কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং বি.বাড়িয়া জেলার ২৫/৩০ টি উপজেলা নিয়ে গঠিত বিশাল কৃষি অঞ্চল যা বাংলাদেশের প্রধান শস্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত। এখানে বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত ধানের ১৫-২০% চাষ করা হয়ে থাকে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ এবং জলবদ্ধতার কারণে অত্র এলাকা পরিবেশবিদদের কাছে ভাটি অঞ্চল, হাওড় অঞ্চল বা ডুবা অঞ্চল নামে পরিচিত। এখানকার শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষের একমাত্র পেশা হচ্ছে কৃষি।পুরো এলাকায় মানুষের বসতভিটা ব্যতিত প্রায় সবটুকুই বছরের ছয় মাস পানির নিচে ডুবে থাকে। স্থানীয়ভাবে এই সময়টাকে বর্ষাকাল বলা হয়ে থাকে। সময়ে শতকরা ৯৫ ভাগ কর্মক্ষম মানুষ কর্মহীন জীবনযাপন করে থাকে। আর বাকি ছয় মাস শুকনো মৌসুমকে বলা হয় সুদিন। সুদিনে এই এলাকার মানুষের প্রধান পেশা হচ্ছে কৃষি কাজ করা। বছরে মাত্র ছয়মাস শুকনো মৌসুম থাকায় শুধু একটিমাত্র ফসল “ধান” চাষ করার সুযোগ পায় কৃষকরা। উৎপাদিত ধানের কিছু অংশ চাল করে সারা বছরের খাদ্য হিসেবে মজুদ রাখা হয়। অবশিষ্ট ধান বিক্রির টাকায় চলে সংসারের অন্যান্য কাজ। তাই অগ্রাহণ মাস থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত আবাল- বৃদ্ধ -বনিতা সবাই কোন না কোন ভাবে কৃষি কাজে শ্রম দিয়ে থাকেন। আর অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকেন বৈশাখ মাসের দিকে। তাদের আশা নতুন ফসলের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠবে প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনা। দূর হবে অনেকদিনের অভাব। সকল অপ্রাপ্তি ঘুছবে। গোলা ভরা ধান আর গোয়াল ভরা গুরু দেখে কৃষক তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন। যে দরিদ্র কৃষক বৈশাখীর আশায় ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রোদ-বৃষ্টিতে সীমাহীন পরিশ্রম করেন তার “বৈশাখ” মাসটা সব সময় উৎসব হয়ে আসেনা। প্রায় বছরই ফসল কাটার মৌসুমটা এই অঞ্চলের কৃষকদের কাছে এক রাশ বেদনা আর হতাশা নিয়ে হাজির হয়। অত্র এলাকার কৃষির ক্ষেত্রে বহুমাত্রি প্রাকৃতিক দূর্যোগের অন্যতম হলো অকাল বন্যায় ফসল ডুবে যাওয়া। একজন কৃষকের সন্তান হিসেবে আমরা এই দূর্যোগের সাথে শৈশব থেকেই পরিচিত। হাড়ভাংগা শ্রম আর চরা সুদের টাকায় যে ফসল ফলানো হয় তা নিমিষেই তলিয়ে যায় উজান থেকে নেমে আসা বন্যার পানিতে। পুরো ভাটি এলাকা কৃষকদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠে। বিভিন্ন সরকারের সময় ফসলি জমি রক্ষায় বাধ নির্মাণের দাবী করে আসলেও আজ পর্যন্ত কোন উদ্দোগ নেয়া হয়নি। ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। এই বছরও বৈশাখ শুরু হবার ১৫ দিন আগে থেকেই অকাল বন্যায় ডুবতে শুরু করে হাওড়ের ফসলি জমিগুলো। ইতোমধ্যেই ভাটি অঞ্চলের কয়েক লক্ষ্য হেক্টর জমির পাকা ধান পানিতে সয়লাব হয়েছে। যার শতকরা ২০ ভাগও সংগ্রহ করা সম্ভব হবেনা। যেসব দরিদ্র কৃষক চরা সুদে ধার করে জমিতে ধান চাষ করেছিলেন তাদের চোখে-মূখে এখন ঘোর অন্ধকার। লোনের টাকা শোধ করতে তাদের এখন ভিটে বাড়ি বিক্রি করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। যাদের কোন বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা নেই তাদের অনেকেই ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে জীবিকার সন্ধানে ঢাকা কিংবা চিটাগাং মূখি হবেন। শহরে এসে রিকশা চালানো কিংবা কোন গার্মেন্টসে কাজ নেওয়া হবে শেষ পরিনতি। সরকারের উচিত হবে সমগ্র ভাটি অঞ্চলকে কৃষি দূর্গত এলাকায় হিসেবে ঘোষণা করে বিশেষভাবে সাহায্য করা। বিশেষ করে প্রান্তিক কৃষকদের মনোবল যাতে ভেংগে না পরে সেই উদ্দোগ নেয়া। যারা কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন তাদের লোন সম্পূর্ন মওকুফ করে বিনা সূদে পূনরায় লোন দেয়া। সরকারের কত হাজার কোটি টাকাই তো রিজার্ব হিসেবে ব্যাংকে অলস ভাবে পরে আছে। সেই রিজার্ব থেকেও সরকার ইচ্ছে করলে কিছু টাকা ভাটি অঞ্চলের কৃষকদের সহজ শর্তে লোন দিতে পারেন। সবচেয়ে প্রয়োজন হচ্ছে প্রতিটি হাওড়ে ফসলি জমি রক্ষার জন্য স্থায়ী বাধ নির্মাণ করা।
সংবাদ শিরোনাম
কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং বি.বাড়িয়া জেলার হাওড় অঞ্চল বা ডুবা অঞ্চল নামে পরিচিত
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ১২:২৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ এপ্রিল ২০১৬
- ১২৩৯ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