স্বতন্ত্রের আড়ালে থাকবে বিএনপির প্রার্থী!

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন নিয়েও ‘কৌশলী’ অবস্থান নিয়েছে বিএনপি। বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে সব নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও ভোটের মাঠে থাকবে দলটি। মূলত রাজধানীর পাশের এই সিটি নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিতে চায়। এজন্য ধানের শীষ প্রতীকে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্রভাবে নেতারা ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন নির্বাচন করার বিষয়ে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যা ইতোমধ্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে জানানো হয়েছে। এখন দলের হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেলেই তারা মাঠে নামবেন। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপির ধারণা, যেহেতু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদের শেষ সময়ে এই নির্বাচন। এবার সুষ্ঠু ভোট হতে পারে। একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় নেতারা তাদের জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকলে নেতাকর্মীদের চাঙা রাখা যাবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে সামনে রেখেই তারা এই নির্বাচনে অংশ নিতে চান। কারণ হিসেবে স্থানীয় নেতাদের ধারণা, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী টানা তিনবার মেয়র। একই মুখ বারবার দেখার কারণে এবার ভোটাররা পরিবর্তন আনতে পারে। সে কারণে তারা চাচ্ছেন রাজধানীর পার্শ^বর্তী এই জেলার সিটি নির্বাচনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে একজন প্রার্থী থাকুক। খালি মাঠে আওয়ামী লীগকে গোল করতে দিতে চান না। স্বতন্ত্র একজন প্রার্থী দিলে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও

স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন। তাদের দাবির বিষয়টি হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছে। এ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকার ইঙ্গিত দিয়ে নীতিনির্ধাকরা আরও জানান, বিএনপির সিদ্ধান্ত দলীয় প্রতীকে তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। তবে স্বতন্ত্রভাবে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা নেই। সেক্ষেত্রে কাউকে দল থেকে শোকজ বা বহিষ্কার করা হবে না। গত মার্চ মাসের পর থেকে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছেন। কেউ কেউ জয়ীও হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের ক্ষেত্রে বাধা নেই।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী  বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে দলীয় প্রতীকে কোনো নির্বাচনেই বিএনপি অংশ নেবে না-এটা দলীয় সিদ্ধান্ত। কারণ বর্তমান সরকার জবরদস্তিমূলক দখলদার সরকার। ফ্যাসিবাদ সরকারের অধীনে দেশ পরিচালিত হচ্ছে। তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। যা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে।

সর্বশেষ গত বছরের ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। এরপর আর জাতীয় সংসদের কোনো উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে তারা অংশ নেয়নি। গত মার্চে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২০১১ সালের নির্বাচনে ভোটের মাত্র ৭ ঘণ্টা আগে অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকারকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে সরিয়ে নেওয়া হয়। ওই সময় তৈমূর দাবি করেন, তাকে গোসল ছাড়াই কোরবানি দেওয়া হয়েছে।

পরে অভিমান করলে ২০১৬ সালের নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি। ওই নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে অংশ নেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন। অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার  বলেন, নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর থেকেই সারা দিন আমার বাড়িতে লোকে লোকারণ্য। সবার দাবি আমাকে নির্বাচনে দাঁড়াতে হবে। নেতাকর্মীদের বলেছি, দল যদি দলীয়ভাবে নির্বাচন করে আমি দাঁড়াব। গত নির্বাচনে মান-অভিমানের কারণে দাঁড়াইনি। এখন দলের স্বার্থে আমাকে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, সরকারি দলকে মোকাবিলা করার জন্য নারায়ণগঞ্জে সব ধরনের প্রস্তুতি বিএনপির আছে। এখন দলের নির্দেশের জন্য অপেক্ষায় আছি। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দল যে সিদ্ধান্ত নেবে তাই আমরা মানব। দল যদি দলীয় ব্যানারে নির্বাচন করে আর নেতাকর্মীরা যদি আমাকে প্রার্থী হিসেবে চায়।

অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলাম, নির্বাচন করেছি। এবার বিএনপির সিদ্ধান্ত এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যাবে না। তবে নারায়ণগঞ্জের এই নির্বাচন কোনো জাতীয় সংসদ নির্বাচন নয়। তাই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরে দল যদি নির্দেশ দেয় নির্বাচন করা যাবে না, মনোনয়নপত্র জমা দেব না। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা গেলে নির্বাচন করব।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে (নাসিক) আগামী ১৬ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করে তফশিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আগামী ১৫ ডিসেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ২০ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৭ ডিসেম্বর ও প্রচার শুরু ২৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর