হাওর বার্তা ডেস্কঃ চাহিদা মেটাতে দেশে গমের প্রয়োজন বছরে ৭০ লাখ টন। সেখানে উৎপাদন মাত্র ১২ লাখ টন, যা প্রায় এক-ষষ্ঠাংশ। এজন্য প্রতি বছর গমের আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে। তাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে আটা-ময়দার দাম।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে ৭০ লাখ টন গমের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১২ লাখ টন। গত এক দশকে গমের সার্বিক উৎপাদন ছিল নিম্নমুখী, শেষ ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রতি বছর ১১ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়তি চাহিদার বিপরীতে শেষ দুই মৌসুমে উৎপাদন সাড়ে ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে।
উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের দামের কারণে এখন অনেক দরিদ্র মানুষ দুইবেলা রুটি খাচ্ছেন। রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকানে আটা থেকে তৈরি বিভিন্ন খাদ্যের চাহিদা বেড়েছে। পাশাপাশি যারা স্বাস্থ্যসচেতন তারাও ভাতের চেয়ে আটায় প্রোটিন বেশি ও জলীয় অংশ কম থাকায় পছন্দের তালিকায় এনেছেন আটার তৈরি খাদ্য। অন্যদিকে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা ভাত খাওয়া কমিয়ে রুটির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। এছাড়া ভাতের চেয়ে রুটির দাম তুলনামূলক কম। সব মিলিয়ে দেশে দ্রুত গমের চাহিদা বেড়েছে।
এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাব বলছে, বিশ্বের যে কয়টি দেশে সবচেয়ে দ্রুত গমের আমদানি বাড়ছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। আর গম আমদানিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ পঞ্চম।
অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, দেশে গত অর্থবছর ৫৩ লাখ ৪২ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকার আমদানি করেছে ৪ লাখ ৭৮ হাজার টন। বাকিটা এসেছে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত) ১৯ লাখ ৪৯ হাজার টন গম আমদানি করা হয়েছে।
চাহিদা মেটাতেই বিশ্ববাজার থেকে গম আমদানি বাড়ছে জানিয়ে দেশের শীর্ষ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘দেশে আটা-ময়দার রুটিসহ অন্যান্য পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। তাছাড়া দীর্ঘদিন চালের দাম বেশি। এ কারণে বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। চাহিদা বেশি হওয়ায় আমদানি বেড়েছে।’
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি গম আমদানি করে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে। অন্যদিকে ময়দা তৈরির জন্য ভালো মানের গম আমদানি হয় কানাডা থেকে। চলতি বছর ইউক্রেন ও রাশিয়া নিজেদের উৎপাদন কমায় গম রপ্তানিতে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে। এ কারণে পড়তা না থাকায় আমদানিও কমেছে।
এদিকে, দেশে যে পরিমাণ গম উৎপাদন হয় তা দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। তাই ভারত থেকে গম আমদানি করা হচ্ছে বেশি। সেখানেও বেধেছে বিপত্তি। বিশ্ববাজারের চড়া মূল্য ও বাংলাদেশের বাড়তি চাহিদার কারণে ভারতও গমের দাম বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশের গম উৎপাদন বৃদ্ধির স্থবিরতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুক বলেন, ‘গমের উৎপাদন না বাড়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। বর্তমানে জলবায়ুগত বৈশ্বিক সমস্যা, বিভিন্ন ফসলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা, উপযুক্ত জাতের সীমাবদ্ধতায় একই সময়ের অন্যান্য শস্যের সঙ্গে পেরে উঠছে না গম। একই সময়ে গমের জমিতে ভুট্টা ও আলু চাষে ঝুঁকছে কৃষক। এতে তারা লাভবান হচ্ছেন।’
গমের ন্যায্যমূল্য একটি বড় সমস্যা জানিয়ে এই গবেষক বলেন, ‘গম চাষ করে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষক। সরকার দাম নির্ধারণ করলেও বাস্তবে দাম পাচ্ছেন ১৫ থেকে ১৬ টাকা কেজি, যা লাভের জন্য ৩০ টাকা হওয়া উচিত।’
গোলাম ফারুক আরও বলেন, ‘কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের কোনো বিকল্প নেই। এটি দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। উৎপাদন কমলে খাদ্যঝুঁকি বেড়ে যাবে। এজন্য কন্ট্রাক ফার্মিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’