একটি সরকারি ঘর পাওয়ার অপেক্ষায় বিধবা শুকুরজান

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকার ধামরাইয়ে সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন ও অসহায় দরিদ্রদের মাঝে আশ্রয়ণ ও দুর্যোগসহনীয় ঘর দেওয়া হয়েছে কয়েক ধাপে। এতে অনেক বিত্তশালীও ঘর পেয়েছে। কিন্তু অন্যের বাড়িতে থাকা এক বিধবার ভাগ্যে জোটেনি সরকারি একটি ঘর। ওই বিধবা থাকেন অন্যের জমিতে ছয়টিনের একটি জরাজীর্ণ ছাপড়া ঘরে। ওই ঘরেই তিনি রান্না করেন আবার খাওয়া দাওয়াও সারেন। বৃষ্টি নামলেই জরাজীর্ণ ঘরে বিধবার ঘুম হারাম হয়ে যায়। এমনই এক মানবেতর জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে আছে বিধবা শুকুরজান।

গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের হাতকোড়া গ্রামের বিধবা শুকুরজান। তার বাবা দরিদ্র দরবার বেপারী তাকে বিয়ে দিয়েছিলেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার সন্তোষপুর গ্রামের বাসু মিয়ার সাথে। বিয়ের পর শুকুরজান কিছুদিন শ্বশুড়বাড়িতে থাকলেও অভাবের তাড়নায় স্বামীর সাথে চলে আসেন সাভারে। তার স্বামী রিকশা চালানোর পাশাপাশি রাজমিস্ত্রির কাজও করতেন। তাদের দাম্পত্য জীবনে নুর হোসেন (২৮) নামে একটি ছেলে রয়েছে। তার স্বামী সাভারের রানা প্লাজায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার সময় মারা যান।

এরপর বিধবা শুকুরজানের প্রতি কেউ আর্থিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়াননি। ছেলেকে নিয়ে সাভার থেকে চলে আসেন শুকুরজানের জন্মস্থান হাতকোড়া গ্রামে। মা-বাবাও মারা গেছেন অনেক আগে। বাবার জমিজমাও ছিল না। ফলে ঠাঁই হয় তার প্রতিবেশী ফজল মিয়ার বাড়িতে। সেখানে ধার-দেনা করে ছয়টিনের একটি ছাপড়া ঘর তুলে আছেন শুকুরজান।

এরপর চলে তার বেঁচে থাকার জীবন সংগ্রাম। ইটভাটা থেকে শুরু করে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেই সংসার চালাতে হচ্ছে শুকুরজানের। ছেলেও বড় হয়ে অন্যত্র বিয়ে করে গ্রামের একটি বাড়িতে ভাড়া থেকে ইটভাটায় কাজ করে চার সদস্যের সংসার চালাচ্ছে। নিজের সংসারের ঘানি টানার কারণে ইচ্ছে থাকা সত্বেও মাকে ভাত-কাপড় দেওয়ার মত বাড়তি কোন আয় নেই শুকুরজানের ছেলে নুর হোসেনের। এভাবে চলে আসছে শুকুরজানের জীবন। দীর্ঘ ৫৬ বছরেও নিজের মাথাগোজার ঠাঁয় হয়নি শুকুরজানের। অন্যের বাড়িতে ছয়টিনের ছাপড়া ঘরই তার ঠিকানা। সরকার থেকে একটি ঘর কিংবা কোন গুচ্ছগ্রামে বা আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় পাওয়ার দাবি তার।

শুকুরজান বলেন, ‘আমারে যদি সরকার থেকে একটি ঘর দিতো বা কোন গুচ্ছগ্রামে থাকার ব্যবস্থা করে দিতো ত্যালে আমার খুব ওপুকার অইত। হুনছি সরকার থ্যাইকা ঘর দেয় কিন্তু আমারতো জমিও নাই বাড়িও নাই ত্যালে কি আমি একটা ঘর পামু?।’

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল কাদের মোল্লা বলেন, অসহায় শুকুরজানকে কোন গুচ্ছগ্রাম কিংবা আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর দিলে ছেলেকে নিয়ে থাকতে পারতো। সে ঘর পাওয়ার উপযোগী বিধবা এক নারী।

ধামরাই উপজেলার নির্বাহী অফিসার হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে বিধবা শুকুরজানকে একটি ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর