হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেড়ে ওঠা বরিশালের এক গ্রামে। স্কুল, কলেজ এবং ডিগ্রি শেষ করেছেন সেখান থেকেই। বিয়ের পর ঢাকায় স্থায়ী বসবাস তার। চাকরির জন্য অনেক বছর ঘুরেছেন। কিন্তু সোনার হরিণ নামক সেই চাকরি ধরা দেয়নি তার ঝুলিতে।
তবে দমে যাননি, নিজে কিছু করার ইচ্ছা বরাবরই ছিলো। যা তাকে তাড়িয়ে বেরিয়েছে সবসময়। বছর দেড়েক আগে চাকরির চিন্তা বাদ দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো এবার। লাখপতি হয়ে যান ব্যবসা শুরুর কয়েক মাসের মাথায়। বলছিলাম উদ্যোক্তা সাহিদা আক্তারের কথা।
সাহিদার ব্যবসার পণ্যটি হচ্ছে কাঠের রুটি মেকার। ব্যস্ত জীবনে নারীদের রুটি তৈরির সময় কোথায়। বেশিরভাগ নারীরাই এখন কর্মজীবী। সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য রুটি খান সকাল বিকেল। তবে রুটি তৈরির জন্য যে বেশ খানিকটা সময় প্রয়োজন তা নেই অনেকের হাতেই। সেই কাজ সহজ করে দিয়েছে রুটি মেকার।
বাজারে ইলেকট্রিক তো বটেই কাঠের রুটি মেকারও পাওয়া যায়। ব্যাপক জনপ্রিয়তাও পেয়েছে অল্প দিনে। সেই প্রয়োজনীয়তা ও জনপ্রিয়তাকেই কাজে লাগিয়েছেন সাহিদা। ঢাকার মিরপুরে শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন তিনি। স্বামী প্রবাসী হওয়ায় বাড়িতে একা সময় পার করতেন। পারিবারিক কারখানা রয়েছে তাদের এই রুটি মেকারের।
সেখান থেকেই মাত্র ৫ হাজার টাকার রুটি মেকার দিয়ে যাত্রা শুরু করেন সাহিদা। সাহিদার স্বামীই ফেসবুকে পেজ খুলে দেন ২০২০ সালে। এমনকি পোস্টও করেন তিনিই। উইতে নিয়মিত পোস্ট করতে থাকেন পণ্যের ছবি। সেখান থেকেই রুটি মেকারের অর্ডার আসে প্রথম। সেটা ছিল ঢাকার বাইরে।
পাঁচ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে শুরু করা সেই ব্যবসার মূলধন এখন ছাড়িয়েছে লাখ টাকা। প্রতি মাসেই সাহিদা এখান থেকে আয় করছেন লাখ টাকারও বেশি। এক মাসে সর্বোচ্চ আয় ছিল তার দুই লাখ টাকা। প্রতিটি রুটি মেকার তিনি ১৫০০-২১০০ টাকা পর্য ন্রুত বিক্রি করেন। রুটি মেকারের পাশাপাশি সাহিদার পেজে আছে হোমমেড চিপস। এটিতেও বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন তিনি।
সাহিদা বলেন, সবসময় চেয়েছেন নিজে উপার্জন করতে। এজন্য চাকরির পেছনে ঘুরেছেন অনেক বছর। যখন কিছুই হচ্ছিল না। তখন বেশ হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এরপর ব্যবসা করার কথা মাথায় আসে। তবে ইউনিক কিছু নিয়েই শুরু করার ইচ্ছা ছিলো। খুলে ফেলেন প্রভাতী রুটি মেকার নামে একটি ফেসবুক পেজ। পোস্ট করেন পণ্যের ছবি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। যতই দিন গড়িয়েছে ততই বিক্রি বেড়েছে, বেড়েছে আত্মবিশ্বাসও।
তিনি এই পণ্য নিয়েই কাজ করতে চান। কারণ অনেক বেশি পণ্য নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে গেলে ঝামেলা অনেক বেশি। এরপর আবার সময়ও বেশি দিতে হবে। সাহিদার দেড় বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। এরপর সংসার সামলানো। সব মিলিয়ে তিনি এটিতেই বেশ খুশি। তবে ভবিষ্যতে শপ দেওয়ার ইচ্ছা আছে এই উদ্যোক্তার। দেশের বাইরেও তার পণ্য পৌঁছে যায়, সেই লক্ষ্যেই কাজ করতে চান।
সাহিদা এখন নিজের খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবা-মায়ের খরচ চালান এখান থেকেই। পরিবারে স্বচ্ছল্যতা ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন অনলাইনে ব্যবসা করেই। পরিবারের জন্য কিছু করতে পারছেন এতেই তার সফলতা।
সাহিদার সঙ্গে তার স্বামী এবং দুইজন কাজ করছেন। নিজস্ব ডেলিভারিম্যান দিয়েই ঢাকার ভেতরে পণ্য দেন। আর ঢাকার বাইরে অন্যান্য কুরিয়ার কোম্পানি দিয়ে পাঠান। এখন পর্যন্ত কোনো কাস্টমারের কাছ থেকে কোনো খারাপ রিভিউ আসেনি। তবে যারা ঢাকার ভেতরে আছেন তাদের জন্য একটি সুবিধা রেখেন তিনি। ক্রেতা ডেলিভারিম্যানের সামনেই রুটি তৈরি করে দেখে নিতে পারবেন। পছন্দ না হলে ফেরত দেওয়ারও অপশন আছে।
সাহিদা নতুন যারা উদ্যোক্তা হতে যান তাদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষিত হয়ে যে শুধু চাকরিই করতে হবে এমন নয়। নিজের কর্মদক্ষতা দেখানোর আরও উপায় রয়েছে। পরিশ্রম দিয়ে আপনি যে কাজই করুন সেখানেই সফলতা পাবেন।
উদ্যোক্তা হতে হলে অনেক বেশি সৃজনশীল হওয়া প্রয়োজন। ইউনিক পণ্য নিয়ে কাজ করতে হবে। অনলাইনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অবশ্যই পরিশ্রমের পাশাপাশি আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা কিছু ভাবতে হবে। আপনার পণ্য যতবেশি ইউনিক হবে ততই আপনি এই সেক্টরে নিজের জন্য পোক্ত জায়গা করতে পারবেন।
আর অবশ্যই যে যে পণ্য নিয়েই কাজ করুক না কেন, সেই পণ্য সম্পর্কে তার পূর্ণ ধারণা থাকতে হবে। এজন্য সেই পণ্য সম্পর্কে কিছু স্টাডি করে নিন আগেই। এতে আপনি কাস্টমার হ্যান্ডেল করতে পারবেন খুব সহজেই। ধৈর্য থাকতে হবে আপনাকে শতভাগ। হতাশ না হয়ে নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে লেগে থাকুন, সফলতা ধরা দেবে আপনার হাতে।