স্পেনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার। পুলিশের সর্বোচ্চ পদ থেকে অবসরে যাওয়ার মাত্র ছয় মাসের মাথায় আবারও দেশের হয়ে সরাসরি কাজ কারা সুযোগ পাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে স্পেন সরকারের কাছে তার বিষয়ে এগ্রিমো পাঠানো হয়েছে। দেশটির পক্ষ থেকে অনাপত্তিপত্র পেলেই তার নিয়োগ চূড়ান্ত হবে।
হাসান মাহমুদের ঘণিষ্ঠজনরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পুলিশের পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পরেই হাসান মাহমুদ রাষ্ট্রদূত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগও রাখেন তিনি। অবশেষে সরকার তাকে ইউরোপের দেশ স্পেনের রাষ্ট্রদূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, উচ্চ মহলের সবুজ সংকেত পেয়ে হাসান মাহমুদ খন্দকারকে স্পেনের রাষ্ট্রদূত করার প্রস্তাব দেশটির ঢাকাস্থ দূতাবাসের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই তারা উত্তর দেবেন আশা করা হচ্ছে।
স্পেন তার বিষয়ে অনাপত্তি জানাবে বলেই আশা করছে সরকার- যোগ করেন তিনি।
তবে এ বিষয়ে সরাসরি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি হাসান মাহমুদ খন্দকার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখনই এ বিষয়ে মন্তব্য করার মত সময় আসেনি।
তাকে এখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়নি বলেও জানান সরকারের নানা কঠিন সময়ে পুলিশের দায়িত্বে থাকা হাসান মাহমুদ।
তবে খুব শ্রীঘ্রই ‘একটি সুখবর পাওয়ার’ ইঙ্গিত দেন তিনি।
এদিকে তার ঘণিষ্ঠ একটি সূত্র বলছেন, পুলিশের সাবেক এই আইজি স্পেনে তার বিষয়ে এগ্রিমো পাঠানোর বিষয়টি অবগত আছেন। এখন সেটির উত্তরের অপেক্ষা করছেন।
জানা যায়, স্পেনের ইতিবাচক সাড়া পাওয়ার পর জনপ্রশাসন থেকে হাসান মাহমুদ খন্দকারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হবে। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পাঠানোর ঘোষণা আসবে। তবে বেশিরভাগ সময় মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার পরেই কারো বিষয়ে এগ্রিমো পাঠানো হয়।
সাধারণত এর আগে পেশাদার কূটনীতিকের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, নৌ বা বিমান বাহিনী থেকে নিয়োগ দেওয়া হত। বর্তমান সরকারের সময়ে পুলিশ বাহিনীর কর্মকর্তাদেরও আনা হচ্ছে।
এর আগে ২০১১ সালে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদকে আফ্রিকার দেশ মরক্কোর রাষ্ট্রদূত হিসেবে দেয় সরকার।
তবে পুলিশ বাহিনীর কাউকে ইউরোপের কোন দেশে রাষ্ট্রদূত করে পাঠানোর ঘটনা এটাই প্রথম।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পেশাদার কূটনীতিকদেরকেই সাধারণত ইউরোপের দেশগুলোতে রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হত। কিন্তু একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ইউরোপের কোন দেশে পাঠানোর ঘটনা এটাই প্রথম।
গত বছরে পুলিশের সর্বোচ্চ পদ থেকে অবসরে যান হাসান মাহমুদ খন্দকার। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইজিপি পদে নিয়োগের পূর্ব পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হাসান মাহমুদ খন্দকার।
বিসিএস (পুলিশ) ১৯৮২ ব্যাচের সদস্য হিসেবে ১৯৮৪ সালে পুলিশ সার্ভিসে যোগ দেন তিনি।
১৯৮৬ সালে টাঙ্গাইলে এএসপি (সার্কেল) হিসেবে পুলিশ সার্ভিসে বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শুরু করেন হাসান মাহমুদ। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিলেট, পুলিশ সুপার টাঙ্গাইল, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ/পশ্চিম) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, অতিরিক্ত কমিশনার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, প্রিন্সিপ্যাল পুলিশ একাডেমি, ডিআইজি (প্রশাসন) পুলিশ সদর দফতর, অতিরিক্ত মহা-পুলিশ পরিদর্শক (ট্রেনিং) পুলিশ সদর দফতর, অতিরিক্ত আইজি স্পেশাল ব্রাঞ্চসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে কৃতিত্বের সাথে সম্মানসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। সাবেক এই র্যাব মহাপরিচালক যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পেশাগত কোর্সে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মিরপুর ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এনডিসি কোর্স সম্পন্ন করেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বসনিয়া ও হারজিগোভিনার সারায়েভোতে মিশন সদর দফতরে গুরুত্বপূর্ণ পদেও নিয়োজিত ছিলেন হাসান মাহমুদ।
তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, সুইজারল্যান্ড, হংকং, ওমান, নেপাল, মরক্কো, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েতনাম ও পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত সভা-সেমিনারে বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
তাকে পেশাগত জীবনে অসাধারণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ সম্মাননা পদক ‘বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম)’ এবং ‘প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম)’ এ ভূষিত করা হয়।