ঢাকা ০৮:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছেলের হাত-পা নেই, বাবাও পা-হীন; এই এক ছবি অনেক কিছু দিল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৪৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১২৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০ জানুয়ারি ২০২২। এসেনবোগা বিমানবন্দর, আংকারা, তুরস্ক। বিমানে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে একটি পরিবার। স্বামী মনজির আল নেজেল, স্ত্রী জয়নাপ আর তাঁদের তিন সন্তান।

বড় ছেলের নাম মুস্তফা। বয়স ছয় বছর। হাত-পা নেই একটিও। চড়ে বসার আগে একটি ভিডিও বার্তা পাঠায় সে। বলে, ‘আমরা আসছি। অনেক ধন্যবাদ। আমরা ইতালিকে ভালোবাসি। ’ সে দেশেও চলছিল তোড়জোড়। তাঁরা সেখানে পৌঁছেন পরদিন, শুক্রবার। রোমের ফিউমিচিনো বিমানবন্দরে। সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন লুকা ভেন্তুরি। মুস্তফাদের ইতালি নিয়ে আসার মূল কারিগর। তাঁদের আসার খবর পেতেই আনন্দে ফেটে পড়েন তিনি।

মুস্তফারা মূলত সিরিয়ার অধিবাসী। সেখানে কয়েক দশক ধরে চলছে গৃহযুদ্ধ। মুস্তফার শারীরিক বৈকল্যের জন্যও দায়ী সেটা। তাদের বাসা তুরস্কের সীমান্তঘেঁষা ইদলিব প্রদেশে। ২০১৭ সালের শুরুতে সেখানে চালানো হয়েছিল রাসায়নিক গ্যাস আক্রমণ। তখন ও ছিল মায়ের গর্ভে। গ্যাসের কারণে সৃষ্ট অসুস্থতা কাটাতে জয়নাপকে যেসব ওষুধ খেতে হয়েছিল, সেগুলোর কারণেই মুস্তফাকে এভাবে জন্মাতে হয়। হাত-পা ছাড়া। সেখানেই থেমে থাকেনি তাদের দুর্দশা। কিছুদিন পরই এক বোমা হামলায় পা হারান তার বাবা। এর বছর তিনেক আগে ইতালির সিয়েনায় যাত্রা শুরু করে একটি আলোকচিত্র উৎসব। ব্যবসায়ী লুকা ভেন্তুরির হাত ধরে। তাতে গত বছর ছবিটি জমা দিয়েছিলেন আসলান। মনজির আর মুস্তফার খুনসুটির। নাম ‘হার্ডশিপ অব লাইফ’। গত বছরের অক্টোবরে ছবিটিকে উৎসবের বর্ষসেরা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ছবিটি সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপুল সাড়া ফেলে। সুযোগটা হেলায় হারাননি লুকা। সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করেন মুস্তফা ও তাঁর পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে। শুরু করেন তহবিল সংগ্রহের কাজ। এক লাখ ইউরো তোলেন বাবা-ছেলের কৃত্রিম হাত-পা সংযোজনের জন্য। তারপর শুরু করেন শরণার্থী হিসেবে তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার আয়োজন। যোগাযোগ করেন সিয়েনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ইতালিও মানবিক কারণে শরণার্থী গ্রহণ করে। সে জন্য দায়িত্ব নিতে হয় কোনো সংগঠনকে। মনজির-মুস্তফার দায়িত্ব নেন লুকা নিজেই। সিয়েনা আলোকচিত্র উৎসবের অধীনে। নগর কর্তৃপক্ষও বাড়ায় সহযোগিতার হাত। ফলে দ্রুতই হয়ে যায় সব আয়োজন।

এরই ধারাবাহিকতায় যাত্রা শুরু করেন মনজির ও তাঁর পরিবার। প্রথমে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যান পাশের রেহানলিতে। তুরস্কের এই শহরে আসতেই মনজিরের সাক্ষাৎকার নেয় ইতালির পত্রিকা লা রিপাবলিকা। সেখানে তিনি বলেন, ‘এখন আমি সন্তানদের আবার স্কুলে পাঠানোর কথা ভাবতে পারছি। এই সুযোগ দেওয়ার জন্য ইতালি কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া হবে সন্তানের আলিঙ্গন—হোক সেটা কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে। ’

তথ্যসূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস, আলজাজিরা

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ছেলের হাত-পা নেই, বাবাও পা-হীন; এই এক ছবি অনেক কিছু দিল

আপডেট টাইম : ০২:৪৫:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০ জানুয়ারি ২০২২। এসেনবোগা বিমানবন্দর, আংকারা, তুরস্ক। বিমানে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে একটি পরিবার। স্বামী মনজির আল নেজেল, স্ত্রী জয়নাপ আর তাঁদের তিন সন্তান।

বড় ছেলের নাম মুস্তফা। বয়স ছয় বছর। হাত-পা নেই একটিও। চড়ে বসার আগে একটি ভিডিও বার্তা পাঠায় সে। বলে, ‘আমরা আসছি। অনেক ধন্যবাদ। আমরা ইতালিকে ভালোবাসি। ’ সে দেশেও চলছিল তোড়জোড়। তাঁরা সেখানে পৌঁছেন পরদিন, শুক্রবার। রোমের ফিউমিচিনো বিমানবন্দরে। সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন লুকা ভেন্তুরি। মুস্তফাদের ইতালি নিয়ে আসার মূল কারিগর। তাঁদের আসার খবর পেতেই আনন্দে ফেটে পড়েন তিনি।

মুস্তফারা মূলত সিরিয়ার অধিবাসী। সেখানে কয়েক দশক ধরে চলছে গৃহযুদ্ধ। মুস্তফার শারীরিক বৈকল্যের জন্যও দায়ী সেটা। তাদের বাসা তুরস্কের সীমান্তঘেঁষা ইদলিব প্রদেশে। ২০১৭ সালের শুরুতে সেখানে চালানো হয়েছিল রাসায়নিক গ্যাস আক্রমণ। তখন ও ছিল মায়ের গর্ভে। গ্যাসের কারণে সৃষ্ট অসুস্থতা কাটাতে জয়নাপকে যেসব ওষুধ খেতে হয়েছিল, সেগুলোর কারণেই মুস্তফাকে এভাবে জন্মাতে হয়। হাত-পা ছাড়া। সেখানেই থেমে থাকেনি তাদের দুর্দশা। কিছুদিন পরই এক বোমা হামলায় পা হারান তার বাবা। এর বছর তিনেক আগে ইতালির সিয়েনায় যাত্রা শুরু করে একটি আলোকচিত্র উৎসব। ব্যবসায়ী লুকা ভেন্তুরির হাত ধরে। তাতে গত বছর ছবিটি জমা দিয়েছিলেন আসলান। মনজির আর মুস্তফার খুনসুটির। নাম ‘হার্ডশিপ অব লাইফ’। গত বছরের অক্টোবরে ছবিটিকে উৎসবের বর্ষসেরা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ছবিটি সাধারণ মানুষের মধ্যে বিপুল সাড়া ফেলে। সুযোগটা হেলায় হারাননি লুকা। সর্বোচ্চ ব্যবহারের চেষ্টা করেন মুস্তফা ও তাঁর পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে। শুরু করেন তহবিল সংগ্রহের কাজ। এক লাখ ইউরো তোলেন বাবা-ছেলের কৃত্রিম হাত-পা সংযোজনের জন্য। তারপর শুরু করেন শরণার্থী হিসেবে তাঁদের আশ্রয় দেওয়ার আয়োজন। যোগাযোগ করেন সিয়েনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ইতালিও মানবিক কারণে শরণার্থী গ্রহণ করে। সে জন্য দায়িত্ব নিতে হয় কোনো সংগঠনকে। মনজির-মুস্তফার দায়িত্ব নেন লুকা নিজেই। সিয়েনা আলোকচিত্র উৎসবের অধীনে। নগর কর্তৃপক্ষও বাড়ায় সহযোগিতার হাত। ফলে দ্রুতই হয়ে যায় সব আয়োজন।

এরই ধারাবাহিকতায় যাত্রা শুরু করেন মনজির ও তাঁর পরিবার। প্রথমে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যান পাশের রেহানলিতে। তুরস্কের এই শহরে আসতেই মনজিরের সাক্ষাৎকার নেয় ইতালির পত্রিকা লা রিপাবলিকা। সেখানে তিনি বলেন, ‘এখন আমি সন্তানদের আবার স্কুলে পাঠানোর কথা ভাবতে পারছি। এই সুযোগ দেওয়ার জন্য ইতালি কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞ। তবে আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া হবে সন্তানের আলিঙ্গন—হোক সেটা কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে। ’

তথ্যসূত্র : নিউ ইয়র্ক টাইমস, আলজাজিরা