ঢাকা ০৬:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিন বয়সের ফারজানা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৫:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ এপ্রিল ২০১৬
  • ৪৬৫ বার

২০১০ সালে ঢাকায় এসে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা রসায়নে। হঠাৎ মামার ডাক। মামার বন্ধু তাঁকে নিয়ে গেলেন হাফ স্টপ ডাউনের অফিসে। নির্মাতা অমিতাভ রেজা একঝলক দেখেই গ্রামীণফোনের কলার টিউন বিজ্ঞাপনের জন্য নির্বাচন করেন ফারজানাকে
অ- অ অ+

স্বামী-স্ত্রীর নতুন সংসার। সে সংসারে সুখ ভেসে বেড়ায়। স্ত্রী অপেক্ষায় থাকে স্বামীর ফেরার। স্বামী অফিস সেরে দ্রুত বাসায় ফিরতে আঁকুপাঁকু করেন। সংসারে আবার খুনসুটি লেগেই থাকে। সময় তো আর চিরদিন এক থাকে না। এই ভালো তো এই মন্দ! মধ্যবয়সী স্বামী দেরি করে বাসায় ফিরলে কৈফিয়ত তলব করেন স্ত্রী। রিগাল আলমারির বিজ্ঞাপনে তিন প্রজন্মের তিন চরিত্রে মডেলিং করেছেন ফারজানা রিক্তা। স্বামীর চরিত্রে ছিলেন মনোজ কুমার।

বিজ্ঞাপনটি প্রচারের পর থেকেই প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন রিক্তা। অনেকেই ফোন করে বলছেন, বেশ হয়েছে কাজটা।

ফারজানা জানান, বিজ্ঞাপনটি অনএয়ারে আসার পর থেকে হেসেই যাচ্ছেন আমার মা। নিজের মেয়েকে ৫০ বছরের বৃদ্ধার চরিত্রে দেখে তিনি অবাক! সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন—‘দেখ, আমার মেয়ে বুড়ো হলে এমন দেখাবে।’

মায়ের কথাতে অবশ্য ভেটো দিচ্ছেন ফারজানা। ‘মোটেও না। ৫০-৬০ হলে আমাকে এর চেয়ে আরো বেশি বয়স্ক দেখাবে।’

এ বিজ্ঞাপনে ফারজানার মেকআপ শিল্পী ছিলেন বাবুল। ফারজানা জানান, তাঁর (বাবুল) নিরলস প্রচেষ্টা আর দক্ষ হাতের কাজের জন্যই আমাকে তিন চরিত্রে এতটা সাবলীল দেখা গেছে।

ফারজানার ক্যারিয়ারে এটি ৩৮তম বিজ্ঞাপন। মাঝে কিছু খণ্ড নাটক ও দুটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। ছবি দুটি হলো—কার্তুজ ও একাত্তরের নিশান। তবে শুরু বিজ্ঞাপন দিয়ে। নিজ জেলা যশোরে চাঁদের হাটের শাপলা একাডেমিতে নাচতেন। তাঁর নাচ দেখেই তাঁকে মিডিয়ায় নিয়ে আসার আগ্রহ দেখান মামা আসাদুজ্জামান বাবু।

২০১০ সালে ঢাকায় এসে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা রসায়নে। হঠাৎ মামার ডাক। মামার বন্ধু তাঁকে নিয়ে গেলেন হাফ স্টপ ডাউনের অফিসে। নির্মাতা অমিতাভ রেজা একঝলক দেখেই গ্রামীণফোনের কলার টিউন বিজ্ঞাপনের জন্য নির্বাচন করেন ফারজানাকে।

শাপলা একাডেমিতে এত দিন নেচেছেন মাত্র। অভিনয়ের ধারেকাছেও যাননি। তবে? এগিয়ে এলেন অমিতাভ। সব কিছু দেখিয়ে দিলেন তিনিই। তার পরও বোটানিক্যাল গার্ডেনে ক্যামেরার সামনে শীতের মধ্যেও কুলকুল করে ঘেমেছেন ফারজানা। হাত-পা কেঁপেছে ঢের। প্রথম শটের জন্য ক্যামেরা প্রস্তুত। কিন্তু কিছুতেই আর শট ওকে করতে পারেন না। শেষমেশ বকায় কাজ হলো। ফারজানা বলেন, ‘একপর্যায়ে সবাই আমাকে বকতে শুরু করেন। একবার মনে হলো, সব ছেড়েছুড়ে পালিয়ে যাই। শেষমেশ অনেক কষ্টের পর কাজটি শেষ করি।’ ওই বিজ্ঞাপনের পাঁচটি সিরিজ হয়েছিল।

প্রথম বিজ্ঞাপন দেখার জন্য সেকি আকুল অপেক্ষা! প্রচার শুরু হলে টেলিভিশনের সামনে থেকে আর নাকি উঠতেই চাইতেন না ফারজানা। এক চ্যানেলে প্রচার শেষ হলে অন্য চ্যানেলে ঢুঁ মারেন। যদি সেখানেও দেখা যায়! পরিচিতদের ফোন দেন দেখার জন্য।

টিভিতে নিজের দেখা পেয়ে বকাগুলো ভুলে গিয়েছিলেন। বললেন, ‘কাজটা ভালো হয়েছিল বকা খাওয়ার জন্যই। এখন বুঝি ভালো কাজের জন্যই নির্মাতা রাগ দেখান।’

এরপর মডেল হয়েছেন আরএফএল চেয়ারের। পণ্যটির প্রথম বিজ্ঞাপনের মডেল তিনি। সর্বশেষ রিগাল ফার্নিচারের প্রথম বিজ্ঞাপনেও। বললেন, ‘আমার ভাগ্য এতটাই ভালো যে বেশ কয়েকটি পণ্যের প্রথম বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছি আমি।’

ফারজানা রিক্তার উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে রয়েছে—গ্রামীণফোন কলার টিউন, আরএফএল চেয়ার, সার্ফ এক্সেল, বাংলাদেশ মেলামাইন, বাংলালায়ন ওয়াইম্যাক্স মডেম, আরএফএল ফিটিং পাইপ, প্রাণ গ্রিন চিলি সস, গ্রামীণফোন কনফিউশন।

বিজ্ঞাপন নিয়ে মজার কোনো ঘটনা জানতে চাইলে ফারজানা বলেন, ‘আমার প্রথম বিজ্ঞাপনটির অনেকগুলো বিলবোর্ড হয়েছিল। সেই বিলবোর্ড আমাকে প্রথম দেখালেন আমার মা। বাসে মায়ের সঙ্গে যশোর যাচ্ছিলাম। আরিচাঘাটে বাস দাঁড়িয়েছিল। মা জানালা দিয়ে তাকিয়েই অবাক। মেয়ের ছবি বিশাল বিলবোর্ডে ঝুলে আছে। তিনিই বললেন, ‘দেখো, ওই তোমার ছবি।’ বিলবোর্ডে নিজেকে দেখে আশপাশে তাকাই। বাসে তো কত লোক। কেউ আমাকে চিনতে পেরেছে কি! অবশ্য প্রথম তো, তাই সেদিন কেউ চেনেনি। এরপর শাহ সিমেন্টের বিলবোর্ডে উঠে যায় তাঁর ছবি। তার পর থেকে আস্তে আস্তে সবাই চিনতে শুরু করে ফারজানা রিক্তাকে।

দুটি সিনেমায় কাজ করায় জুটেছে নায়িকা তকমাও। তবে সেটি মোটেও পছন্দ নয় তাঁর। বরং একজন নিপাট অভিনেত্রী হিসেবেই সবাই চিনে নিক, এমনটা চান তিনি। অভিনয়ের বাইরে শখ তাঁর ছবি তোলা। ওয়াইল্ড লাইফ তথা বুনো জীবজন্তুর ছবি তোলেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতেও তাঁর তোলা ছবি ছাপা হয়েছে। তবে ছবি তোলাটা স্রেফ শখের জায়গায়ই থাকবে বলে জানান। আর লক্ষ্য আপাতত একটাই, মডেলিংয়ে তুমুল জনপ্রিয় তারকা হওয়ার। সে জন্য আদর্শও মানেন জনপ্রিয় মডেল মৌকে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

