ঢাকা ১১:৫২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমার অস্থিরতা স্ত্রী টের পেলেও কিছু জিজ্ঞেস করতো না : জেনারেল মইন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৬:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০১৬
  • ২৪৭ বার

(ওয়ান ইলেভেনের প্রধান রূপকার তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ। ‘শান্তির স্বপ্নে সময়ের স্মৃতিচারণ’ গ্রন্থে জেনারেল মইন বর্ণনা করেছেন ওয়ান ইলেভেনের বিস্তারিত। ওই বইয়ের কিছু অংশ প্রকাশিত হলো)

দিনে দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন চূড়ান্ত সংঘর্ষের দিকে মোড় নিচ্ছিল। ৭-৯ জানুয়ারি সারা দেশে অবরোধ পালিত হলো। ভাঙচুর, বিক্ষোভ, মিছিল আর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে পুরো দেশ অচল হয়ে পড়লো। মহাজোট ঘোষণা করলো, সরকার যদি নির্বাচনী কর্মকাণ্ড নিয়ে এগিয়ে যায় তাহলে ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে অবরোধ ও বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হবে।

২১ ও ২২ জানুয়ারি দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল। তাতেও কাজ না হলে এরপর থেকে শুরু হবে লাগাতার কর্মসূচি। মহাজোটের এরকম কঠোর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সরকার তার অবস্থানে অনড় থাকলো। সংবিধানে উল্লিখিত নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা অবলম্বন করে চারদলীয় জোটও নির্বাচনের পক্ষে অনড় থাকলো। ত্রিমুখী এই অনড় অবস্থানের মধ্যে সমাধান খুঁজে পেতে সাধারণ মানুষের অলৌকিক কিছু কামনা ব্যতীত আর কিছুই করার থাকলো না।

অস্থির এ সময় আমার মনের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছিল। টেলিভিশনের পর্দায় বিক্ষোভ আর ভাঙচুরের ছবি দেখে আমার মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছিল কার বিরুদ্ধে আমাদের এ ক্ষোভ? রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পদ ধ্বংস করে কার লাভ? অবরোধের মধ্যে ভাঙচুরের শিকার ট্যাক্সিক্যাবের ভেতর আতঙ্কিত যাত্রীর কোলে ছোট্ট শিশুর আর্তনাদ দেখে আমার মনে হয়েছিল এ শিশুটির কী অপরাধ?

এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর ছিল না আমার কাছে। আর উত্তর ছিল না বলেই গভীর রাত পর্যন্ত বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে নির্ঘুম যন্ত্রণাময় সময় কাটিয়েছি, আর কায়মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি যথাযথ দিক-নির্দেশনার জন্য।

সেনাবাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় দিন দিন দেশের মানুষের হতাশা আরো বাড়ছিল। তাদের অসহায় আক্ষেপ, সেনাবাহিনী কেন চুপ করে আছে? দেশের প্রতি কি তাদের কোনো দায়িত্ব নেই? আমাদের

এ দুঃসময়ে তারা কি আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে না? পত্রিকার পাতা ও টেলিভিশনের টকশোগুলোতে সাধারণ মানুষের এরকম হাজারো আর্তি আমাকে স্পর্শ করলেও আমি ভেবেছি আমাদের কী করার আছে?

রাষ্ট্রের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কী করতে পারি? কিন্তু কিছু করার জন্য আমার উপর চাপ বাড়ছিল। এমনকি আমি সেনাবাহিনীর ভেতরও একধরনের হতাশা লক্ষ্য করি। সেনাবাহিনী এ দেশের সাধারণ মানুষেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই সাধারণ মানুষের হতাশা, আশা-নিরাশা সেনাসদস্যদের ভেতরও সংক্রমিত হবে এটাই স্বাভাবিক। তবুও সর্বান্তকরণে আমি চেয়েছি রাজনীতিবিদরাই এ সমস্যার সমাধান করুক।

এক সময় ক্ষমতাধর কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি আমার সাথে দেখা করে জানালো, সবদলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী সহায়তা করলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহারের জন্য তারা জাতিসংঘকে অনুরোধ করবেন।

