ঢাকা ১০:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্যামপুর মাদ্রাসা: মাতৃকোলে ফেরার হামাগুড়ি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৪৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১
  • ১৯২ বার

রফিকুল ইসলামঃ এ যেন দীর্ঘ এক দশকেরও অধিক সময় নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেখা দিয়েছে নিজভূমে ফেরার আশার আলো। বুকের ধন হারানোমানিক মাতৃকোলে ফেরার হামাগুড়ি ।

অনেক নাটকীয়তার পর শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার স্থায়ী চত্বরের ভিটায় মাননীয় এমিপি’র তাৎক্ষণিক বরাদ্দকৃত এক লাখ টাকার মাটি ফেলা হয়েছে, সমতল ভূমি থেকে টিলার মতো উঁচু করে — হাওরের বসতভিটার যা বৈশিষ্ট্য। ভিটামাটি বর্ষার ভাঙন থেকে রক্ষা করতে তাঁরই বরাদ্দের ৫০ হাজার ইট আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা বসানোর কাজও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।Open photo

হাওরের প্রাণকেন্দ্র কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নে অবস্থিত শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসাটি গভীর ষড়যন্ত্রে এতদিন ছিল নিজভূমে পরবাসী। স্থায়ী চত্ত্বরে ফেরার আশার আলো দেখতে পেয়ে এলাকার মানুষ বেজায় খুশি। সত্য-ন্যায়-ন্যায্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরও ভাষা নাকি হারিয়ে ফেলেছেন তারা।

শ্যামপুর গ্রাম ও এলাকাবাসী জানায়, মাদ্রাসাটি তাদের কাছে এক দুঃস্বপ্নেরই উপাখ্যান। যেমনটি তারা বললেন — এক দেশে ছিল এক মাদ্রাসা। মাদ্রাসাটির নাম ‘শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদরাসা’। ছিল স্থায়ী নিজস্ব চত্বর, পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ও সরকারি স্বীকৃতি, জনবল কাঠামো ও পাঠদান উপযোগী টিনের অবকাঠামো এবং ছিল পরিচালনা পরিষদও। কিন্তু এমপিওভুক্তির পর পরই নেমে আসে এক অদ্ভুত আঁধার।Open photo

তারা জানান, রাতারাতি মাতৃকোল থেকে দৈবক্রমে উদাও হয়ে যায় মাদ্রাসাটি, যা পরে খুঁজ মিলে ধলাই-বগাদিয়া নামক ব্যক্তি মালিকানাধীন এক বাজারে। সেখানে দীর্ঘ ৯ বছর অবস্থানের পর জাগান দেয় ধলাইয়ের গভীর হাওরে। দেখা যায়, তাতে মাটি ফেলে ভিটা বানিয়ে ছাপড়া (ছোটঘর) উঠাতে। ক’দিন না যেতেই ছাপড়া ও বেঞ্চসহ প্রতিষ্ঠানটির আসবাবপত্র ভাসতে দেখা যায় হাওরজলে।

গ্রাম ও এলাকাবাসী আরো জানায়, এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ হলে মাদ্রাসাটির আসবাবপত্র জল থেকে ডাঙায় গিয়ে ওঠে, নতুন বগাদিয়া গ্রামের এক ব্যক্তির বসতভিটায়। তাতে দু’টি ছাপড়া উঠানো হয়েছে। হালে তা গোয়ালঘর পরিণত হলেও পরিদর্শনে নাকি তেমনটি দেখা যাবে না। এমনি পরিবেশ ও পাঠদানব্যবস্থায় আদালতের রায় ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি থাকার বৈধতা এতকাল ধরে প্রচার করে আসছেন প্রতিষ্ঠানপ্রধান, জানালেন এলাকাবাসী।Open photo

প্রসঙ্গত, মানবাধিকারের বিষয়টি অনিবার্যভাবেই সর্বজনীন, যার দ্বারা উপকৃত ও সংরক্ষিত হতে পারে মানুষ। একটি সুন্দরতম শান্তিময় পরিবার, সমাজ ও কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে প্রয়োজন শিক্ষিত অধিকার জনগণ।

সেই প্রয়োজনীয়তা থেকে এবং ন্যায্যতার প্রশ্নে এলাকাবাসীর পক্ষে মাদ্রাসাটির স্থায়ী চত্বর ফিরে পেতে একদফা দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে শ্যামপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত ইউনিয়নবাসীর উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী জনসভায় উপজেলার শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব সেদিন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন বলেও জানান তারা।Open photo

গত বছর জুলাই মাসে শ্যামপুরবাসী আবার আকুল আবেদনের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠাইন-অষ্টগ্রাম) আসনের তিনবারের নির্বাচিত এমপি জননন্দিত নেতা প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক আবেদনকারীদের আশ্বস্ত করেন বলেও উল্লেখ করেন এলাকাবাসী।

তৎপ্রক্ষিতে ন্যায্যতার বিচারে ‘জায়গারটা জায়গাই আসবে’ ন্যায়পরায়ণতা আর ঋজুতা অবলম্বনে গত ১১ এপ্রিল এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক মিঠামইন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রভাংশু সোম মহান সহ স্থানীয় শিক্ষা অধিদপ্তর, পুলিশ প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে মাদ্রাসাটি স্থায়ী চত্বরে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। যার মৌজা- মুশুরিয়া, খতিয়ান- ৬০, সাবেক দাগ- ৩৯৯ অর্থাৎ  আরএস দাগ নং- ৮৭২ ও ৮৭৫।

মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট প্রথমে প্রতিষ্ঠাকালীন দলিল রেজিস্ট্রি ও খারিজকৃত মাদ্রাসার স্থান বাদ দিয়ে নতুন করে ৪০ শতকের উদ্ভট অন্য এক জায়গায় স্থায়ীভাবে স্থানান্তর এবং ‘শ্যামপুর’ নামটি মুছে ‘ধলাই’ নামকরণের তৎপরতাও চালানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বোর্ড সূত্রে জানা যায়।

কিশোরগঞ্জ হাওর অঞ্চল মিঠামইন উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মো. জজ মিয়ার (বর্তমানে প্রয়াত) দান করা এক একর জমিতে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসাটি। তা ২০১০ সালে এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের আয়-দায় নিয়ে সুপারিন্টেন্ডেন্ট হাদিসে মোহাদ্দেস হযরত মাওলানা মো. আমিনুল হকের সঙ্গে সভাপতি মো. জজ মিয়ার বিরোধের সৃষ্টি হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বিরোধের সমাধান না করে প্রতিষ্ঠানপ্রধান ২০১১ সালে জানুয়ারি মাসে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ফলে মাদ্রাসাটি অস্তিত্বের সংকটে পড়ায় সমাজ ও রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি করে আসলেও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থাকতে সক্ষম হচ্ছেন।

সচেতন নাগরিক সমাজও বিষয়টি নিয়ে কম উদ্বিগ্ন নয়। বিনিয়োগ বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. এনায়েতুর রহমান তাঁর ফেসবুক এক প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, ‘ধলাই, বগাদিয়া ও শ্যামপুর — এই তিনটি গ্রাম আমার জন্মের পর থেকেই জেনে আসছি একটি পরিবারের মতই। এই জনপদের মানুষের মধ্যে সর্বদাই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য লক্ষ্য করেছি। আজ কোন্ রাজনীতির দাপটে একটি এমপিওভুক্ত দাখিল মাদ্রাসার এই করুণ দশা? এই তিন গ্রামে সুবোধ মানুষের কি বড়ই অভাব দেখা দিয়েছে?’

প্রকৌশলী এনায়েতুর রহমান আরো লেখেন,  ‘… মাদ্রাসার সুপার এই প্রতিষ্ঠানের বেতনভুক্ত কর্মচারি ও শিক্ষক মাত্র। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ব্যক্তি মালিকানায় হয় না। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষা অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি ব্যতিত সুপার মাদ্রাসা স্থানান্তর করেন কী করে?’

সচেতন নাগরিক সমাজ বলছেন, ‘মাদ্রাসাটি যথাস্থানে (শ্যামপুর গ্রামে) চলে গেলে নাকি শিক্ষক-স্টাফদের চাকরিও সেসাথে চলে যাবে’ — এমনি সস্তা আবেগ কাঁড়তে লিপ্ত একটি শক্তিশালী চক্র। যে কারণে মাদ্রাসার অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্টাফদের সিংহভাগই বড় হুজুরের বলিরপাঁঠা ও জিম্মি থাকার বিষয়টি আপাতত মাটিচাপা।

শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা গোপদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আজিজুল হক বলেন, এতদিন পরের ধন নিয়ে পোদ্দারি চলছিল। এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সুযোগ্য উত্তরসূরী আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা মাননীয় এমপি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক সাহেবের বিবেকী ও আন্তরিক হস্তক্ষেপে মায়ের ধন বুকে ফেরত পেতে যাচ্ছি।

চেয়ারম্যান আজিজুল হক জানান, গত দু’বছর আগে উপজেলা পরিষদ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া ছিল মাদ্রাসার প্রতিরক্ষা দেয়ালের জন্য। কিন্তু
স্থায়ী চত্বরে মাদ্রাসার অবস্থান না থাকায় তা করা সম্ভব হলো না, ফেরত চলে যায়।

তিনি আরো জানান, মাদ্রাসার অবকাঠামো বিল্ডিংয়ের জন্য জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত ৯৪ লাখ টাকার কাজও এতদিন একই কারণে ঝুলে ছিল। এখন এমপি সাহেবের হস্তক্ষেপে সয়েলটেস্টের পর টেন্ডারও হয়ে গেছে বলেও জানান।

চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, এমপি সাহেব মাদ্রাসার জায়গা পুনরুদ্ধার করে তাঁর দেয়া বরাদ্দের এক লাখ টাকায় মাদ্রাসার স্থায়ী চত্বরে মাটি ভরাট করা হয়েছে এবং ৫০ হাজার ইট দেয়ায় প্রতিরক্ষার ব্যবস্থাও করা ফেলা হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও উঁনার ছেলে মাননীয় এমপি তৌফিক সাহেবের প্রতি এলাকাবাসী চিরঋণী থাকার কথা আবারও কৃতজ্ঞচিত্তে উল্লেখ করেন তিনি।

রফিকুল ইসলাম: সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

শ্যামপুর মাদ্রাসা: মাতৃকোলে ফেরার হামাগুড়ি

আপডেট টাইম : ০৬:৪৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ জুলাই ২০২১

রফিকুল ইসলামঃ এ যেন দীর্ঘ এক দশকেরও অধিক সময় নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেখা দিয়েছে নিজভূমে ফেরার আশার আলো। বুকের ধন হারানোমানিক মাতৃকোলে ফেরার হামাগুড়ি ।

অনেক নাটকীয়তার পর শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার স্থায়ী চত্বরের ভিটায় মাননীয় এমিপি’র তাৎক্ষণিক বরাদ্দকৃত এক লাখ টাকার মাটি ফেলা হয়েছে, সমতল ভূমি থেকে টিলার মতো উঁচু করে — হাওরের বসতভিটার যা বৈশিষ্ট্য। ভিটামাটি বর্ষার ভাঙন থেকে রক্ষা করতে তাঁরই বরাদ্দের ৫০ হাজার ইট আসার সঙ্গে সঙ্গেই তা বসানোর কাজও ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলে জানান এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান।Open photo

হাওরের প্রাণকেন্দ্র কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নে অবস্থিত শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসাটি গভীর ষড়যন্ত্রে এতদিন ছিল নিজভূমে পরবাসী। স্থায়ী চত্ত্বরে ফেরার আশার আলো দেখতে পেয়ে এলাকার মানুষ বেজায় খুশি। সত্য-ন্যায়-ন্যায্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশেরও ভাষা নাকি হারিয়ে ফেলেছেন তারা।

শ্যামপুর গ্রাম ও এলাকাবাসী জানায়, মাদ্রাসাটি তাদের কাছে এক দুঃস্বপ্নেরই উপাখ্যান। যেমনটি তারা বললেন — এক দেশে ছিল এক মাদ্রাসা। মাদ্রাসাটির নাম ‘শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদরাসা’। ছিল স্থায়ী নিজস্ব চত্বর, পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী ও সরকারি স্বীকৃতি, জনবল কাঠামো ও পাঠদান উপযোগী টিনের অবকাঠামো এবং ছিল পরিচালনা পরিষদও। কিন্তু এমপিওভুক্তির পর পরই নেমে আসে এক অদ্ভুত আঁধার।Open photo

