বিদেশ ভ্রমণে পাসপোর্ট ঠিক কি পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোঝা যায় ভিসার আবেদন করলে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে আমেরিকার ভিসার জন্য আবেদন করলে দেশের গুরুত্বটা প্রকট হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট নিয়ে কেউ যদি বাংলাদেশ কিংবা পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশের ভিসার জন্য আবেদন করে তখন পাসপোর্টের মূল্যই সবচেয়ে বেশি। তার মানে কি যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট বিশ্বের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পাসপোর্ট?
মজার বিষয় হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট কিন্তু সবচেয়ে উৎকৃষ্ট পাসপোর্ট নয়। এক্ষেত্রে জার্মান পাসপোর্ট এগিয়ে আছে সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দেশে ভ্রমণ করা সম্ভব জার্মান পাসপোর্ট দিয়ে।
২০১৬ সালের ভিসা রেস্ট্রিকশান ইনডেক্সের মতে, একটা জার্মান পাসপোর্ট থাকলে ভ্রমণকারীরা বিশ্বের ২১৮টি (ভিসা এবং ভিসা মুক্ত সীমানা) দেশের মধ্যে ১৭৭টি দেশে প্রবেশ করতে পারবেন।
উৎকৃষ্ট এবং নিকৃষ্ট পাসপোর্টের এই তালিকাটি লন্ডন ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান হেনলে এন্ড পার্টনারস এবং আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণ সমিতি সম্মিলিত উদ্যোগে ২০০৬ সাল থেকে জমানো তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করেছে। কোন দেশের জনগণ সবচেয়ে কম প্রতিবন্ধকতায় বিশ্ব ভ্রমণ করতে পারে তার উপরেই
এই তালিকা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো এই তালিকায় এগিয়ে থাকে। কিন্তু এই বছর ঘটেছে ব্যতিক্রম। যেমন, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ছিল শীর্ষে। এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান চার নম্বরে নেমে এসেছে।
প্রথম অবস্থানে রয়েছে জার্মানি। জার্মানির পরেই রয়েছে সুইডেন। সুইডেনের পাসপোর্ট থাকলে ১৭৬ টি দেশে ভিসা মুক্ত প্রবেশাধিকার পাওয়া যাবে। ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন এবং যুক্তরাজ্যসহ আরও অনেক দেশ যারা ২০১৩ সাল থেকে তালিকায় প্রথম অবস্থায় ছিল, তারা এখন একত্রে রয়েছে ৩য় অবস্থানে। ফলে উত্তর এবং পশ্চিম ইউরোপের নাগরিকরা আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন সবচেয়ে সুবিধাভোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১৪ ও ২০১৫ সালে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া ছিল ৩য় সারিতে। কিন্তু এখন তাদের অবস্থান পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থানে। বেলজিয়াম, ডেনমার্ক এবং নেদারল্যান্ড এখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চতুর্থ সারিতে রয়েছে।
এই তালিকার একেবারে শেষে যে সমস্ত দেশের নাম রয়েছে, তারা হচ্ছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাসপোর্টের দলে। যেমন, আফগানিস্তান রয়েছে ১০৪ নম্বরে। তার পরেই পাকিস্তান, ইরাক, সোমালিয়া, এবং সিরিয়া।
গত ১১ বছরের তথ্য একত্রে থাকার ফলে, হেনলে এন্ড পার্টনার্সের ওয়েব সাইটে গেলে ব্যবহারকারীরা একসাথে অনেকগুলো দেশের মধ্যে ভিসা আইন নিয়ে তুলনা করতে পারবেন। হেনলে এন্ড পার্টনার্স হচ্ছে অভিবাসন এবং নাগরিকত্ব বিষয়ক পরামর্শদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান। তারা বলেছে, ‘ভিসা দেয়া না দেয়া খুব শক্তভাবে নির্ভর করে এক দেশের সাথে অন্য দেশের সম্পর্ক কি রকম তার উপর।’
হেনলে এন্ড পার্টনার্সের একজন প্রতিনিধি সংবাদ মাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ‘একটি দেশ যখন অন্য একটি দেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদান করে তার সাথে দেশটির কূটনৈতিক সম্পর্ক, নিরাপত্তা এবং ভিসার মেয়াদের ঝুঁকি জড়িত থাকে।’
দীর্ঘদিনের তথ্য পর্যবেক্ষণ করে কোম্পানিটি বলেছে, ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে ভ্রমণের স্বাধীনতা সারা বিশ্বেই বাড়ছে। ইস্ট টীমর নামের একটি দেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল ১৯৯৯ সালে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একটি যৌথ ভিসা ওয়েভার চুক্তিতে সই করে ২০১৫ সালে। এবার তারা ৩৩ ধাপ এগিয়ে অবস্থা নিয়েছে ৫৭ নম্বরে। এদিকে, কলোম্বিয়াও পঞ্চাশতম অবস্থান থেকে এগিয়ে এসেছে পঁচিশতম অবস্থানে।
হংকং আবার ষোলতম স্থান থেকে বিশে চলে গেছে। চীনের অবস্থান কম্বোডিয়ার সাথে ৮৭ নম্বরে।-বাংলামেল