ঢাকা ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কক্সবাজারে তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২
  • ১১৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কক্সবাজার শহরের আদালতপাড়ায় হত্যার হুমকির বিষয়ে আইনজীবীর কাছে পরামর্শ নিয়ে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক তরুণী। গত সোমবার দুর্বৃত্তরা তাঁকে আদালতপাড়া থেকে অপহরণ করে জেলা শহরের একটি বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানানোর পর গতকাল ভোরে পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গতকাল কক্সবাজার সদর মডেল থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন ওই তরুণী।

এ ছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়া ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দুই শিশু এবং নাটোরের গুরুদাসপুরে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বগুড়ায় এক শ্রমজীবী নারী কিশোর গ্যাংয়ের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, শারীরিক পরীক্ষার জন্য ওই তরুণীকে সদর হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ফিরোজ আহমেদ, রাসেল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম ও মো. শরীফ। এজাহার থেকে জানা গেছে, ফিরোজ ও শরীফের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এই হুমকির বিষয়ে মামলার পরামর্শ নিতে সোমবার দুপুরে ওই তরুণী কক্সবাজার আদালত এলাকায় এক আইনজীবীর কাছে যান। আইনজীবীর চেম্বার থেকে বের হওয়া মাত্র ফিরোজ, শরীফসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো কয়েকজন হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে ওই তরুণীকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন। ফিরোজ ওই তরুণীর স্বর্ণালংকার ও টাকা ছিনিয়ে নেন। এরপর শহরের বাহারছড়া এলাকায় ফিরোজের আত্মীয় ফজল কাদেরের বাসায় নিয়ে ওই তরুণীকে আটকে রেখে ফিরোজ ও শরীফ ধর্ষণ করেন। পরে নুরুল ইসলাম ও রাসেল তাঁকে ধর্ষণ করেন। ওই তরুণী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর রাসেল ও শরীফ ওই তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির বাইরে বের করে আনেন। এ দৃশ্য দেখে এক ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে জানানোর পর পুলিশ গিয়ে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। তার আগেই আসামিরা পালিয়ে যান।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

ঘিওর ও গোয়ালন্দে গত শনিবারের ঘটনায় রবিবার বিকেলে মামলার প্রধান আসামির (৩৮, ভুক্তভোগীর সাবেক স্বামী) বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার টুটিয়াম গ্রামে। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন প্রধান আসামির তিন বন্ধু আব্দুর রব ওরফে মুন্না (৪৫), হাসু (৩৪) ও রিয়াজ (৩৫)।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রধান অভিযুক্তের সঙ্গে একই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ওই নারীর (৪৫) দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর করতেন। অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ আদালতে মামলা করেন। এ মামলায় স্বামী গ্রেপ্তার হন। তিনি আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর গত ১৫ নভেম্বর তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর থেকে তাঁকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন সাবেক স্বামী। শনিবার বিকেলে তিনি দৌলতপুরের বাবার বাড়ি থেকে ঘিওরে ফুফুর বাড়িতে যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি ঘিওর পাঁচ রাস্তায় নেমে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় সাবেক স্বামী, তাঁর তিন বন্ধু আব্দুর রব মুন্না, হাসু ও রিয়াজ তাঁকে (নারী) জোর করে মুখ চেপে ধরে একটি প্রাইভেট কারে তুলে নেন। গাড়িতে তাঁকে নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ালে তিনি প্রায় জ্ঞান হারান। চলন্ত গাড়িতে রশিদ, মুন্না ও হাসু তাঁকে ধর্ষণ করেন।

আরো তিনজনকে ধর্ষণ
চকরিয়ার পূর্ব কাহারিয়াঘোনা এলাকার রাস্তা থেকে প্রথম শ্রেণির মাদরাসা শিক্ষার্থীকে (৯) তুলে বাগানে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। গত রবিবার সন্ধ্যার পরের এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে থানায় মামলা করেন শিশুটির মা। পরে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার রোস্তম আলী (৫১) এলাকার মৃত গোলাল আহমদের ছেলে। এজাহারে বলা হয়েছে, রোস্তম শিশুটিকে মাদরাসায় যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করতেন।

চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি কালের কণ্ঠকে বলেন, শিশুটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালের ওসিসিতে পাঠানো হয়েছে।

উল্লাপাড়া উপজেলার দুর্গানগর ইউনিয়নের বালসাবাড়ী ইসলামপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে সোমবার বিকেলে এক কিশোরীকে (১১) দুই যুবক ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কিশোর গ্যাংয়ের পাঁচজন গ্রেপ্তার
বগুড়া শহরের হরিগাড়ী এলাকায় গত শুক্রবারের ঘটনায় সোমবার গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক, অন্যরা কিশোর।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার, নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া এবং প্রতিনিধি গোয়ালন্দ, চকরিয়া, উল্লাপাড়া ও গুরুদাসপুর)

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

কক্সবাজারে তরুণীকে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ

আপডেট টাইম : ০৯:৫৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ মার্চ ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কক্সবাজার শহরের আদালতপাড়ায় হত্যার হুমকির বিষয়ে আইনজীবীর কাছে পরামর্শ নিয়ে ফেরার পথে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক তরুণী। গত সোমবার দুর্বৃত্তরা তাঁকে আদালতপাড়া থেকে অপহরণ করে জেলা শহরের একটি বাসায় আটকে রেখে ধর্ষণ করেন। জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানানোর পর গতকাল ভোরে পুলিশ ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় গতকাল কক্সবাজার সদর মডেল থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরো পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন ওই তরুণী।

এ ছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়া ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় দুই শিশু এবং নাটোরের গুরুদাসপুরে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এসব ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বগুড়ায় এক শ্রমজীবী নারী কিশোর গ্যাংয়ের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, শারীরিক পরীক্ষার জন্য ওই তরুণীকে সদর হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ফিরোজ আহমেদ, রাসেল উদ্দিন, নুরুল ইসলাম ও মো. শরীফ। এজাহার থেকে জানা গেছে, ফিরোজ ও শরীফের কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এই হুমকির বিষয়ে মামলার পরামর্শ নিতে সোমবার দুপুরে ওই তরুণী কক্সবাজার আদালত এলাকায় এক আইনজীবীর কাছে যান। আইনজীবীর চেম্বার থেকে বের হওয়া মাত্র ফিরোজ, শরীফসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো কয়েকজন হাত-পা ও মুখ চেপে ধরে ওই তরুণীকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেন। ফিরোজ ওই তরুণীর স্বর্ণালংকার ও টাকা ছিনিয়ে নেন। এরপর শহরের বাহারছড়া এলাকায় ফিরোজের আত্মীয় ফজল কাদেরের বাসায় নিয়ে ওই তরুণীকে আটকে রেখে ফিরোজ ও শরীফ ধর্ষণ করেন। পরে নুরুল ইসলাম ও রাসেল তাঁকে ধর্ষণ করেন। ওই তরুণী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। এরপর রাসেল ও শরীফ ওই তরুণীকে টেনেহিঁচড়ে বাড়ির বাইরে বের করে আনেন। এ দৃশ্য দেখে এক ব্যক্তি ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে জানানোর পর পুলিশ গিয়ে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে। তার আগেই আসামিরা পালিয়ে যান।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি শেখ মুনীর বলেন, এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

ঘিওর ও গোয়ালন্দে গত শনিবারের ঘটনায় রবিবার বিকেলে মামলার প্রধান আসামির (৩৮, ভুক্তভোগীর সাবেক স্বামী) বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার টুটিয়াম গ্রামে। এজাহারভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন প্রধান আসামির তিন বন্ধু আব্দুর রব ওরফে মুন্না (৪৫), হাসু (৩৪) ও রিয়াজ (৩৫)।

পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে প্রধান অভিযুক্তের সঙ্গে একই উপজেলার মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ওই নারীর (৪৫) দ্বিতীয় বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর করতেন। অত্যাচার থেকে রক্ষা পেতে তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জ আদালতে মামলা করেন। এ মামলায় স্বামী গ্রেপ্তার হন। তিনি আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর গত ১৫ নভেম্বর তাঁদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর থেকে তাঁকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন সাবেক স্বামী। শনিবার বিকেলে তিনি দৌলতপুরের বাবার বাড়ি থেকে ঘিওরে ফুফুর বাড়িতে যাচ্ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তিনি ঘিওর পাঁচ রাস্তায় নেমে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় সাবেক স্বামী, তাঁর তিন বন্ধু আব্দুর রব মুন্না, হাসু ও রিয়াজ তাঁকে (নারী) জোর করে মুখ চেপে ধরে একটি প্রাইভেট কারে তুলে নেন। গাড়িতে তাঁকে নেশাজাতীয় কিছু খাওয়ালে তিনি প্রায় জ্ঞান হারান। চলন্ত গাড়িতে রশিদ, মুন্না ও হাসু তাঁকে ধর্ষণ করেন।

আরো তিনজনকে ধর্ষণ
চকরিয়ার পূর্ব কাহারিয়াঘোনা এলাকার রাস্তা থেকে প্রথম শ্রেণির মাদরাসা শিক্ষার্থীকে (৯) তুলে বাগানে নিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। গত রবিবার সন্ধ্যার পরের এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে থানায় মামলা করেন শিশুটির মা। পরে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার রোস্তম আলী (৫১) এলাকার মৃত গোলাল আহমদের ছেলে। এজাহারে বলা হয়েছে, রোস্তম শিশুটিকে মাদরাসায় যাওয়ার পথে উত্ত্যক্ত করতেন।

চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি কালের কণ্ঠকে বলেন, শিশুটিকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সদর হাসপাতালের ওসিসিতে পাঠানো হয়েছে।

উল্লাপাড়া উপজেলার দুর্গানগর ইউনিয়নের বালসাবাড়ী ইসলামপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে সোমবার বিকেলে এক কিশোরীকে (১১) দুই যুবক ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

কিশোর গ্যাংয়ের পাঁচজন গ্রেপ্তার
বগুড়া শহরের হরিগাড়ী এলাকায় গত শুক্রবারের ঘটনায় সোমবার গ্রেপ্তার পাঁচজনের মধ্যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক, অন্যরা কিশোর।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার, নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া এবং প্রতিনিধি গোয়ালন্দ, চকরিয়া, উল্লাপাড়া ও গুরুদাসপুর)