ঢাকা ০২:১৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোজায় মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কী করবেন?

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৫:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২
  • ৩০০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রমজান মাসে মুখের বিশেষ যত্ন নিতে হয়।  দীর্ঘসময় পানাহার থেকে বিরত থাকায় মুখে এক ধরনের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।  আবার ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত বেশি খাবার খাওয়ার কারণে দাঁতে সমস্যা দেখা হয়।  এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে সাবধানতা ও সচেতনতা জরুরি।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন রাজ ডেন্টাল সেন্টারের ডেন্টাল সার্জন ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ।

রোজায় মুখের মধ্যকার যে পরিবর্তনগুলো হয়ে থাকে সেগুলো হচ্ছে-

শুষ্কতা

সারা দিন পানি পান না করার কারণে মুখে লালা নিঃসরণ কমে যাওয়ায় মুখ শুষ্ক হয়ে পড়ে। ফলে লালার স্বাভাবিক কাজ যেমন দাঁত পরিষ্কার রাখা, জীবাণু প্রতিহত করা, মুখ পিচ্ছিল রেখে কথা বলতে সাহায্য করা ও ঘর্ষণজনিত ক্ষুদ্র ক্ষত থেকে রক্ষা করাসহ নানা বিষয় ব্যাহত হয়। ফলে মাড়ি রোগসহ দাঁতে ক্যারিজ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

করণীয় : ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত তরল পান করতে হবে। বাজারজাত কোমল পানীয় বা কৃত্রিম ফলের জুস পরিহার করে বিশুদ্ধ পানি, লেবু শরবত, মৌসুমি ফলের জুস যেমন কাঁচা আম, মালটা, বেল, তরমুজ, ইসপগুলের ভুসি জাতীয় তরল পান করতে হবে, তবে চিনি মুক্ত রাখা শ্রেয়। আমাদের মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা ও শরীরকে রোগ প্রতিরোধ রাখতে চিনির তৈরি খাবার কমাতে হবে, আসলে শরীরে বাড়তি চিনির তেমন কোনো প্রয়োজন নেই, বাকি স্বাস্থ্যকর খাবার চিনির চাহিদা মেটাতে পারে।

ডায়াবেটিসের জটিলতা না থাকলে চিনির পরিবর্তে মধু নেওয়া যেতে পারে। সেহরির শেষ সময়ের ৩০ মিনিট আগে খাবার গ্রহণ করে ২০ মিনিট পর পর্যাপ্ত পানি পান করা ভালো। যাদের মুখ অতিরিক্ত শুষ্ক হয়, তারা সেহরির পর দুটি এলাচ দানা চিবিয়ে খেয়ে দেখতে পারে। খুব বেশি শুষ্ক থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মুখে দুর্গন্ধ

রমজানে মুখের দুর্গন্ধে অনেকেই বিব্রত থাকে। মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে নানা কথা থাকলেও এটা স্পষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। গবেষকদের মতে রোজা অবস্থায় মেসওয়াক বা প্রয়োজনে সাবধানতার সঙ্গে দাঁত ব্রাশও করা যেতে পারে। গন্ধ ও স্বাদ বিহীন টুথপেস্ট পাওয়া যায়, একান্তই না পারলে মেসওয়াক কার্যকর। প্রতি নামাজের আগে হাদিসে মেসওয়াকের বিষয়টি শক্ত ভাবে উঠে এসেছে, তবে সেটি যেন নরম ও নিয়ম মাফিক হয়।

সাধারণত অনেকেই ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজ ও পরবর্তিতে তারাবিহ্ নামাজের জন্য দাঁত ব্রাশ করে না, আবার দেরিতে তাড়াহুড়া সেহরি করে বলে ফজরের আজানের সময় হয়ে যাওয়ায় দাঁত ব্রাশ করে না। মুখ পরিষ্কারের অবহেলা, মুখের শুষ্কতা, আর সারা দিন না খাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে মুখের মধ্যকার জীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে, জিহ্বা, ঠোঁট, গাল কম নড়ার কারণে দাঁতের পৃষ্ঠে জমে থাকা খাদ্যকণা ও জীবাণু নানা রোগসহ মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।

করণীয় : ইফতার ও সেহরির পর অন্তত দুই মিনিট করে নিয়ম অনুযায়ী দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করা, সঙ্গে সেহরির পর ডেন্টাল ফ্লস করা, প্রয়োজনে এলকোহলমুক্ত মাউথ ওয়াশ ব্যবহার, ওজুর সময় ভালোমতো কুলি করা ও মাড়ি ম্যাসেজ করা।

এছাড়া ইফতার ও সেহরির পর অন্তত দুই মিনিট করে নিয়ম অনুযায়ী দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করা, সেহরির পর ডেন্টাল ফ্লস করা, প্রয়োজনে এলকোহলমুক্ত মাউথ ওয়াশ ব্যবহার, ওজুর সময় ভালোমতো কুলি করা ও মাড়ি ম্যাসেজ করা প্রয়োজন।

রোগ হওয়ার প্রবণতা

মুখের শুষ্কতা বা মুখ পরিষ্কারে অনীহার পাশাপাশি আমাদের খাদ্য তালিকাটিও মুখের স্বাস্থ্যবান্ধব হয় না। রুচির জন্য চিনির শরবত, জিলাপি, মিষ্টি ইত্যাদি বেশি খাই যা দাঁতের ক্ষতি করে। অন্যদিকে ভাজাপোড়া থেকে গ্যাস্ট্রিক এসিডিটির ফলে পেটের এসিড মুখে এসে দাঁত ক্ষয় করতে পারে।

করণীয় : খাবারের তালিকা স্বাস্থ্যবান্ধব হতে হবে। সেহরিতে পরিমিত ভাত সঙ্গে ছোট মাছ, সামদ্রিক মাছ বা মাংস, ডাল, সবজি, সালাদ, এক কাপ দুধ বা টক দই, মিষ্টি ফল। প্রচলিত মিনিকেট চাল না খেয়ে সিদ্ধ মোটা চাল বা লাল চালের ভাত খেতে পারেন। মজাদার ভাজাপোড়া খাবারমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে, এমনই কি ছোলার পরিবর্তে সেহরির সময় কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে ইফতারিতে আদা কুচি করে খাওয়া ভালো। খেজুরের উপকারিতা অনেক, সঙ্গে ১টি আপেল বা কলা খাওয়া যেতে পারে। শসা, ক্ষীরা, পেয়ারা এগুলো বেশি খেতে পারবেন। মুড়ি বা চিড়া খাওয়া যায়। সেহরিতে রুটি, খিঁচুড়ি, বাদাম, ভাজাপোড়া পিপাসা বাড়াতে পারে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রোজায় মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কী করবেন?

আপডেট টাইম : ১০:৩৫:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রমজান মাসে মুখের বিশেষ যত্ন নিতে হয়।  দীর্ঘসময় পানাহার থেকে বিরত থাকায় মুখে এক ধরনের দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।  আবার ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত বেশি খাবার খাওয়ার কারণে দাঁতে সমস্যা দেখা হয়।  এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে সাবধানতা ও সচেতনতা জরুরি।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন রাজ ডেন্টাল সেন্টারের ডেন্টাল সার্জন ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ।

রোজায় মুখের মধ্যকার যে পরিবর্তনগুলো হয়ে থাকে সেগুলো হচ্ছে-

শুষ্কতা

সারা দিন পানি পান না করার কারণে মুখে লালা নিঃসরণ কমে যাওয়ায় মুখ শুষ্ক হয়ে পড়ে। ফলে লালার স্বাভাবিক কাজ যেমন দাঁত পরিষ্কার রাখা, জীবাণু প্রতিহত করা, মুখ পিচ্ছিল রেখে কথা বলতে সাহায্য করা ও ঘর্ষণজনিত ক্ষুদ্র ক্ষত থেকে রক্ষা করাসহ নানা বিষয় ব্যাহত হয়। ফলে মাড়ি রোগসহ দাঁতে ক্যারিজ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়।

করণীয় : ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত তরল পান করতে হবে। বাজারজাত কোমল পানীয় বা কৃত্রিম ফলের জুস পরিহার করে বিশুদ্ধ পানি, লেবু শরবত, মৌসুমি ফলের জুস যেমন কাঁচা আম, মালটা, বেল, তরমুজ, ইসপগুলের ভুসি জাতীয় তরল পান করতে হবে, তবে চিনি মুক্ত রাখা শ্রেয়। আমাদের মুখের স্বাস্থ্য রক্ষা ও শরীরকে রোগ প্রতিরোধ রাখতে চিনির তৈরি খাবার কমাতে হবে, আসলে শরীরে বাড়তি চিনির তেমন কোনো প্রয়োজন নেই, বাকি স্বাস্থ্যকর খাবার চিনির চাহিদা মেটাতে পারে।

