ঢাকা ১২:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনায় ঘরে ঘরে করোনার সংক্রমণ তবু সচেতন নয় মানুষ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১
  • ১৭০ বার

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খুলনায় ঘরে ঘরে করোনার সংক্রমণ। সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসনের নজীরবিহীন কঠোর তৎপরতার মধ্যে লকডাউন চললেও সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব একটা সচেতনতা নেই। এর মধ্যে নানা অব্যবস্থাপনার কারণে খুলনা করোনা হাসপাতাল থেকেই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত ১১ দিনে খুলনা বিভাগে করোনায় ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা জেলায় মারা গেছে ৩৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে ৯১৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু খুলনা জেলারই ২৬০ জন রয়েছেন।

১৩০ শয্যার খুলনা করোনা হাসপাতাল ঘুরে রোগী, তাদের স্বজন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে করোনা পজিটিভ রোগীর চিকিত্সার জন্য রয়েছে নির্ধারিত রেড জোন। তবে ইয়েলো জোনে পজিটিভ রোগী ভর্তি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তার পরও দেখা গেছে, গত চার দিন ধরে ইয়েলো জোনে রয়েছে করোনা পজিটিভ রোগী।

এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার রোগী মাত্র ভর্তি হয়েছে। এসে শুনি পাশের বেডে করোনা পজিটিভ রোগী। এতে আমার বাবা যদি আক্রান্ত নাও হয়ে থাকেন তাহলে এখন করোনা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

করোনা রোগীদের বিভিন্ন টেস্টের জন্য প্যাথলজি বিভাগ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় আলাদা করা হয়েছে। গত ২ জুন থেকে এখানেই রোগীদের সব পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু এখনো বেশির ভাগ রোগী বাইরে থেকে টেস্ট করিয়ে আনছেন। এছাড়া বাইরে থেকে পোর্টেবল এক্সরে মেশিন দিয়ে অনেক রোগীর এক্সরে করানো হচ্ছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করোনা রোগীর জন্য যেসব ওষুধ প্রয়োজন তা মেডিসিন কোম্পানির প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য গাইড লাইন ভেঙে সরাসরি রোগীদের কাছে সরবরাহ করছেন। এছাড়া পজিটিভ রোগীর সঙ্গে যারা আছেন তারা বিভিন্ন কাজে বের হচ্ছেন আবার হাসপাতালে ফিরছেন। এজন্যও সংক্রমণ দ্রুত খুলনা জেলায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেখা গেছে, করোনা হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে ভিজিটিং নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়মকানুন লেখা রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা মেনে চলার কোনো বালাই নেই। রোগীর সঙ্গে যে স্বজনরা থাকছেন, তারা আবার ওষুধ কিনতে যাচ্ছেন দোকানে। খাবার পানি আনতে হচ্ছে বাইরের টিউবওয়েল থেকে। সামাজিক দূরত্ব বা সরকারি নির্দেশনা যেন উপেক্ষিত এ হাসপাতালে।

অন্যদিকে, খুলনায় লকডাউনের মধ্যেও মানুষ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে। রাস্তায় বেরোলে খুব একটা বোঝার উপায় নেই যে লকডাউন চলছে। যদিও মানুষের চলাচল ঠেকাতে মোড়ে মোড়ে বাঁশ বেঁধে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। ইসমাইল নামে একজন বলেন, রাস্তায় দেখতে এসেছি কেমন লকডাউন হচ্ছে। শফিকুল ইসলাম নামে অন্য একজন বলেন, ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে না, তাই একটু রাস্তা থেকে ঘুরে যাচ্ছি।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও খুলনা করোনা হাসপাতালের ফোকালপারসন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন প্রত্যেক রোগীর বিপরীতে ভিজিটিং কার্ড দেওয়া আছে। এ কার্ডের বাইরে কোনো রোগীর স্বজন নেই। বাইরে সাধারণত কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। এর পরও কেউ গিয়ে থাকলে হয়তো রাতে জরুরি প্রয়োজনে হতে পারে। এটা সে সময়কার ডিউটি ডাক্তার বলতে পারবেন কি পরিস্থিতিতে তিনি বাইরে পাঠিয়েছিলেন।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, করোনা হাসপাতালের সামনে মানুষের ঘোরাঘুরি বন্ধে অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশও দায়িত্ব পালন করছে। তার পরও অনেকেই নিয়ম মানতে চায় না। প্রয়োজনে আমরা আরো কঠোর হব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

খুলনায় ঘরে ঘরে করোনার সংক্রমণ তবু সচেতন নয় মানুষ

আপডেট টাইম : ০৯:৫৩:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুন ২০২১

 

