হাওর বার্তা ডেস্কঃ মধ্য কর্ণ ও এর ম্যাসটরেড হাড়ের ইনফেকশনের জন্য বা পর্দা ফাটা বা ছিদ্র থাকার কারণে কানে কম শোনার জন্য অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কানের কারণে মাথা ঘুরানোর জন্য কানের মাইক্রোসার্জারি করা হয়ে থাকে।
অপারেশনের উদ্দেশ্য
কানের ভেতরের ইনফেকশনের মাত্রা এবং ব্যক্তি নিরূপণ করা।
ইনফেকটেড টিস্যুকে সম্পূর্ণরূপে দূর করা এবং ইনফেকশনের কারণে কানে শোনার যাতে আর কোনো অবনতি না হয়, তার ব্যবস্থা করা।
কানের ইনফেকশন যাতে মস্তিষ্কে না ছড়ায়, তার ব্যবস্থা করা।
কানের পর্দা ফাটা থাকলে মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে কানে পর্দা জোড়া লাগানো।
কানে কম শুনলে এ অবস্থার উন্নতি করার চেষ্টা করা।
ইউস্টেশিয়ান টিউবের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ব্যাঘাত ঘটার জন্য বা মধ্য কর্ণের ইনফেকশনের জন্য বা অন্তঃকর্ণের কোনো সমস্যার কারণে মাথা ঘুরালে, তার উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করা।
অপারেশন
এ অপারেশন সাধারণত মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে অতি সূক্ষ্মভাবে করা হয়, যাকে আমরা মাইক্রোসার্জারি বলি। কানের চামড়ায় সমস্যা কাটাছেঁড়া হলেও কানের ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে অতিসূক্ষ্ম কাজ করা হয়ে থাকে। এ এলাকায় রক্তপাত কয়েক ফোঁটার বেশি হয় না এবং কাটাছেঁড়া কয়েক মিলিমিটারের বেশি জায়গায় হয় না বললেই চলে।
মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে উচ্চক্ষমতায় কানের সূক্ষ্ম অঙ্গগুলো সূক্ষ্মভাবে অবলোকন করা সম্ভব। অভিজ্ঞ হাতে এবং সতর্কতার সঙ্গে কাজ করলে, এ অঙ্গগুলোর ক্ষতিসাধন হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে সার্জন নিম্নলিখিত নীতিমালা অনুসরণ করে থাকেন—
কানের ভেতরের রোগের তীব্রতা এবং ব্যাপ্তি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে নিরূপণ করা এবং তা দূরীভূত করা।
যাতে কানের ভেতরের অতি সূক্ষ্ম অঙ্গগুলো অপারেশনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার চেষ্টা করা।
কানের ভেতর দিয়ে মুখে যে স্নায়ু চলে গেছে, তার কোনো ক্ষতি সাধন না করা।
কান যাতে ভবিষ্যতে আর না পাকে, তার ব্যবস্থা করা এবং কানের শোনায় যাতে উন্নতি হয়, তার ব্যবস্থা করা।
মনে রাখতে হবে, প্রথমবার অপারেশনের পর কারো কারো আবারো অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে।
হাসপাতালে অবস্থান
রোগীকে ১ থেকে ২ দিন হাসপাতালে থাকা লাগতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কানে অপারেশন স্থানীয়ভাবে অবশ করে করা হয়ে থাকে।
স্থানীয়ভাবে অবশ করা হলে, অপারেশনের সময় কানের ভেতর জটিলতার আশঙ্কা কম থাকে।
অপারেশনের সময়ই অপারেশনের উপকারিতা যেমন- কানের শ্রবণশক্তির ক্ষমতা বাড়া ইত্যাদি বুঝতে পারা যায়।
অবশ করে অপারেশন হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যথানাশক ও ঘুমের ওষুধ দেয়া হয়, যাতে ব্যথা কম অনুভূত হয়।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বা রোগী যদি নার্ভাস প্রকৃতির হয়, তাহলে এ অপারেশন সম্পূর্ণ অজ্ঞান করে করা হয়।
হাসপাতাল-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা
অপারেশনের পরের দিন রোগী সাধারণত বাসায় চলে যেতে পারে।
মাথার মধ্যে একটা প্রেসার ব্যান্ডেজ থাকে, যা ১ থেকে ২ দিনের মাথায় খুলে দেয়া হয়; অনেক ক্ষেত্রেই রোগীকে ব্যান্ডেজসহ বাসায় যেতে দেয়া হয়। যদি কোনো সেলাই থাকে, তা সাত দিনের মাথায় চিকিৎসকের সঙ্গে পরবর্তী সাক্ষাতে বহির্বিভাগে কাটা হয়। এজন্য হাসপাতালে ভর্তি থাকা বা ভর্তি হওয়ার দরকার নেই।
অনেক সময় কানের ভেতর একটা প্যাক থাকে, যা সাধারণত ১ থেকে ২ সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসক দেখে খুলে দেন।
কখনও কখনও মাসটয়েট অপারেশনের ক্ষেত্রে এ প্যাক ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত রাখা হয়ে থাকে।
মনে রাখতে হবে, এ প্যাক কোনো সময় ভেজানো চলবে না; গোসলের সময় মাথা-কান বাদ দিয়ে আলাদাভাবে ধুয়ে নেয়াই উত্তম। রোগী বা আত্মীয়স্বজন কোনো অবস্থাতেই যেন এ প্যাক বের করে না ফেলে। অনেক সময় ঘুমের ঘোরে প্যাক থাকা অবস্থায় কান চুলকায় বলে রোগী এটি টেনে বের করে ফেলেন। সুতরাং রাতে ঘুমানোর সময় একটা কাপড় বা ব্যান্ডেজ কানের ওপর পেঁচিয়ে রাখবেন, যাতে এ সমস্যা সৃষ্টি না হয়।
কানের পর্দা মেরামত ও স্টেপেডেকটমি অপারেশনের পরের নির্দেশাবলী—
হাঁচি এলে মুখ হা করে শব্দ করে হাঁচি দেবেন।
মলত্যাগের সময় বেশি চাপ দেবেন না। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে, তারা প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি, পানিজাতীয় খাবার ও আঁশযুক্ত খাবার খাবেন। প্রয়োজনে গ্লিসারিনজাতীয় সাপোজিটরি ব্যবহারের মাধ্যমে মল নরম রাখবেন।
ভারি জিনিস উঠাবেন না।
বেশি কাশি হলে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে।
মনে রাখবেন
কানের পর্দা জোড়া লাগানোর পর প্রধান শত্রু হচ্ছে, রোগীর ঘনঘন সর্দি-কাশি হওয়া। সর্দি-কাশিতে নাক-মুখ বন্ধ হয়ে গেলে অতি শিগগিরই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩ থেকে ৬ মাস পরপর চিকিৎসককে কানের পর্দার অবস্থা দেখিয়ে নেওয়া উচিত।