ঢাকা ০১:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফরিদপুরের মধুখালীতে রোপা আমন রোপণে ব্যস্ত কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৩১:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অগাস্ট ২০২১
  • ১৭৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় আমন ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আমন রোপণে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা আর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষকরা এ বছর আমন চাষে বেশি ঝুঁকছেন। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে কৃষকেরা রোপা আমনের চারা সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পাড় করতে দেখা গেছে। তবে গত বছরের তুলনায় দাম বেশী হওয়ায় কৃষক হতাশ হলেও চারা উৎপাদনকারীরা বেশ খুশি।

উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় গত মৌসুমের তুলনায় চলতি বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রোপা আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করলেও অতি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় পর্যাপ্ত চারা থাকা সত্ত্বেও কৃষক চারা রোপণ করতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। চলছে কৃষি শ্রমিকের সংকট, শ্রম মুজুরী অনেক বেশী দিয়ে কৃষি শ্রমিক নিয়োগ দিতে হচ্ছে। একজন কৃষি শ্রমিকের বেতন প্রতি দিন ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা। তারপর অপেক্ষা করতে হয় কৃষি শ্রমিক কোন নাগাত পাওয়া যাবে। জমি প্রস্তুত করে চাষীদের পড়তে হচ্ছে শ্রমিক সংকটে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সবচেয়ে বড় দুটি হাট মধুখালী পৌর সদর ও কামারখালী হাটে সোমবার চারা সংগ্রহ করতে ভীরপড়ে গেছে চাষীদের। প্রতি এক বোঝা চারার দাম ৬‘শ টাকা থেকে ৭‘শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ চারার দাম ২‘শ ৫০ টাকা থেকে ৩‘শ টাকা ছিল। গত বছরের তুলনায় চারার দাম অনেক বেশী। দুটি হাটে চারার আমদানীও ব্যাপক দেখা যায়। চারা রোপণ করতে কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শতশত কৃষক দুটি হাটে চারা সংগ্রহ করতে ভীড় করলেও চারার দাম বেশী হওয়ায় অনেক কৃষক বাড়ি ফিরে যেতে দেখা যায়। অনেকে আবার জমি উপযোগী থাকায় তারা বেশী দামেই চারা ক্রয় করছেন।

পৌরসভার গোন্দারদিয়া গ্রামের চাষী করিম শেখ জানান, এ বছর চারার দাম দ্বিগুণ হওয়ায় কৃষক একটু চিন্তা ভাবনা করছেন। আবার অনেকের পাট কাটা বাকি আছে বা জমিও তৈরী করতে পারেন নাই এ কারণে চারা কিনতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

একই গ্রামের কাদের মুন্সী বলেন, বাজারে ধানের দাম অধিক থাকায় এ বছর আমন ধান রোপণ করছেন অধিকাংশ চাষি। আরো অনেক জমিতে রোপণ করা বাকি আছে। তিনি আরো জানান, জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানসহ অন্য ধানও রোপণ করা হচ্ছে।

উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ব্যাসদী গ্রামের ধান চাষী জুয়েল শেখ জানান, লীজ ও বরগা নিয়ে ১ একর জমিতে ধানীগোল্ড ও চিনিগুড়ি আধুনিক জাতের ধানের চারা রোপণ চলছে। ধানের বীজতলা নিজে করেছি যে কারণে ধানের চারা ক্রয় করতে হবে না। হাইব্রিড ধানের চারা হওয়ায় আশা করি ফলন ভাল হবে। কৃষি শ্রমিকের সংকট থাকায় নিজেই রোপণ করছি ।

উপজেলার বাগাট গ্রামের কৃষক বাবলু শেখ জানান, অন্যান্য বছর উত্তরবঙ্গের কৃষি শ্রমিক এ এলাকায় আসতেন যে কারণে কৃষি শ্রমিক সহজে পাওয়া যেত । এ বছর করোনায় লকডাউনের কারণে কৃষি শ্রমিক আসতে না পারায় শ্রমিক সংকট ও চড়া শ্রম মুজুরী দিতে হচ্ছে।

মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আলভী রহমান জানান, রোপা আমন সাধারণত ভাদ্র মাস পর্যন্ত রোপণ করা হয়। ৯ আগষ্ট সোমবার পর্যন্ত ৬ হাজার ২‘শ হেক্টর জমিতে ইতোমধ্যে রোপা আমনের চারা রোপণ করেছেন চাষী। পুরো ভাদ্র মাস আর্থৎ আরও প্রায় একমাস কৃষক রোপা আমান ধানের চারা রোপণ করবেন। তাতে এ বছর লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। নতুন জাতের হাইব্রিড ধানের চারা হওয়ায় দাম একটু বেশী এবং ফলন বেশী হবে।

তিনি বলেন, চলতি বছর উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নে রোপা আমনের আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬‘শ ৪০ হেক্টর। গত মৌসুমে উপজেলায় মোট রোপা চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৪‘শ হেক্টর। চারার দাম বেশী হলেও উচ্চ ফলন হওয়ায় চাষীর পুষিয়ে যাবে আশা করি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ফরিদপুরের মধুখালীতে রোপা আমন রোপণে ব্যস্ত কৃষক

