ঢাকা ১১:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলমাকান্দায় মাছ ধরার বাইর তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে ১১ পরিবার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০১:১৯:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১
  • ১৫৬ বার
বিজয় দাশঃ নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ভেলুয়াতলী গ্রামে ১১টি পরিবার সারাবছর বাইর (মাছ ধরার উপকরণ) তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আজ থেকে অনেক বছর আগে থেকেই তারা এই বাইর তৈরির কাজে নিয়োজিত। এ পেশায় নির্ভর করে কোনমতে চলছে তাদের সংসার।
বাইর তৈরি করা তাদের ঐতিবাহী পেশা । নারী ও পুরুষ উভয়ই সংসারের কাজ সেরে বসে পড়েন বাইর তৈরির কাজে। সারাদিন বসে বসে মাছ ধরার এই উপকরণ তৈরি করেন তারা। সরজমিনে গিয়ে এমনও দেখা গেছে, একে অন্যের বাড়িতে গিয়ে গল্পগুজব করছে কিন্তু তাদের হাত থেমে নেই! গল্পের তালে তালে বাইর বুনে যাচ্ছেন অনেকে। বাইর তৈরির জন্য একটি গোলাকার চাক তৈরি করতে হয়, যা নারীরা তৈরি করতে পারেনা। এজন্য পুরুষের সহায়তা নিতে হয়। কৃষি কাজের অবসর সময়ে পুরুষরাও বাইর তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন।
বাজার থেকে বাঁশ কিনে আনা ও বাজারে বিক্রি করার কাজটিও পুরুষেরা করে থাকেন। বর্ষা মৌসুমে যদিওবা বাইরের চাহিদা বেশি থাকে কিন্তু তাদের এই বাইর তৈরির কাজ চলে সারা বছর। ১২ মাসের মধ্যে ৪ মাস বাইর বিক্রি করা হয় না। ৪ মাস বাইর বিক্রি না হলেও তারা বাইর তৈরি করে ঘরে সংরক্ষণ করে রাখেন। যখন বৃষ্টি বা বর্ষা শুরু হয় তখন সংরক্ষণকৃত বাইরগুলো একটু বেশি দামে বিক্রি করার দুম পরে যায়। বর্ষার শুরুতে বাইরের চাহিদা বেশি থাকে এবং দামও ভালো পাওয়া যায় বলে জানান বাইর বুনন শিল্পী আব্দুল হেলিম।
 বাইর তৈরি করণ প্রক্রিয়ায় দুটি প্রধান উপকরণ প্রয়োজন হয়। বাঁশ ও প্লাস্টিকের সুতলী। ১১ পরিবারের মধ্যে সবাই বাজার থেকে বাঁশ কিনে বাইর তৈরি করেন। প্রতিটি বাঁশের দাম পড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। একেকটি বাঁশ দিয়ে প্রায় ২২ থেকে ২৫টি বাইর তৈরি করা যায়। ৪ জন মানুষ যদি সমন্বয় করে কাজ করেন তাহলে ৫ দিনে ২৫টি বাইর তৈরি করা সম্ভব বলে জানান বাইর বুনক আব্দুল মোতালিব। প্রতিটি বাইরের আকার আকৃতি অনুযায়ী দাম পড়ে ৪০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।
তারা বাজার থেকে বাঁশ কিনে এনে সাইজ মত কেটে পুকুরের পানিতে প্রায় ৭ দিন ভিজিয়ে রাখে ।তারপর সেই বাঁশ দিয়ে ছোট ছোট কাঠি তৈরি করে রৌদ্রে শুকিয়ে সেই কাঠিগুলো আগুনে তাপ দিয়ে যাতে কোন ধরণের কোন আঁশ না থাকে। তারপর তৈরি করা হয় মাছ ধরার উপকরণ এই বাইরগুলো।
, নানা জাতের বাইর তৈরি করেন তারা। যেমন- পেসা, কাট্টুয়া দরিবাইর, উইন্না, টাঙ্গাইলা, ধুলুক, সামুক বাইর প্রভৃতি। এসব বাইরের নাম যেমন ভিন্ন ভিন্ন তেমনি এগুলোর ব্যবহারও ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। যেমন: কোনটা কম পানিতে, কোনটা বেশি পানিতে আবার কোনটা ছোট মাছের জন্য, কোনটা বড় মাছের জন্য, কোনটা কম স্রোতের জন্য, কোনটা বেশি স্রোতের জন্য। এভাবে স্থান বিশেষে বাইরের আকার আকৃতিও ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে। সব ধরণের বাইর আবার সবাই তৈরি করতে পারে না।
আকার আকৃতি ও ভিন্নতার উপর নির্ভর করে বাইরের দর দামও।
কোভিড-১৯ এর মহামারীর জন্য সরকার ঘোষিত লকডাউনে বাইর তৈরির কাজ চলমান থাকলেও বিক্রি কমে গেছে। ঠিকমত বাজারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে যাদের প্রয়োজন তারা বাড়িতে এসে বাইর কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই চলছে কোভিড-১৯ মধ্যেও তাদের জীবন জীবিকার জন্যে এই বুনন কাজ।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কলমাকান্দায় মাছ ধরার বাইর তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছে ১১ পরিবার

আপডেট টাইম : ০১:১৯:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১
বিজয় দাশঃ নেত্রকোনার সীমান্তবর্তী কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ভেলুয়াতলী গ্রামে ১১টি পরিবার সারাবছর বাইর (মাছ ধরার উপকরণ) তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আজ থেকে অনেক বছর আগে থেকেই তারা এই বাইর তৈরির কাজে নিয়োজিত। এ পেশায় নির্ভর করে কোনমতে চলছে তাদের সংসার।
বাইর তৈরি করা তাদের ঐতিবাহী পেশা । নারী ও পুরুষ উভয়ই সংসারের কাজ সেরে বসে পড়েন বাইর তৈরির কাজে। সারাদিন বসে বসে মাছ ধরার এই উপকরণ তৈরি করেন তারা। সরজমিনে গিয়ে এমনও দেখা গেছে, একে অন্যের বাড়িতে গিয়ে গল্পগুজব করছে কিন্তু তাদের হাত থেমে নেই! গল্পের তালে তালে বাইর বুনে যাচ্ছেন অনেকে। বাইর তৈরির জন্য একটি গোলাকার চাক তৈরি করতে হয়, যা নারীরা তৈরি করতে পারেনা। এজন্য পুরুষের সহায়তা নিতে হয়। কৃষি কাজের অবসর সময়ে পুরুষরাও বাইর তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন।
বাজার থেকে বাঁশ কিনে আনা ও বাজারে বিক্রি করার কাজটিও পুরুষেরা করে থাকেন। বর্ষা মৌসুমে যদিওবা বাইরের চাহিদা বেশি থাকে কিন্তু তাদের এই বাইর তৈরির কাজ চলে সারা বছর। ১২ মাসের মধ্যে ৪ মাস বাইর বিক্রি করা হয় না। ৪ মাস বাইর বিক্রি না হলেও তারা বাইর তৈরি করে ঘরে সংরক্ষণ করে রাখেন। যখন বৃষ্টি বা বর্ষা শুরু হয় তখন সংরক্ষণকৃত বাইরগুলো একটু বেশি দামে বিক্রি করার দুম পরে যায়। বর্ষার শুরুতে বাইরের চাহিদা বেশি থাকে এবং দামও ভালো পাওয়া যায় বলে জানান বাইর বুনন শিল্পী আব্দুল হেলিম।
 বাইর তৈরি করণ প্রক্রিয়ায় দুটি প্রধান উপকরণ প্রয়োজন হয়। বাঁশ ও প্লাস্টিকের সুতলী। ১১ পরিবারের মধ্যে সবাই বাজার থেকে বাঁশ কিনে বাইর তৈরি করেন। প্রতিটি বাঁশের দাম পড়ে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। একেকটি বাঁশ দিয়ে প্রায় ২২ থেকে ২৫টি বাইর তৈরি করা যায়। ৪ জন মানুষ যদি সমন্বয় করে কাজ করেন তাহলে ৫ দিনে ২৫টি বাইর তৈরি করা সম্ভব বলে জানান বাইর বুনক আব্দুল মোতালিব। প্রতিটি বাইরের আকার আকৃতি অনুযায়ী দাম পড়ে ৪০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।
তারা বাজার থেকে বাঁশ কিনে এনে সাইজ মত কেটে পুকুরের পানিতে প্রায় ৭ দিন ভিজিয়ে রাখে ।তারপর সেই বাঁশ দিয়ে ছোট ছোট কাঠি তৈরি করে রৌদ্রে শুকিয়ে সেই কাঠিগুলো আগুনে তাপ দিয়ে যাতে কোন ধরণের কোন আঁশ না থাকে। তারপর তৈরি করা হয় মাছ ধরার উপকরণ এই বাইরগুলো।
, নানা জাতের বাইর তৈরি করেন তারা। যেমন- পেসা, কাট্টুয়া দরিবাইর, উইন্না, টাঙ্গাইলা, ধুলুক, সামুক বাইর প্রভৃতি। এসব বাইরের নাম যেমন ভিন্ন ভিন্ন তেমনি এগুলোর ব্যবহারও ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। যেমন: কোনটা কম পানিতে, কোনটা বেশি পানিতে আবার কোনটা ছোট মাছের জন্য, কোনটা বড় মাছের জন্য, কোনটা কম স্রোতের জন্য, কোনটা বেশি স্রোতের জন্য। এভাবে স্থান বিশেষে বাইরের আকার আকৃতিও ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তৈরি করা হয়ে থাকে। সব ধরণের বাইর আবার সবাই তৈরি করতে পারে না।
আকার আকৃতি ও ভিন্নতার উপর নির্ভর করে বাইরের দর দামও।
কোভিড-১৯ এর মহামারীর জন্য সরকার ঘোষিত লকডাউনে বাইর তৈরির কাজ চলমান থাকলেও বিক্রি কমে গেছে। ঠিকমত বাজারে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে যাদের প্রয়োজন তারা বাড়িতে এসে বাইর কিনে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই চলছে কোভিড-১৯ মধ্যেও তাদের জীবন জীবিকার জন্যে এই বুনন কাজ।