ঢাকা ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সামোয়ান‌দের দাঁতই হাতিয়ার, ক্রি‌কেট খে‌লেন নিজস্ব রীতিতে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১
  • ১৫৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পৃথিবীতে কত অদ্ভুদ সংস্কৃতি রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। আজ এমন এক জাতি ও তাদের সংস্কৃতির কথা বলবো যা সম্ভবত আগে কখনো জানতেন না।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট এক দেশ সামোয়া। গভীর সমুদ্রের এই দ্বীপরাষ্ট্রে বাস করছে সামোয়ান জাতিগোষ্ঠী নামের একদল মানুষ। এই মানুষগুলোর বুদ্ধি ও শক্তি সামর্থ আপনাকে হতবাক করে দিতে পারে। সামোয়ান পুরুষদের এতোটাই শক্তিশালী যে একটি নারকেল ভাঙার জন্য তাদের দাঁতই যথেষ্ট। কোনোপ্রকার হাতিয়ার ছাড়া শুধুমাত্র দাঁত দিয়েই বড় বড় নারকেল ছিলতে সক্ষম এরা।

সামোয়ান পুরুষদের এতোটাই শক্তিশালী যে একটি নারকেল ভাঙার জন্য তাদের দাঁতই যথেষ্ট
সামোয়ান পুরুষদের এতোটাই শক্তিশালী যে একটি নারকেল ভাঙার জন্য তাদের দাঁতই যথেষ্ট

আশ্চর্য হলেও সত্য, সামোয়ানদের ক্রিকেট খেলার নিজস্ব ভার্সন রয়েছে। তাদের ক্রিকেট ব্যাট ও বল আমাদের থেকে আলাদা। তবে খেলাটি ক্রিকেটের মতো হলেও সামোয়ানদের কাছে এটি ‘কিলিকিতি’ খেলা নামে পরিচিত।

সামোয়ানরা খুবই বিনোদনপ্রিয় জাতি। সামোয়ান সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বিশ্বখ্যাত। সামোয়ান নারী পুরুষের নৃত্য বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়। সামোয়ানদের ঐতিহ্যবাহী কিছু নৃত্য হচ্ছে- ফারার নাইফ, ফাটাউপাটি, মাউলু-উল এবং তৌলুগা।

 

ফারার নাইফ নৃত্য এখানে অনেক জনপ্রিয়। ম্যাচেটে নামের ছুড়ির উভয় প্রান্তে আগুন লাগিয়ে এই নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এটি খুবই বিপদজনক একটি নৃত্য। যারা এই নৃত্য পরিবেশন করে তারা অনেক সুঠাম দেহী হয়ে থাকে।

এছাড়াও নিউজিল্যান্ডের হাকা ডান্সের মতো এক ধরনের নৃত্য করে পুরুষ সামোয়ানরা। একে ‘শিভা তাও’ নৃত্য বলে। যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ও খেলাধুলা শুরুর আগে এই নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এটি মূলত সামোয়ানদের আদিম রণনৃত্য বা যুদ্ধের নাচ।

 

আভা সেরেমনি বা আভা অনুষ্ঠান হচ্ছে সামোয়া দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রীতি। এটি একটি সামোয়ান গৌরবময় অনুষ্ঠান, যেখানে সামোয়ানরা আনুষ্ঠানিকভাবে একসঙ্গে পানীয় পান করে থাকে। আরো পরিষ্কার করে বললে এই অনুষ্ঠানে সবাই বিয়ার বা মদ্য পান করে থাকেন। তবে সবাই মদ পান করলেও আভা অনুষ্ঠান মূলত সামোয়া দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রীতি। কারণ এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সামোয়ানরা তাদের রাজনৈতিক নেতা বাছাই করে থাকে। দৈনন্দিন জীবনে সামোয়ানরা প্রাকৃতিক প্রাকৃতিক ও প্রাচীন পদ্ধতি অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করে।

 

আগুন জ্বালাতে সামোয়ানরা ঘর্ষণের মাধ্যমে আগুল প্রজ্বলনের প্রাচীন পদ্ধতি ব্যবহার করে। এদের রান্নার পদ্ধতিও আমাদের থেকে একেবারেই আলাদা। এরা যে কোনো খাবার পুড়িয়ে বা তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে সিদ্ধ করে খেয়ে থাকে। অর্থাৎ রান্নার ক্ষেত্রেও প্রাচীন পদ্ধতিকেই বেশি প্রাধান্য দেয় সামোয়ানরা। যে কোনো খাদ্য কলাপাতা ও কচুপাতায় মুড়িয়ে রান্না করে এরা। দুধ বা তরল জাতীয় কিছু ফোটাতে তা কচুপাতার কয়েকটি লেয়ারের ভেতরে রেখে তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তা খাবার উপযোগী করা হয়।

 

তাদের শরীরে উল্কি বা ট্যাটু আঁকাতে ভালোবাসে। প্রাচীন সামোয়ান সমাজেও উল্কির কদর ছিল। এদের উল্কি বা ট্যাটু অন্যদের তুলনায় অনেক নিখুঁত ও ভিন্ন ডিজাইনের হয়ে থাকে।

 

সামোয়ানরা বিখ্যাত পলিনেশিয়ান নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর অন্তর্গত। এরা সামোয়ান ও ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। সামোয়ান একটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষা। ৯৮ শতাংশ সামোয়ান খ্রিষ্ট ধর্ম পালন করে। তবে ইসলাম, ইহুদি, হিন্দু ও বাহাই ধর্মের মানুষও রয়েছে এখানে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সামোয়ান‌দের দাঁতই হাতিয়ার, ক্রি‌কেট খে‌লেন নিজস্ব রীতিতে

আপডেট টাইম : ১১:০৮:৪২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ নভেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পৃথিবীতে কত অদ্ভুদ সংস্কৃতি রয়েছে তা বলাই বাহুল্য। আজ এমন এক জাতি ও তাদের সংস্কৃতির কথা বলবো যা সম্ভবত আগে কখনো জানতেন না।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট এক দেশ সামোয়া। গভীর সমুদ্রের এই দ্বীপরাষ্ট্রে বাস করছে সামোয়ান জাতিগোষ্ঠী নামের একদল মানুষ। এই মানুষগুলোর বুদ্ধি ও শক্তি সামর্থ আপনাকে হতবাক করে দিতে পারে। সামোয়ান পুরুষদের এতোটাই শক্তিশালী যে একটি নারকেল ভাঙার জন্য তাদের দাঁতই যথেষ্ট। কোনোপ্রকার হাতিয়ার ছাড়া শুধুমাত্র দাঁত দিয়েই বড় বড় নারকেল ছিলতে সক্ষম এরা।

সামোয়ান পুরুষদের এতোটাই শক্তিশালী যে একটি নারকেল ভাঙার জন্য তাদের দাঁতই যথেষ্ট
সামোয়ান পুরুষদের এতোটাই শক্তিশালী যে একটি নারকেল ভাঙার জন্য তাদের দাঁতই যথেষ্ট

আশ্চর্য হলেও সত্য, সামোয়ানদের ক্রিকেট খেলার নিজস্ব ভার্সন রয়েছে। তাদের ক্রিকেট ব্যাট ও বল আমাদের থেকে আলাদা। তবে খেলাটি ক্রিকেটের মতো হলেও সামোয়ানদের কাছে এটি ‘কিলিকিতি’ খেলা নামে পরিচিত।

সামোয়ানরা খুবই বিনোদনপ্রিয় জাতি। সামোয়ান সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বিশ্বখ্যাত। সামোয়ান নারী পুরুষের নৃত্য বিশ্বে খুবই জনপ্রিয়। সামোয়ানদের ঐতিহ্যবাহী কিছু নৃত্য হচ্ছে- ফারার নাইফ, ফাটাউপাটি, মাউলু-উল এবং তৌলুগা।

 

ফারার নাইফ নৃত্য এখানে অনেক জনপ্রিয়। ম্যাচেটে নামের ছুড়ির উভয় প্রান্তে আগুন লাগিয়ে এই নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এটি খুবই বিপদজনক একটি নৃত্য। যারা এই নৃত্য পরিবেশন করে তারা অনেক সুঠাম দেহী হয়ে থাকে।

এছাড়াও নিউজিল্যান্ডের হাকা ডান্সের মতো এক ধরনের নৃত্য করে পুরুষ সামোয়ানরা। একে ‘শিভা তাও’ নৃত্য বলে। যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ও খেলাধুলা শুরুর আগে এই নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এটি মূলত সামোয়ানদের আদিম রণনৃত্য বা যুদ্ধের নাচ।

 

আভা সেরেমনি বা আভা অনুষ্ঠান হচ্ছে সামোয়া দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রীতি। এটি একটি সামোয়ান গৌরবময় অনুষ্ঠান, যেখানে সামোয়ানরা আনুষ্ঠানিকভাবে একসঙ্গে পানীয় পান করে থাকে। আরো পরিষ্কার করে বললে এই অনুষ্ঠানে সবাই বিয়ার বা মদ্য পান করে থাকেন। তবে সবাই মদ পান করলেও আভা অনুষ্ঠান মূলত সামোয়া দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রীতি। কারণ এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সামোয়ানরা তাদের রাজনৈতিক নেতা বাছাই করে থাকে। দৈনন্দিন জীবনে সামোয়ানরা প্রাকৃতিক প্রাকৃতিক ও প্রাচীন পদ্ধতি অনুসরণ করে চলার চেষ্টা করে।

 

আগুন জ্বালাতে সামোয়ানরা ঘর্ষণের মাধ্যমে আগুল প্রজ্বলনের প্রাচীন পদ্ধতি ব্যবহার করে। এদের রান্নার পদ্ধতিও আমাদের থেকে একেবারেই আলাদা। এরা যে কোনো খাবার পুড়িয়ে বা তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে সিদ্ধ করে খেয়ে থাকে। অর্থাৎ রান্নার ক্ষেত্রেও প্রাচীন পদ্ধতিকেই বেশি প্রাধান্য দেয় সামোয়ানরা। যে কোনো খাদ্য কলাপাতা ও কচুপাতায় মুড়িয়ে রান্না করে এরা। দুধ বা তরল জাতীয় কিছু ফোটাতে তা কচুপাতার কয়েকটি লেয়ারের ভেতরে রেখে তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে তা খাবার উপযোগী করা হয়।

 

তাদের শরীরে উল্কি বা ট্যাটু আঁকাতে ভালোবাসে। প্রাচীন সামোয়ান সমাজেও উল্কির কদর ছিল। এদের উল্কি বা ট্যাটু অন্যদের তুলনায় অনেক নিখুঁত ও ভিন্ন ডিজাইনের হয়ে থাকে।

 

সামোয়ানরা বিখ্যাত পলিনেশিয়ান নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর অন্তর্গত। এরা সামোয়ান ও ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। সামোয়ান একটি অস্ট্রোনেশীয় ভাষা। ৯৮ শতাংশ সামোয়ান খ্রিষ্ট ধর্ম পালন করে। তবে ইসলাম, ইহুদি, হিন্দু ও বাহাই ধর্মের মানুষও রয়েছে এখানে।