রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৯৫ হাজার ১শ’ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আজ জাতীয সংসদে এ বাজেট পেশ করেন।
বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১২দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া, এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ০.৩ শতাংশ। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.৫ শতাংশ, বৈদেশিক অনুদান ৫ হাজর ৮শ’ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ১৯১ কোটি টাকা যা জিডিপির ১১.৫ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৯৭ হাজার কোটি টাকা এবং স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার ৩ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা অথাৎ এখাতে মোট বরাদ্দ ১ লাখ ৯৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা জিডিপির ১১. ৬ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৫ শতাংশ । এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৩০ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ৫৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি এবং সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশ্য অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তবে আশা বলেছেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে ২০১৯-২০ অর্থবছর নাগাদ ৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ৬.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে আজ দুপুরে সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। এর পরই রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করেন।
এছাড়াও অর্থমন্ত্রী আজ ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট পেশ করেন। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।
গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় বাজেট। এছাড়া গত বছরের মতো এবারও সংসদে বিরোধী দলের উপস্থিতিতে বাজেট পেশ করা হলো।
প্রস্তাবিত বাজেটের উন্নয়নের লক্ষ্য ও কৌশল হচ্ছে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন। আর রূপকল্পের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কৌশল হচ্ছে উপযুক্ত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়ন, গণদ্রব্য ও সেবার যোগান বৃদ্ধি, বিশ্বাবাজারের সাথে ক্রমান্বয়ে একীভূত হওয়া, উৎপাদন বিশেষায়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা।
অর্থমন্ত্রী বিকেল ৩ টা ৪০ মিনিটের দিকে বাজেট বক্তৃতার শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতা, মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণতন্ত্র ও মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদ, ’৭৫-এর কালোরাত্রিতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার বঙ্গবন্ধুর নিষ্পাপ স্বজন এবং অন্যান্য শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সংগে নিয়ে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদে রাষ্ট্রপতির বক্সে বসে বাজেট বক্তৃতা শোনেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ বিভিন্ন বিদেশী দূতাবাসের কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, বিশিষ্ট আমন্ত্রিত ব্যক্তি এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারাও বাজেট বক্তৃতা শোনেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়তে ২০১৪-’১৫ অর্থবছরে সরকারের চলতি মেয়াদের প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। লক্ষ্য অনুযায়ী সাত শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে প্রথম ৬ মাসে অগ্রগতি প্রত্যাসার চেয়েও বেশী ছিল। কিন্তু একটি অসাংবিধানিক দাবিকে সামনে রেখে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট গত জানুয়ারি মাস থেকে দেশব্যাপি ধ্বংশাত্মক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। হরতাল, অবরোধকর্মসূচি আর পেট্রোল বোমা ও ককটেল হামলা করে শিশু নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। শতাধিক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়। এর ফলে এসএসসি ও এইচএসসি সমমানের পরীক্ষার্থীগণ একটি পরীক্ষাও সময়মত দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, এধরনে অব্যাহত নেতিবাচক মনোবৃত্তির বহি:প্রকাশ ঘটেছে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জনগণের রায়ে। আর এ নেতিবাচক কর্মকান্ড দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর তেমন প্রভাব পেলতে পারেনি। সরকারের দৃঢ়তা আর জনগণের সহযোগিতার ফলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্বাভাবিক থেকেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত লক্ষ্য ছিল হচ্ছে দারিদ্র দূরীকরন। দারিদ্র দূূরীকরণ এখনো সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার ব্যাপকভাবে দেশের মানুষের চাহিদা বাড়াতে এবং তা মেটাতে সচেষ্ট রয়েছে।
তিনি বলেন, গত দেড় থেকে দই দশক ধরে দেশের প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের কিছু বেশি রয়েছে। সরকারের অকল্পনীয় কৃতিত্ব হলো একদিকে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি অন্যদিকে তেমন বৈষম্যকেও তেমন বাড়তে দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, এ কৌশলের ফলেই সরকার দারিদ্র দূরিকরণে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে। ৭০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠির পরিবর্তে বর্তমানে এ হার ২৪ শতাংশে নেমে এসছে।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় গত ৬ বছরে বিভিন্ন খাতে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন চিত্র বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন। বিশেষ করে গত সাড়ে ৫ বছরে মন্দা মোকাবেলায় সাফল্য, বিদুৎ – জ্বালানি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, শিল্প-বানিজ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, প্রবাসী কল্যাণ, নারী ও শিশু , ভূমি ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আমদানি রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও জনশক্তি রপ্তানী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় সরকার পুর্নগঠন ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ, কর্মসংস্থানসহ সকল ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যের বর্ণনা করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামোগত খাতে মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যার মধ্যে মানব সম্পদ খাত- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতে ২০.৪ শতাংশ, ভৌত অবকাঠামো খতে ৩০.৬ শতাংশ- যার মধ্যে রয়েছে সার্বিক কৃষি ও পল্লীি উন্নয়ন খাতে ১৩.৯ শতাংশ, বৃহত্তর যোগাযোগ খাতে ৮.৯ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে ৬.৩ শতাংশ।
এছাড়া সাধারণ সেবা খাতে ২৮ শতাংশ, সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্টায়ত্ত, বানিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ ২.২ শতাংশ , সুদ পরিশোধ বাবদ ১১.৯ শতাংশ নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে অবশিষ্ট ৩.৮ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে, ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান- প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এরপরই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অবস্থান।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি কালো মেঘের আড়ালে সোনালী রেখা দেখতে পাই। বাংলাদেশের অপরিমেয় সম্ভবনায় এদেশের তরুনদের মতো আমিও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য অর্জনে সরকার গত মেয়াদে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। চলতি মেয়াদে আরে একধাপ এগিয়ে যাওয়ার অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে সরকার একটু বিচ্যুত হবে না। রূপকল্পের ধারাবাহিকতায় এ মেয়াদেই সরকার একটি নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রূপকল্প ২০৪১ জাতিকে উপহার দেয়া হবে।
তিনি বলেন, এ নতুন রূপকল্পের হাত ধরেই ২০৪১ সালের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সুশাসন, জনগণের সক্ষমতা ও ক্ষমতায়নই হবে এই রূপকল্প বাস্তবায়নের মূলমন্ত্র।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আজ জাতীয সংসদে এ বাজেট পেশ করেন।
বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১২দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া, এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ০.৩ শতাংশ। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১.৫ শতাংশ, বৈদেশিক অনুদান ৫ হাজর ৮শ’ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ১৯১ কোটি টাকা যা জিডিপির ১১.৫ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৯৭ হাজার কোটি টাকা এবং স্বায়ত্বশাসিত সংস্থার ৩ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা অথাৎ এখাতে মোট বরাদ্দ ১ লাখ ৯৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা জিডিপির ১১. ৬ শতাংশ।
প্রস্তাবিত বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি ৮৬ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৫ শতাংশ । এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ৩০ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ৫৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি এবং সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অবশ্য অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তবে আশা বলেছেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে ২০১৯-২০ অর্থবছর নাগাদ ৮ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারন করা হয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ৬.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে আজ দুপুরে সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। এর পরই রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করেন।
এছাড়াও অর্থমন্ত্রী আজ ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট পেশ করেন। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।
গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর এটি হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় বাজেট। এছাড়া গত বছরের মতো এবারও সংসদে বিরোধী দলের উপস্থিতিতে বাজেট পেশ করা হলো।
প্রস্তাবিত বাজেটের উন্নয়নের লক্ষ্য ও কৌশল হচ্ছে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জনগণের জীবনমান উন্নয়ন। আর রূপকল্পের স্বপ্ন বাস্তবায়নে কৌশল হচ্ছে উপযুক্ত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নয়ন, গণদ্রব্য ও সেবার যোগান বৃদ্ধি, বিশ্বাবাজারের সাথে ক্রমান্বয়ে একীভূত হওয়া, উৎপাদন বিশেষায়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা।
অর্থমন্ত্রী বিকেল ৩ টা ৪০ মিনিটের দিকে বাজেট বক্তৃতার শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতা, মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, গণতন্ত্র ও মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদ, ’৭৫-এর কালোরাত্রিতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার বঙ্গবন্ধুর নিষ্পাপ স্বজন এবং অন্যান্য শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সংগে নিয়ে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদে রাষ্ট্রপতির বক্সে বসে বাজেট বক্তৃতা শোনেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ বিভিন্ন বিদেশী দূতাবাসের কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, বিশিষ্ট আমন্ত্রিত ব্যক্তি এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারাও বাজেট বক্তৃতা শোনেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ গড়তে ২০১৪-’১৫ অর্থবছরে সরকারের চলতি মেয়াদের প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল। লক্ষ্য অনুযায়ী সাত শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে প্রথম ৬ মাসে অগ্রগতি প্রত্যাসার চেয়েও বেশী ছিল। কিন্তু একটি অসাংবিধানিক দাবিকে সামনে রেখে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট গত জানুয়ারি মাস থেকে দেশব্যাপি ধ্বংশাত্মক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়। হরতাল, অবরোধকর্মসূচি আর পেট্রোল বোমা ও ককটেল হামলা করে শিশু নারী, পুরুষ নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে তোলে। শতাধিক মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়। এর ফলে এসএসসি ও এইচএসসি সমমানের পরীক্ষার্থীগণ একটি পরীক্ষাও সময়মত দিতে পারেনি।
তিনি বলেন, এধরনে অব্যাহত নেতিবাচক মনোবৃত্তির বহি:প্রকাশ ঘটেছে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জনগণের রায়ে। আর এ নেতিবাচক কর্মকান্ড দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর তেমন প্রভাব পেলতে পারেনি। সরকারের দৃঢ়তা আর জনগণের সহযোগিতার ফলে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্বাভাবিক থেকেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত লক্ষ্য ছিল হচ্ছে দারিদ্র দূরীকরন। দারিদ্র দূূরীকরণ এখনো সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার ব্যাপকভাবে দেশের মানুষের চাহিদা বাড়াতে এবং তা মেটাতে সচেষ্ট রয়েছে।
তিনি বলেন, গত দেড় থেকে দই দশক ধরে দেশের প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের কিছু বেশি রয়েছে। সরকারের অকল্পনীয় কৃতিত্ব হলো একদিকে প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি অন্যদিকে তেমন বৈষম্যকেও তেমন বাড়তে দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, এ কৌশলের ফলেই সরকার দারিদ্র দূরিকরণে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছে। ৭০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠির পরিবর্তে বর্তমানে এ হার ২৪ শতাংশে নেমে এসছে।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় গত ৬ বছরে বিভিন্ন খাতে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন চিত্র বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন। বিশেষ করে গত সাড়ে ৫ বছরে মন্দা মোকাবেলায় সাফল্য, বিদুৎ – জ্বালানি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, শিল্প-বানিজ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, প্রবাসী কল্যাণ, নারী ও শিশু , ভূমি ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আমদানি রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও জনশক্তি রপ্তানী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় সরকার পুর্নগঠন ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ, কর্মসংস্থানসহ সকল ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যের বর্ণনা করেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামোগত খাতে মোট বরাদ্দের ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যার মধ্যে মানব সম্পদ খাত- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতে ২০.৪ শতাংশ, ভৌত অবকাঠামো খতে ৩০.৬ শতাংশ- যার মধ্যে রয়েছে সার্বিক কৃষি ও পল্লীি উন্নয়ন খাতে ১৩.৯ শতাংশ, বৃহত্তর যোগাযোগ খাতে ৮.৯ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে ৬.৩ শতাংশ।
এছাড়া সাধারণ সেবা খাতে ২৮ শতাংশ, সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্টায়ত্ত, বানিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ ২.২ শতাংশ , সুদ পরিশোধ বাবদ ১১.৯ শতাংশ নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে অবশিষ্ট ৩.৮ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে, ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান- প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এরপরই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অবস্থান।
অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি কালো মেঘের আড়ালে সোনালী রেখা দেখতে পাই। বাংলাদেশের অপরিমেয় সম্ভবনায় এদেশের তরুনদের মতো আমিও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
তিনি বলেন, রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য অর্জনে সরকার গত মেয়াদে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। চলতি মেয়াদে আরে একধাপ এগিয়ে যাওয়ার অভীষ্ট লক্ষ্য থেকে সরকার একটু বিচ্যুত হবে না। রূপকল্পের ধারাবাহিকতায় এ মেয়াদেই সরকার একটি নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রূপকল্প ২০৪১ জাতিকে উপহার দেয়া হবে।
তিনি বলেন, এ নতুন রূপকল্পের হাত ধরেই ২০৪১ সালের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে। সুশাসন, জনগণের সক্ষমতা ও ক্ষমতায়নই হবে এই রূপকল্প বাস্তবায়নের মূলমন্ত্র।