ঢাকা ০৯:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষককে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন জাতের রসুন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৩৩:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০১৬
  • ৬৯৪ বার

মাগুরায় উন্নত দেশি জাতের রসুনের ভালো ফলনে কৃষক খুশি। হাট-বাজারে নতুন রসুন উঠতে শুরু করেছে। ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা।

কৃষি বিভাগ বলছে, উচ্চ ফলনশীল দেশি জাতের রসুন হতে পারে ‘সাদা সোনা’। নতুন জাতের রসুন জেলার কৃষককে আবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় কুড়ি হাজার চাষি রসুন আবাদ করে সফল হয়েছেন। সর্বত্র এই জাতটি ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে রসুনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে। একইভাবে উদ্বৃত্ত রসুন বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব ।
জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার জেলার চারটি উপজেলায় ১০হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রসুনের উচ্চমূল্য দেখে এবার অনেকেই নির্ধারিত সময়ের আগেই রোপণ পদ্ধতিতে রসুনের আবাদ শুরু করেন। আগে লাগানো রসুনই এখন বাজারে উঠতে শুরু করেছে।

রসুন চাষিরা জানান, বৃষ্টি হওয়ায় রসুনের উৎপাদন ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় ২৫ থেকে ৩০ মণ রসুন পাচ্ছেন।

কৃষক মোক্তার হোসেন জানান, তিনি মাত্র ২৫ শতক জমিতে উন্নত জাতের এ রসুন লাগিয়ে ৫০ মণ ফলন পেয়েছেন। যার বাজার দর ৮০ হাজার টাকা। তার দেখাদেখি ইতিমধ্যে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে এ রসুন চাষে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা আঞ্চলিক মশলা গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, জেলাসদরসহ চারটি উপজেলায় এবার ব্যাপকভাবে উচ্চ ফলনশীল দেশি জাতের রসুন চাষ হয়েছে। সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতিতে এখানকার কৃষক রসুনের আবাদ করেছেন। কৃষক শতকে প্রায় দুই মণ করে ফলন পেয়েছেন। প্রচলিত জাতের রসুনে যেখানে ফলন পাওয়া যায় এক মণেরও কম।

মাগুরা সদর উপজেলার বাটিকাডাঙ্গা মাঠে একটি প্রদর্শনী প্লটে এই জাতের রসুনের সফল উৎপাদন শেষে এ রকমই দাবি করেছেন মাগুরা মশলা গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা।

আব্দুর রউফ নামে এক চাষির মাত্র ২৫ শতাংশ জমির প্রদর্শনী প্লটে প্রথম বারের মত এই জাতের রসুন চাষ করে এবার ফলন হয়েছে ৪০ মণ। দেশি জাতের রসুন চাষ করলে যেখানে সর্বোচ্চ ফলন হতো ১০ থেকে ১৫ মণ।

তিনি আরো জানান, শীত মৌসুমে বিশেষ করে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এই রসুন বপনের প্রকৃত সময়। যা ৯৫ থেকে ১১০ দিনের মাথায় ঘরে ওঠানোর উপযোগী হয়। এই রসুন সাধারণ রসুনের তুলনায় রং, স্বাদ ও গন্ধে অত্যন্ত আকর্ষনীয়। পাশাপাশি সাইজে বড় হওয়ায় মাত্র ১০টা থেকে ১৫টা রসুনে ১ কেজি হয়ে যায়। সাধারণ জাতের রসুন হেক্টর প্রতি ফলন হয় ৫ থেকে ৬ মেট্রিকটন। কিন্তু দেশি উন্নত জাতের রসুন উৎপাদন হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ মেট্রিকটন।

বালিদিয়া গ্রামের রসুন চাষি রতন কুমার বিশ্বাস তার ৩০ শতক জমিতে প্রায় ৫০ মণ রসুন পেয়েছেন। যা সাধারণ জাতের তুলনায় প্রায় ২ গুণ বেশি।

সদরের রামনগর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর নতুন রসুনের আমদানি হয়েছে। প্রতি মণ রসুন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

রসুনের আড়তদার আলমগীর হোসেন জানান, ১০ থেকে ১২ দিন ধরে হাটে নতুন রসুন ওঠা শুরু হয়েছে। শুরু থেকেই এবার ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক।

মাগুরা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক পার্র্থ প্রতিম সাহা বলেন, ‘এবার রসুন চাষিরা ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাচ্ছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে বলে তিনি জানান।’

মাগুরা মশলা গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, ‘ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছর বিদেশ থেকে রসুন আমদানি করতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় হয়। দেশি উন্নত জাতের রসুন সারা দেশের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশিয় ঘাটতি পূরনের পাশাপাশি উদ্বৃত্ত রসুন বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করা সম্ভব।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কৃষককে স্বপ্ন দেখাচ্ছে নতুন জাতের রসুন

আপডেট টাইম : ১০:৩৩:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ মার্চ ২০১৬

