স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনী দিনে ট্রেন চালানোই চ্যালেঞ্জ

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পদ্মা সেতুর সড়ক ও রেল সংযোগ প্রকল্পের কাজ মহামারির করোনাভাইরাস কারণে কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তবে অতিরিক্ত লোকবল দিয়ে তা পুষিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মূল সেতুর নির্মাণকাজের অগ্রগতি প্রায় ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।

আগামী বছর সেতুর সড়ক সংযোগ দিয়ে যানবাহন চলাচল করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে রেল সংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। এ কারণে সেতুর উদ্বোধনী দিনে ট্রেন চালানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা-একই দিন পদ্মা সেতু দিয়ে সড়ক ও রেল সংযোগ চালু করা। কিন্তু প্রকল্প দুটির অগ্রগতির মধ্যে ব্যবধান থাকায় একই দিন সেতুটি দিয়ে ট্রেন চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠছে। তবে সেতুর উদ্বোধনী দিনেই ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সেতু ও সেতুর দুই পাশে ৪০ কিলোমিটার রেল সংযোগ (রেলপথ) দ্রুত নির্মাণ করতে চায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নির্মাণকাজ দ্রুত করতে ঢাকা-যশোর ১৭২ কিলোমিটার ‘পদ্মা রেল লিংক প্রকল্প’ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

সেতুর দুই পাশে ৭০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও সেতুতে রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরুই করতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সেতু ও সেতুর দুই পাশে ৩৯ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার রেলপথ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ করতে চায় রেলওয়ে। এ জন্য অনুমতি চেয়ে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়- নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন করতে হলে ডিসেম্বরেই রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু করতে হবে।

এখন পর্যন্ত ওই চিঠির জবাব পাওয়া যায়নি। তবে সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতুর রেলপথ সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোয় আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলে গ্যাস লাইন ও বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার পর রেলকে কাজের অনুমতি দেওয়া হবে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের বক্তব্য-পদ্মা সেতুর রেল স্লাবে বিশেষ ট্র্যাক স্লাব (বিশেষ রেল স্লিপার) বসানো জরুরি। ট্র্যাক স্লাব প্রস্তুত করা হলেও অনুমতি না পাওয়ায় রেললাইন স্থাপনের কাজ করা যাচ্ছে না। সব ট্র্যাক স্লাব বসাতে ছয় মাস লাগবে। রেল সংযোগ প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন জানান, সেতুর দুই পাশে উড়াল রেললাইনে স্লিপার বসানোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সেতুতে রেললাইন স্থাপনের অনুমতি ডিসেম্বরের মধ্যে পেলে আগামী জুনের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব।

অপরদিকে, পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শহিদুল ইসলাম  বলেন, সেতুর রেললাইন অংশে গ্যাসলাইন, বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনসহ বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলছে। আগামী মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত এ কাজ চলতে পারে। এসব কাজ খুব টেকনিক্যাল। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, আমার মনে হয়-এ নিয়ে রেল একটি ইস্যু তৈরি করছে। ৩-৪ মাসের মধ্যে রেল কেন তাদের কাজ শেষ করতে পারবে না-এমন প্রশ্ন করেন তিনি।

পদ্মা সেতুর নিচের অংশে ৬ দশমিক শূন্য ৮ কিলোমিটার বিশেষ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। পদ্ম সেতুর রেললিংক প্রকল্পের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে-পুরো (ঢাকা-যশোর ১৭২ কিমি.) প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৪৩ শতাংশ আর অগ্রাধিকার (মাওয়া-জাজিরা ৪০ কিমি.) প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানান, চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলীরাসহ প্রকল্পের দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক করোনা আক্রান্ত হন। বর্তমানে ৭০ জন করোনায় ভুগছেন। মাঠপর্যায়ে অতিরিক্ত লোকবল লাগিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করা হচ্ছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।

পদ্মা সেতু ও রেল সংযোগ প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্টের প্রধান সমন্বয়ক মেজর জেনারেল এফএম জাহিদ হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে একই দিন সড়ক ও রেল সংযোগ চালুর চ্যালেঞ্জ নিয়ে উভয় প্রকল্পটির নির্মাণকাজ চলছে। বন্যা ও করোনায় কাজে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটেছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা দিন-রাত কাজ করছি। মূল সেতুর সঙ্গে রেললাইন স্থাপনও আমাদের এখন বড় চ্যালেঞ্জ। রেলপথ ঘেঁষে মূল সেতুতে গ্যাসলাইন, বৈদ্যুতিক লাইন স্থাপনসহ টেকনিক্যাল কাজ চলছে। এগুলো আগে শেষ করতে হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা বলেন, বেশ কয়েক মাস আগে রেলওয়ের পক্ষ থেকে সেতু কর্তৃপক্ষকে জরুরি চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত মতামত পাওয়া যায়নি। সেতুতে রেললাইন স্থাপন করতে কমপক্ষে ছয় মাস লাগবে। রেললাইন স্থাপনের কাজ করতে আমরা প্রস্তুত। ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শুরু করতে না পারলে নির্ধারিত সময়ে রেললাইন স্থাপন সম্ভব হবে না। ডিসেম্বরের আগে শুরু করতে পারলে আরও ভালো হতো। কাজ শুরু করার অনুমতি চেয়ে আমরা সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি।

রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন হাওর বার্তাকে বলেন, বন্যা আর করোনার কারণে আমাদের প্রকল্পের কাজ কিছুটা ব্যাহত হলেও অতিরিক্ত লোকবল দিয়ে তা পুষিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো-সেতুর উদ্বোধনী দিনেই ট্রেন চালানো। তবে আমরা সেতুর উদ্বোধনী দিনেই সড়ক যানের সঙ্গে ট্রেনও চালাব-এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েই কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ৪০ কিলোমিটার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্মাণ করা হচ্ছে। সেতুতে রেললাইন স্থাপনের জন্য ডিসেম্বরে অনুমতি পেতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করি, কোনো সমস্যা হবে না। সেতুতে একই দিন ট্রেনও চলবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর