ঢাকা ০৩:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেঁয়াজ চাষে জমি তৈরি, বীজ ও সার ব্যবস্থাপনাসহ বিস্তারিত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৫২:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১৭৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি অর্থকরী মসলা ফসল। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই পেঁয়াজের চাষ হয়। জলবায়ুর পরিবর্তন, বৈরী আবহাওয়া এবং বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজের জাতীয় গড় ফলন ৯.৭৩ টন/হেক্টর। বর্তমানে দেশে ১.৭৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে ১৭.৩৮ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে (বিবিএস,২০১৮)।

জাত ও বৈশিষ্ট্য : এ দেশে এখনও দেশী জাতের পেঁয়াজের চাষাবাদ হয়ে আসছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র হতে বারি পেঁয়াজ-১ (শীতকালীন), বারি পেঁয়াজ-২, (গ্রীষ্মকালীন), বারি পেঁয়াজ-৩ (গ্রীষ্মকালীন), বারি পেঁয়াজ-৪ (শীতকালীন), বারি পেঁয়াজ-৫(গ্রীষ্মকালীন) ও বারি পেঁয়াজ-৬ (শীতকালীন) নামে ৬টি জাত মুক্তায়িত হয়েছে।

মাটি:
দো-আঁশ ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হালকা দো-আঁশ। উর্বর, সেচ, পানি নিষ্কাশনসহ পিএইচ ৫.৮-৬.৫ থাকতে হবে। গভীর চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত গভীর, ঝুরঝুরে হালকা দো-আঁশ বা পলিযুক্ত মাটি পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। মাটির পি এইচ ৫.৮-৬.৮ থাকলে পেঁয়াজের কন্দ ও বীজের ফলন ভালো হয়। যেসব জমিতে পানি জমে সে সব জমিতে পেঁয়াজ বীজ মোটেও ভালো হয় না।

রোপণ
রোপণের সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার এবং পেঁয়াজ থেকে পেঁয়াজের দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার হতে হবে।

বীজ
১. কন্দ ১২০-১৫০ কেজি/বিঘা
২. বীজ ৪৫০-৫০০ গ্রাম/বিঘা
৩. বীজ ছিটালে ৮০০-১০০০ গ্রাম/বিঘা

সার
একবিঘা জমির জন্য ইউরিয়া ৩৫ কেজি, টিএসপি/ডিএপি ৩০ কেজি, এমপি ২০ কেজি, ফুরাডান ৫জি ৩ কেজি, মুক্তাপ্লাস ২ কেজি এবং গোবর ১.৫ টন। শেষ চাষের সময় সব গোবর, টিএসপি, অন্যান্য সার এবং ইউরিয়া, এমপি সারের অর্ধেক জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া, এমপি সার রোপণের ২৫ দিন এবং ৫০ দিন পর দুই ভাগ করে দিতে হবে। পিএইচের মাত্রা তিনের নিচে হলে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ
মাটির অবস্থা ভেদে ১০-১৫ দিন পর পর সেচ প্রয়োজন। জলাবদ্ধতায় পেঁয়াজের ক্ষতি হয়।

থ্রিপস পোকা : আক্রান্ত পাত রূপালী রঙের অথবা পাতায় ক্ষুদ্রাকৃতির বাদামি দাগ বা ফোঁটা দেখা যাবে। পাতা শুকিয়ে বিকৃত হতে পারে। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে কন্দের আকার ছোট ও বিকৃত হয়।

দমন : সাবান মিশ্রিত পানি ৪ গ্রাম/লিটার হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে। নীল অথবা সাদা আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করে এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক কেজি আধা ভাঙা নিমবীজ ২০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি (ছেঁকে নেয়ার পর) পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা। আক্রমণ বেশি হলে জৈব বালাইনাশক স্পিনোসেড (সাকসেস) ১ লিটার পানিতে ১.২ মিলি হারে ৭-১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে উপরে উল্লিখিত কীটনাশক বর্ণিত হারে ফুল ফোটার আগে স্প্রে করলে এ পোকার আক্রমণ কমানো যায়। কিন্তু ফুল ফোঁটার পর পোকার আক্রমণ দেখা গেলে বিকেল ৫টার দিকে স্প্রে করা যেতে পারে।

পেঁয়াজ চাষে জমি তৈরি, বীজ ও সার ব্যবস্থাপনাসহ বিস্তারিত বিষয়ে লিখেছেন ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, শিবগঞ্জ, বগুড়া।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পেঁয়াজ চাষে জমি তৈরি, বীজ ও সার ব্যবস্থাপনাসহ বিস্তারিত

আপডেট টাইম : ০৮:৫২:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি অর্থকরী মসলা ফসল। দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই পেঁয়াজের চাষ হয়। জলবায়ুর পরিবর্তন, বৈরী আবহাওয়া এবং বিভিন্ন রোগ ও পোকার আক্রমণ ইত্যাদির কারণে বাংলাদেশে পেঁয়াজের জাতীয় গড় ফলন ৯.৭৩ টন/হেক্টর। বর্তমানে দেশে ১.৭৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে ১৭.৩৮ লক্ষ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে (বিবিএস,২০১৮)।

জাত ও বৈশিষ্ট্য : এ দেশে এখনও দেশী জাতের পেঁয়াজের চাষাবাদ হয়ে আসছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মসলা গবেষণা কেন্দ্র হতে বারি পেঁয়াজ-১ (শীতকালীন), বারি পেঁয়াজ-২, (গ্রীষ্মকালীন), বারি পেঁয়াজ-৩ (গ্রীষ্মকালীন), বারি পেঁয়াজ-৪ (শীতকালীন), বারি পেঁয়াজ-৫(গ্রীষ্মকালীন) ও বারি পেঁয়াজ-৬ (শীতকালীন) নামে ৬টি জাত মুক্তায়িত হয়েছে।

মাটি:
দো-আঁশ ও জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ হালকা দো-আঁশ। উর্বর, সেচ, পানি নিষ্কাশনসহ পিএইচ ৫.৮-৬.৫ থাকতে হবে। গভীর চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত গভীর, ঝুরঝুরে হালকা দো-আঁশ বা পলিযুক্ত মাটি পেঁয়াজ বীজ চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। মাটির পি এইচ ৫.৮-৬.৮ থাকলে পেঁয়াজের কন্দ ও বীজের ফলন ভালো হয়। যেসব জমিতে পানি জমে সে সব জমিতে পেঁয়াজ বীজ মোটেও ভালো হয় না।

রোপণ
রোপণের সময় সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেন্টিমিটার এবং পেঁয়াজ থেকে পেঁয়াজের দূরত্ব ১৫ সেন্টিমিটার হতে হবে।

বীজ
১. কন্দ ১২০-১৫০ কেজি/বিঘা
২. বীজ ৪৫০-৫০০ গ্রাম/বিঘা
৩. বীজ ছিটালে ৮০০-১০০০ গ্রাম/বিঘা

সার
একবিঘা জমির জন্য ইউরিয়া ৩৫ কেজি, টিএসপি/ডিএপি ৩০ কেজি, এমপি ২০ কেজি, ফুরাডান ৫জি ৩ কেজি, মুক্তাপ্লাস ২ কেজি এবং গোবর ১.৫ টন। শেষ চাষের সময় সব গোবর, টিএসপি, অন্যান্য সার এবং ইউরিয়া, এমপি সারের অর্ধেক জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া, এমপি সার রোপণের ২৫ দিন এবং ৫০ দিন পর দুই ভাগ করে দিতে হবে। পিএইচের মাত্রা তিনের নিচে হলে চুন প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ
মাটির অবস্থা ভেদে ১০-১৫ দিন পর পর সেচ প্রয়োজন। জলাবদ্ধতায় পেঁয়াজের ক্ষতি হয়।

থ্রিপস পোকা : আক্রান্ত পাত রূপালী রঙের অথবা পাতায় ক্ষুদ্রাকৃতির বাদামি দাগ বা ফোঁটা দেখা যাবে। পাতা শুকিয়ে বিকৃত হতে পারে। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হলে কন্দের আকার ছোট ও বিকৃত হয়।

দমন : সাবান মিশ্রিত পানি ৪ গ্রাম/লিটার হারে প্রয়োগ করা যেতে পারে। নীল অথবা সাদা আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করে এই পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক কেজি আধা ভাঙা নিমবীজ ২০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি (ছেঁকে নেয়ার পর) পাতার নিচের দিকে স্প্রে করা। আক্রমণ বেশি হলে জৈব বালাইনাশক স্পিনোসেড (সাকসেস) ১ লিটার পানিতে ১.২ মিলি হারে ৭-১০ দিন পর পর ৩ বার স্প্রে করে এদের নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে উপরে উল্লিখিত কীটনাশক বর্ণিত হারে ফুল ফোটার আগে স্প্রে করলে এ পোকার আক্রমণ কমানো যায়। কিন্তু ফুল ফোঁটার পর পোকার আক্রমণ দেখা গেলে বিকেল ৫টার দিকে স্প্রে করা যেতে পারে।

পেঁয়াজ চাষে জমি তৈরি, বীজ ও সার ব্যবস্থাপনাসহ বিস্তারিত বিষয়ে লিখেছেন ড. মোঃ নুর আলম চৌধুরী ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, মসলা গবেষণা কেন্দ্র, শিবগঞ্জ, বগুড়া।