ঢাকা ০৭:০৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলমাকান্দায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, দিশেহারা কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:১৯:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ মে ২০২২
  • ১৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার টায় উব্দাখালী নদের ডাকবাংলো পয়েন্টের পানি ২৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে আর ভারি বৃষ্টি না হলে পানি কমবে বলে ধারণা করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ভারি বৃষ্টি ও পাহড়ি ঢলের কারণে উপজেলার প্রধান নদী উব্দাখালীসহ উপজেলার সব নদনদীর পানি হাওরে প্রবেশ করায় উপজেলা জুড়ে দেখা দেয় চরম দুর্ভোগ। এই পানি ও শ্রমিক সংকটের কারণে উপজেলার শতকরা প্রায়.৩০ ভাগ বোরোধান কৃষকেরা ঘরে তুলতে পারেনি। অন্যদিকে রোদ থাকায় কাটা ধানও শুকাতে পারছেন না কৃষক। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে শ্রমিক সংকট থাকায় স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ পরিবারের লোকজন মিলে নিজেরাই ধান কাটছে।

এই বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে বোরো ফসল ছাড়াও উপজেলার ১৬৫টি পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পানিতে ভেসে গিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদ।

তাছাড়া পানিতে খড় পচে যাওয়ায় গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিতে পারে বলেও কয়েক জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা বলেন, পানি এভাবে বাড়লে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ২১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরোধানের আবাদ হয়েছে। এবার সর্বত্রই বাম্পার ফলন হলেও ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় বোরোধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পাশাপাশি ধানকাটা ও মাড়াই করা শ্রমিকের পারিশ্রমিক বেশি ও মণপ্রতি ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষক।

বিশরপাশা গ্রামের কৃষক তপন সাহা বলেন, টানা বৃষ্টিতে তার দুই একর ধানক্ষেতে পানি জমে গেছে। শ্রমিকের সংকটে ধানও কাটতে পারছেন না। আর যতটুকু কেটেছেন রোদের অভাবে তাও শুকাতে পারছেন না। তাছাড়া তার ধানের খলাতে প্রায় কোমর পানি থাকায় রোববার সকাল থেকে রোদ উঠলেও জায়গা না থাকায় ধান শুকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। এ বছর পানি ও শ্রমিক সংকটের কারণে তিনি আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলেও জানান।

তারইমতো আরেক কৃষক আবুল কালাম বলেন, অনেক কষ্টে সাতকাটা (.৫৬শতক) জমির ধান কেটে বাড়ি নিয়ে আসলেও বৃষ্টির কারণে ধান শুকাতে না পারায় কিছু ভেজা ধান থেকে অঙ্কুর বেরিয়েছে। ফলে ওই ধান গবাদি পশুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কোনো কাজে আসবে না।

কৃষক আবুল হোসেন বলেন, এ বছর তিনি প্রায় ১০০ শতক জমিতে বোরো ফসলের আবাদ করেন। পানির কারণে অর্ধেকের চেয়েও কম ধান তিনি বাড়িতে আনতে পেরেছেন। বাকি ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তার চারটি গরুর জন্য একমুঠোও খড় বাড়িতে আনতে পারেনি। সব পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। খাদ্যের অভাবে নিরুপায় হয়ে গরুগুলো বিক্রি করতে হবে বলেও তিনি জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, কৃষকরা এখন পর্যন্ত শতকরা ৮৫ ভাগ ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। ৫০০ একর রোরোধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানির কারণে এবছর বেশির ভাগ ধানের রং পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ বছর উপজেলায় নতুন করে ১৫টি হারভেস্টার কম্বাইন মেশিন দিলেও পানির কারণে সবজায়গায় এই মেশিন দিয়ে ধান কাটা সম্ভব হয়নি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কলমাকান্দায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত, দিশেহারা কৃষক

আপডেট টাইম : ০৯:১৯:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ মে ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার টায় উব্দাখালী নদের ডাকবাংলো পয়েন্টের পানি ২৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। তবে আর ভারি বৃষ্টি না হলে পানি কমবে বলে ধারণা করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ভারি বৃষ্টি ও পাহড়ি ঢলের কারণে উপজেলার প্রধান নদী উব্দাখালীসহ উপজেলার সব নদনদীর পানি হাওরে প্রবেশ করায় উপজেলা জুড়ে দেখা দেয় চরম দুর্ভোগ। এই পানি ও শ্রমিক সংকটের কারণে উপজেলার শতকরা প্রায়.৩০ ভাগ বোরোধান কৃষকেরা ঘরে তুলতে পারেনি। অন্যদিকে রোদ থাকায় কাটা ধানও শুকাতে পারছেন না কৃষক। আবার কোথাও কোথাও দেখা গেছে শ্রমিক সংকট থাকায় স্কুলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ পরিবারের লোকজন মিলে নিজেরাই ধান কাটছে।

এই বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে বোরো ফসল ছাড়াও উপজেলার ১৬৫টি পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পানিতে ভেসে গিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানভীর আহম্মেদ।

তাছাড়া পানিতে খড় পচে যাওয়ায় গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিতে পারে বলেও কয়েক জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা বলেন, পানি এভাবে বাড়লে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের ২১ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরোধানের আবাদ হয়েছে। এবার সর্বত্রই বাম্পার ফলন হলেও ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় বোরোধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পাশাপাশি ধানকাটা ও মাড়াই করা শ্রমিকের পারিশ্রমিক বেশি ও মণপ্রতি ধানের দাম কম হওয়ায় হতাশ কৃষক।

বিশরপাশা গ্রামের কৃষক তপন সাহা বলেন, টানা বৃষ্টিতে তার দুই একর ধানক্ষেতে পানি জমে গেছে। শ্রমিকের সংকটে ধানও কাটতে পারছেন না। আর যতটুকু কেটেছেন রোদের অভাবে তাও শুকাতে পারছেন না। তাছাড়া তার ধানের খলাতে প্রায় কোমর পানি থাকায় রোববার সকাল থেকে রোদ উঠলেও জায়গা না থাকায় ধান শুকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। এ বছর পানি ও শ্রমিক সংকটের কারণে তিনি আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন বলেও জানান।

তারইমতো আরেক কৃষক আবুল কালাম বলেন, অনেক কষ্টে সাতকাটা (.৫৬শতক) জমির ধান কেটে বাড়ি নিয়ে আসলেও বৃষ্টির কারণে ধান শুকাতে না পারায় কিছু ভেজা ধান থেকে অঙ্কুর বেরিয়েছে। ফলে ওই ধান গবাদি পশুকে খাওয়ানো ছাড়া আর কোনো কাজে আসবে না।

কৃষক আবুল হোসেন বলেন, এ বছর তিনি প্রায় ১০০ শতক জমিতে বোরো ফসলের আবাদ করেন। পানির কারণে অর্ধেকের চেয়েও কম ধান তিনি বাড়িতে আনতে পেরেছেন। বাকি ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তার চারটি গরুর জন্য একমুঠোও খড় বাড়িতে আনতে পারেনি। সব পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। খাদ্যের অভাবে নিরুপায় হয়ে গরুগুলো বিক্রি করতে হবে বলেও তিনি জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, কৃষকরা এখন পর্যন্ত শতকরা ৮৫ ভাগ ধান কেটে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। ৫০০ একর রোরোধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানির কারণে এবছর বেশির ভাগ ধানের রং পরিবর্তন হয়ে গেছে। এ বছর উপজেলায় নতুন করে ১৫টি হারভেস্টার কম্বাইন মেশিন দিলেও পানির কারণে সবজায়গায় এই মেশিন দিয়ে ধান কাটা সম্ভব হয়নি।