ঢাকা ০১:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৪ জানুয়ারী ২০২৫, ২১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আখাউড়ায় একই জমিতে ৩ ফসল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:২৭:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অগাস্ট ২০২১
  • ১৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে মাঠজুড়ে আউশ ধানের ক্ষেত সবুজে ভরে উঠেছে। চোখ জুড়ানো দিগন্ত বির্স্তৃত ফসলের মাঠে সবুজের সমারোহ হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়। যে দিকে চোখ যায় শুধু আউশের ক্ষেতে সবুজ আর সবুজ চোখে পড়ছে। মাঠে মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে আউশ ধানের গাছ। এরই মধ্যে আগাম আউশ ধান কাটা শুরু হয়েছে।

কৃষকরা প্রাণভরে ধান কেটে মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেই সঙ্গে কৃষানীরাও বসে নেই , তারাও মনের আনন্দে ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজে সাহায্য করছেন।

স্থানীয় কৃষকরা  জানান, গত মৌসুমে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়া এবং স্থানীয় বাজারে বিক্রিতে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় তাদের উৎসাহ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই তারা বোরো ধান কাটা শেষে আউশ ধান আবাদে ঝুঁকে পড়েন। সরকার আউশ ধান আবাদ করতে তাদের সার ও বীজ সহায়তা করেন। এখন পযর্ন্ত  জমির যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে স্থানীয় কৃষকরা বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসূমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বৃষ্টিপাতের অভাবে বীজতলা তৈরি করতে না পাড়ায়  প্রায় ১শ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ করা হয়। সরকার আউশ আবাদের জন্য বিনামূল্যে সার, বীজ প্রদান করে। বর্তমানে স্থানীয় কৃষকরা ধান কাটা ও সর্বশেষ জমির পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আউশ হলো একটি বর্ষালী ও লাভজনক ধান। এই চাষ আবাদে খরচ তুলনামূলক অনেক কম হয়। সে সঙ্গে ফলন ও ভালো হয়। তাছাড়া এ ধানের আবাদ তুলে আবার পুনরায় ওই জমিতে সহজে রোপা আমন ধানের চাষ করা যায়। এতে আমন আবাদের কোনো ক্ষতি হবে না। সময়মতো বৃষ্টিপাত হলে  স্থানীয় কৃষকরা আরো বেশি জমিতে আউশ ধান রোপণ করতে পারতো।

সরেজমিনে মোগড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বোরো ক্ষেতে সবুজে সমারোহ হয়ে আছে। যে দিকে চোখ যায় মাঠে শুধু আউশ ধান ক্ষেত চোখে পড়ে। এরই মধ্যে কোনো কোনো জমিতে ধানের শীষ বের হতে শুরু হয়েছে। কোথাও জমি ধান কাটা শুরু হয়েছে। সঠিক সময়ে চারা রোপণ, নিবিড় পরিচর্যা ও সার দেওয়া সবই করেছে নস্থানীয় কৃষকরা। সে সঙ্গে ফলন ভালো করতে নিয়মিত কৃষি কর্মকর্তারা তদারকিও করছেন। শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আউশ ধানের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে কৃষি অফিস বলছে তারা রোগবালাই ও পোকামাকড় থেকে ফসল রক্ষায় মাঠে মাঠে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কৃষকদেরকে সার্বিকভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছে।

মোগড়া এলাকার কৃষক মো. ফরিদ মিয়া বলেন, এ বছর ৩ বিঘা জমিতে আউশ ধান তিনি আবাদ করেছেন। বর্ষা মৌসুমে আউশ ধান চাষের সময় পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। সরকার আউশ আবাদের জন্য বিনামূল্যে সার, বীজ দেওয়ায় আমন বোরো চাষের থেকে খরচ অনেক কম হয়। তাই জমিতে আউশ ধান আবাদ করা হয়। বর্তমানে জমির অবস্থা খুবই ভালো। আশা করছি আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে ধান কাটা হবে। বিঘা প্রতি ১৭-১৮ মণ ধান পাওয়ার আশা করছি।

কৃষক শহীদ মিয়া  বলেন, এ বছরই তিনি প্রথম  ৫০ শতক জমিতে আউশ আবাদ করেছেন। বোরো ধান আবাদে বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় ও সরকার বিনামূল্যে সার বীজসহ অন্যান্য উপরণ দেওয়ায় আউশ ধান আবাদে তার আগ্রহ বেড়ে যায়। আগামী সপ্তাহে তার জমির ধান কাটা হবে। বিঘা প্রতি ১৮-২০ মণ ধান পাওয়া যাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বীজতলার সময় বৃষ্টি না হওয়ায় আউশ ধানের আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। তবে এ উপজেলায় আউশ ধানের আবাদ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এ উপজেলার ২০০ জন কৃষকের মাঝে আউশ আবাদের জন্য বীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়। পাশাপাশি অনেক কৃষককে প্রদর্শণী দেওয়া হয়েছে।  ফলন ভালো করতে কৃষকদের সব রকমের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যারা আউশ ধান আবাদ করতে পারেনি তারা চলতি মৌসুমে আমন ধান আবাদ করে তারা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আখাউড়ায় একই জমিতে ৩ ফসল

