নেত্রকোনায় মানবতার সেবায় এক আলোকিত মানবসেবক আবদুল হামিদ

বিজয় দাসঃ মানুষ মানুষের জন্য , এই শ্লোগানকে সামনে রেখে বিনামূল্যে অসহায় ,ছিহ্নমূল সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন নেত্রকোনার এক আলোকিত মানুষ আবদুল হামিদ। তিনি এলাকায় বৃক্ষপ্রেমিক,মানবসেবক  কবিরাজ হামিদভাই নামে ও পরিচিত । প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়, বন্যা-খরা, রোগব্যাধিতে সব সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনি । যার বিনিময়ে সহযোগিতা ছাড়া তিনি চাননি আর কিছুই।
মানসিক ভারসাম্যহীন পাগলদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান  ও পথশিশুদের জীবন রক্ষার জন্য দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করছেন শহরের বিভিন্ন বাজারে ও অলিতে গলিতে।নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ষাটোর্ধ বয়সী আবদুল হামিদ। নেত্রকোনা জেলা শহর ও শহরের বাইরে প্রতিদিন বাইসাইকেল করে প্রশাসনের পাশাপাশি আবদুল হামিদ সাধারণ মানুষকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতন থাকা, সরকারি নির্দেশ মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাই-সাইকেলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জেলা শহরের অলিগলি ও গ্রাম থেকে গ্রামে। তার সাইকেলে বাঁধা ক্যাসেট বাজিয়ে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করছেন সাধারণ মানুষকে। এ ছাড়া অসুস্থ্য কোন দরিদ্র মানুষ অর্থের অভাবে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেনা শুনলেই ছুটে যান আবদুল হামিদ। সাধ্যমত চেষ্টা করেন রোগ সারিয়ে তোলার জন্য। এমনকি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেন। আর তা তিনি করেন সম্পূর্ন বিনে পয়সায়।
আবদুল হামিদের বিনামূল্যে অসহায় ছিহ্নমূল মানুষের চিকিৎসাসেবা দেখে উৎসাহিত হয়ে এলাকার ৭ জন কলেজ -বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র তার কাজে যোগ দিয়েছেন। তিনি তাদেরকে বিভিন্ন রোগীর সেবা ও পরিচর্যা কিভাবে করতে হয় শিক্ষা দিচ্ছেন। এসব ছাত্ররা পাগলসহ পথ শিশুদের জীবনের উন্নয়নে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে। অনেক সময় নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এগিয়ে যাচ্ছে তারা।
ইতোমধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সচেতনতা বিষয়ে পরামর্শ ও বিনামূল্যে সেবা দিয়েছেন এলাকার অনেক মানুষকে ।নেত্রকোনা পৌরশহরে আধুনিক সদর হাসপাতাল রোডে আবদুল হামিদ গাছের ছাল, পাতার রস দিয়ে শরবত বানিয়ে মানুষকে খাওয়ান এবং হার্বাল ওষুধ বানিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। গত বছর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কাল বৈশাখী ঝড়ে জেলা শহরে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিলে বিশুদ্ধ পানীয় জলের বিরাট সংকট সৃষ্টি হয়। তখন আবদুল হামিদ ভ্যানে করে মানুষের বাসা বাড়িতে বিনে পয়সায় পানি সরবরাহ করেন।

এলাকার পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে বিভিন্ন সময়ে ওষুধি গাছের চারা বিতরণ করেন তিনি। বজ্রপাত প্রতিরোধের জন্য নিজ উদ্যোগে জেলার হাওরাঞ্চলে একই বছর ৫০০ তাল গাছের বীজ রোপন করেন আবদুল হামিদ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করার জন্য বিভিন্ন সংগঠন থেকে তিনি পুরস্কৃতও হয়েছেন অনেকবার।

বারসিক আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অহিদুর রহমান বলেন, আবদুল হামিদ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন। একজন বৃক্ষ প্রেমিক হিসেবে তাকে সবাই চিনে। তিনি একজন নিবেদিত প্রাণ সমাজ সেবক। সমাজ সেবা করতে গিয়ে তিনি কোন মূল্য গ্রহণ করেন না তাকে সকলের সহযোগিতা করা উচিত।

জেলা শহরের কাটলীর বাসিন্দা অসুস্থ অসহায় মতিউর রহমান বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে পায়ের ক্ষত রোগে ভুগছিলেন। নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ এমনকি ঢাকা পিজি হাসপাতালে ও চিকিৎসা করে কোন ফল পাননি। অবশেষে আবদুল হামিদ ভাইয়ের ঔষধি গাছের চিকিৎসায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন। হামিদ ভাই দরিদ্র মানুষ হলেও  তার মন-মানসিকতা অনেক উপরে। তিনি অসহায় দরিদ্র মানুষের উপকারে  কাজ করে যাচ্ছেন; যা আমাদের সমাজে অনেক বিত্তশালীরাও করেন না। তার কাজ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।

আবদুল হামিদ বলেন, মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। ইচ্ছে করলে মানুষ সমাজের জন্য অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু আমাদের অনেকের মধ্যে সে ইচ্ছেশক্তি নেই। অন্যের উপকার করতে পারলে আমার ভাল লাগে, তাই সেবা করি। এ জন্য মানুষের কাছ থেকে আমার কোন চাওয়া নেই। আমি চাই সৃষ্টি কর্তার সৃষ্টি সব কিছু ভাল থাকুক। তবে অনেক অসহায় পাগল ও পথশিশুদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন ।এ বিষয়ে যদি আমাকে সাহায্য করা হতো তাহলে আরও অধিক মানবতার সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারতাম।

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক মোঃ কাজী আব্দুর রহমান ও জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সেলিম মিয়া জানান, আবদুল হামিদ মানবতার সেবায় নিয়োজিত এক মডেল। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সেবা করাই উনার জীবনের উদ্দেশ্য। তাকে সহযোগিতা করলে আরও ভালো কিছু সমাজের অসহায় মানুষ পাবে।
Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর