during the ICC World Twenty20 India 2016 Super 10s Group 2 match between Australia and Bangladesh at M. Chinnaswamy Stadium on March 21, 2016 in Bangalore, India.

ভয় পায় না বাংলাদেশ

এর চেয়ে কঠিন মানসিক পরীক্ষা আর কিছু হতে পারে না। সেই পরীক্ষায় বাংলাদেশ কত নম্বর পেল? ম্যাচ বাংলাদেশ হেরেছে ৩ উইকেটে। সেটাই বলবে স্কোরকার্ড। কিন্তু নিরেট সংখ্যা বলবে না এর আড়ালের গল্প।
ইনিংসের মাঝপথেই লেটার নম্বর পেয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এত সব প্রতিকূলতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বাংলাদেশ যে প্রথমে ব্যাট করে ৫ উইকেটে তুলল ১৫৭। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ৯ বল বাকি থাকতেই জিতল বটে, কিন্তু গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশ এই ম্যাচের-জয় পরাজয়ের ঊর্ধ্বে যে লড়াইটা করল, সেখানেই চাইলে এক শতে এক শ দিয়ে দিতে পারেন। এমন মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না, খোদ ইয়ান চ্যাপেলও বলেছিলেন।
ব্যাটিংয়ে সবাই মিলে লড়াই করার প্রেরণা বাংলাদেশ বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে আরও একটু টেনে নিতে পারলে, কে জানে, ম্যাচের ফল হয়তো অন্যভাবেও লেখা হতো! অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের শুরুর দিকেই যদি শেন ওয়াটসনের ক্যাচটা নিতে পারত বাংলাদেশ! এ রকমই আরও কিছু যদি-কিন্তুর আক্ষেপ থাকলই শেষ পর্যন্ত। সাকিবের করা এক ১৮তম ওভারেই তো তিনবার আউটের সুযোগ তৈরি করেও বাংলাদেশ পেল এক উইকেট।
আগের দিনই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা বলেছিলেন, দল হিসেবে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। লড়তে হবে সবাই মিলে। ব্যাট হাতে অন্তত সেটাই করল বাংলাদেশ। ২৯ বলে ৪৯ রান করে তাতে নেতৃত্ব দিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে সাকিব আল হাসানের ৩৩ , মিঠুনের ২৩, মুশফিকের ১৫, শুভাগতর ১৩, সাব্বিরের ১২ রানের ইনিংসগুলোও ভূমিকা রাখল। ব্যাট করা বাংলাদেশের সাত ব্যাটসম্যান ছয়জনই দুই অঙ্ক ছুঁয়েছেন। কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই লড়াই একেই তো বলে।

স্কোরটা আরও বড় হতেই পারত। ১৩ ওভার শেষে ৯১ তুলে ফেলেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ১৪ থেকে ১৭-এই চার ওভারে উঠল মাত্র ২১ রান। অবশ্য শেষ তিন ওভারে ৪৪ রান তুলে এই ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেন মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিক।
এটাই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড। আগেরটি ছিল গত বিশ্বকাপে করা ১৫৩। মজার ব্যাপার হলো, সেটাই এই দুই দলের সর্বশেষ দেখা। বিশ্বকাপ ছাড়া টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখিই হয় না এই দুই দল। তিন ম্যাচের তিনটিই বিশ্বকাপে।
এর মধ্যে প্রথমটিতে, ২০০৭ সালে বাংলাদেশকে বড় ধাক্কা দিয়েছিলেন ব্রেট লি। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিক করে। এবার যা পরিস্থিতি ছিল, তাতে কী হয় কী হয়, একটা আতঙ্ক কাজ করছিল। কিন্তু বাংলাদেশ জানিয়ে দিল, তারা ভয় পায় না! একপর্যায়ে বাংলাদেশ এমনই ছুটছিল, সাত বোলারকে বল করাতে হয়েছে স্টিভ স্মিথকে।
তাসকিন ও সানিকে হারিয়ে ফেলার ধাক্কা টাটকা থাকতেই এই ম্যাচের আগে আরেকটি দুঃসংবাদ শুনল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা তামিম ইকবালও নেই। পেটের পীড়ায় ভুগে একাদশের বাইরে ছিটকে গেছেন। দলে তিনটি পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ।
ব্যাট হাতে বাংলাদেশের শুরুটাও ভালো হলো না। একে তো পাওয়ার প্লেতে রান উঠল কম, ৬ ওভারে ৩৩; হারাতে হলো সৌম্য আর সাব্বিরকেও। মিঠুন যেন এই সুযোগে নিজেকে চেনাতে চাইলেন। বাড়তি দায়িত্ব নিলেন সাকিব। আর মাহমুদউল্লাহ তো বড় টুর্নামেন্ট মানেই যেন বড় কিছু! এশিয়া কাপে একের পর এক অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। আজ এক রানের জন্য ফিফটিটা পেলেন না।
জামপার ৪ ওভারে ২৩ রানে ৩ উইকেট বলছিল বেঙ্গালুরুতে স্পিনারদের পাওয়ার অনেক কিছু আছে। উসমান খাজার ৫৮ রানের পরও ম্যাচ সেরা এই লেগ স্পিনারই। আগের রাতেও এ মাঠে শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে স্পিনাররা ছড়ি ঘুরিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ দলে ছিল এমন দুই স্পিনার, যাদের খেলার কথাই ছিল না! হয়তো আজ খেলতেন না মুস্তাফিজও। ‘২০ শতাংশ ফিট হলেও ও নামবে, উপায় নেই’। মুস্তাফিজ কতভাগ ফিট ছিলেন কে জানে। তবে আজ এই কিশোর-কিশোর তরুণটাই বাংলাদেশকে বোলিংয়ে টিকিয়ে রাখলেন অনেকক্ষণ।
শেষটা হলো শেষের মতো। এবারের বিশ্বকাপে হয়তো ভাগ্যও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ! আর সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে ভারতীয় সমর্থকেরাও ​যেন বাংলাদেশের বিপক্ষে। আজ বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়ার নামে যতজন দর্শক গলা ফাটালেন, গ্যালারিতে বসা স্টিভ ওয়াহর হয়তো আফসোসই হয়েছে। এমন ‘দোস্তি’ যদি তাঁর সময় ভারতের দর্শকেরা দেখাত!

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর