সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন সাংবাদিক মোজাম্মেল হক বাবু ও শ্যামল দত্ত। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোর ৬টার দিকে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার দর্শা সীমান্ত এলাকা থেকে স্থানীয়রা তারাসহ আরও দুইজনকে আটক করে পুলিশে দেন। এ সময় তাদের বহনকারী একটি প্রাইভেটকার স্থানীয়রা জব্দ করেন বলে জানান ধোবাউড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. চাঁন মিয়া।
তবে এ ঘটনায় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাদের মধ্যস্থতায় তারা ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় তাদের রাতভর আটকে রেখে মারধর করে গলায় ছুরি ধরে লুটে নেওয়া হয় ৫০ হাজার ভারতীয় রুপি, ডলার ও নগদ অর্থ।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এই ঘটনাটি ফাঁস হওয়ায় উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে বিএনপিসহ অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যেও।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, রোববার দিবাগত রাত ৮টার দিকে একটি সাদা প্রাইভেটকার যোগে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলা সদরের সুতিয়া নদীর ব্রিজ মোড় এলাকায় যান ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, একাত্তর টেলিভিশনের সিইও মোজাম্মেল বাবু, সিনিয়র রিপোর্টার জেমসন মাহবুব ও প্রাইভেটকার চালক সেলিম। এ সময় তাদের সেখানে দেখা করেন উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য রাজু, সাবেক স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মুশফিক ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাওনসহ ১০ থেকে ১২ জনের একটি গ্রুপ।
সেখান থেকে ওই সাংবাদিকদের তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে নিয়ে আসেন। কিন্তু সেখানে লোকজনের আনাগোনা থাকায় চারটি মোটরসাইকেল যোগে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় হরচন্দ্রপুরের একটি নির্জন বাড়িতে। এরপর সেখানে রাতভর নানান নাটকীয়তার পর সকালে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এর আগে তাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার ভারতীয় রুপি, ডলার ও নগদ অর্থ লুটে নেওয়া হয়।
পরে ভোর রাতে ওই সাংবাদিকরা উপজেলার দর্শা এলাকা হয়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে ভোরের আলো মারিয়ে ওই সাংবাদিকদের হেঁটে হেঁটে পথ চলতেও দেখা গেছে। কিন্তু দর্শা এলাকায় পৌঁছলে স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তবে শ্যামল দত্ত দাড়ি গোঁফ ছেঁটে ফেলায় এলাকাবাসি প্রথমে তাকে চিনতে না পারলেও পরে চিনতে পেরে আটক পরে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন বলে দাবি ওই সূত্রের।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সাংবাদিক জানান, থানায় আটক অবস্থায় ময়মনসিংহে কর্মরত একাধিক সাংবাদিকের সঙ্গে শ্যামল দত্তসহ সঙ্গীদের সাক্ষাতে কথা হয়েছে। এ সময় শ্যামল দত্ত তাদের জানান, গতরাতে একটি নির্জন বাড়িতে আটকে রেখে মারধর করে গলায় ছুরি ধরে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, ভারতীয় রুপি ও ডলার লুটে নেওয়া হয়।
অপর একটি সূত্রের দাবি, ময়মনসিংহের ছেলে একাত্তর টেলিভিশনের সাংবাদিক জেমসন মাহাবুবের মাধ্যমে শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল বাবু গত পরশু ময়মনসিংহে আসেন। এরপর অতি গোপনীয়তায় তারা ময়মনসিংহের অজ্ঞাত স্থানে রাত্রিযাপন করে সোমবার ভোর রাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালানোর পরিকল্পনা করেন। কিন্তু ওই পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় তারা এলাকাবাসীর কাছে ধরা খেয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ হন।
সূত্রমতে, এ ঘটনায় মদদ দেওয়া ও সহযোগিতা করার অভিযোগে ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক সমালোচনার পাশাপাশি অভিযুক্ত নেতাকর্মীরা নিজের ফেসবুক ওয়ালে দিয়েছেন প্রতিবাদী পোস্ট।
এসব বিষয়ে জানতে দিনভর যোগাযোগের চেষ্টা করেও উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য রাজু, সাবেক স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মুশফিক ও উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাওনের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে রাত পৌনে ৮টার দিকে মোবাইল ফোনে কল দিলে উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সদস্য রাজু বলেন, দুপুরে ঘুম থেকে উঠে শুনেছি এ ঘটনার সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে অপপ্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। গত সন্ধ্যায় আমি এলাকায় ছিলাম না। আওয়ামী লীগ এবং আমাদের দলের গ্রুপিংয়ের কারণে এসব অপপ্রচার করা হচ্ছে। বিচার চেয়ে প্রয়োজনে আমি মামলা করব।
একই ধরনের মন্তব্য করেছেন সাবেক স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা মুশফিক। তিনি বলেন, আমার বাবা (উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য আজাহারুল ইসলাম কাছল) এবং আমাকে জড়িয়ে একটি মহল মিথ্যা রটনা করছে। আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না
তবে এই বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ছাত্রদল নেতা শাওনের বক্তব্য জানা যায়নি।
এর আগে অবৈধভাবে ভারতে পালাতে গিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্তে সাংবাদিক শ্যামল দত্ত, মোজাম্মেল বাবুসহ চারজন আটক হন। সোমবার ভোর ৬টার দিকে ধোবাউড়ার দর্শা এলাকায় স্থানীয়রা তাদের আটক করে পুলিশে দেয়। পরে এদিন বিকালে কড়া নিরাপত্তায় ঢাকার ডিবি পুলিশের একটি টিম তাদের ঢাকায় নিয়ে যায় বলে নিশ্চিত করেছেন ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চান মিয়া।