ফের মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে কৃষকের রোপা আউশ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাধিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতি কাটিয়ে বরগুনায় আউশের ফলন আশানুরুপ হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন কৃষক। ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পরবর্তিতে বর্ষণে জলাবদ্ধতার পরও ফের মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে কৃষকের রোপা আউশ। জলাবদ্ধতা খেতজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (খামার বাড়ি) উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুৃল ইসলাম জানান, জেলায় এ বছর ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে আউশ আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্ত গতবছর ফলন ভালো হওয়ায় এবং আশানুরুপ মূল্যে ধান বিক্রি হওয়ায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আবাদ করেছেন কৃষক। তিনি জানান, এ বছর জেলায় ৪৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে প্রায় ১২ হেক্টর বেশি।

কৃষকরা জানান, প্রতি বছর বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আউশ ধান রোপণ করেন। এ বছর কৃষকরা বিরি-৪৮ ও বিরি-২৭ দুই জাতের ধান রোপণ করেছেন। শুরুতে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ আঘাত হানলেও আউশের তেমন ক্ষতি হয়নি।

শ্রাবণ মাসের শুরুতে ফের টানা ভারী বর্ষণে আউশের খেত পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন কৃষক। কিন্ত পানি দ্রুত কমে যাওয়ায় শংকা কেটেছে। এখন খেত জুড়ে সবুজের সমারোহ।

কৃষকরা আরো জানান, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ধান কাটার উপযোগী হবে। ধান কাটা শুরু হয়ে চলে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

সদর উপজেলাসহ বরগুনা ছয়টি উপজেলায় আউশের আবাদ হয়। দোফসলি কৃষিবিভাগের সহায়তা ও পরামর্শে সময়মত জলাবদ্ধতা নিরসন হওয়ায় ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

এছাড়াও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে যথাসময়ে কৃষকরা সার কীটনাশক সরবরাহ করেছে কৃষি বিভাগ। বরগুনা সদরের বুড়িরচর, নলটোনা, এম বালিয়াতলী, ঢলুয়া, বদরখালি, আয়লা পাতাকাটাসহ বিভিন্ন এলাকার জমিতে আউশের চাষাবাদ হয়।

ফের মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে কৃষকের রোপা আউশ

ফের মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে কৃষকের রোপা আউশ

সদরের খাজুরতলা এলাকার কৃষক জাকির হোসন প্রতিবছর ছয় একর জমিতে আউশের আবাদ করেন। গতবার দাম বেশি পাওয়ায় এবার ১০ একর জমিতে আউশের আবাদ করেছেন।

জাকির বলেন,  ‘এবার বেশি জমিতে আউশ লাগাইছি, যেইরহম বইন্যা বাদল শুরু অইছিল, মনে হরছি ধান আর ওডবেনা ঘরে। তয় এহন দ্যাকতে আছি যে অবস্থা, ধান ভালোই পাওন যাইবে, লস অইবেনা। দাম ভালো থাকলে লাভও হবে বেশ।’

আমতলী উপজেলার হলদিয়া, আঠারগাছিয়া, আমতলী সদর , হলদিয়া, চাওড়া, আমতলী সদর, কুকুয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া ও তালতলীর পচাকোড়ালিয়া, শারিকখালী, কড়াইবাড়িয়া, ছোটবগী ও বড়বগী ইউপির অধিকাংশ এলাকায় আউশের চাষাবাদ হয়। গত বছর দাম বেশি থাকায় এসব এলাকায় আবাদ বেশি হয়েছে।

ওই এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন, জলাবদ্ধতা কাটিয়ে আউশ যেভাবে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে, দাম ভালো পেলে লাভ হবে, তবে লস হবার সম্ভাবনা খুবই কম।

চাওড়া ইউপির কাউনিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার মৃধা বলেন, ‘আউশ খেতে বীজ রোয়ার সময় ইয়াস বইন্নায় খ্যাত নষ্ট অইছিল। হেইয়ার পর আবার যহন শীষ আসবে তহন দেওইতে খ্যাত তলাইয়া রইছিল, তয় পানি নাইম্মা যাওনে এহন আবার মাতা খারা কইরা খ্যাতে শীষ ধরছে। মোগো লাভটা বেশি না অইলেও লস অইবেনা।’

পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউপির কৃষক রহমত আলী বলেন, ‘দেওই বইন্নার পরও এহন যে ফলন দ্যাকতে আছি, মোনে হয় মোরা ভালোই ধান উডাইতে পারমু বাড়তে।’

তালতলীর ছহিনা এলাকার এলাকার কৃষক আব্বাস মৃধা বলেন, ‘ বৃষ্টি কমার পর আবার মাতা খারা করছে মোগো রোয়া। খেতি অইলেও ধান পামু, লস অইবেনা, তয় লাভ কম অইবে।’

আমতলী ধান আড়ৎ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘বাজারে আউশ ধানের চাহিদা ব্যাপক। এবার দুর্যোগের কারণে ধান কিছুটা কম হলেও প্রতিমণ ধান কমপক্ষে ৯০০ থেকে এক হাজার দাম হবে। এভাবে দাম থাকলে কৃষক লাভবান হবেন।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরগুনা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবদুর রশীদ বলেন, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১২ হাজার হেক্টর বেশি জমিতে আউশ আবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে বাজারে ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা আউশ ধান আবাদ ঝুঁকেছেন। কিন্ত ইয়াস ও বর্ষণে আবাদে কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল, তবে আমরা কৃষককে সব ধরণের সহায়তা দিয়েছি। যে কারণে ক্ষতি কাটিয়ে লাভের মুখ দেখবেন কৃৃষক।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর