হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী ৫ম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম ও মিঠামইনে দলীয় প্রতীক থাকছে না বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ। নির্বাচনী সহিংসতা এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। শনিবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপতি তনয় ও সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।
আগামী ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে অষ্টগ্রাম উপজেলার (অষ্টগ্রাম সদর, কাস্তুল, পূর্ব অষ্টগ্রাম, দেওঘর, বাঙ্গালপাড়া, কলমা, আদমপুর ও আব্দুল্লাহপুর) ৮টি ও মিঠামইন উপজেলার (মিঠামইন সদর, ঘাগড়া, গোপদিঘী, ঢাকী, কেওয়ারজোড়, কাঠখাল ও বৈরাটি) এ ৭টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক জানান, সারাদেশে অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনে কিছু কিছু জায়গায় সহিংসতা দেখা দিয়েছে। যা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্খিত। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমার সংসদীয় আসন ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামের ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না দেয়ার অনুরোধ জানাই। পরে শনিবার স্থানীয় সরকার পার্লামেন্টারি বোর্ডের মিটিং শেষে প্রধানমন্ত্রী আমার এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছেন। সভা শেষে কেন্দ্র থেকে আমাকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের হাওরের এই তিন উপজেলা বরাবরই আওয়ামী লীগের শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ৭০’র নির্বাচন থেকে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে আসছে। ইউপি নির্বাচনেও যারা বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হন এ অঞ্চলের মানুষ অধিকাংশ আওয়ামী লীগের প্রার্থীকেই নির্বাচিত করে থাকেন।
জনগণ যেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে তাই দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচনে যেন কোনো ধরনের কারচুপি বা অনিয়ম না হয় সে ব্যবস্থাও নেয়া হবে। যে কোনো বিশৃঙ্খলার বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
দলীয় প্রতীক না থাকার বিষয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ফজলুল হক হায়দারী বাচ্চু জানান, প্রতীক না থাকার বিষয়টি আমার কাছে ভালো মনে হচ্ছে না। একই নির্বাচনে দুই নীতি বিষয়টি দৃষ্টিকটুর। ১ম থেকে ৪র্থ ধাপে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য সকল ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ব্যবহার হয়েছে। এমনকি আমাদের পাশের উপজেলাগুলোতেও দলীয় প্রতীক নিয়েই আওয়ামী লীগ প্রার্থীগণ নির্বাচন করেছেন। আমাদের উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে প্রতীক না থাকার বিষয়টি দলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি আরোও বলেন, প্রতীক না থাকায় নির্বাচনে আওয়ামী লীগে প্রার্থীর সংখ্যা একাধিক। অপরদিকে বিরোধী বা অন্যান্য দলের একক প্রার্থী থাকায় নির্বাচনে তাদের জয়ী হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
অষ্টগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেমস বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকার বিষয়টেকে আমি সাধুবাদ জানাই। জনগণের এবার ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। জনগণ তার পছন্দের প্রার্থী বেছে নিতে পারবে।
দলে একাধিক প্রার্থী থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে দলের সকল প্রার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে এবং জনপ্রিয়তার প্রেক্ষিতে দলীয় প্রার্থীদের প্রচারনা করবো। সকল ইউনিয়নে যাতে দলীয় প্রার্থীরা বিজয়ী হয় সে লক্ষ্যে আমরা সবাই কাজ করবো। তবে দুই একটি ইউনিয়নে যদি অন্যান্য দলের কেউ নির্বাচিত হন তাতে স্থানীয় রাজনীতিতে বা দলে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে বিশ্বাস করি।
এছাড়া মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক সমীর কুমার বৈষ্ণব জানান, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকর বিষয়টিকে আমি স্বাগত জানাই। নির্বাচনে জনগণ তার পছন্দের প্রার্থী বেছে নিতে পারবে।
প্রতীক না থাকার বিষয়টি দলে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতীক দিলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে অনেকাংশে ক্ষোভ দেখা গেলেও এবার প্রতীক না থাকায় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে। প্রার্থীগণ ভোটের মাধ্যমেই স্ব স্ব অবস্থান দলের সামনে উপস্থাপন করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আর জনগণ বেছে নিবে তাদের পছন্দের জনপ্রতিনিধি।
অন্যদিকে ৫ম ধাপের নির্বাচনে হাওরে তিন উপজেলার মধ্যে দুটিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ইটনা উপজেলার নির্বাচনি তফসিল এখনও ঘোষণা হয়নি। পরের ধাপে এ উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদেও দলীয় প্রতীক থাকবে না বলে জানান সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক।
সব মিলিয়ে হাওরে এবারের ইউপি নির্বাচনে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নিতে পারবেন বলে আশাবাদী স্থানীয় ভোটারগণ।