ঢাকা ০১:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জমে উঠেছে মধুফলের বাজার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৪৮:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জুন ২০১৫
  • ৫১১ বার

ষড়ঋতুর এ দেশে সারা বছরই দেখা মেলে নানা স্বাদের ফলের। কিন্তু বছরের অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মৌসুমি ফলের সমাহার এই জ্যৈষ্ঠেই। গরমের তীব্রতার পাশাপাশি রসালো ফলের পসরা সাজিয়ে হাজির হয় এই মধুমাস।

পথে নামলেই রাস্তার মোড়ে মোড়েই মিলছে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুল, বেল, আনারসসহ হরেক পদের রসালো ফল।

রাজধানীর ফলের বাজারগুলোতে লিচুর আধিক্য সবচেয়ে বেশি দেখা গেলেও বিক্রেতারা বলছেন, এই সময়ে আরও বেশি লিচু বাজারে আসার কথা। কিন্তু ক’দিন বাদেই আসছে রমজান। সে কারণে বাগানমালিকরা লিচু কম ছাড়ছেন। আকারভেদে রাজধানীতে লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি ১০০টি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়।

ফার্মগেট এলাকার বিক্রেতা রতন তিন রকমের গ্যারান্টি দিয়ে লিচু বিক্রি করছেন। তার রাজশাহীর লিচুর গ্যারান্টি জানতে চাইলে দ্য রিপোর্টকে জানান, কোন ধরনের কেমিক্যাল নেই, মধুর মতো মিষ্টি আর এই লিচুতে মাংস বেশি, বিচি ছোট।

এখন বাজারে রাজশাহী আর ঈশ্বরদীর বোম্বে লিচুর আধিক্য বেশি। দিনাজপুর এবং রংপুরের বিখ্যাত চায়না-৩ লিচু এখনও বাজারে তেমন আসেনি বলে জানালেন তিনি।

কারওয়ানবাজারে বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী ও দিনাজপুরের আম এখনও বাজারে আসেনি। তবে এরই মধ্যে রাজধানীর আমের বাজার দখলে নিয়েছে সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরের আম।

কারওয়ানবাজারের আম বিক্রেতা জামাল জানান, এবার আমের আমদানি বেশ ভালো। রাজশাহী ও দিনাজপুরের আম আসা শুরু হলে আরও আমদানি বাড়বে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, হিমসাগর, লেংড়া, গোপালভোগসহ নানা জাতের আম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। খুচরাতে এই আমের দাম আকারভেদে ১২০ থেকে ২৫০ টাকা।

এছাড়া আমরূপালী ৩৫০, রানীপ্রসাদ ৩২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। বিভিন্ন দেশী আমও পাওয়া যাচ্ছে প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।

লিচু আর আমের ভিড়ে বাজারে উঁকি দিচ্ছে জাতীয় ফল কাঁঠাল। বাজারে কম উপস্থিতিই জানান দেয় এর দাম হবে বেশি। কাঁঠাল ছোট সাইজের প্রতিটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মাঝারি সাইজের ২০০ থেকে ৩০০ টাকা এবং বড় সাইজের ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

সাশ্রয়ী দামে কাঁঠাল কিনতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানালেন বিক্রেতারা।

জামের আধিক্য থাকলেও জামের বাজার খানিকটা চড়াই বলা চলে। প্রতিকেজি জাম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়।

আকারভেদে মাঝারি সাইজের একটি আনারসের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা, জামরুল প্রতিকেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এদিকে, মৌসুম শেষ হতে চললেও এখনও বাজারে আধিপত্য রয়েছে তরমুজের।

পাইকারি খুচরা বাজারে দামের বিস্তর ফারাক

মৌসুমী ফলের ফলন ভালো হওয়ায় ঠিকঠাক আমদানিও রয়েছে। বিক্রেতারা মনে করছেন এবার ফল সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যেই থাকবে। তবে একই বাজারের পাইকারি আর খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে দামের বিস্তর ফারাক।

ফার্মগেট এলাকায় যে আমের দাম ১০০ টাকা, কারওয়ানবাজারে তা মিলছে খুচরা ৮০ টাকায়। অবশ্য পাইকারিতে ৫০ টাকা কেজিতেই মিলছে। তবে কিনতে হবে একসাথে ৫ কেজি।

পাইকারির তুলনায় দামের এতো পার্থক্য জানতে চাইলে কারওয়ানবাজারের খুচরা আম বিক্রেতা মমিন মিয়া গ্যারান্টি দিয়ে বলেন, ‘আমার আম আর ওই আম এক না, মাল ভালো তাই দাম একটু বেশি। খাইয়া কিনবেন।’

পাইকারি বিক্রেতার কাছে গেলে তিনিও তার ফলের একই গ্যারান্টি দেন।

কারওয়ানবাজারে লিচু কিনতে আসা সরকারি কর্মকর্তা গিয়াসউদ্দিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বাজারে যে পরিমাণ লিচুর উপস্থিতি তাতে দাম মনে হয় আর একটু কম হতে পারতো।’

আমের দামের তারতাম্য সম্পর্কেও অসন্তুষ্টি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যাচাই করে না কিনলে ঠকতে হবে। একই বাজারে এমন পরিস্থিতি থাকা ঠিক নয়। এখানে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।’

কেমিক্যাল আতঙ্ক

গতবারের তুলনায় ক্রেতারা অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে ফল কিনলেও ফলে কেমিক্যালের ব্যাপারে কিছুটা আতঙ্ক রয়েই গেছে।

আম ক্রেতা অরবিন্দ দাস দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পারছি, এবার ফলের বাগানেই প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে। সেজন্য আমরা কিছুটা নিশ্চিত। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত নই। তারপরেও যতটা সম্ভব দেখেশুনেই ফল কিনছি।’

অন্যবারের ফলের সাথে এবারের ফলের রংয়ের পার্থক্যের দিকে তাকানোর অনুরোধ করে আম দোকানি জামাল বলেন, ‘এবার আমাদের বলা হয়েছে, দরকার হলে এক টাকারটা চার টাকায় বেঁচতে। কিন্তু কোন কেমিক্যাল মেশানো যাবে না। এবার বাজারে কেমিক্যালযুক্ত আম নেই।’

লিচু দোকানি মামুন বলেন, ‘লিচুতে কেমিক্যাল দিলে টকটকা লাল থাকতো, কিন্তু দেখেন এবার এমন নাই।’

তাছাড়া ফলের বাগানে এবার কর্তৃপক্ষ নিয়মিত নজরদারি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এবার ফল পুষ্ট হওয়ার আগে পাড়তে দেয় নাই, কোন কিছু মিশাইতে দেয় নাই। এবার গতবারের মতো পরিস্থিতি নাই।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জমে উঠেছে মধুফলের বাজার

আপডেট টাইম : ০৫:৪৮:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জুন ২০১৫

ষড়ঋতুর এ দেশে সারা বছরই দেখা মেলে নানা স্বাদের ফলের। কিন্তু বছরের অন্য সময়ের তুলনায় সবচেয়ে বেশি মৌসুমি ফলের সমাহার এই জ্যৈষ্ঠেই। গরমের তীব্রতার পাশাপাশি রসালো ফলের পসরা সাজিয়ে হাজির হয় এই মধুমাস।

পথে নামলেই রাস্তার মোড়ে মোড়েই মিলছে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, জামরুল, বেল, আনারসসহ হরেক পদের রসালো ফল।

রাজধানীর ফলের বাজারগুলোতে লিচুর আধিক্য সবচেয়ে বেশি দেখা গেলেও বিক্রেতারা বলছেন, এই সময়ে আরও বেশি লিচু বাজারে আসার কথা। কিন্তু ক’দিন বাদেই আসছে রমজান। সে কারণে বাগানমালিকরা লিচু কম ছাড়ছেন। আকারভেদে রাজধানীতে লিচু বিক্রি হচ্ছে প্রতি ১০০টি ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়।

ফার্মগেট এলাকার বিক্রেতা রতন তিন রকমের গ্যারান্টি দিয়ে লিচু বিক্রি করছেন। তার রাজশাহীর লিচুর গ্যারান্টি জানতে চাইলে দ্য রিপোর্টকে জানান, কোন ধরনের কেমিক্যাল নেই, মধুর মতো মিষ্টি আর এই লিচুতে মাংস বেশি, বিচি ছোট।

এখন বাজারে রাজশাহী আর ঈশ্বরদীর বোম্বে লিচুর আধিক্য বেশি। দিনাজপুর এবং রংপুরের বিখ্যাত চায়না-৩ লিচু এখনও বাজারে তেমন আসেনি বলে জানালেন তিনি।

কারওয়ানবাজারে বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী ও দিনাজপুরের আম এখনও বাজারে আসেনি। তবে এরই মধ্যে রাজধানীর আমের বাজার দখলে নিয়েছে সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরের আম।

কারওয়ানবাজারের আম বিক্রেতা জামাল জানান, এবার আমের আমদানি বেশ ভালো। রাজশাহী ও দিনাজপুরের আম আসা শুরু হলে আরও আমদানি বাড়বে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, হিমসাগর, লেংড়া, গোপালভোগসহ নানা জাতের আম পাইকারি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকায়। খুচরাতে এই আমের দাম আকারভেদে ১২০ থেকে ২৫০ টাকা।

এছাড়া আমরূপালী ৩৫০, রানীপ্রসাদ ৩২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। বিভিন্ন দেশী আমও পাওয়া যাচ্ছে প্রতিকেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।

লিচু আর আমের ভিড়ে বাজারে উঁকি দিচ্ছে জাতীয় ফল কাঁঠাল। বাজারে কম উপস্থিতিই জানান দেয় এর দাম হবে বেশি। কাঁঠাল ছোট সাইজের প্রতিটি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মাঝারি সাইজের ২০০ থেকে ৩০০ টাকা এবং বড় সাইজের ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

সাশ্রয়ী দামে কাঁঠাল কিনতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানালেন বিক্রেতারা।

জামের আধিক্য থাকলেও জামের বাজার খানিকটা চড়াই বলা চলে। প্রতিকেজি জাম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়।

আকারভেদে মাঝারি সাইজের একটি আনারসের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা, জামরুল প্রতিকেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এদিকে, মৌসুম শেষ হতে চললেও এখনও বাজারে আধিপত্য রয়েছে তরমুজের।

পাইকারি খুচরা বাজারে দামের বিস্তর ফারাক

মৌসুমী ফলের ফলন ভালো হওয়ায় ঠিকঠাক আমদানিও রয়েছে। বিক্রেতারা মনে করছেন এবার ফল সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যেই থাকবে। তবে একই বাজারের পাইকারি আর খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে দামের বিস্তর ফারাক।

ফার্মগেট এলাকায় যে আমের দাম ১০০ টাকা, কারওয়ানবাজারে তা মিলছে খুচরা ৮০ টাকায়। অবশ্য পাইকারিতে ৫০ টাকা কেজিতেই মিলছে। তবে কিনতে হবে একসাথে ৫ কেজি।

পাইকারির তুলনায় দামের এতো পার্থক্য জানতে চাইলে কারওয়ানবাজারের খুচরা আম বিক্রেতা মমিন মিয়া গ্যারান্টি দিয়ে বলেন, ‘আমার আম আর ওই আম এক না, মাল ভালো তাই দাম একটু বেশি। খাইয়া কিনবেন।’

পাইকারি বিক্রেতার কাছে গেলে তিনিও তার ফলের একই গ্যারান্টি দেন।

কারওয়ানবাজারে লিচু কিনতে আসা সরকারি কর্মকর্তা গিয়াসউদ্দিন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘বাজারে যে পরিমাণ লিচুর উপস্থিতি তাতে দাম মনে হয় আর একটু কম হতে পারতো।’

আমের দামের তারতাম্য সম্পর্কেও অসন্তুষ্টি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যাচাই করে না কিনলে ঠকতে হবে। একই বাজারে এমন পরিস্থিতি থাকা ঠিক নয়। এখানে প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।’

কেমিক্যাল আতঙ্ক

গতবারের তুলনায় ক্রেতারা অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যে ফল কিনলেও ফলে কেমিক্যালের ব্যাপারে কিছুটা আতঙ্ক রয়েই গেছে।

আম ক্রেতা অরবিন্দ দাস দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পারছি, এবার ফলের বাগানেই প্রশাসনের নজরদারি রয়েছে। সেজন্য আমরা কিছুটা নিশ্চিত। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত নই। তারপরেও যতটা সম্ভব দেখেশুনেই ফল কিনছি।’

অন্যবারের ফলের সাথে এবারের ফলের রংয়ের পার্থক্যের দিকে তাকানোর অনুরোধ করে আম দোকানি জামাল বলেন, ‘এবার আমাদের বলা হয়েছে, দরকার হলে এক টাকারটা চার টাকায় বেঁচতে। কিন্তু কোন কেমিক্যাল মেশানো যাবে না। এবার বাজারে কেমিক্যালযুক্ত আম নেই।’

লিচু দোকানি মামুন বলেন, ‘লিচুতে কেমিক্যাল দিলে টকটকা লাল থাকতো, কিন্তু দেখেন এবার এমন নাই।’

তাছাড়া ফলের বাগানে এবার কর্তৃপক্ষ নিয়মিত নজরদারি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এবার ফল পুষ্ট হওয়ার আগে পাড়তে দেয় নাই, কোন কিছু মিশাইতে দেয় নাই। এবার গতবারের মতো পরিস্থিতি নাই।’