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খুলনায় ঘরে ঘরে করোনার সংক্রমণ। সংক্রমণ ঠেকাতে প্রশাসনের নজীরবিহীন কঠোর তৎপরতার মধ্যে লকডাউন চললেও সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব একটা সচেতনতা নেই। এর মধ্যে নানা অব্যবস্থাপনার কারণে খুলনা করোনা হাসপাতাল থেকেই সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত ১১ দিনে খুলনা বিভাগে করোনায় ১৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা জেলায় মারা গেছে ৩৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে ৯১৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু খুলনা জেলারই ২৬০ জন রয়েছেন।

১৩০ শয্যার খুলনা করোনা হাসপাতাল ঘুরে রোগী, তাদের স্বজন, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হাসপাতালে করোনা পজিটিভ রোগীর চিকিত্সার জন্য রয়েছে নির্ধারিত রেড জোন। তবে ইয়েলো জোনে পজিটিভ রোগী ভর্তি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তার পরও দেখা গেছে, গত চার দিন ধরে ইয়েলো জোনে রয়েছে করোনা পজিটিভ রোগী।

এক রোগীর স্বজন বলেন, আমার রোগী মাত্র ভর্তি হয়েছে। এসে শুনি পাশের বেডে করোনা পজিটিভ রোগী। এতে আমার বাবা যদি আক্রান্ত নাও হয়ে থাকেন তাহলে এখন করোনা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

করোনা রোগীদের বিভিন্ন টেস্টের জন্য প্যাথলজি বিভাগ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় আলাদা করা হয়েছে। গত ২ জুন থেকে এখানেই রোগীদের সব পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু এখনো বেশির ভাগ রোগী বাইরে থেকে টেস্ট করিয়ে আনছেন। এছাড়া বাইরে থেকে পোর্টেবল এক্সরে মেশিন দিয়ে অনেক রোগীর এক্সরে করানো হচ্ছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, করোনা রোগীর জন্য যেসব ওষুধ প্রয়োজন তা মেডিসিন কোম্পানির প্রতিনিধিরা স্বাস্থ্য গাইড লাইন ভেঙে সরাসরি রোগীদের কাছে সরবরাহ করছেন। এছাড়া পজিটিভ রোগীর সঙ্গে যারা আছেন তারা বিভিন্ন কাজে বের হচ্ছেন আবার হাসপাতালে ফিরছেন। এজন্যও সংক্রমণ দ্রুত খুলনা জেলায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেখা গেছে, করোনা হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে ভিজিটিং নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়মকানুন লেখা রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তা মেনে চলার কোনো বালাই নেই। রোগীর সঙ্গে যে স্বজনরা থাকছেন, তারা আবার ওষুধ কিনতে যাচ্ছেন দোকানে। খাবার পানি আনতে হচ্ছে বাইরের টিউবওয়েল থেকে। সামাজিক দূরত্ব বা সরকারি নির্দেশনা যেন উপেক্ষিত এ হাসপাতালে।

অন্যদিকে, খুলনায় লকডাউনের মধ্যেও মানুষ প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছে। রাস্তায় বেরোলে খুব একটা বোঝার উপায় নেই যে লকডাউন চলছে। যদিও মানুষের চলাচল ঠেকাতে মোড়ে মোড়ে বাঁশ বেঁধে ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে। ইসমাইল নামে একজন বলেন, রাস্তায় দেখতে এসেছি কেমন লকডাউন হচ্ছে। শফিকুল ইসলাম নামে অন্য একজন বলেন, ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে না, তাই একটু রাস্তা থেকে ঘুরে যাচ্ছি।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ও খুলনা করোনা হাসপাতালের ফোকালপারসন ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন প্রত্যেক রোগীর বিপরীতে ভিজিটিং কার্ড দেওয়া আছে। এ কার্ডের বাইরে কোনো রোগীর স্বজন নেই। বাইরে সাধারণত কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয় না। এর পরও কেউ গিয়ে থাকলে হয়তো রাতে জরুরি প্রয়োজনে হতে পারে। এটা সে সময়কার ডিউটি ডাক্তার বলতে পারবেন কি পরিস্থিতিতে তিনি বাইরে পাঠিয়েছিলেন।

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, করোনা হাসপাতালের সামনে মানুষের ঘোরাঘুরি বন্ধে অনেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশও দায়িত্ব পালন করছে। তার পরও অনেকেই নিয়ম মানতে চায় না। প্রয়োজনে আমরা আরো কঠোর হব।