ঢাকা ০২:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একজন মহান সংগ্রামীর জন্মদিন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:৩৬:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ ২০১৬
  • ৩২৫ বার

সংক্ষিপ্ত পরিসরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু লেখা একেবারে খুবই দুরূহ। আমি তাঁর জন্মদিনে তাঁকে ঘিরে কিছু স্মৃতিচারণ করছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। আজ থেকে সত্তর বছর আগে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। বয়সে তিনি আমার সাত বছরের বড়। ১৯৪৬ সালে পড়তাম দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। আর তিনি কলকাতায়, তখনকার ইসলামিয়া কলেজে। তখনকার রেওয়াজ অনুযায়ী মফস্বলের ছেলেমেয়েরা কলকাতায় ইসলামিয়া, প্রেসিডেন্সি বা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তে যেত। তবে সব কলেজের মধ্যে ইসলামিয়াতেই এ বঙ্গের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল। বঙ্গবন্ধু তখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। থাকতেন বেকার হোস্টেলে। আমি তখন দিনাজপুরের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন নগণ্য সংগঠক। বঙ্গবন্ধু কলকাতায় বৃহত্তর পরিসরে সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। আন্দোলনের সূত্রেই আমরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতাম। বাড়ি থেকে পালিয়ে একবার কলকাতায় ক’দিন ছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধুর রুমেই উঠলাম। এ সময়ই তাঁর সঙ্গে রুম শেয়ারের সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। ডাইনিংয়ে তাঁর কুপন দিয়ে খাবার খেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর একটি বড় গুণ, তিনি যে কাউকে খুব সহজে আপন করে নিতেন আর ‘তুই’ বলে সম্বোধন করতেন। আমার সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা ওই পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। আর তিনিও তখনই হয়ে উঠেছিলেন আমার প্রিয় ‘মুজিব ভাই।’ তারপর থেকে এভাবেই তাঁকে সম্বোধন করেছি। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রশাসনিক নানা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সরকারপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে বহুবার মুখ থেকে অজান্তে ‘মুজিব ভাই’ সম্বোধনটি চলে আসত। থতমত খেয়ে সামলে নিতাম। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বঙ্গবন্ধু কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে এলেন। ১৯৪৮ সালে ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। আমিও একই সময়ে ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে পূর্ব বাংলার তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ ঘনীভূত হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু এবারো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। আবারো আন্দোলনের মধ্যে মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা-সাক্ষাৎ, বন্ধুত্ব। প্রত্যেকটি ঘটনার শুরুরও শুরু থাকে। ভাষার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। এই প্রসঙ্গে তরুণ সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের একাংশ সোচ্চার হয়ে উঠছিল। এর কারণ ছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির আগেই ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে।’ বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় তখন থেকেই। আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রয়াত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এর প্রতিবাদে বললেন, ‘যেহেতু পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষা বাংলা, তাই বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করতে হবে।’ এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে পুরান ঢাকায় একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধু আমাদের সেখানে যেতে নিষেধ করেছিলেন। তাঁর মনে হচ্ছিল মুসলিম লীগের ছাত্রফ্রন্টের নেতা শাহ আজিজুর রহমানের পালিত সন্ত্রাসী, ঢাকার নওয়াব বাড়ি ও সরদার বাড়ির গুণ্ডারা এবং চকবাজার মসজিদের ইমামপক্ষের লোকেরা সভায় হামলা করতে পারে। বঙ্গবন্ধুর কথা মেনেই আমি সভায় যাইনি। সভায় একমাত্র বক্তা ছিলেন তখনো ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান। মনে আছে বঙ্গবন্ধু সভা থেকে ফিরে এলেন মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে। ব্যান্ডেজে রক্তের ছোপ দেখা যাচ্ছে। তাঁর কাছে জানতে পারলাম তিনি যা আশঙ্কা করেছিলেন, তাই সত্যি হয়েছে। সভায় হামলা করেছিল উর্দুরপক্ষের গুণ্ডারা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সেটাই প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ সভা। ভাষার দাবিতে এভাবেই বাঙালি তরুণ ও বুদ্ধিজীবীরা ধীরে ধীরে সরব হয়েছেন। ১৯৪৯ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আয়োজিত এক প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। গ্রেফতার করে ক’জন নেতাকে। তাঁদের একজন বঙ্গবন্ধু, আমার মুজিব ভাই। এরপর থেকে প্রতি বছর ১১ মার্চ ‘ভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করতাম আমরা। বায়ান্নর পর বদলে গেছে দিনটা। তখন থেকে একুশে ফেব্রুয়ারিই হয়ে গেল আমাদের প্রাণের ভাষার দিন। এভাবেই আন্দোলনে-সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম লীগ তথা এস্টাবলিশমেন্টবিরোধী শক্তিগুলোকে একত্র করে। বঙ্গবন্ধু হলেন ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা। আর আমরা তখন কর্মী। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম ঘিরে অনেক সময় কাটালেও, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। তিনি যে বিবাহিত বা ইতোমধ্যেই পুত্র-কন্যার বাবা হয়েছেন, তাও জানা হয়নি। বায়ান্নর পর জানতে পারলাম সেটা। এমনই আন্তরিক ছিলেন তিনি আন্দোলনের প্রতি, যে কারণে নিজের ব্যক্তিগত সুখ-শান্তি নিয়ে ভাবতেন না।
আসলে অকস্মাৎ কিছু হয়ে যায় না। ইতিহাসের ধারায় একেকজন একেকটা সময়ের দাবি পূরণ করে হয়ে ওঠেন জননেতা বা জাতির জনক। বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এমনি এমনি হননি। হঠাৎ করেই তিনি রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হননি। টুঙ্গিপাড়ার নদীঘেঁষা এক অখ্যাত গ্রামের গৃহস্থ শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমান হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি। এর পেছন ফিরে তাকালে দেখতে পাই, কীভাবে ধীরে ধীরে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এক মহানায়কের আবির্ভাব হয়েছে। আমার চোখে তাঁর শুরুটা দেখেছি। তারপর তাঁঁর শুধুই এগিয়ে চলার ধারাবাহিকতা।

মানবকণ্ঠ

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

একজন মহান সংগ্রামীর জন্মদিন

আপডেট টাইম : ০১:৩৬:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ ২০১৬

সংক্ষিপ্ত পরিসরে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু লেখা একেবারে খুবই দুরূহ। আমি তাঁর জন্মদিনে তাঁকে ঘিরে কিছু স্মৃতিচারণ করছি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। আজ থেকে সত্তর বছর আগে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়েছিল। বয়সে তিনি আমার সাত বছরের বড়। ১৯৪৬ সালে পড়তাম দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। আর তিনি কলকাতায়, তখনকার ইসলামিয়া কলেজে। তখনকার রেওয়াজ অনুযায়ী মফস্বলের ছেলেমেয়েরা কলকাতায় ইসলামিয়া, প্রেসিডেন্সি বা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়তে যেত। তবে সব কলেজের মধ্যে ইসলামিয়াতেই এ বঙ্গের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি ছিল। বঙ্গবন্ধু তখন ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। থাকতেন বেকার হোস্টেলে। আমি তখন দিনাজপুরের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের একজন নগণ্য সংগঠক। বঙ্গবন্ধু কলকাতায় বৃহত্তর পরিসরে সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। আন্দোলনের সূত্রেই আমরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতাম। বাড়ি থেকে পালিয়ে একবার কলকাতায় ক’দিন ছিলাম। তখন বঙ্গবন্ধুর রুমেই উঠলাম। এ সময়ই তাঁর সঙ্গে রুম শেয়ারের সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। ডাইনিংয়ে তাঁর কুপন দিয়ে খাবার খেয়েছি। বঙ্গবন্ধুর একটি বড় গুণ, তিনি যে কাউকে খুব সহজে আপন করে নিতেন আর ‘তুই’ বলে সম্বোধন করতেন। আমার সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা ওই পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। আর তিনিও তখনই হয়ে উঠেছিলেন আমার প্রিয় ‘মুজিব ভাই।’ তারপর থেকে এভাবেই তাঁকে সম্বোধন করেছি। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রশাসনিক নানা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সরকারপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সামনে বহুবার মুখ থেকে অজান্তে ‘মুজিব ভাই’ সম্বোধনটি চলে আসত। থতমত খেয়ে সামলে নিতাম। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বঙ্গবন্ধু কলকাতা ছেড়ে ঢাকায় চলে এলেন। ১৯৪৮ সালে ভর্তি হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে। আমিও একই সময়ে ভর্তি হই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর পরই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা প্রসঙ্গে পূর্ব বাংলার তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ ঘনীভূত হচ্ছিল। বঙ্গবন্ধু এবারো গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। আবারো আন্দোলনের মধ্যে মুজিব ভাইয়ের সঙ্গে আমার দেখা-সাক্ষাৎ, বন্ধুত্ব। প্রত্যেকটি ঘটনার শুরুরও শুরু থাকে। ভাষার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। এই প্রসঙ্গে তরুণ সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের একাংশ সোচ্চার হয়ে উঠছিল। এর কারণ ছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির আগেই ভারতের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে।’ বাঙালিদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয় তখন থেকেই। আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রয়াত ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ এর প্রতিবাদে বললেন, ‘যেহেতু পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষা বাংলা, তাই বাংলাকেই রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করতে হবে।’ এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৪৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে পুরান ঢাকায় একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধু আমাদের সেখানে যেতে নিষেধ করেছিলেন। তাঁর মনে হচ্ছিল মুসলিম লীগের ছাত্রফ্রন্টের নেতা শাহ আজিজুর রহমানের পালিত সন্ত্রাসী, ঢাকার নওয়াব বাড়ি ও সরদার বাড়ির গুণ্ডারা এবং চকবাজার মসজিদের ইমামপক্ষের লোকেরা সভায় হামলা করতে পারে। বঙ্গবন্ধুর কথা মেনেই আমি সভায় যাইনি। সভায় একমাত্র বক্তা ছিলেন তখনো ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র শেখ মুজিবুর রহমান। মনে আছে বঙ্গবন্ধু সভা থেকে ফিরে এলেন মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে। ব্যান্ডেজে রক্তের ছোপ দেখা যাচ্ছে। তাঁর কাছে জানতে পারলাম তিনি যা আশঙ্কা করেছিলেন, তাই সত্যি হয়েছে। সভায় হামলা করেছিল উর্দুরপক্ষের গুণ্ডারা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সেটাই প্রথম প্রকাশ্য প্রতিবাদ সভা। ভাষার দাবিতে এভাবেই বাঙালি তরুণ ও বুদ্ধিজীবীরা ধীরে ধীরে সরব হয়েছেন। ১৯৪৯ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আয়োজিত এক প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। গ্রেফতার করে ক’জন নেতাকে। তাঁদের একজন বঙ্গবন্ধু, আমার মুজিব ভাই। এরপর থেকে প্রতি বছর ১১ মার্চ ‘ভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করতাম আমরা। বায়ান্নর পর বদলে গেছে দিনটা। তখন থেকে একুশে ফেব্রুয়ারিই হয়ে গেল আমাদের প্রাণের ভাষার দিন। এভাবেই আন্দোলনে-সংগ্রামে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয় মুসলিম লীগ তথা এস্টাবলিশমেন্টবিরোধী শক্তিগুলোকে একত্র করে। বঙ্গবন্ধু হলেন ছাত্রলীগের অন্যতম নেতা। আর আমরা তখন কর্মী। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম ঘিরে অনেক সময় কাটালেও, তাঁর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে কিছুই জানতাম না। তিনি যে বিবাহিত বা ইতোমধ্যেই পুত্র-কন্যার বাবা হয়েছেন, তাও জানা হয়নি। বায়ান্নর পর জানতে পারলাম সেটা। এমনই আন্তরিক ছিলেন তিনি আন্দোলনের প্রতি, যে কারণে নিজের ব্যক্তিগত সুখ-শান্তি নিয়ে ভাবতেন না।
আসলে অকস্মাৎ কিছু হয়ে যায় না। ইতিহাসের ধারায় একেকজন একেকটা সময়ের দাবি পূরণ করে হয়ে ওঠেন জননেতা বা জাতির জনক। বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এমনি এমনি হননি। হঠাৎ করেই তিনি রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হননি। টুঙ্গিপাড়ার নদীঘেঁষা এক অখ্যাত গ্রামের গৃহস্থ শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমান হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি। এর পেছন ফিরে তাকালে দেখতে পাই, কীভাবে ধীরে ধীরে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এক মহানায়কের আবির্ভাব হয়েছে। আমার চোখে তাঁর শুরুটা দেখেছি। তারপর তাঁঁর শুধুই এগিয়ে চলার ধারাবাহিকতা।

মানবকণ্ঠ