গরমের দিনে আরামের পোশাক কী? ঝটপট মিলবে উত্তর, টি-শার্ট। এটি তরুণ-তরুণী—সবার কাছেই জনপ্রিয়। নকশার বৈচিত্র্য আর কাপড়ের কোমলতা—দুয়ে মিলে টি-শার্টের বাজার এখন তুঙ্গে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সারা বিশ্বেই ফ্যাশনেবল তরুণ-তরুণীর কাছে তুমুল জনপ্রিয় টি-শাট।
আজকে টি-শার্টের এই যে জনপ্রিয়তা, এই জনপ্রিয়তার পেছনের গল্প আমরা কজন জানি? কখন কিভাবে এলো এই পোশাক, আসুন জেনে নেয়া যাক।
ফিরে দেখা:
টি-শার্টের উৎপত্তি ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর সদস্যদের জন্য প্রথম টি-শার্ট নামক পোশাকের ডিজাইন করা হয়। এভাবেই জন্ম হয় বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় পোশাকের। আকারটা ইংরেজি টি অক্ষরের মতো হওয়ায় নাম হয়েছিল টি-শার্ট। ১৯২০ সালে অভিধানে স্থান পায় টি-শার্ট শব্দটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত টি-শার্ট ছিল শুধু মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য তৈরিকৃত পোশাক। ১৯৫১ সালে অস্কারজয়ী হলিউডি সিনেমা ‘এ স্ট্রিট কার নেমড ডিসায়ার’-এ মারলন ব্র্যান্ডো প্রথম টি-শার্ট গায়ে অভিনয় করলেন। এর বছর চারেক পর সে সময়ের আমেরিকার আরেক জনপ্রিয় নায়ক জেমস ডিনকেও টি-শার্ট গায়ে সিনেমায় দেখা গেল।
এরপর রক অ্যান্ড রোল উন্মাদনা আর ষাটের দশকের হিপ্পি আন্দোলন কত কিছুই হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। সঙ্গে বাড়তে থাকল টি-শার্টের জনপ্রিয়তা। তারুণ্যের উন্মাদনা টি-শার্টকে ছড়িয়ে নিয়ে গেল বিশ্বের নানা প্রান্তে। এ পোশাক আর যুক্তরাষ্ট্রের গণ্ডিতে আটকে থাকল না।
১৯৩২ সালে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাথলিটদের টি-শার্টে লেখা ছিল ‘টি-শার্টটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি’। আর সেই মর্যাদাবান পোশাক নিজের গায়ে চাপাতে অনেকেই চুরির পথও বেছে নিলেন। এভাবেই টি-শার্ট তারুণ্যের প্রতীক হয়ে উঠতে শুরু করল। ১৯৩৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বিক্রি হওয়া টি-শার্টের দাম ছিল ২৪ সেন্ট। রঙবেরঙের টি-শার্টে লেখা হতে থাকল নানা রকমের স্লোগান ও বক্তব্য। রাজনীতিবিদরা ভোটের বিজ্ঞাপন দিতে শুরু করলেন এই পণ্যের গায়ে। টি-শার্টের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলল— যখন থেকে রক অ্যান্ড রোল ব্যান্ডগুলোর নাম ও তারকাদের ছবির ছাপ পড়া শুরু হলো এর গায়ে। গোটা পৃথিবীর তরুণরা পেয়ে গেলেন তাদের মনের মতো পোশাক।
এই সময়ের টি-শার্ট
গরমের এ সময়টাতে টি-শার্ট যেমন ফ্যাশনেবল তেমনি আরামদায়ক। এখন গোল গলা ও কলার দুই ধরনের টি-শার্টই বেশ চলছে। বর্তমানে একরঙা ও চেকের টি-শার্টের কদরই বেশি। পাশাপাশি প্রিয় ব্যক্তিত্বের ছবি ও লোগো, রিকশা পেইন্ট, বর্ণমালা, রবীন্দ্র-নজরুল কবিতার লাইন, প্রকৃতি নানা মোটিফে টি-শার্ট এখন চলছে। নানারকম পকেট দেওয়া টি-শার্টের কদরও বেশ। টি-শার্টে এখন নতুনত্ব হচ্ছে হাফ হাতার নিচের দিকে ও কলারে ভিন্ন কাপড়ের ব্যবহার। এসব ছাড়াও ফতুয়া গলার টি-শার্টও এখন বেশ চলছে। যেগুলোর হাতা বা নিচের দিকে পাইপিং দেওয়ায় এসেছে নতুনত্ব। কাঁধে বা হাতায় একাধিক মোটা সেলাই দেখা যাচ্ছে। নিচের দিকে সম্পূর্ণ গোল কাট। ক্যাজুয়াল লুকে টি-শার্টের সঙ্গে জিন্স, গ্যাবার্ডিন বা সুতি প্যান্ট বেশ মানায়। জুতার পাশাপাশি স্যান্ডেলও পরতে পারেন।
বেশি তাপ শোষণ করে বলে গরমের সময়টাতে কালো রঙ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। বরং বসন্তের এই সময়টাতে বেছে নিতে পারেন একটু বর্ণিল তবে আরামদায়ক রঙ। সে ক্ষেত্রে নীল, সবুজ, ছাই, ফিরোজা, গোলাপি, লালচে ধরনের রঙগুলো। শার্টের ফেব্রিকের ক্ষেত্রে ফুল কটন, মিক্সড কটন, অরবিন্দ শার্টই বর্তমান ট্রেন্ড। আর টি-শার্ট চলছে স্টেচিং নিট কাপড়ের।
টি শার্ট কেনার আগে
টি-শার্ট কিনলেই চলবে না। আপনার জন্য তা মানাসই হতে হবে। এখানে জেনে নিন টি-শার্টের কোন বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে কিনতে হয়।
১. প্যান্টের বেল্ট এবং উরুসন্ধির মাঝামাঝি পর্যন্ত লম্বা হবে টি-শার্ট। তবে মেয়েদের জন্য নিতম্বের ঠিক ওপর পর্যন্ত হবে লম্বার মাপটি।
২. বিভিন্ন লোগো এবং কারুকাজের টি-শার্ট বেশ সুন্দর দেখায়। এসব ডিজাইন এবং ছবি ব্যাপক সুন্দর চেহারা দেয় টি-শার্টের।
৩. সাধারণ জিন্স এবং শর্ট প্যান্টের সঙ্গে টি-শার্ট পরা হয়। এ ছাড়া খাকি এবং ক্যাজুয়াল স্ল্যাকের সঙ্গেও মানানসই।
৪. গলার ডিজাইনের ক্ষেত্রে সব ধরনই চলনসই। তবে ভি-নেক সেক্সি এবং স্পোর্ট লুক দেয়।
৫. ক্যাজুয়াল লুকের জন্য স্পোর্ট কোট এবং ব্লেজারের নিচেও টি-শার্ট স্মার্ট দেখায়। মেয়েরা কার্ডিগানের নিচে পরতে পারেন।
৬. টি-শার্টের নিচে সেলাই দেওয়া থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে।
৭. স্পোর্ট কোটের নিচে লম্বা হাতার টি-শার্ট বেশ স্টাইলিশ। শীতের জন্য দারুণ ফ্যাশন।
৮. শার্টের ওপরে কখনো টি-শার্ট পরতে নেই।
৯. সব সময় পরিষ্কার টি-শার্ট পরা উচিত। এতে ছেঁড়া বা ফুটো থাকলে পরা উচিত নয়।
১০. দুই-তিন দিন পর পর টি-শার্ট ধুতে হবে। এতে পোশাকটি পরিষ্কার হয় ও যত্নে থাকে – See
কোথায় পাবেন কেমন দামে
ফুটপাথের দোকান থেকে শুরু করে নামিদামি অনেক দোকানে পাওয়া গেলেও, হালফ্যাশনের গুণগত মানের টি-শার্ট কিনতে হলে একটু যাচাই-বাছাই করাই বুদ্ধিমানের কাজ। ক্যাজুয়াল আর ফরমাল, নগরীর সব শপিংমলেই পাওয়া যায় টি-শার্ট। একটু কম দামে কিনতে চাইলে চলে যেতে পারেন আজিজ সুপার মার্কেট, বঙ্গবাজার কিংবা নিউমার্কেট। ভালো ব্রান্ডের দামি টি-শার্ট কিনতে চাইলে যেতে পারেন নগরীর বসুন্ধরা সিটি, পলওয়েল মার্কেট আর এলিফেন্ট রোডের শোরুমগুলোতে। ভালো মানের টি-শার্ট পাওয়া যাব- সোউল ড্যান্স, ডোরস, লা-রিভ, ক্যাটস আই, মেনজক্লাব, প্লাস পয়েন্ট, ওয়েস্কিন, টেক্সমার্ট, জেন্টেল পার্ক, ইস্টওয়ে, ইনফিনিটি প্রভৃতি শোরুমে।
সব ধরনের টি-শার্টের দামইনির্ভর করে ফেব্রিক, ডিজাইন ও ব্র্যান্ডের ওপর। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে ক্যাজুয়াল শার্ট ৮০০ থেকে ১৮০০ টাকা, ব্র্যান্ডের ফরমাল শার্ট ১৪০০ থেকে ৩৫০০ টাকা, ডেনিম শার্ট ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা, নন-ব্র্যান্ডের ফুলহাতা শার্ট ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা, গোল গলা টি-শার্ট ২০০-৩০০ টাকা, কলার টি-শার্ট ২৫০-৭০০ টাকা।