ঢাকা ০৬:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বজ্রপাতের হটস্পট বাংলাদেশ ২৩ জেলায় বসবে ৭২৩ বজ্রপাত পূর্বাভাস যন্ত্র

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:২৪:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১
  • ১৬২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে ৩৫২ জনের। সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর রাতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দুই মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়। সরকারি হিসাবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের ১০ মাসে বজ্রপাতে ১০০-এর বেশি মারা গেছে। ২০২০ সালে বজ্রপাতে মারা যায় ২৫৫ জন। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে গত ১১ বছরে বজ্রপাতে ২ হাজার ৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই খোলা মাঠ বা হাওরে কৃষিকাজ করছিলেন। ফিনল্যান্ডের বজ্রপাত-বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘ভাইসালা’র গবেষকরা বলছেন, বজ্রপাতের অন্যতম হটস্পট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন-জঙ্গল উজাড়, বঙ্গোপসাগর থেকে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু প্রবাহ, উত্তরের হিমালয়ের পাদদেশে পুঞ্জীভূত মেঘ, মেঘ সৃষ্টির প্রক্রিয়া কিউমোলোনিম্বাস (পুঞ্জমেঘ), মোবাইল ফোন টাওয়ার থেকে উৎপন্ন অতিমাত্রার ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও ওয়েব বজ্রপাতের জন্য দায়ী। বাংলাদেশে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ বা তার বেশি-সংখ্যক বজ্রপাত মেঘ থেকে ভূমিতে নেমে আসে। বজ্রপাত ঠেকাতে আধুনিক কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়নি পৃথিবীতে। তবে আগাম সতর্ক সংকেত প্রদানে স্যাটেলাইট ভিত্তিক বিভিন্ন সিস্টেম ও অ্যাপস রয়েছে। এমতাবস্থায় সরকার বিদেশ থেকে বজ্রপাতে মৃত্যুরোধে ‘আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ বা বজ্রপাত পূর্বাভাস যন্ত্র এনে তা বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেশের বজ্রপাত-প্রবণ এলাকাগুলোতে ৭২৩টি যন্ত্র বসানো হবে।কেনো বজ্রপাতে এতো মৃত্যু?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বজ্রপাতের ৪০-৪৫ মিনিট আগেই সংকেত পাওয়া যাবে। ফলে যারা খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন তারা সহজেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারবেন। এতে অনেক প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে ‘লাইটার অ্যারেস্টার’ সম্বলিত বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের ছাউনি (শেল্টার) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকভাবে হাওর এলাকায় প্রতি কিলোমিটার পরপর একটি করে মোট ১ হাজার ছাউনি নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। দেশের হাওরাঞ্চলসহ বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় ছাউনি নির্মাণে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ছাউনির সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এক কিলোমিটার অন্তর-অন্তর নির্মাণ করা হবে একেকটি শেল্টার, যাতে বজ্রপাতের আওয়াজ পেলেই মাঠের কৃষকসহ মানুষজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।

প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, বজ্রপাতের আগে মেঘের মধ্যে পজিটিভ-নেগেটিভ চার্জগুলো তৈরি হয়। চার্জ তৈরি হওয়ার চার মিনিট পরই বজ্রপাত হয়। এজন্য গুড়ুগুড়ু ডাক শুনলে যাতে মানুষ ঘরে থাকে বা মেঘ দেখে ঘরে যেতে পারে। বর্তমান বিশ্বে বজ্রপাতের ক্ষেত্রেও সাইক্লোনের মতো আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কিছু মেশিন আছে যেগুলো ৪০ মিনিট আগেই শনাক্ত করতে পারে বজ্রপাত হবে এবং কোথায় হবে। তাই বজ্রপাতের ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতা প্রদানকারী এ যন্ত্রগুলো আমদানি করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্র করা হবে। প্রাথমিকভাবে বজ্রপাতপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে হাওর-বাঁওড় এলাকায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই সিগন্যাল যাতে একটি অ্যাপের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ যেতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করা হবে

