নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন, কেন এত আলোচনায়

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানী লাগোয়া একটি ছোট সিটি করপোরেশন নারায়ণগঞ্জ। এখন সবার নজর এই নারায়ণগঞ্জের দিকে। আগামী ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বরাবরই সেখানে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়ে আসছে বলে সবাই মতপ্রকাশ করেছেন। এমনকি সব প্রার্থীই দাবি করেন নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়।

তবে নির্বাচনের সময় সবার নজর কাড়ে ছোট এই সিটি করপোরেশনটি। এর কারণ দেখতে হলে আমাদের পেছনে ফিরে যেতে হবে। সম্ভ্রান্ত দুই পরিবারের জন্য নারায়ণগঞ্জ বারবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসে। ওসমান ও চুনকা পরিবারই নারায়ণগঞ্জের নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। আর এই দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব সেই স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭৩ সাল থেকে। দুটি পরিবারই আওয়ামী লীগের রাজনীতির পরীক্ষিত পক্ষ।

নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা ঘোষণা করা হয় ১৮৭৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। পৌরসভা ঘোষণাকালে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বপাড়ের এবং পশ্চিমপাড়ের স্থানসমূহকে তিনটি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়। এ তিনটি ওয়ার্ডের সর্বমোট আয়তন ছিল প্রায় ৪.৫ বর্গমাইল।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌর নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে ওসমান ও চুনকা পরিবারের দ্বন্দ্ব শুরু। সেই থেকে এখনো চলছে সেই দ্বন্দ্ব। ১৯৭৩ সালে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য আলী আহাম্মদ চুনকা নিজের দল আওয়ামী লীগের সমর্থন চেয়েও পাননি। সেই সময় ওসমান পরিবারের একেএম শামসুজ্জোহার প্রত্যক্ষ মদদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পান মহিউদ্দিন আহম্মেদ খোকা ওরফে খোকা মহিউদ্দিন। আওয়ামী লীগের সমর্থন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হন আলী আহাম্মদ চুনকা। এরপর থেকে চুনকা পরিবার ও ওসমান পরিবারের মধ্যে শীতল দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

এরপর ১৯৮০ সালে জেলা আওয়ামী লীগ সম্মেলনে শামসুজ্জোহা ও চুনকা সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, এতে চুনকা জয়ী হন। ১৯৮৪ সালে আলী আহাম্মদ চুনকা মারা যান। ১৯৮৫ সালে তার মেয়ে সেলিনা হায়াত আইভী বিদেশে পড়তে গেলে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠে একক কর্তৃত্ব করতে থাকে ওসমান পরিবার। যদিও শহর আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপিকা নাজমা রহমানের নেতৃত্বে সংগঠিত থাকেন চুনকার নেতাকর্মীরা। ১৯৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে নির্বাচন করেন নাজমা রহমান।

১৯৯২ সালে চুনকা কন্যা সেলিনা হায়াত আইভী দেশে ফিরে আসেন। এসেই তিনি শহর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হন। এরপর তিনি বিদেশে গেলেও ২০০৩ সালের নারায়ণগঞ্জ পৌর নির্বাচনের আগে দেশে ফিরে আসেন। ২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনে জয়লাভ করে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার প্রথম মহিলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলী আহম্মদের মেয়ে সেলিনা হায়াত আইভি। পৌরসভা বিলুপ্তি হওয়ার আগপর্যন্ত তিনি এই পদে বহাল ছিলেন।

২০১১ সালের ৫ মে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভা ও কদমরসূল পৌরসভাকে বিলুপ্ত করে ২৭টি ওয়ার্ডের সমন্বয়ে গঠিত হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। ওই বছরের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জে প্রথমবারের মতো সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সেলিনা হায়াত আইভী মেয়র হিসেবে জয়লাভ করেন। তিনি বাংলাদেশের সিটি করপোরেশনের প্রথম নারী মেয়র।

এই নির্বাচনকে ঘিরেই ওসমান ও চুনকা পরিবারের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায়। কারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চুনকা কন্যা আইভী ও জোহা পুত্র শামীম ওসমান। ৩৭ বছর আগে ১৯৭৩ সালে যা হয়েছিল তারই পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে সমর্থন মেলেনি আলী আহাম্মদ চুনকা কন্যা সেলিনা হায়াত আইভীর। তারপরও শামীম ওসমানকে এক লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করে জয় ছিনিয়ে নেন আইভী।

ওই নির্বাচন নিয়ে শামীম-আইভি একে অপরকে দোষারোপ ও বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন প্রকাশ্যেই। এরপর থেকে আরও নানান ঘটনায় পরস্পরকে দোষাদোষী করতে দেখেছে দেশের মানুষ। আলোচিত ত্বকী হত্যা ও সাত খুনের ঘটনায়ও চলে কথা চালাচালি।

