুতে হাঁপানির আক্রমণ বেশি দেখা দেয় যখন ফুল ফোটে এবং ফুলের রেণু বাতাসে উড়ে বেড়ায়, বিশেষ করে অ্যালার্জিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে। আপনার যদি হাঁপানি থাকে আপনি বাইরে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করে পরাগের সংস্পর্শ এড়ানোর মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে পারেন।

ফ্লু গ্রীষ্মের দিনের একটি সাধারণ রোগ। দুইভাবে এটি হতে পারে। খাদ্য ও পানিবাহিত জীবাণুর মাধ্যমে।

গ্রীষ্মকালে খাদ্যে বিষক্রিয়া বেশি হয় যখন সালমোনেলা এবং ক্লোস্ট্রিডিয়ামের মতো কিছু বিপজ্জনক অণুজীব খাদ্যে বৃদ্ধি পায়।

খাদ্যে বিষক্রিয়ার লক্ষণ হলো-

পেট ব্যথা

বমি বমি ভাব এবং বমি

ডায়রিয়া

জ্বর

কম রান্না করা মাংস, কাঁচা শাকসবজি, মাছ এবং ফাস্ট ফুড এড়িয়ে এটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। যদি এটি ঘটে খাবার স্যালাইন খাবেন এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।

ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা এবং টাইফয়েড

ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা এবং টাইফয়েড হলো পানিবাহিত রোগ যা গ্রীষ্মের মাসগুলোতে বেশি দেখা যায় এবং দূষিত খাবার বা পানি এড়িয়ে চলার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়।

ঘামাচি : গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে সাধারণ চর্মরোগগুলোর মধ্যে একটি হলো ঘামাচি। ঘামাচি বাচ্চাদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদের হয়। ত্বকে লাল ফুসকুড়ি হয় এবং এটি অত্যন্ত অস্বস্তিকর হতে পারে এবং অতিরিক্ত চুলকানির কারণ হতে পারে। এ অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন একজন ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে ঘামে এবং ঘামে। ভেজা কাপড় ত্বকে ঘষতে থাকে যার ফলে ফুসকুড়ি এবং চুলকানি হয়। ঘামাচি থেকে নিষ্কৃতি পেতে হলে ত্বক শুষ্ক রাখতে হবে। ঘর্মাক্ত জামাকাপড় সময়মতো পরিবর্তন করুন এবং ত্বককে শুষ্ক রাখতে ভালো ঘামাচি পাউডার ব্যবহার করুন।

যদি দীর্ঘ সময়ের জন্য সূর্যালোতে কেউ থাকেন, তখন ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি (UVA, UVB) সূক্ষ্ম ত্বকে প্রবেশ করে সানবার্ন নামক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। এ অবস্থায় ত্বক শুষ্ক ও লাল হয়ে যায় এবং চুলকায়। সঙ্গে বমি বমি ভাব, জ্বর বা ঠান্ডা থাকতে পারে। যেসব ক্ষেত্রে পোড়া গুরুতর, সেখানে ফোস্কা পড়তে পারে এবং অবস্থার উন্নতি হলে ত্বকে খোসা উঠতে পারে। রোদে বেরোনোর প্রায় ২০ মিনিট আগে একটি শক্তিশালী (এসপিএফসহ) ভালো সানস্ক্রিন লোশন প্রয়োগ করতে পারেন। এ ছাড়া ত্বকের আর্দ্রতা সঠিকভাবে বজায় রাখুন।

গ্রীষ্মে ব্রণ হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। কারণ শরীর ঠান্ডা রাখতে শরীরে বেশি ঘাম তৈরি করে। ঘামের অতিরিক্ত উৎপাদন সেবেসিয়াস গ্রন্থিগুলোকে ত্বককে আর্দ্র রাখতে আরও তেল উৎপাদন করতে উদ্দীপিত করে, ফলে সেবেসিয়াস গ্রন্থিমুখ আটকে যায় এবং ব্রণ সৃষ্টি করে। দিনে বারবার মুখ ধোয়া ত্বককে তেলমুক্ত রাখতে সাহায্য করতে পারে। ফলে ব্রণ কম হবে।

 

হাম একটি ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, কাশি, সর্দি এবং গায়ে লাল লাল দানা। শিশুরা সাধারণত হামে আক্রান্ত হয়। হামের টিকা এবং আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শ এড়ানোর মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যায়।

মাম্পস একটি ছোঁয়াচে এবং মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ, যা গ্রীষ্মকালে ব্যাপক আকার ধারণ করে। এটি সংক্রমিত ব্যক্তি যখন হাঁচি বা কাশি দেয় তখন প্রতিবেশীদের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। কানের সামনের প্যারোটিড গ্রন্থিকে আক্রান্ত করে, যার ফলে গ্রন্থি ফুলে যায়, ব্যথা এবং জ্বর হয়। মাম্পস ভ্যাকসিন এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়ানোর মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যায়।

গ্রীষ্মের অন্যতম মারাত্মক রোগ হলো চিকেন পক্স। এটি একটি ভাইরাসজনিত রোগ। জলবসন্তে সারা শরীরে ছোট ছোট পানিভর্তি ফোস্কা দেখা দেয়। জলবসন্ত সাধারণত ছোট শিশুদের আক্রান্ত করে; কখনো কখনো প্রাপ্তবয়স্ক লোক, ডায়াবেটিসের রোগী, ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের হতে পারে। এ সংক্রামক রোগটি বায়ুবাহিত কণার মাধ্যমে ছড়ায় যা সংক্রমিত ব্যক্তি কাশি বা হাঁচি দিলে বা সরাসরি সংক্রমিত ব্যক্তির সহচার্যে এলে ছড়ায়। কখনো কখনো সংক্রমণ সুপ্ত থাকতে পারে যতক্ষণ না সংক্রমণ করার জন্য উপযুক্ত আবহাওয়া তৈরি হয়।

চিকেনপক্সের ভ্যাকসিন নিয়ে এবং সংক্রমিত ব্যক্তির সহচার্য এড়িয়ে জলবসন্ত প্রতিরোধ করা সম্ভব।

মশার কামড়ে সংক্রমিত রোগ (Infections caused by mosquito bite)

মশার কামড়ে সংক্রমিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়াও গ্রীষ্মকালে বেশি দেখা যায়, কারণ এটি মশার প্রজনন মৌসুম। মশা নিধন, তাদের প্রজনন স্থান অপসারণ এবং মশার কামড় এড়ানোর মাধ্যমে এ রোগগুলো প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

চোখ ব্যথা বা কনজাক্টিভাইটিস হলো ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ বা অ্যালার্জির ফল, যা কনজাক্টিভার প্রদাহের সৃষ্টি করে এবং ৪-৭ দিন থাকে। চোখ ব্যথা করে এবং লাল হয়ে যায়। এগুলো সাধারণত ভাইরাস দিয়ে হয় এবং এটি একটি সংক্রামক রোগ। যদি পরিবারের এক ব্যক্তির এটি হয়, তবে সবারই হতে পারে। চোখ স্পর্শ করার আগে হাত ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ। দিনে কয়েকবার ঠান্ডা পানি দিয়ে আক্রান্ত চোখ ধুলে আরাম পাওয়া যায়।

গ্রীষ্মকালীন বিষণ্নতা (Summer depression)

জলবায়ুর পরিবর্তন এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কিছু মানুষের মেজাজ পরিবর্তন হতে পারে। কিছু কিছু মানুষ গ্রীষ্মকালে বিচ্ছিন্নতায় ভোগে। তাপমাত্রা কমে গেলে বর্ষা এলে বিষণ্নতা কেটে যায়।

অতিরিক্ত গরম থেকে জন্ডিস হওয়ার আশঙ্কা বেশি

জন্ডিস আরেকটি মারাত্মক রোগ যা গ্রীষ্মের মাসগুলোতে বেশি দেখা যায়। দূষিত খাবার বা জল গ্রহণ করলে যে কারও জন্ডিস হতে পারে। হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাস দূষিত খাবার বা জল-এর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে এবং সংক্রমিত ব্যক্তির মল দ্বারা পানি বা খাবার দূষিত হয়। জন্ডিস গুরুতর হয়ে উঠতে পারে এবং জীবনকে বিপন্ন করতে পারে। জন্ডিসের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-

ত্বক এবং চোখের হলদে ভাব

হলুদ রঙের প্রস্রাব

চুলকানি ইত্যাদি।

এ সংক্রমণ এড়াতে সবচেয়ে কার্যকরী উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো এ ধরনের সংক্রমণের সংস্পর্শ এড়ানো অর্থাৎ দূষিত খাবার বা পানি এড়ানো। হেপাটাইটিস ‘এ’ ভাইরাসের টিকা গ্রহণ করুন।

গরমে হিট স্ট্রোক থেকে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে

যখন শরীরের মূল তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে বেড়ে যায়, তখন হিটস্ট্রোক ঘটে এবং এটি একটি জীবন হুমকির অবস্থা। হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো-

রোগীর ত্বক খুব গরম অনুভূত হয় এবং ঘাম থাকে না

মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি

মাংসপেশি কাঁপুনি এবং বিভ্রান্তি

উত্তেজিত বা জ্ঞান হারানো।

হিটস্ট্রোক একটি জরুরি অবস্থা এবং এর মৃত্যুর হার বেশি। তাই অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

প্রতিরোধ : যতটা সম্ভব, দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ গরমের সময় বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন। যদি বাইরে যেতে হয়, তবে হলকা কাপড় দিয়ে শরীর ঢেকে বের হবেন। প্রখর রোদে ঘোরাঘুরির পরিবর্তে ঠান্ডা জায়গায় থাকার চেষ্টা করুন।

এসব সমস্যা থেকে কীভাবে নিজেকে দূরে রাখবেন

যেহেতু গ্রীষ্মকাল চলছে, সতর্ক থাকুন এবং উষ্ণ ও গরম আবহাওয়ার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। নিরাপদ গ্রীষ্মের জন্য অতিরিক্ত তাপের বিরুদ্ধে নিম্নবর্ণিত উপায়গুলো অবলম্বন করুন।

প্রচুর পানি পান করুন এবং নিজেকে হাইড্রেটেড রাখতে বাড়িতে এবং ভ্রমণের সময় ডাবের জল এবং লেবুর শরবত পান করুন। সারা দিনে কমপক্ষে ১০-১২ গ্লাস তরল পান করুন।

ঢিলেঢালা, হালকা রঙের পোশাক পরুন। কারণ গাঢ় রঙের পোশাক বেশি তাপ শোষণ করে এবং আঁটসাঁট পোশাক আপনার শরীরকে ঘামতে দেয় না। হালকা এবং শোষণকারী সূতার পোশাক ব্যবহার করুন।

ভ্রমণের সময় বা বাহিরের কাজকর্মের সময় ভারী পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন; প্রয়োজনে ছায়াস্থানে বিশ্রাম করুন।

শিশুকে কখনোই প্রখর সূর্যের সংস্পর্শে থাকা গাড়িতে বসে থাকতে দেবেন না এবং ছায়ার নিচে গাড়ি পার্ক করার চেষ্টা করুন।

সূর্যের রশ্মির কারণে রোদে পোড়া হলে আরামের জন্য বরফের প্যাক এবং ব্যথা উপশমকারী মলম প্রয়োগ করুন।

হাত সঠিকভাবে ধুয়ে নিন ও খাবার তৈরি এবং পরিবেশন করার সময় সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন। খাদ্য ও পানিবাহিত সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কোনো খাদ্যদ্রব্য স্পর্শ বা রান্না করার আগে হাত ধুয়ে নিন। যখনই ওয়াশরুমে যাবেন তখন হাত ধুয়ে নিন।

গ্রীষ্মের দিনে আধাসিদ্ধ খাবার এবং রাস্তার খাবার খাবেন না। তরমুজ, শসা, আখ এবং আমের মতো তাজা রসালো ফল খাওয়ার চেষ্টা করুন।

দুপুরের রোদের সময় বাড়ির জানালা বন্ধ রাখুন, যাতে তাপ বাড়ির ভেতরে আটকে না যায়।

খাবার স্যালাইন (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন)-এর মজুত হাতে রাখুন। এগুলো সহজেই কিনতে পাওয়া যায়। যদি না পাওয়া যায়, আপনি নিজে এগুলো বাড়িতে তৈরি করতে পারেন।

চোখের ব্যথা এড়াতে এবং সংক্রমণের বিস্তার এড়াতে, হাত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখুন, ব্যথা কমাতে পরিষ্কার জল দিয়ে চোখ বারবার ধুয়ে নিন।

MMR (হাম, মাম্পস, রুবেলা) টিকা দিয়ে এদের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। আপনি বা আপনার সন্তানকে এ ৩টি সংক্রমণের বিরুদ্ধে টিকা দেয়া না থাকলে, দ্রুততম সময়ে টিকা নেওয়া উচিত।

মশা তাড়ানোর ওষুধ প্রয়োগ করুন এবং মশার প্রজনন স্থান এড়িয়ে চলুন।

কমপক্ষে ১৫ এসপিএফ (সান প্রোটেক্টর ফ্যাক্টর)সহ সানস্ক্রিন প্রয়োগ করে ত্বককে ঢেকে রাখুন এবং সুরক্ষিত রাখুন।

খুব বেশি সময় সূর্যের তাপ-এক্সপোজার এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে দুপুর থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত, যখন সূর্যের রশ্মি সরাসরি লম্বাভাবে পড়ে।

ভ্রমণের সময় বা বাহিরের কার্যকলাপের জন্য সানগ্লাসসহ ক্যাপ পরে সূর্যের তাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। টুপি এবং সানগ্লাস ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মিকে মুখের সংবেদনশীল স্থানে আঘাত করা থেকে বাধা দেবে এবং মুখকে সতেজ ও বলিরেখামুক্ত রাখবে।