দেশের কয়েকটি জেলা সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, শেরপুর ও জামালপুরে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বেশি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মৃত্যু বেশি হয় খোলা মাঠ ও হাওরের মধ্যে। তাই খোলা মাঠ ও হাওরে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের মতো বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখানে একটা পাকা ঘর থাকবে এবং প্রত্যেক ঘরে একটি করে লাইটনিং অ্যারেস্টার দেওয়া হবে। যাতে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে সতর্কবার্তা শোনার পর মানুষ সেই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারে। বজ্রপাত না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অপেক্ষা করবে। এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হবে বহুমুখী। এখানে কৃষক ও মৎস্যজীবীরা সকালে নাস্তা করতে পারবেন, দুপুরে খেতে পারবেন। ঝড়-বৃষ্টিতে আশ্রয় নিতে পারবেন, কেউ চাইলে বিশ্রামও নিতে পারবেন। তিনি জানান, বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এটার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে, সেই রিপোর্ট আসলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর কাজ শুরু হবে। স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএএফ) সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, বজ্রপাতে মৃতদের বেশির ভাগই কৃষক। দেশের হাওর অঞ্চলগুলোতে বেশি বজ্রপাত হওয়ায় দ্রুত ঐ সব অঞ্চলে আগাম বার্তা ও বজ্র-নিরোধক টাওয়ার নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে গেজেটস নাউয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সর্বাধিক বজ্রপাতপ্রবণ কর্নাটকে ‘সিদিলু’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। এই অ্যাপ ব্যবহারকারীরা বজ্রপাতের ৪৫ মিনিট আগেই সংকেত পেয়ে থাকেন। ফলে সহজেই সবাই নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারেন। মূলত ব্যবহারকারীদের রিয়েল টাইম লোকেশন বা অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে সংকেত দিচ্ছে সিদিলু। ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় তিনটি ভিন্ন ভিন্ন রঙে সতর্কসংকেত দেখায় সিদিলু অ্যাপ। রঙ তিনটি হলো-লাল, কমলা ও হলুদ। আর ব্যবহারকারী নিরাপদে থাকলে এটি দেখাবে সবুজ রঙ। সিদিলুতে লাল রঙের সংকেতের অর্থ ব্যবহারকারী যে জায়গায় অবস্থান করছেন তার এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি। অন্যদিকে, কমলা রঙের সংকেতের অর্থ হলো-ব্যবহারকারীর অবস্থানের ৫ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বজ্রপাত হবে। আর হলুদ রঙের সংকেতের অর্থ হলো ১৫ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বজ্রপাতের আশঙ্কা আছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বজ্রপাতের হটস্পট বাংলাদেশ ২৩ জেলায় বসবে ৭২৩ বজ্রপাত পূর্বাভাস যন্ত্র

আপডেট টাইম : ০৯:২৪:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশে প্রতি বছর বজ্রপাতে প্রাণহানির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে ৩৫২ জনের। সর্বশেষ গত ২১ অক্টোবর রাতে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় দুই মৎস্যজীবীর মৃত্যু হয়। সরকারি হিসাবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের ১০ মাসে বজ্রপাতে ১০০-এর বেশি মারা গেছে। ২০২০ সালে বজ্রপাতে মারা যায় ২৫৫ জন। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে গত ১১ বছরে বজ্রপাতে ২ হাজার ৮০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের বেশির ভাগই খোলা মাঠ বা হাওরে কৃষিকাজ করছিলেন। ফিনল্যান্ডের বজ্রপাত-বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘ভাইসালা’র গবেষকরা বলছেন, বজ্রপাতের অন্যতম হটস্পট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বন-জঙ্গল উজাড়, বঙ্গোপসাগর থেকে সক্রিয় মৌসুমি বায়ু প্রবাহ, উত্তরের হিমালয়ের পাদদেশে পুঞ্জীভূত মেঘ, মেঘ সৃষ্টির প্রক্রিয়া কিউমোলোনিম্বাস (পুঞ্জমেঘ), মোবাইল ফোন টাওয়ার থেকে উৎপন্ন অতিমাত্রার ম্যাগনেটিক ফিল্ড ও ওয়েব বজ্রপাতের জন্য দায়ী। বাংলাদেশে ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর প্রায় ৫০ লাখ বা তার বেশি-সংখ্যক বজ্রপাত মেঘ থেকে ভূমিতে নেমে আসে। বজ্রপাত ঠেকাতে আধুনিক কোনো প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়নি পৃথিবীতে। তবে আগাম সতর্ক সংকেত প্রদানে স্যাটেলাইট ভিত্তিক বিভিন্ন সিস্টেম ও অ্যাপস রয়েছে। এমতাবস্থায় সরকার বিদেশ থেকে বজ্রপাতে মৃত্যুরোধে ‘আরলি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ বা বজ্রপাত পূর্বাভাস যন্ত্র এনে তা বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে দেশের বজ্রপাত-প্রবণ এলাকাগুলোতে ৭২৩টি যন্ত্র বসানো হবে।কেনো বজ্রপাতে এতো মৃত্যু?

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বজ্রপাতের ৪০-৪৫ মিনিট আগেই সংকেত পাওয়া যাবে। ফলে যারা খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন তারা সহজেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে পারবেন। এতে অনেক প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে ‘লাইটার অ্যারেস্টার’ সম্বলিত বজ্রপাত-নিরোধক কংক্রিটের ছাউনি (শেল্টার) নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রাথমিকভাবে হাওর এলাকায় প্রতি কিলোমিটার পরপর একটি করে মোট ১ হাজার ছাউনি নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান। দেশের হাওরাঞ্চলসহ বজ্রপাতপ্রবণ ২৩ জেলায় ছাউনি নির্মাণে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ছাউনির সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এক কিলোমিটার অন্তর-অন্তর নির্মাণ করা হবে একেকটি শেল্টার, যাতে বজ্রপাতের আওয়াজ পেলেই মাঠের কৃষকসহ মানুষজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারেন।

প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, বজ্রপাতের আগে মেঘের মধ্যে পজিটিভ-নেগেটিভ চার্জগুলো তৈরি হয়। চার্জ তৈরি হওয়ার চার মিনিট পরই বজ্রপাত হয়। এজন্য গুড়ুগুড়ু ডাক শুনলে যাতে মানুষ ঘরে থাকে বা মেঘ দেখে ঘরে যেতে পারে। বর্তমান বিশ্বে বজ্রপাতের ক্ষেত্রেও সাইক্লোনের মতো আগাম সতর্কবার্তা দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। কিছু মেশিন আছে যেগুলো ৪০ মিনিট আগেই শনাক্ত করতে পারে বজ্রপাত হবে এবং কোথায় হবে। তাই বজ্রপাতের ক্ষেত্রে আগাম সতর্কতা প্রদানকারী এ যন্ত্রগুলো আমদানি করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্র করা হবে। প্রাথমিকভাবে বজ্রপাতপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে, বিশেষ করে হাওর-বাঁওড় এলাকায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই সিগন্যাল যাতে একটি অ্যাপের মাধ্যমে স্থানীয় মানুষের মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ যেতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করা হবে

দেশের কয়েকটি জেলা সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, হবিগঞ্জ, শেরপুর ও জামালপুরে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বেশি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, মৃত্যু বেশি হয় খোলা মাঠ ও হাওরের মধ্যে। তাই খোলা মাঠ ও হাওরে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রের মতো বজ্রপাত আশ্রয়কেন্দ্র করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেখানে একটা পাকা ঘর থাকবে এবং প্রত্যেক ঘরে একটি করে লাইটনিং অ্যারেস্টার দেওয়া হবে। যাতে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে সতর্কবার্তা শোনার পর মানুষ সেই আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারে। বজ্রপাত না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অপেক্ষা করবে। এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো হবে বহুমুখী। এখানে কৃষক ও মৎস্যজীবীরা সকালে নাস্তা করতে পারবেন, দুপুরে খেতে পারবেন। ঝড়-বৃষ্টিতে আশ্রয় নিতে পারবেন, কেউ চাইলে বিশ্রামও নিতে পারবেন। তিনি জানান, বজ্রপাতে মৃত্যু ঠেকাতে ৪৭৬ কোটি টাকার প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এটার সম্ভাব্যতা যাচাই করছে, সেই রিপোর্ট আসলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর কাজ শুরু হবে। স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন ‘সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের (এসএসটিএএফ) সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, বজ্রপাতে মৃতদের বেশির ভাগই কৃষক। দেশের হাওর অঞ্চলগুলোতে বেশি বজ্রপাত হওয়ায় দ্রুত ঐ সব অঞ্চলে আগাম বার্তা ও বজ্র-নিরোধক টাওয়ার নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে গেজেটস নাউয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের সর্বাধিক বজ্রপাতপ্রবণ কর্নাটকে ‘সিদিলু’ নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করে মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। এই অ্যাপ ব্যবহারকারীরা বজ্রপাতের ৪৫ মিনিট আগেই সংকেত পেয়ে থাকেন। ফলে সহজেই সবাই নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারেন। মূলত ব্যবহারকারীদের রিয়েল টাইম লোকেশন বা অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে সংকেত দিচ্ছে সিদিলু। ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় তিনটি ভিন্ন ভিন্ন রঙে সতর্কসংকেত দেখায় সিদিলু অ্যাপ। রঙ তিনটি হলো-লাল, কমলা ও হলুদ। আর ব্যবহারকারী নিরাপদে থাকলে এটি দেখাবে সবুজ রঙ। সিদিলুতে লাল রঙের সংকেতের অর্থ ব্যবহারকারী যে জায়গায় অবস্থান করছেন তার এক বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বজ্রপাতের আশঙ্কা রয়েছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে ঝুঁকি অনেক বেশি। অন্যদিকে, কমলা রঙের সংকেতের অর্থ হলো-ব্যবহারকারীর অবস্থানের ৫ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বজ্রপাত হবে। আর হলুদ রঙের সংকেতের অর্থ হলো ১৫ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে বজ্রপাতের আশঙ্কা আছে।