আপডেট টাইম : ১০:২৭:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ অগাস্ট ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে মাঠজুড়ে আউশ ধানের ক্ষেত সবুজে ভরে উঠেছে। চোখ জুড়ানো দিগন্ত বির্স্তৃত ফসলের মাঠে সবুজের সমারোহ হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়। যে দিকে চোখ যায় শুধু আউশের ক্ষেতে সবুজ আর সবুজ চোখে পড়ছে। মাঠে মাঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে আউশ ধানের গাছ। এরই মধ্যে আগাম আউশ ধান কাটা শুরু হয়েছে।

কৃষকরা প্রাণভরে ধান কেটে মাড়াই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেই সঙ্গে কৃষানীরাও বসে নেই , তারাও মনের আনন্দে ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার কাজে সাহায্য করছেন।

স্থানীয় কৃষকরা  জানান, গত মৌসুমে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন হওয়া এবং স্থানীয় বাজারে বিক্রিতে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় তাদের উৎসাহ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। তাই তারা বোরো ধান কাটা শেষে আউশ ধান আবাদে ঝুঁকে পড়েন। সরকার আউশ ধান আবাদ করতে তাদের সার ও বীজ সহায়তা করেন। এখন পযর্ন্ত  জমির যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে স্থানীয় কৃষকরা বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসূমে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১২০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বৃষ্টিপাতের অভাবে বীজতলা তৈরি করতে না পাড়ায়  প্রায় ১শ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ করা হয়। সরকার আউশ আবাদের জন্য বিনামূল্যে সার, বীজ প্রদান করে। বর্তমানে স্থানীয় কৃষকরা ধান কাটা ও সর্বশেষ জমির পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, আউশ হলো একটি বর্ষালী ও লাভজনক ধান। এই চাষ আবাদে খরচ তুলনামূলক অনেক কম হয়। সে সঙ্গে ফলন ও ভালো হয়। তাছাড়া এ ধানের আবাদ তুলে আবার পুনরায় ওই জমিতে সহজে রোপা আমন ধানের চাষ করা যায়। এতে আমন আবাদের কোনো ক্ষতি হবে না। সময়মতো বৃষ্টিপাত হলে  স্থানীয় কৃষকরা আরো বেশি জমিতে আউশ ধান রোপণ করতে পারতো।

সরেজমিনে মোগড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বোরো ক্ষেতে সবুজে সমারোহ হয়ে আছে। যে দিকে চোখ যায় মাঠে শুধু আউশ ধান ক্ষেত চোখে পড়ে। এরই মধ্যে কোনো কোনো জমিতে ধানের শীষ বের হতে শুরু হয়েছে। কোথাও জমি ধান কাটা শুরু হয়েছে। সঠিক সময়ে চারা রোপণ, নিবিড় পরিচর্যা ও সার দেওয়া সবই করেছে নস্থানীয় কৃষকরা। সে সঙ্গে ফলন ভালো করতে নিয়মিত কৃষি কর্মকর্তারা তদারকিও করছেন। শেষ পযর্ন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আউশ ধানের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে কৃষি অফিস বলছে তারা রোগবালাই ও পোকামাকড় থেকে ফসল রক্ষায় মাঠে মাঠে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কৃষকদেরকে সার্বিকভাবে পরামর্শ দিয়ে আসছে।

মোগড়া এলাকার কৃষক মো. ফরিদ মিয়া বলেন, এ বছর ৩ বিঘা জমিতে আউশ ধান তিনি আবাদ করেছেন। বর্ষা মৌসুমে আউশ ধান চাষের সময় পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। সরকার আউশ আবাদের জন্য বিনামূল্যে সার, বীজ দেওয়ায় আমন বোরো চাষের থেকে খরচ অনেক কম হয়। তাই জমিতে আউশ ধান আবাদ করা হয়। বর্তমানে জমির অবস্থা খুবই ভালো। আশা করছি আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে ধান কাটা হবে। বিঘা প্রতি ১৭-১৮ মণ ধান পাওয়ার আশা করছি।

কৃষক শহীদ মিয়া  বলেন, এ বছরই তিনি প্রথম  ৫০ শতক জমিতে আউশ আবাদ করেছেন। বোরো ধান আবাদে বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় ও সরকার বিনামূল্যে সার বীজসহ অন্যান্য উপরণ দেওয়ায় আউশ ধান আবাদে তার আগ্রহ বেড়ে যায়। আগামী সপ্তাহে তার জমির ধান কাটা হবে। বিঘা প্রতি ১৮-২০ মণ ধান পাওয়া যাবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বীজতলার সময় বৃষ্টি না হওয়ায় আউশ ধানের আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। তবে এ উপজেলায় আউশ ধানের আবাদ দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এ উপজেলার ২০০ জন কৃষকের মাঝে আউশ আবাদের জন্য বীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়। পাশাপাশি অনেক কৃষককে প্রদর্শণী দেওয়া হয়েছে।  ফলন ভালো করতে কৃষকদের সব রকমের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। যারা আউশ ধান আবাদ করতে পারেনি তারা চলতি মৌসুমে আমন ধান আবাদ করে তারা সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেবেন।