ঢাকা ০৯:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনৈক্যের সুর ১৪ দলীয় জোটে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০২:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১৭৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে নতুন করে অনৈক্যের সুর বাজছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ পালটাপালটি বক্তব্য দিচ্ছে। তাদের এ অবস্থান এবং বক্তব্যের কারণে জোটে অনৈক্যের বিষয়টি প্রকাশ পাচ্ছে। একই সঙ্গে জোটে অস্থিরতারও বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে জাসদ। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জোটের ভেতরে শুরু হয়েছে নতুন বাদানুবাদ। যার প্রভাব পড়ছে জোটের রাজনীতিতে।

এক সঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে প্রায় দেড় যুগ আগে ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪ দলীয় জোটের যাত্রা শুরু। এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলন ও নির্বাচন জোটগতভাবে হলেও সরকারে এসে আওয়ামী লীগ কার্যত ‘একলা চলো নীতি’ অনুসরণ করছে। এমন অভিযোগ করে আসছে জোটের শরিকরা।

আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের সরকারে বিভিন্ন সময় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু মন্ত্রী হন। একইভাবে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াকে মন্ত্রী করা হলেও শরিক দলের বাকি নেতারা ছিলেন উপেক্ষিত। সেই থেকে জোটের ভেতরে শুরু হয় গৃহদাহ। পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাতে গিয়ে বাড়তে থাকে হতাশা ক্ষোভ-বিক্ষোভ। দেখা দেয় অনৈক্য।

সম্প্রতি সেই ক্ষোভের আগুনেই ঘি ঢেলে ফের অনৈক্যের সুর বাজিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি। শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গোপালগঞ্জ জেলা সমিতি আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি বক্তব্য দেন।

এখানে তিনি দাবি করেন, ‘মুশতাক, জাসদ এরা জিয়ার সঙ্গে মিলে ক্ষমতা হাত করতে চেয়েছিল।’ শেখ সেলিম সেদিন বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উšে§াচনে কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট ব্রিগেড কমান্ডারদের কেউ বঙ্গবন্ধুর লাশটা দেখতে যায়নি। সবাই রেডিও স্টেশনে গেছে। সেদিন যারা রেডিও স্টেশনে গেছে তারা সবাই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। খুনিদের সমর্থন করতে তারা গিয়েছিল। ইনু-তাহের, যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিল, তারাও গিয়েছিল খুনিদের সমর্থন করতে। বঙ্গভবনে গিয়ে তারা খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিল। মোশতাকের সরকারকে তারা অভিনন্দন জানায়। ’

জাসদ নেতারা অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে শেখ সেলিমের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। তারা উলটো আওয়ামী লীগের এই নেতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্য ‘রাজনৈতিক দূরভিসন্ধিমূলক মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।’ ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মামা বঙ্গবন্ধু ও আপন ভাই শেখ মনির লাশ ফেলে হত্যাকারীদের সঙ্গে যুক্ত তৎকালীন আমেরিকার দূতাবাসে গিয়ে তিনি কী করছিলেন। তা জাতি জানতে চায়।’

ইনু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে ফাটল ধরাতেই এসব কথা বলছেন শেখ সেলিম। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে যেভাবে আমাদের নাম উল্লেখ করে বলা হচ্ছে তাতে প্রকৃত খুনি ও ষড়যন্ত্রকারীরা আড়ালে চলে যায়। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সতর্ক করে বলব, ‘আপনার কাছের লোকেরাই খন্দকার মোশতাকের ভূমিকায় এখনো আছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ঐক্য চায় না।’

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যায় জাসদকে জড়িয়ে দেওয়া শেখ সেলিমের বক্তব্য ১৪ দলীয় জোটকে নতুন করে সংকটে ফেলেছে। দিবসভিত্তিক ভার্চুয়াল সভা-সেমিনার আয়োজন ছাড়া কার্যত নিষ্ক্রিয় এই জোটের দুই শরিকের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বাড়তে থাকলে তার পরিণতি ভাঙনে রূপ নিতে পারে। ইতিমধ্যে জোট থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। তারা জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো দেয়নি।

তবে আগামীতে আর ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে ভোট না করার কথা জানিয়ে দিয়েছে। জোটের আরেক শরিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপিও আওয়ামী লীগের ‘একলা চলো’ নীতির কারণে ক্ষুব্ধ। শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে জাসদের একটি অংশ বেরিয়ে বাংলাদেশ জাসদ নামে আলাদা দল গঠন করেছে প্রায় তিন বছর। তারাও ১৪ দলীয় জোটে আছে, তবে নামমাত্র।

‘প্রত্যাশা আছে, তবে প্রাপ্তি নেই’Ñতবুও জোটে হতাশা নিয়ে আছে দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল। একই অবস্থা নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনেরও। জোটের আরও তিন শরিক গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, অনেক দিন ধরেই সংকটে ধুঁকছে ১৪ দল। জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিকদের দূরত্ব দিন দিন বাড়ছেই। শরিক দলগুলো অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে ভালো নেই। ভাঙা-গড়াসহ নানামুখী সমস্যায় শরিকরাও জর্জরিত, ক্ষতবিক্ষত। স্থবির হয়ে আছে তাদের নিজস্ব দলীয় কর্মকাণ্ডও। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে ১৪ দলীয় জোট যে আবেদন তৈরি করেছিল, এখন তাও হারাতে বসেছে।

দেশের প্রবীণ বাম নেতা ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি আমেরিকায় মেয়ের কাছে গেছেন। সেখান থেকে টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা একটি আদর্শিক লক্ষ্য নিয়ে এই জোট গঠন করেছিলাম। আমি মনে করি এই জোটের প্রয়োজনীয়তা এখনো রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ জোট টিকিয়ে রাখতে চায় কিনাÑতা তারা বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাগজকলমে ১৪ দলীয় জোট হয়তো আছে। তবে এর কোনো কার্যক্রম নেই। বৈঠক নেই, কর্মসূচিও নেই। করোনার মতো মহামারিতেও আমরা জোটগতভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। এটাই সত্য, এই সত্যটা মেনে নিয়ে আগামী দিনে পথ চলতে হবে। আওয়ামী লীগ কি চায় তা তাদেরই ঠিক করতে হবে।’

অন্য দিকে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৪ দলীয় জোট আছে। এই জোটের প্রয়োজনীয়তাও আছে। তবে আওয়ামী লীগ নিজেই সক্রিয় না, এলোমেলো। সেই প্রভাব ১৪ দলে পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার বিভ্রান্তিকর বক্তব্য, যা ১৪ দলীয় জোটের রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’

জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘১৪ দল কার্যত নির্বাচনী জোটে পরিণত হয়েছে। আমার মনে হয়, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে জোট আবার সক্রিয় হবে।’

তবে জোটের মধ্যে কোনো সংকট নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। জানতে চাইলে মঙ্গলবার যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো সংকট নেই। আস্থা ও বিশ্বাসেও কোনো ঘাটতি নেই। তবে এটা ঠিক করোনার কারণে বৈঠক নেই, দেখা-সাক্ষাৎ নেই, কর্মসূচি নেই। তবে এর মধ্যেও আমরা নানা ইস্যুতে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসব।’ তিনি বলেন, ‘জোটের কারও কারও মনে হতাশা থাকতে পারে। ক্ষোভ থাকতে পারে। কেউ কারও কথায় আঘাত পেয়ে থাকতে পারে। এসব সাময়িক, সময়মতো সব ঠিক হয়ে যাবে।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অনৈক্যের সুর ১৪ দলীয় জোটে

আপডেট টাইম : ১০:০২:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে নতুন করে অনৈক্যের সুর বাজছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জোটের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ পালটাপালটি বক্তব্য দিচ্ছে। তাদের এ অবস্থান এবং বক্তব্যের কারণে জোটে অনৈক্যের বিষয়টি প্রকাশ পাচ্ছে। একই সঙ্গে জোটে অস্থিরতারও বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে জাসদ। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জোটের ভেতরে শুরু হয়েছে নতুন বাদানুবাদ। যার প্রভাব পড়ছে জোটের রাজনীতিতে।

এক সঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠনের অঙ্গীকার নিয়ে প্রায় দেড় যুগ আগে ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪ দলীয় জোটের যাত্রা শুরু। এরই ধারাবাহিকতায় আন্দোলন ও নির্বাচন জোটগতভাবে হলেও সরকারে এসে আওয়ামী লীগ কার্যত ‘একলা চলো নীতি’ অনুসরণ করছে। এমন অভিযোগ করে আসছে জোটের শরিকরা।

আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদের সরকারে বিভিন্ন সময় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু মন্ত্রী হন। একইভাবে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়াকে মন্ত্রী করা হলেও শরিক দলের বাকি নেতারা ছিলেন উপেক্ষিত। সেই থেকে জোটের ভেতরে শুরু হয় গৃহদাহ। পাওয়া না পাওয়ার হিসাব মেলাতে গিয়ে বাড়তে থাকে হতাশা ক্ষোভ-বিক্ষোভ। দেখা দেয় অনৈক্য।

সম্প্রতি সেই ক্ষোভের আগুনেই ঘি ঢেলে ফের অনৈক্যের সুর বাজিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপি। শনিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গোপালগঞ্জ জেলা সমিতি আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি বক্তব্য দেন।

এখানে তিনি দাবি করেন, ‘মুশতাক, জাসদ এরা জিয়ার সঙ্গে মিলে ক্ষমতা হাত করতে চেয়েছিল।’ শেখ সেলিম সেদিন বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উšে§াচনে কমিশন গঠনের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট ব্রিগেড কমান্ডারদের কেউ বঙ্গবন্ধুর লাশটা দেখতে যায়নি। সবাই রেডিও স্টেশনে গেছে। সেদিন যারা রেডিও স্টেশনে গেছে তারা সবাই বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। খুনিদের সমর্থন করতে তারা গিয়েছিল। ইনু-তাহের, যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিল, তারাও গিয়েছিল খুনিদের সমর্থন করতে। বঙ্গভবনে গিয়ে তারা খুনি মোশতাককে অভিনন্দন জানিয়েছিল। মোশতাকের সরকারকে তারা অভিনন্দন জানায়। ’

জাসদ নেতারা অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে শেখ সেলিমের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান। তারা উলটো আওয়ামী লীগের এই নেতাকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্য ‘রাজনৈতিক দূরভিসন্ধিমূলক মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।’ ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মামা বঙ্গবন্ধু ও আপন ভাই শেখ মনির লাশ ফেলে হত্যাকারীদের সঙ্গে যুক্ত তৎকালীন আমেরিকার দূতাবাসে গিয়ে তিনি কী করছিলেন। তা জাতি জানতে চায়।’

ইনু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির মধ্যে ফাটল ধরাতেই এসব কথা বলছেন শেখ সেলিম। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে যেভাবে আমাদের নাম উল্লেখ করে বলা হচ্ছে তাতে প্রকৃত খুনি ও ষড়যন্ত্রকারীরা আড়ালে চলে যায়। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সতর্ক করে বলব, ‘আপনার কাছের লোকেরাই খন্দকার মোশতাকের ভূমিকায় এখনো আছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ঐক্য চায় না।’

জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যায় জাসদকে জড়িয়ে দেওয়া শেখ সেলিমের বক্তব্য ১৪ দলীয় জোটকে নতুন করে সংকটে ফেলেছে। দিবসভিত্তিক ভার্চুয়াল সভা-সেমিনার আয়োজন ছাড়া কার্যত নিষ্ক্রিয় এই জোটের দুই শরিকের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি বাড়তে থাকলে তার পরিণতি ভাঙনে রূপ নিতে পারে। ইতিমধ্যে জোট থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। তারা জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো দেয়নি।

তবে আগামীতে আর ‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে ভোট না করার কথা জানিয়ে দিয়েছে। জোটের আরেক শরিক আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি-জেপিও আওয়ামী লীগের ‘একলা চলো’ নীতির কারণে ক্ষুব্ধ। শরিফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বে জাসদের একটি অংশ বেরিয়ে বাংলাদেশ জাসদ নামে আলাদা দল গঠন করেছে প্রায় তিন বছর। তারাও ১৪ দলীয় জোটে আছে, তবে নামমাত্র।

‘প্রত্যাশা আছে, তবে প্রাপ্তি নেই’Ñতবুও জোটে হতাশা নিয়ে আছে দিলীপ বড়ুয়ার সাম্যবাদী দল। একই অবস্থা নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনেরও। জোটের আরও তিন শরিক গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, অনেক দিন ধরেই সংকটে ধুঁকছে ১৪ দল। জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে শরিকদের দূরত্ব দিন দিন বাড়ছেই। শরিক দলগুলো অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে ভালো নেই। ভাঙা-গড়াসহ নানামুখী সমস্যায় শরিকরাও জর্জরিত, ক্ষতবিক্ষত। স্থবির হয়ে আছে তাদের নিজস্ব দলীয় কর্মকাণ্ডও। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে রাজনীতির মাঠে ১৪ দলীয় জোট যে আবেদন তৈরি করেছিল, এখন তাও হারাতে বসেছে।

দেশের প্রবীণ বাম নেতা ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়। তিনি আমেরিকায় মেয়ের কাছে গেছেন। সেখান থেকে টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা একটি আদর্শিক লক্ষ্য নিয়ে এই জোট গঠন করেছিলাম। আমি মনে করি এই জোটের প্রয়োজনীয়তা এখনো রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ জোট টিকিয়ে রাখতে চায় কিনাÑতা তারা বলতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কাগজকলমে ১৪ দলীয় জোট হয়তো আছে। তবে এর কোনো কার্যক্রম নেই। বৈঠক নেই, কর্মসূচিও নেই। করোনার মতো মহামারিতেও আমরা জোটগতভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারিনি। এটাই সত্য, এই সত্যটা মেনে নিয়ে আগামী দিনে পথ চলতে হবে। আওয়ামী লীগ কি চায় তা তাদেরই ঠিক করতে হবে।’

অন্য দিকে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ১৪ দলীয় জোট আছে। এই জোটের প্রয়োজনীয়তাও আছে। তবে আওয়ামী লীগ নিজেই সক্রিয় না, এলোমেলো। সেই প্রভাব ১৪ দলে পড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার বিভ্রান্তিকর বক্তব্য, যা ১৪ দলীয় জোটের রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।’

জাতীয় পার্টি-জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘১৪ দল কার্যত নির্বাচনী জোটে পরিণত হয়েছে। আমার মনে হয়, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে জোট আবার সক্রিয় হবে।’

তবে জোটের মধ্যে কোনো সংকট নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা ও ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু। জানতে চাইলে মঙ্গলবার যুগান্তরকে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো সংকট নেই। আস্থা ও বিশ্বাসেও কোনো ঘাটতি নেই। তবে এটা ঠিক করোনার কারণে বৈঠক নেই, দেখা-সাক্ষাৎ নেই, কর্মসূচি নেই। তবে এর মধ্যেও আমরা নানা ইস্যুতে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান করেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসব।’ তিনি বলেন, ‘জোটের কারও কারও মনে হতাশা থাকতে পারে। ক্ষোভ থাকতে পারে। কেউ কারও কথায় আঘাত পেয়ে থাকতে পারে। এসব সাময়িক, সময়মতো সব ঠিক হয়ে যাবে।’