পরবর্তীতে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ২য় সিটি নির্বাচনে টানা ৩য় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের জনপ্রিয় মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে সিটি করপোরেশনের ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে এবং ৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ১৮৭টি ভোট কেন্দ্রে মোট ৫ লাখ ১৭ হাজার ৩৫৭ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩৪ জন, মহিলা ভোটার ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫১৯ জন ও তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন। এ নির্বাচনে ইভিএমে ভোট দিবেন ভোটাররা।

এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগ মনোনয়ন নিয়ে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আলী আহাম্মদ চুনকা কন্যা ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা হাতি প্রতীকের অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার। অবশ্য মেয়র পদে আরও চার প্রার্থী এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারাও কম বেশি প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে ওসমান পরিবারের সদস্য শামীম ওসমান নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি হওয়ায় তিনি সিটি নির্বাচন থেকে নিরাপদ দূরত্বে রয়েছেন। তার পরও থেমে থেমে তাদের বাহাস উঠে আসে।

কয়েকদিন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও এমপি শামীম ওসমানকে নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠ। সিটির দুই হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী ও বিএনপি নেতা হাতি প্রতীকের অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে ছাড়িয়ে আলোচনায় উঠে আসে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা এমপি শামীম ওসমানের নাম। কী করবেন তিনি, কোন দিকে থাকবেন- এ নিয়ে দুই প্রার্থীর বাহাসে গরম হয়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠ।

প্রথম দিকে শামীম ওসমান কোনো মন্তব্য করেননি নির্বাচন নিয়ে। এমনকি এ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকেও যাননি তিনি। তবে তাকে নিয়ে দুই প্রার্থীর তর্ক-বিতর্ক আর মন্তব্যের জেরে আর চুপ থাকতে পারেননি তিনি। জানিয়ে দেন- এবার জবাব দিবেন তিনি। এর পর ১০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগ ও নৌকার বাইরে যাওয়ার উপায় নেই। নৌকা প্রতীকের কে প্রার্থী তা তিনি দেখেন না। তিনি শুধু নৌকা প্রতীকই দেখেন। এই বক্তব্যের পর পাল্টাপাল্টি মন্তব্য কিছুটা কমে আসে।

অবশ্য নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ২০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর নেতাদের সেই বৈঠকে শেষ পর্যন্ত যাননি শামীম ওসমান। দলীয় সেই বৈঠকে না গেলেও তিনি ছিলেন তার প্রয়াত বাবা মা আর ভাইয়ের কবরে। তিনি হলেন দেশের অন্যতম প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াত আইভীর সঙ্গে রাজনৈতিক বৈরিতার কারণেই এ সভার দিকে নজর ছিল সবারই।

ওই দিন ধানমন্ডি দলীয় সভানেত্রীর সেই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভী। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক নারী আসনের সংসদ সদস্য হোসনে আরা বাবলী।

৫ জানুয়ারি প্রচারণাকালে নির্বাচনে শামীম ওসমানের অবস্থান কী, সমর্থন নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নে বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভী। নাসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি শামীম ওসমান ‘খুব কি বেশি জরুরি’ এমন প্রশ্নও রাখেন তিনি। ৭ জানুয়ারি এক প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। এমপি শামীম ওসমানের সঙ্গে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। আদর্শগতভাবে উনিও আওয়ামী লীগ করেন, আমিও করি। স্থানীয় অনেক কিছুর সঙ্গে মতের অমিল থাকতে পারে, দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু শামীম ওসমানের সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই।

তবে ৮ জানুয়ারি ডা. আইভীর এক বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেদিন তিনি কোনো গডফাদারের দিকে তাকিয়ে নির্বাচন করেন না বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গতকাল বন্দরে তৈমুর প্রচারণা চালিয়েছেন, সেলিম ওসমানের জাতীয় পার্টির চারজন চেয়ারম্যান তার সঙ্গে ছিলেন। এতে প্রমাণিত হয় নারায়ণগঞ্জে যে গুঞ্জন ছিল তৈমুর আলম খন্দকার গডফাদার শামীম ওসমানের ক্যান্ডিডেট, গতকাল তা প্রমাণিত হয়েছে।

শনিবার বন্দরের ২৪নং ওয়ার্ডের দেউলি চৌরাপাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আইভী আরও বলেন, হাইকমান্ড কালকে সব দেখেছে। এখানে অনুষ্ঠান হয়েছে, পত্রিকায়ও খবর এসেছে। তারা দেখেছেন এবং তারা এ বিষয়ে দেখবেন। আমি বলতে চাই- আমি নির্বাচন করি জনতার শক্তিতে। জনতাই আমার শক্তি, দল আমার মনোবল। এসব মিলিয়ে আমি নির্বাচন করি। আমি কোনো গডফাদারের দিকে তাকিয়ে নির্বাচন করি না। আমি বলেছি কালকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানরা প্রকাশ্যে নেমেছেন। এতে প্রমাণিত হয়- কারা তার সঙ্গে আছেন, কারা তাকে সাপোর্ট দিচ্ছেন।

দলের সমর্থন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হলো কিনা জানি না। সব নেতাকর্মী আমার সঙ্গে। প্রতিটি ওয়ার্ড লেভেল পর্যন্ত নেতাকর্মীরা আমার পাশে আছে। একমাত্র তিনি (শামীম ওসমান) দলের বাইরে গিয়ে তার লোকজনকে তৈমুর সাহেবের সঙ্গে দিচ্ছেন।

আইভী আরও বলেন, তৈমুর আলম খন্দকার গডফাদার শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের প্রার্থী। তিনি বিএনপিরও প্রার্থী নন, জনতার প্রার্থীও নন। শামীম ওসমান তাকে প্রার্থী করেছেন। উনি বিএনপির প্রার্থী হলে ধানের শীষেই নির্বাচন করতেন। উনি গডফাদারের প্রার্থী। তিনি দন্তবিহীন গডফাদার, নতুন করে আবার উত্থান হতে শুরু করেছেন।

সেলিনা হায়াত আইভীর এমন মন্তব্যের পর আর চুপ থাকেননি শামীম ওসমান। ১০ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জের বাঁধন কমিউনিটি সেন্টারে ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, এখানে কে প্রার্থী, হু কেয়ারস। কলাগাছ না আমগাছ সেটা দেখার বিষয় না। এটা আমার স্বাধীনতার নৌকা, এটা বঙ্গবন্ধুর নৌকা, এটা আমাদের ৪৯ জন লাশের নৌকা, চন্দন শীলের ২ পায়ের বিনিময়ের নৌকা। নৌকার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এছাড়া এক প্রতিক্রিয়ায় শামীম ওসমান বলেন, দুই দিন আগে একটি ভিডিও দেখলাম, সেখানে উনি (আইভী) বলছেন, শামীম ওসমান আমাদের নেতা। উনি বড়ভাই, আওয়ামী লীগের এমপি। দুই দিনের মধ্যে গডফাদার হয়ে গেলাম। আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে আমার দল। আমি যদি গডফাদার হই, তাহলে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন কে? কাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলো? যে বলেছে, তার (আইভী) কাছে জিজ্ঞেস করেন, আপনি দুই দিন আগে এটা বলেছেন, দুই দিন পরে এটা বললেন। কোনটা সঠিক। তিনি প্রশ্ন রেখে আরও বলেন, দুই দিন আগে ছিলাম ভাই, এখন গডফাদার হলাম কীভাবে?

এদিকে রোববার বিকালে নিজ বাসভবনের ‘মজলুম মিলনায়তন’ এ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করেন অ্যাডভোকেট তৈমুর আল খন্দকার। সেখানে তিনি বলেন, সরকারদলীয় মেয়র প্রার্থী যে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত মন্তব্য করেছেন, সে ব্যাপারে আমার স্পষ্ট মন্তব্য হলো সরকারদলীয় নেতাদের এই বিভেদ-বিভাজনই নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের প্রধান অন্তরায়। শামীম ওসমান সরকারদলীয় এমপি আর সেলিম ওসমান সরকারি দলের জোটবদ্ধ জাতীয় পার্টির এমপি। আমি তৈমুর আলম খন্দকার প্রথম দিন থেকেই বলছি শামীম ওসমানের পায়ে তৈমুর আলম খন্দকার হাঁটে না। গত ৫০ বছর ধরে মাটি ও মানুষের সঙ্গে রাজনীতি করতে করতে তৈমুর আলম খন্দকারের ভিত্তি এতটাই শক্ত অবস্থান হয়েছে যে, কোনো শামীম ওসমান বা সেলিম ওসমানের হয়ে আমাকে নির্বাচনে অভিনয়ে নামতে হবে না।

১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ এখন ওই সিটির পাড়া-মহল্লায়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রার্থী আর সমর্থকরা। ২৮ ডিসেম্বর প্রতীক নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পরপরই গণসংযোগে নামেন প্রার্থীরা। ২৭টি ওয়ার্ডে ভোট যুদ্ধে ৬ মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ১৬২ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৫ জন প্রার্থীর গণসংযোগে সরগরম হয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জের ভোটের মাঠ।

তাদের এই শান্তিপূর্ণ প্রচারণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ভোটাররা। পুরো নারায়ণগঞ্জ শহরে মোটামুটি সব মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীর মাইক বাজছে। শহরজুড়ে প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারও ছড়িয়ে আছে। কারও মধ্যে কোনো শঙ্কা নেই। এখন দেখার বিষয় কী হয় ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে। সারা দেশের মানুষ তাকিয়ে আছেন ওই নির্বাচনের দিকে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর