কৃষকদের অভিযোগ প্রতি বছরই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সরকার এমন ঘোষণা দেয়। পরে ধান-চাউল সবই ক্রয় করা হয় চাউল কল মালিকদের কাছ থেকে। ফলে কৃষকরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্য কোনো সময়ই পান না।
গত ২৪ এপ্রিল সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকের পর খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ৫ মে থেকে ৩১ অাগস্ট পর্যন্ত সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ করা হবে। এবার মোট ১৩ লাখ মেট্রিক টন ধান ও চাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে সাত লাখ মেট্রিক টন ধান, বাকিটা চাল ক্রয় করা হবে।
কৃষকদের সরাসরি প্রণোদনা দিতে এবং ফরিয়াদের দৌরাত্ম্য কমাতে বেশি করে ধান সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত জেলা পর্যায়ে কতটুকু বাস্তবায়ন হয় তার খবর কেউ রাখে না। প্রতি বছরই এমন সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় না করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করে ধান-চাল ক্রয় করে। ফলে কৃষকরা সরকার নির্ধারিত মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।
নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার বোয়ালী গ্রামের কৃষক খোকন মিয়া জানান, `গেরস্থের পোষায় না। একমণ ধান ফলাতে ছয়শ টাকারও বেশি খরচ হয়। কিন্তু বেঁচতে হচ্ছে চারশ চল্লিশ টাকা দরে। প্রতি বছরই সরকার ঘোষণা দেয় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনবে। কিন্তু বাস্তবে খাদ্য বিভাগ এক দুই দিন লোক দেখানো কিছু ধান কেনার পর আর কিনে না। এবারো যে এর ব্যতিক্রম হবে এমন ভরসা কোনো কৃষকই পাবেন না বলে জানান তিনি।`
কলমাকান্দা উপজেলার শুনই গ্রামের কৃষক আজিম উদ্দিন বলেন, সরকার ২৩ টাকা কেজি দরে ধান কিনলে বাজার কিছুটা হয়ত বাড়বে। তাতে কৃষকের কী লাভ ? ব্যবসায়ীরা ধান কিনবে কৃষকের কাছ থেকে। এই ধান ব্যবসায়ীরা বেঁচবে মিলারদের কাছে।
মিলারেরা বেঁচবে সরকারের কাছে। এই যে হাত বদল হতে হতে সরকারের বেধে দেয়া ধানের দাম কৃষকের কাছে পৌছার কোন সম্ভাবনাই নেই । এখনতো ৪৫০ টাকা মণ দরে ধান বেচে কৃষকের লোকসান হচ্ছে। আবাদ খরচই উঠছে না। তবে সরকারের ঘোষিত দাম পেলে কৃষকের লাভ থাকবে বলে জানান এই কৃষক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষি কর্মকর্তা জানান, প্রতি মণ ধান উৎপাদন করতে কৃষকের ছয়শ টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে। সঠিক সময়ে ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু হলে কৃষকরা উপকৃত হবে।
নেত্রকোনা শহরের রাজুরবাজার এলাকার এক চাউল কলের মালিক জানান, এখনো ধান মওজুদ করার সঠিক সময় হয়নি। তাই কোনো চাউল কলের মালিকই ধান মজুদ করবেন না। এখন ধান কেনার পরপরই ক্রাশিং করে চাউল বাজারে বেঁচে দিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সোহরাব হোসেন জানান, এখনো বিভাগীয় পর্যায়ে ধান-চাল ক্রয় সংক্রান্ত কেনো মিটিং হয়নি। কিংবা ধান-চাল কেনার নির্দেশের কোনো চিঠি তারা হাতে পাননি। কাগজপত্র হাতে পেলে শুরু হবে সরকারের নির্দেশ মোতাবেক ধান চাল ক্রয় কার্যক্রম। তবে কবে নাগাদ শুরু হতে পারে, তাও তিনি জানাতে পারেননি।