মেয়ে বিদেশে পড়তে যাওয়ায় পরিবার ‘একঘরে’

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঝর্ণা চৌধুরীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল দেশের বাইরে লেখাপড়া করার। সেই স্বপ্নপূরণে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশেও পাড়ি জমান। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর পরিবার ছেড়ে আমেরিকায় যান এ তরুণী। কিন্তু বিদেশ যাওয়ার পরদিনই ঝর্ণার মা-বাবাসহ পুরো পরিবারকে আঁড় চোখে দেখছেন সমাজের লোকজন। এরই মধ্যে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে পরিবারকে।

স্থানীয় কিছু লোকের বিরুদ্ধে এমনই অভিযোগ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মেয়ে ঝর্ণা চৌধুরীর পরিবারের। তবে বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। এটি সমাধান হয়ে যাবে।

এ নিয়ে সোমবার কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ঝর্ণা চৌধুরীর পরিবার। ঘটনাটি কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে। যারা এর নেপথ্যে তাদের শাস্তি দাবি করছেন সবাই।

ঝর্ণা চৌধুরী বলেন, ২৬ ডিসেম্বর আমি উচ্চশিক্ষার জন্য আমেরিকায় আসি। ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় একটি মৌলবাদী গোষ্ঠী ফেসবুকে আমাকে নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে। বিদেশ গিয়ে ছোট কাপড় পরছি, নাস্তিক হয়ে গেছি এই সেই নানা কিছু গল্প তারা তাদের মতো বানাতে থাকে।

পরদিন ২৮ ডিসেম্বর শুক্রবার স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি ঝর্ণার বাবা হাজী আব্দুল হাই চৌধুরী গুলাবের বিরুদ্ধে সালিশ বৈঠক ডাকেন। কিন্তু গুরুতর অসুস্থ থাকায় বৈঠকে বাবা উপস্থিত হতে পারেননি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে তাদের একঘরে করে দেওয়া হয়।

তিনি আরো বলেন, ৭০ বছর বয়সী আমার বাবা এরই মধ্যে তিনবার মিনি স্ট্রোক করেছেন। চিকিৎসক বিশ্রামে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন।

সম্প্রতি তার আবার ডিমেনশিয়া (ভুলে যাওয়ার অসুখ) ধরা পড়েছে। তিনি বিচারে না যাওয়ায় অমার পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে। এ খবর পেয়ে আমি মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আমিন মিয়াকে জিজ্ঞেস করি আমার বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ কি?

জবাবে মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি বলেন, আমি আমেরিকায় এসে আমার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী একজনকে বিয়ে করেছি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এছাড়া আমার বাবা কেন তাদের নির্দেশ মানেননি, তাই আমার পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, সামাজিকভাবে যেন কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয় তার জন্য অভিযোগ পাওয়ার পরপরই আমি কমিটিকে সতর্ক করে দিয়েছি। একই সঙ্গে আগামী ৯ তারিখ তাদের অফিসে আসতে বলেছি এবং স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলেছি বিষয়টি আজই দেখে দিতে। ঝর্ণার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় থানাকেও জানানো হয়েছে। ঝর্ণার বাবার সঙ্গে আমি আলাপ করেছি তিনিও আশ্বস্ত হয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর