ঢাকা ০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনায় আমদানি কমেছে গমের

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১৫৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনা মহামারির কারণে দেশে চাহিদা কমায় গত এক বছরে গম আমদানির পরিমাণ কমেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যেখানে গম আমদানি হয়েছিল ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩২০ টন। সেখানে সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে গম আমদানি হয়েছে ৫২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫০ টন। 

এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে গম আমদানি কমেছে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭০ টন। এদিকে করোনা সংক্রমণ কমায় হঠাৎ করে আটা-ময়দার চাহিদা বাড়ায় বাড়তে শুরু করেছে এ দুটি পণ্যের দাম। এক মাস আগেও যেখানে প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হয়েছে ২৮ থেকে ৩২ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৩ টাকায়।

 

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল শুক্রবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক মাসে খোলা সাদা আটার দাম বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। বেড়েছে প্যাকেট আটা, ময়দার দামও। কিন্তু হঠাৎ করে কেন বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম?

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, করোনা মহামারি শুরুর পর গত দেড় বছরে দেশে নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে লকডাউনে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এতে আটা, ময়দার চাহিদা অনেক কমে গিয়েছিল।

রাশিয়ান গমের প্রথম চালান আসছে চলতি সপ্তাহেইএ কারণে আমদানিকারকরাও গম আমদানি কম করেছেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ কমায় এখন সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে আটা-ময়দার চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়েছে।

গতকাল রাজধানীর খুচরাবাজারে প্রতি কেজি প্যাকেট আটা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, প্যাকেট ময়দা ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা ও খোলা ময়দা ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। যা এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেশি।

 

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে এখানে গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ সময়ের মধ্যে প্রতি মণ আটা ও ময়দায় বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে এই বাজারে মানভেদে প্রতি মণ আটা ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪৩০ টাকা এবং ময়দা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে গম আমদানি হয়েছে ৫২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫০ টন। আগের বছর আমদানি হয়েছিল ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩২০ টন। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে গম আমদানি কম হয়েছে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭০ টন। আবার এ সময়ে দেশে গম উত্পাদনও বাড়েনি। গত কয়েক বছর ধরেই দেশে গম উৎপাদন ১২ থেকে ১৩ লাখ টনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

অথচ দেশে প্রতি বছরই গমের চাহিদা বাড়ছে। চালের পর দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য হলো গম। ভাতের বাইরে মানুষ যত খাবার খায়, তার সিংহ ভাগই তৈরি হয় আটা, ময়দা থেকে। মিল-মালিকদের হিসাবে, শুধু প্যাকেটজাত পণ্য তৈরিতেই প্রতি মাসে ২৫ হাজার টন আটা, ময়দার চাহিদা রয়েছে। এছাড়া চালের চেয়ে আটার দাম কম হওয়ায় করোনা মহামারির এ সময়ে অনেক শ্রমজীবী মানুষ আটার প্রতি ঝুঁকছে।

 

রাজধানীর কাওরান বাজারের একটি হোটেলের ম্যানেজার মেহেদী হাসান জানান, করোনার কারণে লকডাউনে গত দেড় বছরের বেশির ভাগ সময়ই হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন সবকিছু খুলে দেওয়ায় মানুষ আবার হোটেলে খেতে আসছেন। আর হোটেলের খাবারের একটি বড় অংশ তৈরিতেই আটা, ময়দার ব্যবহার হয়। এতে হটাৎ করেই চাহিদা বেড়েছে। ফলে তাদের এখন আগের চেয়ে বাড়তি দরে আটা, ময়দা কিনতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মসুর ডাল, চিনি, হলুদ, মুরগির দাম বেড়েছে

রাজধানীর খুচরাবাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মসুর ডাল, চিনি, হলুদ ও মুরগির দাম বেড়েছে। গতকাল খুচরাবাজারে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে বড়দানা মসুর ডালে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ও মাঝারিদানা মসুর ডাল ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে ছোটদানা মসুর ডালের দাম বাড়েনি। এই ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে। চিনির দাম এ সপ্তাহে আরো বেড়েছে।

কেজিতে দুই টাকা বেড়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি হলুদের কেজিতে বেড়েছে ৬০ টাকা। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি দেশি হলুদ বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহের শুরুতে ছিল ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা। আর আমদানিকৃত হলুদ প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

