হাওর বার্তা ডেস্কঃ জ্বালানি তেল পেট্রল ও অকটেনের চরম সংকটে পড়েছে দিনাজপুরসহ রংপুর বিভাগের ৮ জেলা। এতে বিপাকে পড়েছেন মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার চালক-মালিকরা। ফিলিং স্টেশনের লোকজন বলছেন, উত্তরের প্রধান তেল ডিপো পার্বতীপুর রেল হেড ডিপোতে ধরনা দিয়েও পেট্রল-অকটেন পাচ্ছেন না তারা। আর ডিপো কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদের ছুটি, পরিবহণ ব্যবস্থা এবং পার্বতীপুর ডিপোতে ধারণ ক্ষমতা অপ্রতুল থাকায় সাময়িকভাবে এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া রাজশাহীতে অকটেন-পেট্রলের পাশাপাশি ডিজেল সংকটও দেখা দিয়েছে। কিছু পাম্পে তেলের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বেশ কয়েকটি পাম্প ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। কৃষকরা সেচের জন্য চাহিদামতো ডিজেল পাচ্ছেন না। এতে বিশেষ করে সবজি চাষিরা বিপাকে পড়েছেন।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেল হেড ডিপো থেকেই রংপুর বিভাগের ৮ জেলার ১৩৬টি ফিলিং স্টেশনে সরবরাহ করা হয়ে থাকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের আওতাধীন ৩ কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের জ্বালানি তেল। ১ লাখ ৮০ হাজার লিটার পেট্রল ও ১ লাখ ৫০ হাজার লিটার অকটেনের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এই ডিপোতে ফুরিয়ে গেছে পেট্রল ও অকটেনের মজুত। ফলে চাহিদা অনুযায়ী ফিলিং স্টেশনগুলোতে জ্বালানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
পার্বতীপুরে পেট্রল ও অকটেন নিতে আসা ট্যাংকলরিগুলো টার্মিনালে ৮-১০ দিন অপেক্ষা করেও জ্বালানি না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ফিলিং স্টেশনগুলোতে পেট্রল ও অকটেন সংকটের কারণে ফিরে যেতে হচ্ছে যানবাহন চালকদের। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই এ অবস্থা চলছে বলে জানিয়েছেন ফিলিং স্টেশন সংশ্লিষ্টরা।
পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের রিয়েল ফিলিং স্টেশনসহ কয়েকটি পাম্পে তেল নেই। অনেকে পাম্প পলিথিন দিয়ে ঢেকে রেখেছে। রিয়েল ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক নুরুল নবী বলেন, ঈদের কয়েকদিন আগেই পেট্রল ও অকটেন সংকট চরমে পৌঁছেছে। ২৮ এপ্রিল ৯ হাজার লিটার পেট্রল ও ৪ হাজার ৫শ লিটার অকটেন এসেছিল। প্রতিদিন এ পাম্পে সাড়ে ৩ হাজার লিটার পেট্রল ও ১ হাজার ৩শ লিটার অকটেন প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় আমরা গ্রাহককে পেট্রল ও অকটেন দিতে পারছি না।
নীলফামারী সৈয়দপুর শহরের ইকু ফিলিং স্টেশনের মালিক সিদ্দিকুল আলম জানান, প্রায় মাস ধরে পেট্রল ও অকটেন সংকট দেখা দিয়েছে। পার্বতীপুর তেল ডিপোতে না পেয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপো থেকে তেল নিয়ে পাম্পগুলো চালাতে হচ্ছিল। কিন্তু এখন বাঘাবাড়ী ডিপোতেও পেট্রল ও অকটেন পাওয়া যাচ্ছে না।
দিনাজপুর জেলা পেট্রল পাম্প মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাবিবুর রহমান শাহীন জানান, পার্বতীপুর ডিপোতে প্রায় ১৫ দিন ধরে পেট্রল ও ৭ দিন ধরে অকটেনের সংকট চলছে। আমরা চাহিদামতো পেট্রল ও অকটেন সরবরাহ পাচ্ছি না। এর ফলে প্রায় অনেক তেল পাম্প বন্ধ রয়েছে।
পার্বতীপুর রেল হেড ডিপোর ইনচার্জ এমরানুল হাসান জানান, ডিপোতে পেট্রল ও অকটেনের মজুত প্রায় শূন্যে পৌঁছেছে। খুলনা থেকে এখানে তেল আসে। সেখান থেকে তেল না আসায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে অচিরেই এই সমস্যা নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক হারিস আহমেদ সরকার জানান, ঈদ ও সাপ্তাহিক ছুটি, রেলওয়ের ওয়াগন সংকট এবং পার্বতীপুর ডিপোতে ধারণ ক্ষমতা অপ্রতুল থাকায় এই সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, খুলনা থেকে তিন কোম্পানির প্রায় সাড়ে ৫ লাখ লিটার পেট্রল ও অকটেন পার্বতীপুর ডিপোতে আসছে। এই তেল এলেই সংকট নিরসন হবে।
রাজশাহীতেও জ্বালানি তেলের সংকট : রাজশাহী জেলা পেট্রল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, জেলা এবং মহানগরীতে মোট ৪৮টি পেট্রল পাম্প রয়েছে। তিন মাস ধরেই পাম্পগুলোতে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ নেই। তবে ঈদের পরের দিন ৪ এপ্রিল থেকে পাম্পগুলোতে তেল সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। মূলত ঈদের ছুটির কারণেই এমনটি হয়েছে। ফলে বেশ কিছু পাম্প তেলশূন্য হয়ে পড়েছে।
রোববার রাজশাহী মহানগর ও জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ পাম্পেই তেলের স্বল্পতা রয়েছে। কিছু পাম্পে শুধু ডিজেল ও অকটেন আছে। সেটিও চাহিদার বিপরীতে খুবই কম। তবে পেট্রলের সংকট সবচেয়ে বেশি। রোববার তেল সংকটের কারণে মহানগরীর শালাবাগানের মেসার্স আলম এবং শাহ মখদুম কলেজসংলগ্ন মেসার্স আফরিন তেল পাম্প বন্ধ ছিল। এছাড়া জেলা এবং মহানগরীর প্রায় ২৫টি পাম্প ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
রোববার দুপুরে মহানগরীর রহমান পাম্পে তেল নিতে এসেছিলেন আবদুল আওয়াল। তিনি মোটরবাইক ব্যবহার করেন। তিন বলেন, আমার বাইকে তেল নেই। তেল নেওয়ার জন্য পাম্পে এলাম। মাত্র এক লিটার পেট্রল পেলাম। বেশি দিতে চাইলেন না পাম্পের কর্মচারী।
মহানগরীর কুমারপাড়া এলাকার গুলগোফুর পেট্রল পাম্পের ম্যানেজার আবদুর রহিম বলেন, পেট্রলের সরবরাহ খুবই কম। মজুত না থাকায় আমরা পেট্রল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি। রোববার আমাদের পেমেন্ট ডেট ছিল। টাকা দিয়েছি। কিন্তু তেল পাইনি।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী জেলার সভাপতি মনিমুল হক বলেন, রাজশাহীতে তেলের সংকট রয়েছে। তিন মাস ধরেই এ সংকট চলছে।
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার প্রতিটি বাজারে খুরচা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে পেট্রল বিক্রি করছেন। কোনো কোনো দোকানদার প্রতি লিটারে ৫-১০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। পেট্রল ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, দোকানদাররা পেট্রল লুকিয়ে রেখে নিজে নিজে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এতে পেট্রল ব্যবহারকারীরা পড়েছেন বেকায়দায়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পাপিয়া সুলতানা বলেন, পেট্রলের কোনো সংকট নেই। সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কোনো দোকানদার অতিরিক্ত দাম নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।