ঢাকা ১০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঠাকুরগাঁওয়ে কমলা চাষে বছরে ২০ লাখ টাকা আয়ের আশা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৯:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২
  • ২১৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঠাকুরগাঁওয়ে দার্জিলিং জাতের কমলা বাগান করে লাভবান হয়েছেন কৃষক আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম জুয়েল। চলতি বছর একই বাগান থেকে কমপক্ষে ২৫০ মণ কমলা উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। ২০০ টাকা কেজি দরে যার বাজার মূল্য ২০ লাখ টাকা।

এই বাগানটি গড়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার ২নং কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে। সেখানে জুয়েল নামে এক কৃষক ১০ বছর আগে হর্টিকালচার থেকে কিছু চারা ক্রয় করে জমিতে রোপণ করে। দুবছরের মাথায় আশানুরূপ ফলন হওয়ায় বাগানের পরিধি বাড়ান। এখন তার বাগানে প্রায় ৩০০টি কমলা গাছ রয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে জেলায় ৭৩ হেক্টর জমিতে মালটা ও কমলার বাগান রয়েছে এক হাজার বত্রিশটি। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী উপজেলার পীরগঞ্জ ও হরিপুরে ভারতীয় দার্জিলিং জাতের সাতটি কমলা বাগান গড়ে উঠেছে। জেলায় অনেকেই কমলার বাগান গড়ে তুললেও জুয়েল ছাড়া অন্যরা দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ ভালোভাবে করতে পারেননি।

jagonews24

এই বাগানটি ঘুরে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে প্রচুর। ভারতীয় জাতের এ ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে চাহিদাও রয়েছে বেশ। এছাড়াও বাগানটি দেখার জন্য প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ভিড় করছেন। বাগানেই বিক্রি হচ্ছে এই দার্জিলিং জাতের কমলা।

বাগান মালিক জুয়েল জানান, বাগানের বয়স ১০ বছর হলেও তিন বছর ধরে ভালো ফলন আসছে। এবার প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। নভেম্বর মাস থেকে বাগানের উৎপাদিত কমলা বিক্রি শুরু হয়েছে। উৎপাদিত বাগানের এসব ফল স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

জুয়েল বলেন, বর্তমানে তিনশতাধিক গাছের এই বাগানের প্রতিটিতে ৮০০ থেকে ৯০০ কমলা ধরেছে। চলছে ফল বিক্রির কার্যক্রম। এ কমলা কিনতে বাগানেই ছুটে আসছেন দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকেই প্রতি কেজি কমলা বিক্রি করছেন ১৮০-২০০ টাকা দরে।

আগের বছর এই বাগান থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক জুয়েল। তবে এবার প্রায় ২০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।

jagonews24

এছাড়াও জুয়েল বগানের পাশাপাশি একই প্লটে উৎপাদন করছেন চারা। সীমান্ত এলাকায় ফল বাগান গড়ে ওঠায় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকার অন্যান্য কৃষকেরাও উৎসাহিত হয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন।

এছাড়াও কেউ বাগান সম্পর্কে জানতে গেলে বাগান করতে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছেন তিনি। অনেকে মনোরম এই বাগানের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। ফলে জেলাসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে বাগানটি।

বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী নাহিদ রেজা বলেন, শহর থেকে এসেছি কমলা বাগান দেখতে। আমি দার্জিলিং-এ বাগান দেখেছি। কিন্তু এখানে কমলা বাগান যে সুন্দর তা দার্জিলিং-এর বাগানকেও হার মানাবে। আর এই কমলা অনেক মিষ্টি।

আরেক দর্শনার্থী রবিউল আহসান বলেন, পরিবারসহ কমলা বাগান দেখতে এসেছি। আগে কমলা বাগান শুধু ছবিতেই দেখেছি। আজ বাস্তবে গাছে ঝুলন্ত কমলা দেখলাম। আর পুরো বাগানে কমলা ঝুলে রয়েছে। দেখতেই অনেক সুন্দর লাগছে। কমলা ক্রয় করে খেলাম অনেক মিষ্টি ও রসালো কমলা। এই কমলা খেয়ে মনে হয়েছে না যে আমার দেশের মাটিতে উৎপাদিত কমলা খাচ্ছি! পরিবারের সকলে খুশি এমন কমলা বাগান দেখতে এসে।

শহরের পাশেই কমলা বাগানের মালিক মাহফিজুর রহমান ছুটু বাগান দেখতে এসে বলেন, আমার বাগানেও কমলা গাছ রয়েছে। তবে এই বাগান খুব সুন্দরভাবে যত্ন করার কারণে ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এছাড়াও ফলের সাইজ ও রং একবারে ঠিকঠাক হয়েছে। আমি বাগান মালিক জুয়েল ভাইয়ের সাথে আমার বাগান নিয়ে আলোচনা করার জন্য এসেছি।

jagonews24

কমলা বাগানে প্রথম থেকেই কাজ করেন নরেন মোহন জানান, আমি বাগানের প্রথম থেকেই কাজ করছি। এখন প্রতিদিন প্রায় এক হাজারের উপর মানুষ আসে এই বাগান দেখতে। আমরা বাগানে ৮ থেকে ১০ জন এখন কাজ করতেছি। কমলা গাছ থেকে পারার জন্য ৩ থেকে ৪ জনকে কাজ করতে হয়। এছাড়াও বাগান পাহারা দিতে হয় এখন, না হলে ফল চুরির ভয় থাকে।

জেলা অতিরিক্তি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোছাম্মাৎ শামীমা নাজনীন জানান, বছর দশেক আগে সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। সেই থেকেই ঠাকুরগাঁওয়ে কমলা চাষের শুরু।

কমলা বাগানে সফলতা পেতে বুঝে-শুনে পরিচর্যার ব্যাপার আছে। জুয়েল কৃষি অধিদপ্তর থেকে সব সময় পরামর্শ নিয়েছেন। তার দার্জিলিং জাতের বাগানটি বেশ সুন্দর হয়েছে এবং বাগানে প্রচুর পরিমাণ কমলা ধরেছে। তার বাগান দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন বাগান করার জন্য।

তিনি বলেন, কৃষকরা যদি এভাবে কমলার বাগান করতে এগিয়ে আসে তাহলে কৃষিতে একটা বিপ্লব ঘটবে। আর কমলা দেশের বাহির থেকে আনতে হবে না। আমাদের দেশের কমলা দিয়েই ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণ হবে বলে আমি মনে করছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ঠাকুরগাঁওয়ে কমলা চাষে বছরে ২০ লাখ টাকা আয়ের আশা

আপডেট টাইম : ১২:১৯:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঠাকুরগাঁওয়ে দার্জিলিং জাতের কমলা বাগান করে লাভবান হয়েছেন কৃষক আবু জাহিদ ইবনুল ইরাম জুয়েল। চলতি বছর একই বাগান থেকে কমপক্ষে ২৫০ মণ কমলা উৎপাদনের আশা করছেন তিনি। ২০০ টাকা কেজি দরে যার বাজার মূল্য ২০ লাখ টাকা।

এই বাগানটি গড়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও পীরগঞ্জ উপজেলার ২নং কোষারাণীগঞ্জ ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে। সেখানে জুয়েল নামে এক কৃষক ১০ বছর আগে হর্টিকালচার থেকে কিছু চারা ক্রয় করে জমিতে রোপণ করে। দুবছরের মাথায় আশানুরূপ ফলন হওয়ায় বাগানের পরিধি বাড়ান। এখন তার বাগানে প্রায় ৩০০টি কমলা গাছ রয়েছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে জেলায় ৭৩ হেক্টর জমিতে মালটা ও কমলার বাগান রয়েছে এক হাজার বত্রিশটি। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী উপজেলার পীরগঞ্জ ও হরিপুরে ভারতীয় দার্জিলিং জাতের সাতটি কমলা বাগান গড়ে উঠেছে। জেলায় অনেকেই কমলার বাগান গড়ে তুললেও জুয়েল ছাড়া অন্যরা দার্জিলিং জাতের কমলার চাষ ভালোভাবে করতে পারেননি।

jagonews24

এই বাগানটি ঘুরে দেখা যায়, বাগানের প্রতিটি গাছে ফল ধরেছে প্রচুর। ভারতীয় জাতের এ ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে চাহিদাও রয়েছে বেশ। এছাড়াও বাগানটি দেখার জন্য প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ভিড় করছেন। বাগানেই বিক্রি হচ্ছে এই দার্জিলিং জাতের কমলা।

বাগান মালিক জুয়েল জানান, বাগানের বয়স ১০ বছর হলেও তিন বছর ধরে ভালো ফলন আসছে। এবার প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। নভেম্বর মাস থেকে বাগানের উৎপাদিত কমলা বিক্রি শুরু হয়েছে। উৎপাদিত বাগানের এসব ফল স্থানীয় বাজারের চাহিদা পূরণ করে পাঠানো হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

জুয়েল বলেন, বর্তমানে তিনশতাধিক গাছের এই বাগানের প্রতিটিতে ৮০০ থেকে ৯০০ কমলা ধরেছে। চলছে ফল বিক্রির কার্যক্রম। এ কমলা কিনতে বাগানেই ছুটে আসছেন দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা। সেখান থেকেই প্রতি কেজি কমলা বিক্রি করছেন ১৮০-২০০ টাকা দরে।

আগের বছর এই বাগান থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকার কমলা বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষক জুয়েল। তবে এবার প্রায় ২০ লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।

jagonews24

এছাড়াও জুয়েল বগানের পাশাপাশি একই প্লটে উৎপাদন করছেন চারা। সীমান্ত এলাকায় ফল বাগান গড়ে ওঠায় কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকার অন্যান্য কৃষকেরাও উৎসাহিত হয়ে পরামর্শ নিচ্ছেন।

এছাড়াও কেউ বাগান সম্পর্কে জানতে গেলে বাগান করতে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছেন তিনি। অনেকে মনোরম এই বাগানের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। ফলে জেলাসহ সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে বাগানটি।

বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী নাহিদ রেজা বলেন, শহর থেকে এসেছি কমলা বাগান দেখতে। আমি দার্জিলিং-এ বাগান দেখেছি। কিন্তু এখানে কমলা বাগান যে সুন্দর তা দার্জিলিং-এর বাগানকেও হার মানাবে। আর এই কমলা অনেক মিষ্টি।

আরেক দর্শনার্থী রবিউল আহসান বলেন, পরিবারসহ কমলা বাগান দেখতে এসেছি। আগে কমলা বাগান শুধু ছবিতেই দেখেছি। আজ বাস্তবে গাছে ঝুলন্ত কমলা দেখলাম। আর পুরো বাগানে কমলা ঝুলে রয়েছে। দেখতেই অনেক সুন্দর লাগছে। কমলা ক্রয় করে খেলাম অনেক মিষ্টি ও রসালো কমলা। এই কমলা খেয়ে মনে হয়েছে না যে আমার দেশের মাটিতে উৎপাদিত কমলা খাচ্ছি! পরিবারের সকলে খুশি এমন কমলা বাগান দেখতে এসে।

শহরের পাশেই কমলা বাগানের মালিক মাহফিজুর রহমান ছুটু বাগান দেখতে এসে বলেন, আমার বাগানেও কমলা গাছ রয়েছে। তবে এই বাগান খুব সুন্দরভাবে যত্ন করার কারণে ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এছাড়াও ফলের সাইজ ও রং একবারে ঠিকঠাক হয়েছে। আমি বাগান মালিক জুয়েল ভাইয়ের সাথে আমার বাগান নিয়ে আলোচনা করার জন্য এসেছি।

jagonews24

কমলা বাগানে প্রথম থেকেই কাজ করেন নরেন মোহন জানান, আমি বাগানের প্রথম থেকেই কাজ করছি। এখন প্রতিদিন প্রায় এক হাজারের উপর মানুষ আসে এই বাগান দেখতে। আমরা বাগানে ৮ থেকে ১০ জন এখন কাজ করতেছি। কমলা গাছ থেকে পারার জন্য ৩ থেকে ৪ জনকে কাজ করতে হয়। এছাড়াও বাগান পাহারা দিতে হয় এখন, না হলে ফল চুরির ভয় থাকে।

জেলা অতিরিক্তি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোছাম্মাৎ শামীমা নাজনীন জানান, বছর দশেক আগে সরকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। সেই থেকেই ঠাকুরগাঁওয়ে কমলা চাষের শুরু।

কমলা বাগানে সফলতা পেতে বুঝে-শুনে পরিচর্যার ব্যাপার আছে। জুয়েল কৃষি অধিদপ্তর থেকে সব সময় পরামর্শ নিয়েছেন। তার দার্জিলিং জাতের বাগানটি বেশ সুন্দর হয়েছে এবং বাগানে প্রচুর পরিমাণ কমলা ধরেছে। তার বাগান দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন বাগান করার জন্য।

তিনি বলেন, কৃষকরা যদি এভাবে কমলার বাগান করতে এগিয়ে আসে তাহলে কৃষিতে একটা বিপ্লব ঘটবে। আর কমলা দেশের বাহির থেকে আনতে হবে না। আমাদের দেশের কমলা দিয়েই ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণ হবে বলে আমি মনে করছি।