করোনায় আমদানি কমেছে গমের

আপডেট টাইম : ০৯:৩৫:৩৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনা মহামারির কারণে দেশে চাহিদা কমায় গত এক বছরে গম আমদানির পরিমাণ কমেছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে যেখানে গম আমদানি হয়েছিল ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩২০ টন। সেখানে সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে গম আমদানি হয়েছে ৫২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫০ টন। 

এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে গম আমদানি কমেছে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭০ টন। এদিকে করোনা সংক্রমণ কমায় হঠাৎ করে আটা-ময়দার চাহিদা বাড়ায় বাড়তে শুরু করেছে এ দুটি পণ্যের দাম। এক মাস আগেও যেখানে প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি হয়েছে ২৮ থেকে ৩২ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৩ টাকায়।

 

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গতকাল শুক্রবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত এক মাসে খোলা সাদা আটার দাম বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। বেড়েছে প্যাকেট আটা, ময়দার দামও। কিন্তু হঠাৎ করে কেন বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম?

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, করোনা মহামারি শুরুর পর গত দেড় বছরে দেশে নিয়মিত ও অনিয়মিতভাবে লকডাউনে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। এতে আটা, ময়দার চাহিদা অনেক কমে গিয়েছিল।

রাশিয়ান গমের প্রথম চালান আসছে চলতি সপ্তাহেইএ কারণে আমদানিকারকরাও গম আমদানি কম করেছেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ কমায় এখন সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। ফলে আটা-ময়দার চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দামও বেড়েছে।

গতকাল রাজধানীর খুচরাবাজারে প্রতি কেজি প্যাকেট আটা ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, প্যাকেট ময়দা ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা ও খোলা ময়দা ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। যা এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেশি।

 

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে এখানে গমের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ সময়ের মধ্যে প্রতি মণ আটা ও ময়দায় বেড়েছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে এই বাজারে মানভেদে প্রতি মণ আটা ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪৩০ টাকা এবং ময়দা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকায়।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে গম আমদানি হয়েছে ৫২ লাখ ৯৯ হাজার ৮৫০ টন। আগের বছর আমদানি হয়েছিল ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার ৩২০ টন। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে গম আমদানি কম হয়েছে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭০ টন। আবার এ সময়ে দেশে গম উত্পাদনও বাড়েনি। গত কয়েক বছর ধরেই দেশে গম উৎপাদন ১২ থেকে ১৩ লাখ টনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

অথচ দেশে প্রতি বছরই গমের চাহিদা বাড়ছে। চালের পর দেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য হলো গম। ভাতের বাইরে মানুষ যত খাবার খায়, তার সিংহ ভাগই তৈরি হয় আটা, ময়দা থেকে। মিল-মালিকদের হিসাবে, শুধু প্যাকেটজাত পণ্য তৈরিতেই প্রতি মাসে ২৫ হাজার টন আটা, ময়দার চাহিদা রয়েছে। এছাড়া চালের চেয়ে আটার দাম কম হওয়ায় করোনা মহামারির এ সময়ে অনেক শ্রমজীবী মানুষ আটার প্রতি ঝুঁকছে।

 

রাজধানীর কাওরান বাজারের একটি হোটেলের ম্যানেজার মেহেদী হাসান জানান, করোনার কারণে লকডাউনে গত দেড় বছরের বেশির ভাগ সময়ই হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন সবকিছু খুলে দেওয়ায় মানুষ আবার হোটেলে খেতে আসছেন। আর হোটেলের খাবারের একটি বড় অংশ তৈরিতেই আটা, ময়দার ব্যবহার হয়। এতে হটাৎ করেই চাহিদা বেড়েছে। ফলে তাদের এখন আগের চেয়ে বাড়তি দরে আটা, ময়দা কিনতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মসুর ডাল, চিনি, হলুদ, মুরগির দাম বেড়েছে

রাজধানীর খুচরাবাজারে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে মসুর ডাল, চিনি, হলুদ ও মুরগির দাম বেড়েছে। গতকাল খুচরাবাজারে কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে বড়দানা মসুর ডালে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ও মাঝারিদানা মসুর ডাল ৯৫ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে ছোটদানা মসুর ডালের দাম বাড়েনি। এই ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে। চিনির দাম এ সপ্তাহে আরো বেড়েছে।

কেজিতে দুই টাকা বেড়ে তা বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকায়। এদিকে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি হলুদের কেজিতে বেড়েছে ৬০ টাকা। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি দেশি হলুদ বিক্রি হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়। যা গত সপ্তাহের শুরুতে ছিল ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা। আর আমদানিকৃত হলুদ প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১২০ টাকায়।