কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে ১৫টি নদনদী দ্বারা বেষ্টিত সীমাস্তবর্তী চরাঞ্চলীয় উপজেলা রৌমারী। বরাবরই উন্নয়নের ছোয়া থেকে বঞ্চিত উপজেলাবাসী। এখানকার মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। বোরো-ইরি ও রোপা আমন ধান এ অঞ্চলের মানুষের বর্ষা মৌসুমের প্রধান ফসল।
যোগাযোগের জন্য বাঁশের সাকোই ভরসা রৌমারীবাসীর। গত বন্যায় গ্রামীণ সড়ক ভেঙে তছনছ হয়ে যাতায়াত অযোগ্য হয়ে পড়েছে উপজেলার অধিকাংশ সড়ক। ১৯৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের রৌমারী উপজেলার ১৯৮টি গ্রামের ৩ লাখ মানুষই বাঁশের সাঁকোকেই অবলম্বন করেছেন।
বর্ষার ছোবল থেকে ফসল রক্ষার সুপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এখানকার কৃষকরা। প্রতি বছর অতি সহজে বর্ষার পানি প্রবেশ করে নষ্ট করে দেয় ইরি-বোরো ও রোপা আমন ধান। আপরদিকে বানের পানির আঘাতে গ্রামীণ সড়ক ভেঙে খানখান হয়ে যায়। যার ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে রৌমারীর মানুষ। বন্যায় গ্রামীণ সড়কগুলো সংস্কার না করায় চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, যাদুরচর ইউনিয়নে চর লাঠিয়ালডাঙ্গা, আলগারচর, লাঠিয়ালডাঙ্গা, খেওয়ারচর, বকবান্দা, চুলিয়ারচর, কলাবাড়ী, বারবান্দা কাশিয়াবাড়ী, রৌমারী ইউনিয়নে, ফুলবাড়ী, খাটিয়ামারী, বোল্লাপাড়া, রতনপুর, নুতনবন্দর, চরবামনেরচর , মোল্লারচর, বেহুলারচর, গয়টাপাড়া, কলমেরচর, বোওয়ালমারী, চেংটাপাড়া, কাজাইকাটা, খনজনমারা, বাঘমারাসহ অর্ধশতের উপরে ভাঙা রয়েছে।
সরকারি কোন উদ্যোগ না থাকায় গ্রামবাসী নিজস্ব অর্থায়নে বাঁশের সাকো নির্মাণ করে চলাচল করছে। লাঠিয়ালডাঙ্গা গ্রামের কৃষক ছালাম, কাশেম আলী আলগারচর গ্রামের রবিউল ইসলাম চর লাঠিয়ালডাঙ্গা গ্রামের সাইজ উদ্দীনসহ অনেকেই বলেন, আমাদের বাংলাদেশ স্বাধীনের ৪৪টি বছর এভাবেই পার অইয়া গেলো কিন্ত আমাগো ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটলো না।
তারা আরও জানায়, চর লাঠিয়ালডাঙ্গা থেকে রৌমারী উপজেলায় যেতে হলে ১৫ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে যেতে হয়। যাদুরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সরবেশ আলী বলেন, আমার ইউনিয়নে ১১টি বাঁশের সাঁকো রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন বরাদ্দ পাইনি।
দাতভাঙ্গা ইউনিয়ন চেয়াম্যান সামসুল হক, শেীলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিন, রৌমারী সদর ইউনিয়নের চেয়াম্যান আঃ রাজ্জাক, চর শৈলমারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফজলুল হক বন্দবেড় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান, গত বছরের বন্যায় উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়ক গুলো ভেঙে অর্ধশতের ওপরে খাল পাগারে পরিণত হয়েছে। বিশেষ বরাদ্দ ছাড়া এসব খালপাগার ভরাট সম্ভব নয়।
এব্যাপারে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় ৬টি ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কের তথ্য দেওয়া হয়েছে। রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সংকর কুমার বিশ্বাস যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহালদশার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এব্যপারে জেলা প্রশাসনে নোট দেওয়া হয়েছে।’