আপডেট টাইম : ০২:৩১:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ অগাস্ট ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলায় আমন ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আমন রোপণে আগ্রহী হয়ে উঠছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকা আর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষকরা এ বছর আমন চাষে বেশি ঝুঁকছেন। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে কৃষকেরা রোপা আমনের চারা সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পাড় করতে দেখা গেছে। তবে গত বছরের তুলনায় দাম বেশী হওয়ায় কৃষক হতাশ হলেও চারা উৎপাদনকারীরা বেশ খুশি।

উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় গত মৌসুমের তুলনায় চলতি বছর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রোপা আমন রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করলেও অতি বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় পর্যাপ্ত চারা থাকা সত্ত্বেও কৃষক চারা রোপণ করতে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। চলছে কৃষি শ্রমিকের সংকট, শ্রম মুজুরী অনেক বেশী দিয়ে কৃষি শ্রমিক নিয়োগ দিতে হচ্ছে। একজন কৃষি শ্রমিকের বেতন প্রতি দিন ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা। তারপর অপেক্ষা করতে হয় কৃষি শ্রমিক কোন নাগাত পাওয়া যাবে। জমি প্রস্তুত করে চাষীদের পড়তে হচ্ছে শ্রমিক সংকটে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার সবচেয়ে বড় দুটি হাট মধুখালী পৌর সদর ও কামারখালী হাটে সোমবার চারা সংগ্রহ করতে ভীরপড়ে গেছে চাষীদের। প্রতি এক বোঝা চারার দাম ৬‘শ টাকা থেকে ৭‘শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ চারার দাম ২‘শ ৫০ টাকা থেকে ৩‘শ টাকা ছিল। গত বছরের তুলনায় চারার দাম অনেক বেশী। দুটি হাটে চারার আমদানীও ব্যাপক দেখা যায়। চারা রোপণ করতে কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শতশত কৃষক দুটি হাটে চারা সংগ্রহ করতে ভীড় করলেও চারার দাম বেশী হওয়ায় অনেক কৃষক বাড়ি ফিরে যেতে দেখা যায়। অনেকে আবার জমি উপযোগী থাকায় তারা বেশী দামেই চারা ক্রয় করছেন।

পৌরসভার গোন্দারদিয়া গ্রামের চাষী করিম শেখ জানান, এ বছর চারার দাম দ্বিগুণ হওয়ায় কৃষক একটু চিন্তা ভাবনা করছেন। আবার অনেকের পাট কাটা বাকি আছে বা জমিও তৈরী করতে পারেন নাই এ কারণে চারা কিনতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

একই গ্রামের কাদের মুন্সী বলেন, বাজারে ধানের দাম অধিক থাকায় এ বছর আমন ধান রোপণ করছেন অধিকাংশ চাষি। আরো অনেক জমিতে রোপণ করা বাকি আছে। তিনি আরো জানান, জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানসহ অন্য ধানও রোপণ করা হচ্ছে।

উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ব্যাসদী গ্রামের ধান চাষী জুয়েল শেখ জানান, লীজ ও বরগা নিয়ে ১ একর জমিতে ধানীগোল্ড ও চিনিগুড়ি আধুনিক জাতের ধানের চারা রোপণ চলছে। ধানের বীজতলা নিজে করেছি যে কারণে ধানের চারা ক্রয় করতে হবে না। হাইব্রিড ধানের চারা হওয়ায় আশা করি ফলন ভাল হবে। কৃষি শ্রমিকের সংকট থাকায় নিজেই রোপণ করছি ।

উপজেলার বাগাট গ্রামের কৃষক বাবলু শেখ জানান, অন্যান্য বছর উত্তরবঙ্গের কৃষি শ্রমিক এ এলাকায় আসতেন যে কারণে কৃষি শ্রমিক সহজে পাওয়া যেত । এ বছর করোনায় লকডাউনের কারণে কৃষি শ্রমিক আসতে না পারায় শ্রমিক সংকট ও চড়া শ্রম মুজুরী দিতে হচ্ছে।

মধুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আলভী রহমান জানান, রোপা আমন সাধারণত ভাদ্র মাস পর্যন্ত রোপণ করা হয়। ৯ আগষ্ট সোমবার পর্যন্ত ৬ হাজার ২‘শ হেক্টর জমিতে ইতোমধ্যে রোপা আমনের চারা রোপণ করেছেন চাষী। পুরো ভাদ্র মাস আর্থৎ আরও প্রায় একমাস কৃষক রোপা আমান ধানের চারা রোপণ করবেন। তাতে এ বছর লক্ষ্য মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। নতুন জাতের হাইব্রিড ধানের চারা হওয়ায় দাম একটু বেশী এবং ফলন বেশী হবে।

তিনি বলেন, চলতি বছর উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নে রোপা আমনের আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬‘শ ৪০ হেক্টর। গত মৌসুমে উপজেলায় মোট রোপা চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৪‘শ হেক্টর। চারার দাম বেশী হলেও উচ্চ ফলন হওয়ায় চাষীর পুষিয়ে যাবে আশা করি।