ঢাকা ০৯:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখনও পুলিশের প্রায় ৮০০ সদস্য পলাতক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:১৮:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ৫৭ বার

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৮০০ পুলিশ সদস্য এখনও কাজে যোগদান করেননি। কয়েক দফায় তাদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হলেও কোনো হদিস নেই এসব সদস্যের। তারা কোথায় আছেন, সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে। হদিস নেই পুলিশের বিতর্কিত কর্তাদের— শিরোনামে এক প্রতিবেদনে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য দিয়েছে দৈনিক যুগান্তর। আজ (শনিবার) প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে আরও লেখা হয়েছে— বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে প্রথম থেকেই বিতর্কিত ভূমিকায় ছিলেন পুলিশের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা। আন্দোলনকারীদের হয়রানি, সমন্বয়কদের হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনসহ নির্বিচারে গুলি করে শতশত ছাত্র-জনতা হত্যার নির্দেশ-দাতা বিতর্কিত এসব কর্মকর্তা এখন লাপাত্তা। তাদের অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ফেসবুকে নানা গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। খোদ পুলিশের মধ্যেই আছে নানা আলোচনা। কেউ বলছেন, তারা একটি বিশেষ বাহিনীর হেফাজতে আছেন। কারও দাবি, তারা প্রশাসনের সহায়তায় দেশ ছেড়েছেন।

আবার গণপিটুনি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন-এমন তথ্যও ছড়ানো হয়েছে। পলাতক এসব কর্মকর্তার মধ্যে আছেন সাবেক এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ঢাকা জেলার সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ। প্রকৃত পক্ষে তারা কোথায় আছেন, কেন আইনের আওতায় আসছেন না, সে বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। এসব কর্মকর্তাসহ পুলিশের শীর্ষ অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাও হয়েছে। এখন পর্যন্ত তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য শীর্ষ কর্তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পুলিশে একচ্ছত্র প্রভাব ছিল সাবেক এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলামের। বিসিএস ১৫তম ব্যাচের এ কর্মকর্তার বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকসুদপুরে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা-ভাজন হওয়ায় পুলিশে অঘোষিত ডন ছিলেন তিনি। তার কথার বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না তৎকালীন আইজিপি

অভিযোগ আছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে পুলিশে কট্টর আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের (কথিত পুলিশ লীগ) নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক ও দিকনির্দেশনা দিতেন মনিরুল ইসলাম। ৫ আগস্ট বিকালে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে শীর্ষ যে কর্মকর্তাদের হেলিকপ্টারে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়, সেখানে ছিলেন মনিরুল ইসলামও। পরবর্তী সময়ে চাকরীচ্যুত হন তিনি। মনিরুলের বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি হত্যা মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এখনো তাকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুঞ্জন রয়েছে, তিনি একটি বাহিনীর নজরদারিতেই আছেন। আবার এমনও শোনা যাচ্ছে, তিনি দেশ ছেড়েছেন। তবে ঘটনার মাস পেরোলেও তার প্রকৃত অবস্থান জানা যায়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিএমপির সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশীদ। বিসিএস ২০তম ব্যাচের কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের বাসিন্দা হারুন নিজেকে সাবেক রাষ্ট্রপতির নাতি পরিচয় দিতেন। হারুনের ভাতের হোটেল দেশব্যাপী বহুল সমালোচিত। এ কর্মকর্তা আন্দোলন দমাতে সমন্বয়কদের হেফাজতে নেওয়া, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-নির্যাতনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেওয়াল টপকে বের হয়ে লাপাত্তা হন তিনি। তার অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা গুঞ্জন রটেছে। তিনি হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় একটি বাহিনীর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন-এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ফেসবুকে। আবার তিনি সীমান্ত পারি দিয়ে দেশ ছেড়েছে-এমন তথ্যও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। তার বিরুদ্ধে অন্তত ৫০টি হত্যা মামলা হয়েছে। কিন্তু তাকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

এখনও পুলিশের প্রায় ৮০০ সদস্য পলাতক

আপডেট টাইম : ০৪:১৮:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যাওয়া বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৮০০ পুলিশ সদস্য এখনও কাজে যোগদান করেননি। কয়েক দফায় তাদের কাজে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হলেও কোনো হদিস নেই এসব সদস্যের। তারা কোথায় আছেন, সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই পুলিশ সদর দপ্তরের কাছে। হদিস নেই পুলিশের বিতর্কিত কর্তাদের— শিরোনামে এক প্রতিবেদনে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য দিয়েছে দৈনিক যুগান্তর। আজ (শনিবার) প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে আরও লেখা হয়েছে— বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে প্রথম থেকেই বিতর্কিত ভূমিকায় ছিলেন পুলিশের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা। আন্দোলনকারীদের হয়রানি, সমন্বয়কদের হেফাজতে নিয়ে নির্যাতনসহ নির্বিচারে গুলি করে শতশত ছাত্র-জনতা হত্যার নির্দেশ-দাতা বিতর্কিত এসব কর্মকর্তা এখন লাপাত্তা। তাদের অবস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ফেসবুকে নানা গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। খোদ পুলিশের মধ্যেই আছে নানা আলোচনা। কেউ বলছেন, তারা একটি বিশেষ বাহিনীর হেফাজতে আছেন। কারও দাবি, তারা প্রশাসনের সহায়তায় দেশ ছেড়েছেন।

আবার গণপিটুনি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন-এমন তথ্যও ছড়ানো হয়েছে। পলাতক এসব কর্মকর্তার মধ্যে আছেন সাবেক এসবি প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, অ্যাডিশনাল ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ারদার, ঢাকা জেলার সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রমুখ। প্রকৃত পক্ষে তারা কোথায় আছেন, কেন আইনের আওতায় আসছেন না, সে বিষয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। এসব কর্মকর্তাসহ পুলিশের শীর্ষ অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলাও হয়েছে। এখন পর্যন্ত তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক আইজিপি শহীদুল হক ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য শীর্ষ কর্তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পুলিশে একচ্ছত্র প্রভাব ছিল সাবেক এসবিপ্রধান মনিরুল ইসলামের। বিসিএস ১৫তম ব্যাচের এ কর্মকর্তার বাড়ি গোপালগঞ্জের মোকসুদপুরে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আস্থা-ভাজন হওয়ায় পুলিশে অঘোষিত ডন ছিলেন তিনি। তার কথার বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না তৎকালীন আইজিপি

অভিযোগ আছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমাতে পুলিশে কট্টর আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তাদের (কথিত পুলিশ লীগ) নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক ও দিকনির্দেশনা দিতেন মনিরুল ইসলাম। ৫ আগস্ট বিকালে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে শীর্ষ যে কর্মকর্তাদের হেলিকপ্টারে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়, সেখানে ছিলেন মনিরুল ইসলামও। পরবর্তী সময়ে চাকরীচ্যুত হন তিনি। মনিরুলের বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি হত্যা মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। কিন্তু এখনো তাকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুঞ্জন রয়েছে, তিনি একটি বাহিনীর নজরদারিতেই আছেন। আবার এমনও শোনা যাচ্ছে, তিনি দেশ ছেড়েছেন। তবে ঘটনার মাস পেরোলেও তার প্রকৃত অবস্থান জানা যায়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলেন বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা ডিএমপির সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন-অর-রশীদ। বিসিএস ২০তম ব্যাচের কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের বাসিন্দা হারুন নিজেকে সাবেক রাষ্ট্রপতির নাতি পরিচয় দিতেন। হারুনের ভাতের হোটেল দেশব্যাপী বহুল সমালোচিত। এ কর্মকর্তা আন্দোলন দমাতে সমন্বয়কদের হেফাজতে নেওয়া, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার-নির্যাতনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন।

সূত্র বলছে, ৫ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেওয়াল টপকে বের হয়ে লাপাত্তা হন তিনি। তার অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা গুঞ্জন রটেছে। তিনি হামলার শিকার হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় একটি বাহিনীর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন-এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ফেসবুকে। আবার তিনি সীমান্ত পারি দিয়ে দেশ ছেড়েছে-এমন তথ্যও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। তার বিরুদ্ধে অন্তত ৫০টি হত্যা মামলা হয়েছে। কিন্তু তাকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।