ঢাকা ১২:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুই বছর পর শোলাকিয়া ঈদগাহ মুখরিত হবে মুসল্লিদের পদভারে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ এপ্রিল ২০২২
  • ২১৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গত দুইবছর শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়নি। ফলে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইতিহাসে গত দুই বার পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উভয় ঈদেই ঈদের দিন মুসল্লিশূণ্য থাকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।

বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবারের ঈদে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এজন্যে বুধবার (৬ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম সভায় সভাপতিত্ব করেন।
তিনি জানান, করোনা ছড়িয়ে পড়া রোধে সারাদেশে খোলা মাঠ ও ঈদগাহে ঈদের জামাতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই অনুযায়ী গত দুই বছর ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত আয়োজন করা যায়নি। এবার কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় শোলাকিয়ায় ১৯৫তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় অন্যদের মধ্যে পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার), জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. কামরুল আহসান শাহজাহান, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, র‌্যাব-১৪, সিপিসি-২, কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর মো. শাহরিয়ার মাহমুদ খান, সিনিয়র জেলা তথ্য অফিসার মো. শামছুল হক, শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সম্পাদক সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

১৭৫০ সাল থেকে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে হিসাব অনুসারে শোলাকিয়া ঈদগাহের বয়স ২শ’ ৭২ বছর।

প্রতিষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই সোয়ালাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত।

২০১৬ সালে ঈদুল ফিতরের দিন ঈদজামাতের আগে মাঠের কাছে একটি চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটলেও লাখ লাখ মুসল্লি ঈদজামাতে অংশ নিয়েছিলেন।

জঙ্গি হামলা পরবর্তি পরিস্থিতিতেও এখানে বন্ধ হয়নি ঈদজামাত। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ভয়কে জয় করে মুসল্লিরা অংশ নিয়েছেন শোলাকিয়ার ঈদজামাতে।

কিন্তু অদৃশ্য অনুজীব করোনা বদলে দিয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইতিহাস। নানা প্রতিকূল সময়েও এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কোনো পরিস্থিতিতে ঈদের জামাতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে করোনা মহামারিতে গত দুই বছর ঈদের দিনে খালি থাকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।

কিন্তু এবার ফিরে আসছে সেই চিরচেনা কোলাহল। লাখো মানুষের মুখরতা।

প্রতি বছরই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিণত হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মহামিলন কেন্দ্রে। বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশাখাঁ’র ষোড়শ বংশধর হয়বতনগরের জমিদার দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান তাঁর মায়ের অসিয়াত মোতাবেক ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ৪.৩৫ একর জমি ওয়াক্ফ করেন।

সেই ওয়াক্ফ দলিলে উল্লেখ রয়েছে, ১৭৫০ সাল থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন।

প্রাচীর ঘেরা শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঈদগাহ সংলগ্ন খালি জায়গা, রাস্তা, সেতু এবং নিকটবর্তী এলাকায় দাঁড়িয়ে আরো দ্বিগুণ মুসল্লি ঈদজামাতে শরিক হন।

জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া ঈদগাহ ময়দানে আগত মুসল্লিদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে জামাত শুরুর সংকেত দেয়া হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর ৫মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি শর্টগানের গুলি ছোঁড়া হয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দুই বছর পর শোলাকিয়া ঈদগাহ মুখরিত হবে মুসল্লিদের পদভারে

আপডেট টাইম : ১১:৫৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ এপ্রিল ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে গত দুইবছর শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়নি। ফলে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইতিহাসে গত দুই বার পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উভয় ঈদেই ঈদের দিন মুসল্লিশূণ্য থাকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।

বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবারের ঈদে শোলাকিয়ায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এজন্যে বুধবার (৬ এপ্রিল) সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম সভায় সভাপতিত্ব করেন।
তিনি জানান, করোনা ছড়িয়ে পড়া রোধে সারাদেশে খোলা মাঠ ও ঈদগাহে ঈদের জামাতে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই অনুযায়ী গত দুই বছর ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত আয়োজন করা যায়নি। এবার কোন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় শোলাকিয়ায় ১৯৫তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় অন্যদের মধ্যে পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম (বার), জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. কামরুল আহসান শাহজাহান, কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ, র‌্যাব-১৪, সিপিসি-২, কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার মেজর মো. শাহরিয়ার মাহমুদ খান, সিনিয়র জেলা তথ্য অফিসার মো. শামছুল হক, শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সম্পাদক সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

১৭৫০ সাল থেকে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সে হিসাব অনুসারে শোলাকিয়া ঈদগাহের বয়স ২শ’ ৭২ বছর।

প্রতিষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন। এই সোয়ালাখ থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়ালাখিয়া’, যা উচ্চারণ বিবর্তনে হয়েছে শোলাকিয়া।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত।

২০১৬ সালে ঈদুল ফিতরের দিন ঈদজামাতের আগে মাঠের কাছে একটি চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটলেও লাখ লাখ মুসল্লি ঈদজামাতে অংশ নিয়েছিলেন।

জঙ্গি হামলা পরবর্তি পরিস্থিতিতেও এখানে বন্ধ হয়নি ঈদজামাত। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় ভয়কে জয় করে মুসল্লিরা অংশ নিয়েছেন শোলাকিয়ার ঈদজামাতে।

কিন্তু অদৃশ্য অনুজীব করোনা বদলে দিয়েছে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইতিহাস। নানা প্রতিকূল সময়েও এখানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কোনো পরিস্থিতিতে ঈদের জামাতে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে করোনা মহামারিতে গত দুই বছর ঈদের দিনে খালি থাকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান।

কিন্তু এবার ফিরে আসছে সেই চিরচেনা কোলাহল। লাখো মানুষের মুখরতা।

প্রতি বছরই ঈদুল ফিতরের দিন শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিণত হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মহামিলন কেন্দ্রে। বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশাখাঁ’র ষোড়শ বংশধর হয়বতনগরের জমিদার দেওয়ান মান্নান দাঁদ খান তাঁর মায়ের অসিয়াত মোতাবেক ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য ৪.৩৫ একর জমি ওয়াক্ফ করেন।

সেই ওয়াক্ফ দলিলে উল্লেখ রয়েছে, ১৭৫০ সাল থেকে এ মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিষ্ঠার ৭৮ বছর পর ১৮২৮ সালে প্রথম বড় জামাতে এই মাঠে একসঙ্গে ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি ঈদের নামাজ আদায় করেন।

প্রাচীর ঘেরা শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ঈদগাহ সংলগ্ন খালি জায়গা, রাস্তা, সেতু এবং নিকটবর্তী এলাকায় দাঁড়িয়ে আরো দ্বিগুণ মুসল্লি ঈদজামাতে শরিক হন।

জনসমুদ্রে পরিণত হওয়া ঈদগাহ ময়দানে আগত মুসল্লিদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে জামাত শুরুর সংকেত দেয়া হয়। রেওয়াজ অনুযায়ী, জামাত শুরুর ৫মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি শর্টগানের গুলি ছোঁড়া হয়।