ঢাকা ০৪:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিস্টুলা চেনার উপায়, কী করবেন?

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১৩৮ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পায়ুপথের জটিল রোগগুলোর মধ্যে একটি ফিস্টুলা।  অনেকে ফিস্টুলাকে পাইলসের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন।  দুটির ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ ও চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে।  সঠিকভাবে রোগ চিহ্নিত করে চিকিৎসা নিতে পারলে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব।

সাধারণত পায়ুপথের গ্লান্ডগুলোয় ইনফেকশন থেকে এনাল ফিস্টুলার শুরু।  ইনফেকশন থেকে ফোড়া হয় এবং সেই ফোড়া ফেটে গিয়ে অথবা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুঁজ বের করে দিলে পায়ুপথের বাইরের ত্বকের সঙ্গে এনাল গ্লান্ডের সংযোগ স্থাপিত হয় এবং পায়ুপথের বাইরের ত্বকের সঙ্গে এনাল গ্লান্ডের মাঝে এক সুড়ঙ্গের মতো পথ তৈরি হয়।

পুঁজ বেরিয়ে যাওয়ার পর উপসর্গের উন্নতি হয়।  পুঁজ ধীরে ধীরে আবার জমতে থাকে এবং একটা সময়ের পর ফোলা ব্যথা জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।  উপসর্গগুলোর মাত্রা রোগীভেদে কম বেশি হয়।  দীর্ঘস্থায়ী ফিস্টুলা বাইরে এবং ভেতরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক ছিদ্র বা মুখ থাকতে পারে এবং ভেতরের মুখ যদি পেশির বেশ ওপরে হয় তবে চিকিৎসা জটিলতার সম্মুখীন হয়।

ফিস্টুলা অস্ত্রোপচারের পর আবারও হতে পারে।  অস্ত্রোপচারের পরের সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  সঠিক পদ্ধতিতে হিট বাথ নিতে হয়।  পায়ুপথ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়।

পায়ুপথে ফিস্টুলা চেনার উপায় ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন কেয়ার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বৃহদ্রান্ত ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুল হক মাসুম।

ফিস্টুলা চিনবেন কীভাবে

ত্বকের ওপরে যে মুখটা লাল ও প্রদাহময় যেখান থেকে পুঁজ অথবা রক্ত বেরিয়ে আসে।  বাইরের মুখটা সহজেই চোখে পড়ে। পায়ুপথের ভেতরের মুখটা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। এমআরআই স্ক্যান, এন্ডো-এনাল আল্ট্রাসাউন্ড ফিস্টুলা পথকে সঠিকভাবে চিত্রিত করতে পারে। যদি ফিস্টুলোগ্রাম এক্সরে ব্যবহার করা হয়, ফিস্টুলা পথটা যেহেতু সবসময় খোলা থাকে না দূষিত ময়লাযুক্ত শক্ত পুঁজ দ্বারা বন্ধ থাকতে পারে, ফিস্টুলোগ্রাম এক্সরে দ্বারা ঠিক পথ নির্ণয় সাধারণত কষ্টকর, সব সময় বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

এই পরীক্ষাগুলো সাধারণত জটিল ফিস্টুলার জন্য সীমাবদ্ধ থাকে।  বেশিরভাগ ফিস্টুলা জেনারেল এনেস্থেসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করার পর লকহার্ট ম্যামারি নামে একজন ইংরেজ ব্রিটিশ সার্জন আবিষ্কৃত ধাতু নির্মিত ‘প্রব’ (লকহার্ট ম্যামারি প্রব) বাইরের মুখ থেকে ফিস্টুলা পথ দিয়ে ভেতরের মুখ দিয়ে বের করে এনে ফিস্টুলা পথটা পুরোপুরি শনাক্ত করা যায় এবং ফিস্টুলা পথটা পায়ুপথের মাংসপেশির ওপরে অথবা নিচের দিকে খুলেছে কিনা সেটা বুঝতে পারা যায়।

অস্ত্রোপচার

ফিস্টুলা পথ আচ্ছাদিত পায়ুপথের চর্ম ও পেশি কোনো মারাত্মক জটিলতা ছাড়াই কেটে দেওয়া যায় এবং ফিস্টুলা থেকে আরোগ্যলাভ সম্ভব হয়।  কিন্তু যদি ফিস্টুলা পথের ভেতরের মুখ পায়ুপথের মাংসপেশির ওপরে উন্মুক্ত হয় তাহলে ফিস্টুলা পথ আচ্ছাদিত পায়ুপথের পেশি কেটে আরোগ্যলাভ তো সম্ভবই নয়, মল নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে পায়ুপথ দিয়ে অবিরত মল ঝরতে থাকে এবং রোগীর জীবন দুর্বিষহ এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অসম্ভবে পরিণত হয় সে কারণে উচ্চ অবস্থিত ফিস্টুলা চিকিৎসা সম্পূর্ণ আলাদা এবং কয়েকবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হয়ে থাকে যাতে করে পায়ুপথ নিয়ন্ত্রণ নষ্ট না হয়ে যায়। যে বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে উচ্চ অবস্থিত ফিস্টুলার রোগ মুক্তি সম্ভব তার মধ্যে সিটন, ফিস্টুলা প্লাগ, প্লাস্টিক ফ্ল্যাপ এবং অন্যান্য জটিল শল্যচিকিৎসা উল্লেখ্য।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ফিস্টুলা চেনার উপায়, কী করবেন?

আপডেট টাইম : ০৯:৫৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পায়ুপথের জটিল রোগগুলোর মধ্যে একটি ফিস্টুলা।  অনেকে ফিস্টুলাকে পাইলসের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন।  দুটির ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ ও চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে।  সঠিকভাবে রোগ চিহ্নিত করে চিকিৎসা নিতে পারলে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব।

সাধারণত পায়ুপথের গ্লান্ডগুলোয় ইনফেকশন থেকে এনাল ফিস্টুলার শুরু।  ইনফেকশন থেকে ফোড়া হয় এবং সেই ফোড়া ফেটে গিয়ে অথবা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুঁজ বের করে দিলে পায়ুপথের বাইরের ত্বকের সঙ্গে এনাল গ্লান্ডের সংযোগ স্থাপিত হয় এবং পায়ুপথের বাইরের ত্বকের সঙ্গে এনাল গ্লান্ডের মাঝে এক সুড়ঙ্গের মতো পথ তৈরি হয়।

পুঁজ বেরিয়ে যাওয়ার পর উপসর্গের উন্নতি হয়।  পুঁজ ধীরে ধীরে আবার জমতে থাকে এবং একটা সময়ের পর ফোলা ব্যথা জ্বর ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।  উপসর্গগুলোর মাত্রা রোগীভেদে কম বেশি হয়।  দীর্ঘস্থায়ী ফিস্টুলা বাইরে এবং ভেতরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে একাধিক ছিদ্র বা মুখ থাকতে পারে এবং ভেতরের মুখ যদি পেশির বেশ ওপরে হয় তবে চিকিৎসা জটিলতার সম্মুখীন হয়।

ফিস্টুলা অস্ত্রোপচারের পর আবারও হতে পারে।  অস্ত্রোপচারের পরের সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  সঠিক পদ্ধতিতে হিট বাথ নিতে হয়।  পায়ুপথ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়।

পায়ুপথে ফিস্টুলা চেনার উপায় ও চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন কেয়ার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বৃহদ্রান্ত ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. নাজমুল হক মাসুম।

ফিস্টুলা চিনবেন কীভাবে

ত্বকের ওপরে যে মুখটা লাল ও প্রদাহময় যেখান থেকে পুঁজ অথবা রক্ত বেরিয়ে আসে।  বাইরের মুখটা সহজেই চোখে পড়ে। পায়ুপথের ভেতরের মুখটা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। এমআরআই স্ক্যান, এন্ডো-এনাল আল্ট্রাসাউন্ড ফিস্টুলা পথকে সঠিকভাবে চিত্রিত করতে পারে। যদি ফিস্টুলোগ্রাম এক্সরে ব্যবহার করা হয়, ফিস্টুলা পথটা যেহেতু সবসময় খোলা থাকে না দূষিত ময়লাযুক্ত শক্ত পুঁজ দ্বারা বন্ধ থাকতে পারে, ফিস্টুলোগ্রাম এক্সরে দ্বারা ঠিক পথ নির্ণয় সাধারণত কষ্টকর, সব সময় বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

এই পরীক্ষাগুলো সাধারণত জটিল ফিস্টুলার জন্য সীমাবদ্ধ থাকে।  বেশিরভাগ ফিস্টুলা জেনারেল এনেস্থেসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করার পর লকহার্ট ম্যামারি নামে একজন ইংরেজ ব্রিটিশ সার্জন আবিষ্কৃত ধাতু নির্মিত ‘প্রব’ (লকহার্ট ম্যামারি প্রব) বাইরের মুখ থেকে ফিস্টুলা পথ দিয়ে ভেতরের মুখ দিয়ে বের করে এনে ফিস্টুলা পথটা পুরোপুরি শনাক্ত করা যায় এবং ফিস্টুলা পথটা পায়ুপথের মাংসপেশির ওপরে অথবা নিচের দিকে খুলেছে কিনা সেটা বুঝতে পারা যায়।

অস্ত্রোপচার

ফিস্টুলা পথ আচ্ছাদিত পায়ুপথের চর্ম ও পেশি কোনো মারাত্মক জটিলতা ছাড়াই কেটে দেওয়া যায় এবং ফিস্টুলা থেকে আরোগ্যলাভ সম্ভব হয়।  কিন্তু যদি ফিস্টুলা পথের ভেতরের মুখ পায়ুপথের মাংসপেশির ওপরে উন্মুক্ত হয় তাহলে ফিস্টুলা পথ আচ্ছাদিত পায়ুপথের পেশি কেটে আরোগ্যলাভ তো সম্ভবই নয়, মল নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে পায়ুপথ দিয়ে অবিরত মল ঝরতে থাকে এবং রোগীর জীবন দুর্বিষহ এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অসম্ভবে পরিণত হয় সে কারণে উচ্চ অবস্থিত ফিস্টুলা চিকিৎসা সম্পূর্ণ আলাদা এবং কয়েকবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে হয়ে থাকে যাতে করে পায়ুপথ নিয়ন্ত্রণ নষ্ট না হয়ে যায়। যে বিভিন্ন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে উচ্চ অবস্থিত ফিস্টুলার রোগ মুক্তি সম্ভব তার মধ্যে সিটন, ফিস্টুলা প্লাগ, প্লাস্টিক ফ্ল্যাপ এবং অন্যান্য জটিল শল্যচিকিৎসা উল্লেখ্য।