বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) কর্মকর্তাদের উদ্দেশে হুঙ্কার ছেড়েছেন শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের চেয়ারম্যান মনজুর কাদের। আট ফুটবলার সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে শেখ জামালের পক্ষে দেওয়া হাইকোর্টের অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সোমবার খারিজ হয়ে যায়। এরপর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
বাফুফের বর্তমান কমিটির মেয়াদ চলতি এপ্রিল মাসেই শেষ হচ্ছে। সেদিনই পরবর্তী কমিটির নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। সেদিকে ইঙ্গিত করে মনজুর কাদের বলেন, ‘৩০ তারিখ দরজায় করাঘাত করছে। তার আগেই তোমরা এই ফুটবল ফেডারেশন ছেড়ে চলে যাও। তা না হলে তোমাদের এ দেশের লোক ঝাড়ু পেটা করে বের করে দেবে। তোমরা যে ন্যক্কারজনক কাজ করেছ, ফুটবলকে মাঠ থেকে টেবিলে নিয়ে এসেছে। আট বছরে ফুটবলকে তোমরা কোথায় নিয়ে গেছ সেটা তোমরা জান।’
অন্তর্বর্তী আদেশে হাইকোর্ট বলেছে, শেখ জামাল থেকে মৌসুমের মাঝামাঝিতে অন্য ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করা প্লেয়াররা এখন শেখ জামাল ছাড়া অন্য ক্লাবে খেলতে পারবে না। হাইকোর্টের আদেশের স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল বিভাগে করা বাফুফের লিভ টু আপিল খারিজ হওয়ার পর ফুটবলারদের তার ক্লাবে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান মনজুর কাদের।
তিনি বলেন, ‘আমার প্লেয়ারদের তারা প্রলোভন দেখিয়ে আটকে রেখেছে। তাদের প্রতি আমার আবেদন রইল, তোমরা আমার প্লেয়ার। তোমরা আইন মেনে অতি শীঘ্রই আমার ঘরে চলে এসো। ফুটবল ফেডারেশনের এই অসাধু কর্মকর্তাদের বলছি, অতিসত্বর আমার প্লেয়ারদের ফেরত দাও, দেশের ফুটবলকে বাঁচাও।’
ফুটবল ফেডারেশন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের জন্য শেখ জামালের ফুটবলারদের নিয়েছিল। টুর্নামেন্ট শেষে তাদের সেই প্লেয়ারদের ফেরত দেওয়া উচিত ছিল উল্লেখ করে মনজুর কাদের বলেন, ‘ফুটবল ফেডারেশনের অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। মহামান্য আদালতের কাছে আমরা হাজির হতে বাধ্য হয়েছিলাম। প্লেয়ারদের ফুটবল ফেডারেশন বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ খেলার জন্য আমাদের কাছ থেকে ধার নিয়েছে। জাতির স্বার্থে আমরা প্লেয়ারদের দিয়েছিলাম। সেই প্লেয়ারদের আমাদের ফেরত না দিয়ে আটকে রেখেছিল। ফুটবল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট কমিটমেন্ট করেও তা রাখেনি। সেই প্লেয়ারদের আমাদের দেয়নি। সেই প্লেয়ারদের না দিয়ে তারা ভাগ করে দিল অন্য তিনটি ক্লাবের মধ্যে।’
এর বিনিময়ে ফেডারেশনের কর্মকর্তারা কমিশন নিয়েছে বলেও দাবি মনজুর কাদেরের। তিনি বলেন, ‘ওই সময় তো প্লেয়ারগুলো শেখ জামালেরই ছিল। ফুটবল ফেডারেশন কী সেই প্লেয়ারদের ইজারা নিয়েছিল, ওই ক্লাবের মধ্যে ভাগ করে দিতে। ফুটবল ফেডারেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের স্বার্থে কমিশন খাওয়ার জন্য ও শেখ জামালকে ধ্বংস করার জন্য, ভেঙে ফেলার জন্য এটা করেছে। ওই অসাধু কর্মকর্তারা মনে করেছে শেখ জামালের এত সাফল্য আসবে কেন? তারা তো আর পারছে না। তাই তারা কমিশন খাওয়ার জন্য প্লেয়ারদের অন্য ক্লাবে দিয়েছিল। কিন্তু আজকে (সোমবার) দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দিয়েছে।’
এছাড়াও ফুটবল ফেডারেশনের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগও করেন মনজুর কাদের। তিনি বলেন, ‘এ দেশের ফুটবল ফেডারেশনের মূল অ্যাকাউন্টের বাইরে একটা প্যারালাল (সমান্তরাল) অ্যাকাউন্ট আছে। সেই অ্যাকাউন্টের নাম ‘আবু হোসেন’। বাফুফে ভবন তার ঠিকানা। মতিঝিল থানা তার এলাকা। সেই অ্যাকাউন্ট থেকে লাখ লাখ টাকা ক্যাশ ট্রানজেকশন হয়েছে। ফুটবল ফেডারেশনের অ্যাকাউন্ট থেকে যে ক্যাশ টাকা বের হয়েছে ফিফাতেও সেই কমপ্লেইন গিয়েছে।’
মামলার বিষয়ে শেখ জামালের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘মৌসুম শেষ না হওয়ায় বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ শেষেও প্লেয়াররা শেখ জামালের ছিল। কিন্তু সেই প্লেয়ারদের ফেডারেশন বুঝিয়ে না দেওয়ার সিদ্ধান্তটা আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি। সেই রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন, এই প্লেয়াররা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শেখ জামাল ছাড়া অন্য কোনো ক্লাবে খেলতে পারবেন না। আপিল বিভাগে সেই আদেশের বিরুদ্ধে গিয়েও বাফুফে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এখন আদালতের আদেশের প্রতি সব পক্ষই সম্মান প্রদর্শন করবে এটাই প্রত্যাশা করছি।’