তিন বয়সের ফারজানা

আপডেট টাইম : ১১:৫৫:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৮ এপ্রিল ২০১৬

২০১০ সালে ঢাকায় এসে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা রসায়নে। হঠাৎ মামার ডাক। মামার বন্ধু তাঁকে নিয়ে গেলেন হাফ স্টপ ডাউনের অফিসে। নির্মাতা অমিতাভ রেজা একঝলক দেখেই গ্রামীণফোনের কলার টিউন বিজ্ঞাপনের জন্য নির্বাচন করেন ফারজানাকে
অ- অ অ+

স্বামী-স্ত্রীর নতুন সংসার। সে সংসারে সুখ ভেসে বেড়ায়। স্ত্রী অপেক্ষায় থাকে স্বামীর ফেরার। স্বামী অফিস সেরে দ্রুত বাসায় ফিরতে আঁকুপাঁকু করেন। সংসারে আবার খুনসুটি লেগেই থাকে। সময় তো আর চিরদিন এক থাকে না। এই ভালো তো এই মন্দ! মধ্যবয়সী স্বামী দেরি করে বাসায় ফিরলে কৈফিয়ত তলব করেন স্ত্রী। রিগাল আলমারির বিজ্ঞাপনে তিন প্রজন্মের তিন চরিত্রে মডেলিং করেছেন ফারজানা রিক্তা। স্বামীর চরিত্রে ছিলেন মনোজ কুমার।

বিজ্ঞাপনটি প্রচারের পর থেকেই প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন রিক্তা। অনেকেই ফোন করে বলছেন, বেশ হয়েছে কাজটা।

ফারজানা জানান, বিজ্ঞাপনটি অনএয়ারে আসার পর থেকে হেসেই যাচ্ছেন আমার মা। নিজের মেয়েকে ৫০ বছরের বৃদ্ধার চরিত্রে দেখে তিনি অবাক! সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন—‘দেখ, আমার মেয়ে বুড়ো হলে এমন দেখাবে।’

মায়ের কথাতে অবশ্য ভেটো দিচ্ছেন ফারজানা। ‘মোটেও না। ৫০-৬০ হলে আমাকে এর চেয়ে আরো বেশি বয়স্ক দেখাবে।’

এ বিজ্ঞাপনে ফারজানার মেকআপ শিল্পী ছিলেন বাবুল। ফারজানা জানান, তাঁর (বাবুল) নিরলস প্রচেষ্টা আর দক্ষ হাতের কাজের জন্যই আমাকে তিন চরিত্রে এতটা সাবলীল দেখা গেছে।

ফারজানার ক্যারিয়ারে এটি ৩৮তম বিজ্ঞাপন। মাঝে কিছু খণ্ড নাটক ও দুটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। ছবি দুটি হলো—কার্তুজ ও একাত্তরের নিশান। তবে শুরু বিজ্ঞাপন দিয়ে। নিজ জেলা যশোরে চাঁদের হাটের শাপলা একাডেমিতে নাচতেন। তাঁর নাচ দেখেই তাঁকে মিডিয়ায় নিয়ে আসার আগ্রহ দেখান মামা আসাদুজ্জামান বাবু।

২০১০ সালে ঢাকায় এসে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পড়াশোনা রসায়নে। হঠাৎ মামার ডাক। মামার বন্ধু তাঁকে নিয়ে গেলেন হাফ স্টপ ডাউনের অফিসে। নির্মাতা অমিতাভ রেজা একঝলক দেখেই গ্রামীণফোনের কলার টিউন বিজ্ঞাপনের জন্য নির্বাচন করেন ফারজানাকে।

শাপলা একাডেমিতে এত দিন নেচেছেন মাত্র। অভিনয়ের ধারেকাছেও যাননি। তবে? এগিয়ে এলেন অমিতাভ। সব কিছু দেখিয়ে দিলেন তিনিই। তার পরও বোটানিক্যাল গার্ডেনে ক্যামেরার সামনে শীতের মধ্যেও কুলকুল করে ঘেমেছেন ফারজানা। হাত-পা কেঁপেছে ঢের। প্রথম শটের জন্য ক্যামেরা প্রস্তুত। কিন্তু কিছুতেই আর শট ওকে করতে পারেন না। শেষমেশ বকায় কাজ হলো। ফারজানা বলেন, ‘একপর্যায়ে সবাই আমাকে বকতে শুরু করেন। একবার মনে হলো, সব ছেড়েছুড়ে পালিয়ে যাই। শেষমেশ অনেক কষ্টের পর কাজটি শেষ করি।’ ওই বিজ্ঞাপনের পাঁচটি সিরিজ হয়েছিল।

প্রথম বিজ্ঞাপন দেখার জন্য সেকি আকুল অপেক্ষা! প্রচার শুরু হলে টেলিভিশনের সামনে থেকে আর নাকি উঠতেই চাইতেন না ফারজানা। এক চ্যানেলে প্রচার শেষ হলে অন্য চ্যানেলে ঢুঁ মারেন। যদি সেখানেও দেখা যায়! পরিচিতদের ফোন দেন দেখার জন্য।

টিভিতে নিজের দেখা পেয়ে বকাগুলো ভুলে গিয়েছিলেন। বললেন, ‘কাজটা ভালো হয়েছিল বকা খাওয়ার জন্যই। এখন বুঝি ভালো কাজের জন্যই নির্মাতা রাগ দেখান।’

এরপর মডেল হয়েছেন আরএফএল চেয়ারের। পণ্যটির প্রথম বিজ্ঞাপনের মডেল তিনি। সর্বশেষ রিগাল ফার্নিচারের প্রথম বিজ্ঞাপনেও। বললেন, ‘আমার ভাগ্য এতটাই ভালো যে বেশ কয়েকটি পণ্যের প্রথম বিজ্ঞাপনের মডেল হয়েছি আমি।’

ফারজানা রিক্তার উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে রয়েছে—গ্রামীণফোন কলার টিউন, আরএফএল চেয়ার, সার্ফ এক্সেল, বাংলাদেশ মেলামাইন, বাংলালায়ন ওয়াইম্যাক্স মডেম, আরএফএল ফিটিং পাইপ, প্রাণ গ্রিন চিলি সস, গ্রামীণফোন কনফিউশন।

বিজ্ঞাপন নিয়ে মজার কোনো ঘটনা জানতে চাইলে ফারজানা বলেন, ‘আমার প্রথম বিজ্ঞাপনটির অনেকগুলো বিলবোর্ড হয়েছিল। সেই বিলবোর্ড আমাকে প্রথম দেখালেন আমার মা। বাসে মায়ের সঙ্গে যশোর যাচ্ছিলাম। আরিচাঘাটে বাস দাঁড়িয়েছিল। মা জানালা দিয়ে তাকিয়েই অবাক। মেয়ের ছবি বিশাল বিলবোর্ডে ঝুলে আছে। তিনিই বললেন, ‘দেখো, ওই তোমার ছবি।’ বিলবোর্ডে নিজেকে দেখে আশপাশে তাকাই। বাসে তো কত লোক। কেউ আমাকে চিনতে পেরেছে কি! অবশ্য প্রথম তো, তাই সেদিন কেউ চেনেনি। এরপর শাহ সিমেন্টের বিলবোর্ডে উঠে যায় তাঁর ছবি। তার পর থেকে আস্তে আস্তে সবাই চিনতে শুরু করে ফারজানা রিক্তাকে।

দুটি সিনেমায় কাজ করায় জুটেছে নায়িকা তকমাও। তবে সেটি মোটেও পছন্দ নয় তাঁর। বরং একজন নিপাট অভিনেত্রী হিসেবেই সবাই চিনে নিক, এমনটা চান তিনি। অভিনয়ের বাইরে শখ তাঁর ছবি তোলা। ওয়াইল্ড লাইফ তথা বুনো জীবজন্তুর ছবি তোলেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিতেও তাঁর তোলা ছবি ছাপা হয়েছে। তবে ছবি তোলাটা স্রেফ শখের জায়গায়ই থাকবে বলে জানান। আর লক্ষ্য আপাতত একটাই, মডেলিংয়ে তুমুল জনপ্রিয় তারকা হওয়ার। সে জন্য আদর্শও মানেন জনপ্রিয় মডেল মৌকে।