তারা জানান, রাতারাতি মাতৃকোল থেকে দৈবক্রমে উদাও হয়ে যায় মাদ্রাসাটি, যা পরে খুঁজ মিলে ধলাই-বগাদিয়া নামক ব্যক্তি মালিকানাধীন এক বাজারে। সেখানে দীর্ঘ ৯ বছর অবস্থানের পর জাগান দেয় ধলাইয়ের গভীর হাওরে। দেখা যায়, তাতে মাটি ফেলে ভিটা বানিয়ে ছাপড়া (ছোটঘর) উঠাতে। ক’দিন না যেতেই ছাপড়া ও বেঞ্চসহ প্রতিষ্ঠানটির আসবাবপত্র ভাসতে দেখা যায় হাওরজলে।

গ্রাম ও এলাকাবাসী আরো জানায়, এ নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে সংবাদ হলে মাদ্রাসাটির আসবাবপত্র জল থেকে ডাঙায় গিয়ে ওঠে, নতুন বগাদিয়া গ্রামের এক ব্যক্তির বসতভিটায়। তাতে দু’টি ছাপড়া উঠানো হয়েছে। হালে তা গোয়ালঘর পরিণত হলেও পরিদর্শনে নাকি তেমনটি দেখা যাবে না। এমনি পরিবেশ ও পাঠদানব্যবস্থায় আদালতের রায় ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি থাকার বৈধতা এতকাল ধরে প্রচার করে আসছেন প্রতিষ্ঠানপ্রধান, জানালেন এলাকাবাসী।Open photo

প্রসঙ্গত, মানবাধিকারের বিষয়টি অনিবার্যভাবেই সর্বজনীন, যার দ্বারা উপকৃত ও সংরক্ষিত হতে পারে মানুষ। একটি সুন্দরতম শান্তিময় পরিবার, সমাজ ও কল্যাণ রাষ্ট্র গড়তে প্রয়োজন শিক্ষিত অধিকার জনগণ।

সেই প্রয়োজনীয়তা থেকে এবং ন্যায্যতার প্রশ্নে এলাকাবাসীর পক্ষে মাদ্রাসাটির স্থায়ী চত্বর ফিরে পেতে একদফা দাবি ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে শ্যামপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত ইউনিয়নবাসীর উপস্থিতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনী জনসভায় উপজেলার শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব সেদিন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন বলেও জানান তারা।Open photo

গত বছর জুলাই মাসে শ্যামপুরবাসী আবার আকুল আবেদনের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের বড় ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠাইন-অষ্টগ্রাম) আসনের তিনবারের নির্বাচিত এমপি জননন্দিত নেতা প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক আবেদনকারীদের আশ্বস্ত করেন বলেও উল্লেখ করেন এলাকাবাসী।

তৎপ্রক্ষিতে ন্যায্যতার বিচারে ‘জায়গারটা জায়গাই আসবে’ ন্যায়পরায়ণতা আর ঋজুতা অবলম্বনে গত ১১ এপ্রিল এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক মিঠামইন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রভাংশু সোম মহান সহ স্থানীয় শিক্ষা অধিদপ্তর, পুলিশ প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন শেষে মাদ্রাসাটি স্থায়ী চত্বরে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। যার মৌজা- মুশুরিয়া, খতিয়ান- ৬০, সাবেক দাগ- ৩৯৯ অর্থাৎ  আরএস দাগ নং- ৮৭২ ও ৮৭৫।

মাদ্রাসার সুপারিন্টেন্ডেন্ট প্রথমে প্রতিষ্ঠাকালীন দলিল রেজিস্ট্রি ও খারিজকৃত মাদ্রাসার স্থান বাদ দিয়ে নতুন করে ৪০ শতকের উদ্ভট অন্য এক জায়গায় স্থায়ীভাবে স্থানান্তর এবং ‘শ্যামপুর’ নামটি মুছে ‘ধলাই’ নামকরণের তৎপরতাও চালানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট বোর্ড সূত্রে জানা যায়।

কিশোরগঞ্জ হাওর অঞ্চল মিঠামইন উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মো. জজ মিয়ার (বর্তমানে প্রয়াত) দান করা এক একর জমিতে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল শ্যামপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসাটি। তা ২০১০ সালে এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানের আয়-দায় নিয়ে সুপারিন্টেন্ডেন্ট হাদিসে মোহাদ্দেস হযরত মাওলানা মো. আমিনুল হকের সঙ্গে সভাপতি মো. জজ মিয়ার বিরোধের সৃষ্টি হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বিরোধের সমাধান না করে প্রতিষ্ঠানপ্রধান ২০১১ সালে জানুয়ারি মাসে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ফলে মাদ্রাসাটি অস্তিত্বের সংকটে পড়ায় সমাজ ও রাষ্ট্রের অপূরণীয় ক্ষতি করে আসলেও জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে থাকতে সক্ষম হচ্ছেন।

সচেতন নাগরিক সমাজও বিষয়টি নিয়ে কম উদ্বিগ্ন নয়। বিনিয়োগ বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. এনায়েতুর রহমান তাঁর ফেসবুক এক প্রতিক্রিয়ায় লেখেন, ‘ধলাই, বগাদিয়া ও শ্যামপুর — এই তিনটি গ্রাম আমার জন্মের পর থেকেই জেনে আসছি একটি পরিবারের মতই। এই জনপদের মানুষের মধ্যে সর্বদাই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য লক্ষ্য করেছি। আজ কোন্ রাজনীতির দাপটে একটি এমপিওভুক্ত দাখিল মাদ্রাসার এই করুণ দশা? এই তিন গ্রামে সুবোধ মানুষের কি বড়ই অভাব দেখা দিয়েছে?’

প্রকৌশলী এনায়েতুর রহমান আরো লেখেন,  ‘… মাদ্রাসার সুপার এই প্রতিষ্ঠানের বেতনভুক্ত কর্মচারি ও শিক্ষক মাত্র। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই ব্যক্তি মালিকানায় হয় না। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি ও শিক্ষা অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি ব্যতিত সুপার মাদ্রাসা স্থানান্তর করেন কী করে?’

সচেতন নাগরিক সমাজ বলছেন, ‘মাদ্রাসাটি যথাস্থানে (শ্যামপুর গ্রামে) চলে গেলে নাকি শিক্ষক-স্টাফদের চাকরিও সেসাথে চলে যাবে’ — এমনি সস্তা আবেগ কাঁড়তে লিপ্ত একটি শক্তিশালী চক্র। যে কারণে মাদ্রাসার অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্টাফদের সিংহভাগই বড় হুজুরের বলিরপাঁঠা ও জিম্মি থাকার বিষয়টি আপাতত মাটিচাপা।

শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা গোপদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আজিজুল হক বলেন, এতদিন পরের ধন নিয়ে পোদ্দারি চলছিল। এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সুযোগ্য উত্তরসূরী আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতা মাননীয় এমপি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক সাহেবের বিবেকী ও আন্তরিক হস্তক্ষেপে মায়ের ধন বুকে ফেরত পেতে যাচ্ছি।

চেয়ারম্যান আজিজুল হক জানান, গত দু’বছর আগে উপজেলা পরিষদ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া ছিল মাদ্রাসার প্রতিরক্ষা দেয়ালের জন্য। কিন্তু
স্থায়ী চত্বরে মাদ্রাসার অবস্থান না থাকায় তা করা সম্ভব হলো না, ফেরত চলে যায়।

তিনি আরো জানান, মাদ্রাসার অবকাঠামো বিল্ডিংয়ের জন্য জেলা পরিষদের বরাদ্দকৃত ৯৪ লাখ টাকার কাজও এতদিন একই কারণে ঝুলে ছিল। এখন এমপি সাহেবের হস্তক্ষেপে সয়েলটেস্টের পর টেন্ডারও হয়ে গেছে বলেও জানান।

চেয়ারম্যান আজিজুল হক বলেন, এমপি সাহেব মাদ্রাসার জায়গা পুনরুদ্ধার করে তাঁর দেয়া বরাদ্দের এক লাখ টাকায় মাদ্রাসার স্থায়ী চত্বরে মাটি ভরাট করা হয়েছে এবং ৫০ হাজার ইট দেয়ায় প্রতিরক্ষার ব্যবস্থাও করা ফেলা হয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও উঁনার ছেলে মাননীয় এমপি তৌফিক সাহেবের প্রতি এলাকাবাসী চিরঋণী থাকার কথা আবারও কৃতজ্ঞচিত্তে উল্লেখ করেন তিনি।

রফিকুল ইসলাম: সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।