মাগুরায় উন্নত দেশি জাতের রসুনের ভালো ফলনে কৃষক খুশি। হাট-বাজারে নতুন রসুন উঠতে শুরু করেছে। ভালো দাম পাচ্ছেন চাষিরা।

কৃষি বিভাগ বলছে, উচ্চ ফলনশীল দেশি জাতের রসুন হতে পারে ‘সাদা সোনা’। নতুন জাতের রসুন জেলার কৃষককে আবার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। চলতি মৌসুমে জেলার প্রায় কুড়ি হাজার চাষি রসুন আবাদ করে সফল হয়েছেন। সর্বত্র এই জাতটি ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে রসুনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে। একইভাবে উদ্বৃত্ত রসুন বিদেশে রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব ।
জেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এবার জেলার চারটি উপজেলায় ১০হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে রসুন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। রসুনের উচ্চমূল্য দেখে এবার অনেকেই নির্ধারিত সময়ের আগেই রোপণ পদ্ধতিতে রসুনের আবাদ শুরু করেন। আগে লাগানো রসুনই এখন বাজারে উঠতে শুরু করেছে।

রসুন চাষিরা জানান, বৃষ্টি হওয়ায় রসুনের উৎপাদন ভালো হয়েছে। প্রতি বিঘায় ২৫ থেকে ৩০ মণ রসুন পাচ্ছেন।

কৃষক মোক্তার হোসেন জানান, তিনি মাত্র ২৫ শতক জমিতে উন্নত জাতের এ রসুন লাগিয়ে ৫০ মণ ফলন পেয়েছেন। যার বাজার দর ৮০ হাজার টাকা। তার দেখাদেখি ইতিমধ্যে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে এ রসুন চাষে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা আঞ্চলিক মশলা গবেষণা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তারা জানান, জেলাসদরসহ চারটি উপজেলায় এবার ব্যাপকভাবে উচ্চ ফলনশীল দেশি জাতের রসুন চাষ হয়েছে। সরাসরি বীজ বপন পদ্ধতিতে এখানকার কৃষক রসুনের আবাদ করেছেন। কৃষক শতকে প্রায় দুই মণ করে ফলন পেয়েছেন। প্রচলিত জাতের রসুনে যেখানে ফলন পাওয়া যায় এক মণেরও কম।

মাগুরা সদর উপজেলার বাটিকাডাঙ্গা মাঠে একটি প্রদর্শনী প্লটে এই জাতের রসুনের সফল উৎপাদন শেষে এ রকমই দাবি করেছেন মাগুরা মশলা গবেষণা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা।

আব্দুর রউফ নামে এক চাষির মাত্র ২৫ শতাংশ জমির প্রদর্শনী প্লটে প্রথম বারের মত এই জাতের রসুন চাষ করে এবার ফলন হয়েছে ৪০ মণ। দেশি জাতের রসুন চাষ করলে যেখানে সর্বোচ্চ ফলন হতো ১০ থেকে ১৫ মণ।

তিনি আরো জানান, শীত মৌসুমে বিশেষ করে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এই রসুন বপনের প্রকৃত সময়। যা ৯৫ থেকে ১১০ দিনের মাথায় ঘরে ওঠানোর উপযোগী হয়। এই রসুন সাধারণ রসুনের তুলনায় রং, স্বাদ ও গন্ধে অত্যন্ত আকর্ষনীয়। পাশাপাশি সাইজে বড় হওয়ায় মাত্র ১০টা থেকে ১৫টা রসুনে ১ কেজি হয়ে যায়। সাধারণ জাতের রসুন হেক্টর প্রতি ফলন হয় ৫ থেকে ৬ মেট্রিকটন। কিন্তু দেশি উন্নত জাতের রসুন উৎপাদন হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ মেট্রিকটন।

বালিদিয়া গ্রামের রসুন চাষি রতন কুমার বিশ্বাস তার ৩০ শতক জমিতে প্রায় ৫০ মণ রসুন পেয়েছেন। যা সাধারণ জাতের তুলনায় প্রায় ২ গুণ বেশি।

সদরের রামনগর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর নতুন রসুনের আমদানি হয়েছে। প্রতি মণ রসুন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

রসুনের আড়তদার আলমগীর হোসেন জানান, ১০ থেকে ১২ দিন ধরে হাটে নতুন রসুন ওঠা শুরু হয়েছে। শুরু থেকেই এবার ভালো দাম পাচ্ছেন কৃষক।

মাগুরা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক পার্র্থ প্রতিম সাহা বলেন, ‘এবার রসুন চাষিরা ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পাচ্ছেন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে বলে তিনি জানান।’

মাগুরা মশলা গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, ‘ঘাটতি মেটাতে প্রতিবছর বিদেশ থেকে রসুন আমদানি করতে প্রচুর পরিমাণে অর্থ ব্যয় হয়। দেশি উন্নত জাতের রসুন সারা দেশের কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশিয় ঘাটতি পূরনের পাশাপাশি উদ্বৃত্ত রসুন বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করা সম্ভব।’