ঢাকা ০৫:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভুট্টায় দিন বদল তিস্তা পাড়ে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৫:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০১৬
  • ২৮৭ বার

হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ছুটে আসা তিস্তা এখন অনেকটাই কালের সাক্ষী। উজানের দেশ ভারত তিস্তার পানি সরাচ্ছে বহু আগে থেকেই। চুয়ে চুয়ে আসা যে টুকু পানি গড়ায়, তাতে তিস্তার বুক-ই জুড়ায় না।

ধু-ধু বালু চরে ঢাকা পড়েছে এক সময়ের খরস্রোতা নদী তিস্তা। পানি সঙ্কটে বদলেছে এর রূপ। সেই সাথে বদলেছে নদী পাড়ের মানুষের জীবন ধারাও। পরিবর্তনের এ ধারার ছোঁয়া লেগেছে কৃষিতেও।

তিস্তার চর এবং অববাহিকা অঞ্চলে ভুট্টাই এখন প্রধান ফসল। খাদ্য শস্য হলেও এ অঞ্চলের মানুষের কাছে তা এখন প্রধান অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। ভুট্টায় দিন বদলেছে লালমনিরহাটের মানুষের। ধান, পাট, গম বা তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা চাষেই সেখানকার কৃষকরা সাবলম্বী হচ্ছেন।
তিস্তার অববাহিকায় উৎপাদিত উন্নতমানের দেশি ভুট্টার কদর বাড়ছে দিনকে দিন। দেশের ফিড মিলগুলোয় লালমনিরহাটের ভুট্টা একচাটিয়া বাজার পাচ্ছে। ভারতের ভুট্টার চেয়ে এই অঞ্চলের ভুট্টার দানা এবং রং ভালো হওয়ায় ফিড মিলের মালিকেরা আমদানি কমিয়ে লালমনিরহাট থেকেই ভুট্টা ক্রয় করছেন। ভুট্টার ওপর নির্ভর করে উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকটি ফিডমিলও গড়ে উঠেছে।

এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টা চাষের ইতিহাস দুই দশকের। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের আবদুল লতিফ তালুকদার নামের এক কৃষক মূলত এর উদ্যোক্তা।

১৯৯২ সালে তিনিসহ কয়েকজন কৃষক এই অঞ্চলের মাটি পরীক্ষার জন্য গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশনের কাছে যান। মাটি পরীক্ষার পর পরীক্ষামূলকভাবে ভুট্টা চাষ শুরু করেন লতিফ তালুকদার।

প্রথম দিকে ফলন ভালো না হলেও হাল ছাড়েননি। পরের বছর জমির পরিমান বাড়িয়ে ভালো ফলন পান। ভুট্টার সঙ্গে পরিচিতি ঘটতে থাকে অন্যান্য কৃষকদেরও। এরপর ওই এলাকার কৃষকেরা সংগঠিত হয়ে ১৯৯৭ সালে শেখ সুন্দর কৃষক সমিতি গঠন করেন। তিনি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
আব্দুল লতিফ তালুকদার জানান, সমিতি ওই সময় কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নেয়। এরপর পুরোদমে ভুট্টা চাষ শুরু করেন তাঁরা। প্রথম বছরে এক একর জমিতে ১০-১২ মণ ভুট্টা চাষ হয়। সেই জমিতেই পরের বছর ৪০-৫০ মণ ভুট্টা চাষ হয়। এভাবে ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকে ভুট্টার ফলন। এখন প্রতি একর জমিতে ১২০ থেকে ১৫০ মণ ভুট্টা উৎপাদিত হচ্ছে।

কথা হয়, এলাকার ভুট্টা চাষি আনোয়ার মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিস্তা অববাহিকায় ভুট্টার চেয়ে আর কোনো ভালো ফসল হয় বলে আমার জানা নেই। কৃষকরা এখন আর এক ইঞ্চি জায়গাও বাদ রাখেন না। ভুট্টা ছাড়া আর কোনো ফসলেই এমন লাভ হয় না। ভুট্টা চাষে ঝুঁকিও কম।

চাষী মোসলেম তালুকদার বলেন, ভুট্টা এখানকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। তিস্তার বালুতেও এখন ভুট্টা চাষ হচ্ছে। এলাকার মানুষ আর গরিব নেই। আগে মানুষ বাইরে কামলা (শ্রম) দিতে যাইত। এখন আর কেউ যায় না। তবে এলাকায় ফিডমিল করতে পারলে ভুট্টার আরো দাম পাওয়া যেত বলে যোগ করেন মসলেম তালুকাদার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ভুট্টায় দিন বদল তিস্তা পাড়ে

আপডেট টাইম : ১১:৩৫:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ এপ্রিল ২০১৬

হিমালয়ের পাদদেশ থেকে ছুটে আসা তিস্তা এখন অনেকটাই কালের সাক্ষী। উজানের দেশ ভারত তিস্তার পানি সরাচ্ছে বহু আগে থেকেই। চুয়ে চুয়ে আসা যে টুকু পানি গড়ায়, তাতে তিস্তার বুক-ই জুড়ায় না।

ধু-ধু বালু চরে ঢাকা পড়েছে এক সময়ের খরস্রোতা নদী তিস্তা। পানি সঙ্কটে বদলেছে এর রূপ। সেই সাথে বদলেছে নদী পাড়ের মানুষের জীবন ধারাও। পরিবর্তনের এ ধারার ছোঁয়া লেগেছে কৃষিতেও।

তিস্তার চর এবং অববাহিকা অঞ্চলে ভুট্টাই এখন প্রধান ফসল। খাদ্য শস্য হলেও এ অঞ্চলের মানুষের কাছে তা এখন প্রধান অর্থকরী ফসলে পরিণত হয়েছে। ভুট্টায় দিন বদলেছে লালমনিরহাটের মানুষের। ধান, পাট, গম বা তামাকের পরিবর্তে ভুট্টা চাষেই সেখানকার কৃষকরা সাবলম্বী হচ্ছেন।
তিস্তার অববাহিকায় উৎপাদিত উন্নতমানের দেশি ভুট্টার কদর বাড়ছে দিনকে দিন। দেশের ফিড মিলগুলোয় লালমনিরহাটের ভুট্টা একচাটিয়া বাজার পাচ্ছে। ভারতের ভুট্টার চেয়ে এই অঞ্চলের ভুট্টার দানা এবং রং ভালো হওয়ায় ফিড মিলের মালিকেরা আমদানি কমিয়ে লালমনিরহাট থেকেই ভুট্টা ক্রয় করছেন। ভুট্টার ওপর নির্ভর করে উত্তরবঙ্গে বেশ কয়েকটি ফিডমিলও গড়ে উঠেছে।

এই অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে ভুট্টা চাষের ইতিহাস দুই দশকের। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের আবদুল লতিফ তালুকদার নামের এক কৃষক মূলত এর উদ্যোক্তা।

১৯৯২ সালে তিনিসহ কয়েকজন কৃষক এই অঞ্চলের মাটি পরীক্ষার জন্য গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশনের কাছে যান। মাটি পরীক্ষার পর পরীক্ষামূলকভাবে ভুট্টা চাষ শুরু করেন লতিফ তালুকদার।

প্রথম দিকে ফলন ভালো না হলেও হাল ছাড়েননি। পরের বছর জমির পরিমান বাড়িয়ে ভালো ফলন পান। ভুট্টার সঙ্গে পরিচিতি ঘটতে থাকে অন্যান্য কৃষকদেরও। এরপর ওই এলাকার কৃষকেরা সংগঠিত হয়ে ১৯৯৭ সালে শেখ সুন্দর কৃষক সমিতি গঠন করেন। তিনি সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন।
আব্দুল লতিফ তালুকদার জানান, সমিতি ওই সময় কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা ঋণ নেয়। এরপর পুরোদমে ভুট্টা চাষ শুরু করেন তাঁরা। প্রথম বছরে এক একর জমিতে ১০-১২ মণ ভুট্টা চাষ হয়। সেই জমিতেই পরের বছর ৪০-৫০ মণ ভুট্টা চাষ হয়। এভাবে ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকে ভুট্টার ফলন। এখন প্রতি একর জমিতে ১২০ থেকে ১৫০ মণ ভুট্টা উৎপাদিত হচ্ছে।

কথা হয়, এলাকার ভুট্টা চাষি আনোয়ার মণ্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিস্তা অববাহিকায় ভুট্টার চেয়ে আর কোনো ভালো ফসল হয় বলে আমার জানা নেই। কৃষকরা এখন আর এক ইঞ্চি জায়গাও বাদ রাখেন না। ভুট্টা ছাড়া আর কোনো ফসলেই এমন লাভ হয় না। ভুট্টা চাষে ঝুঁকিও কম।

চাষী মোসলেম তালুকদার বলেন, ভুট্টা এখানকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। তিস্তার বালুতেও এখন ভুট্টা চাষ হচ্ছে। এলাকার মানুষ আর গরিব নেই। আগে মানুষ বাইরে কামলা (শ্রম) দিতে যাইত। এখন আর কেউ যায় না। তবে এলাকায় ফিডমিল করতে পারলে ভুট্টার আরো দাম পাওয়া যেত বলে যোগ করেন মসলেম তালুকাদার।