ডায়াবেটিসের জটিলতা না থাকলে চিনির পরিবর্তে মধু নেওয়া যেতে পারে। সেহরির শেষ সময়ের ৩০ মিনিট আগে খাবার গ্রহণ করে ২০ মিনিট পর পর্যাপ্ত পানি পান করা ভালো। যাদের মুখ অতিরিক্ত শুষ্ক হয়, তারা সেহরির পর দুটি এলাচ দানা চিবিয়ে খেয়ে দেখতে পারে। খুব বেশি শুষ্ক থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

মুখে দুর্গন্ধ

রমজানে মুখের দুর্গন্ধে অনেকেই বিব্রত থাকে। মুখের দুর্গন্ধ নিয়ে নানা কথা থাকলেও এটা স্পষ্ট পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। গবেষকদের মতে রোজা অবস্থায় মেসওয়াক বা প্রয়োজনে সাবধানতার সঙ্গে দাঁত ব্রাশও করা যেতে পারে। গন্ধ ও স্বাদ বিহীন টুথপেস্ট পাওয়া যায়, একান্তই না পারলে মেসওয়াক কার্যকর। প্রতি নামাজের আগে হাদিসে মেসওয়াকের বিষয়টি শক্ত ভাবে উঠে এসেছে, তবে সেটি যেন নরম ও নিয়ম মাফিক হয়।

সাধারণত অনেকেই ইফতার শেষে মাগরিবের নামাজ ও পরবর্তিতে তারাবিহ্ নামাজের জন্য দাঁত ব্রাশ করে না, আবার দেরিতে তাড়াহুড়া সেহরি করে বলে ফজরের আজানের সময় হয়ে যাওয়ায় দাঁত ব্রাশ করে না। মুখ পরিষ্কারের অবহেলা, মুখের শুষ্কতা, আর সারা দিন না খাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে মুখের মধ্যকার জীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে, জিহ্বা, ঠোঁট, গাল কম নড়ার কারণে দাঁতের পৃষ্ঠে জমে থাকা খাদ্যকণা ও জীবাণু নানা রোগসহ মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করতে পারে।

করণীয় : ইফতার ও সেহরির পর অন্তত দুই মিনিট করে নিয়ম অনুযায়ী দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করা, সঙ্গে সেহরির পর ডেন্টাল ফ্লস করা, প্রয়োজনে এলকোহলমুক্ত মাউথ ওয়াশ ব্যবহার, ওজুর সময় ভালোমতো কুলি করা ও মাড়ি ম্যাসেজ করা।

এছাড়া ইফতার ও সেহরির পর অন্তত দুই মিনিট করে নিয়ম অনুযায়ী দাঁত ও মুখ পরিষ্কার করা, সেহরির পর ডেন্টাল ফ্লস করা, প্রয়োজনে এলকোহলমুক্ত মাউথ ওয়াশ ব্যবহার, ওজুর সময় ভালোমতো কুলি করা ও মাড়ি ম্যাসেজ করা প্রয়োজন।

রোগ হওয়ার প্রবণতা

মুখের শুষ্কতা বা মুখ পরিষ্কারে অনীহার পাশাপাশি আমাদের খাদ্য তালিকাটিও মুখের স্বাস্থ্যবান্ধব হয় না। রুচির জন্য চিনির শরবত, জিলাপি, মিষ্টি ইত্যাদি বেশি খাই যা দাঁতের ক্ষতি করে। অন্যদিকে ভাজাপোড়া থেকে গ্যাস্ট্রিক এসিডিটির ফলে পেটের এসিড মুখে এসে দাঁত ক্ষয় করতে পারে।

করণীয় : খাবারের তালিকা স্বাস্থ্যবান্ধব হতে হবে। সেহরিতে পরিমিত ভাত সঙ্গে ছোট মাছ, সামদ্রিক মাছ বা মাংস, ডাল, সবজি, সালাদ, এক কাপ দুধ বা টক দই, মিষ্টি ফল। প্রচলিত মিনিকেট চাল না খেয়ে সিদ্ধ মোটা চাল বা লাল চালের ভাত খেতে পারেন। মজাদার ভাজাপোড়া খাবারমুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে, এমনই কি ছোলার পরিবর্তে সেহরির সময় কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে ইফতারিতে আদা কুচি করে খাওয়া ভালো। খেজুরের উপকারিতা অনেক, সঙ্গে ১টি আপেল বা কলা খাওয়া যেতে পারে। শসা, ক্ষীরা, পেয়ারা এগুলো বেশি খেতে পারবেন। মুড়ি বা চিড়া খাওয়া যায়। সেহরিতে রুটি, খিঁচুড়ি, বাদাম, ভাজাপোড়া পিপাসা বাড়াতে পারে।