প্রচ্ছন্ন এ হুমকির অবশ্যম্ভাবী পরিণতি অনুধাবন করতে আমার অসুবিধা হলো না। জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রক এসব দেশের অনুরোধ ও মতামত যে জাতিসংঘ অগ্রাহ্য করতে পারবে না তা বলাই বাহুল্য। আমি এর পরিণাম চিন্তা করে শিউরে উঠলাম। আমার ১৯৭৫-এর ৬ ও ৭ নভেম্বরের কথা মনে পড়লো, যখন সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভেঙে সিপাহিরা অস্ত্রহাতে রাস্তায় নেমে এসেছিল, সেদিন কোনো চেইন অব কমান্ড কাজ করেনি।

সেনাবাহিনীর সীমিত আয়ের চাকরিতে সৈনিকদের একমাত্র অবলম্বন জাতিসংঘ মিশন। তাদের সামনে থেকে যদি সেই সুযোগ কেড়ে নেয়া হয় তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। সেই সাথে শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের এতোদিনের সুনামও ভূলুণ্ঠিত হবে। তারপরেও আমার একমাত্র চেষ্টা ছিল কী করে সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখা যায়।

এ সময়কার রাতগুলো ছিল আমার জন্য খুবই কষ্টের। দিনগুলো কেটে যেত কর্মব্যস্ততায়। কিন্তু রাত হলেই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো ভাঙচুর, ধ্বংসলীলা আর অসহায় মানুষের আর্তনাদের দৃশ্য। সারারাত ভেবে ভেবে ক্লান্ত হতাম, কী করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়? কিন্তু দেশের প্রতি আমার প্রেম, গণতন্ত্রের প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং রাষ্ট্রের প্রতি আমার আনুগত্য আমার মনকে শান্ত করতো।

একবার আমার মনে প্রশ্ন জাগলো, দেশকে বাঁচানোর জন্য যদি আমি কিছু করি তবে কি তা ম্যাডাম জিয়ার বিরুদ্ধে যাবে? তাহলে কি তা বিশ্বাস ভঙ্গের সামিল হবে না? তিনিই তো সেনাপ্রধান হিসেবে আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন। সাথে সাথে আমি আবার নিজের মধ্যেই উত্তর পেলাম, দেশ যেখানে ধ্বংসের মুখোমুখি সেখানে অন্য সবকিছুই গৌণ। দেশ থেকে বড় আর কিছুই হতে পারে না।

তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশের হয়ে সেনাবাহিনী প্রধানের উপর আস্থা রেখেছিলেন। সেই আস্থার অমর্যাদা আমি করছি না। বরং যদি কিছু করি তবে তা দেশের জন্যই করবো, সেখানে বিশ্বাস ভঙ্গের প্রশ্ন নেই। আমার কাছে প্রথমে দেশ তারপর অন্যকিছু। সেই সময় কিছু করার চেষ্টা করা মনে নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়া। তাই আমার মাঝে আরেকটি প্রশ্নের উদয় হলো, এই কারণে জীবনের ঝুঁকি নেয়া কি যুক্তিযুক্ত?

আবার উত্তর পেলাম, জন্মেছি যখন তখন কোনো একদিন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেই হবে। তবে সে মৃত্যু যদি দেশের জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য হয় তবে তারচেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না। নিজের মনের সাথে এরকম হাজারো প্রশ্ন আর উত্তরে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। আমার অস্থিরতা আমার স্ত্রী টের পেলেও সে কখনো কিছু জিজ্ঞেস করতো না।

আমিও নিজ থেকে তাকে কিছু বলতাম না। কারো সাথেই মনের এ কষ্ট ভাগ করে নেয়ার সুযোগ ছিল না। তবে ডিভিশন কমান্ডারদের দেশের অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত অবগত করতাম এবং তাদের মতামত শুনতাম। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দ্রুত কিছু করার তাগিদ দিতো।

বিশেষ করে সাভার ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী দেশের অবস্থা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বেগ প্রকাশ করতেন। আমি তাদের বুঝাতাম রাষ্ট্র পরিচালনায় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। -এমজমিন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আমার অস্থিরতা স্ত্রী টের পেলেও কিছু জিজ্ঞেস করতো না : জেনারেল মইন

আপডেট টাইম : ০৯:৫৬:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০১৬

(ওয়ান ইলেভেনের প্রধান রূপকার তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ। ‘শান্তির স্বপ্নে সময়ের স্মৃতিচারণ’ গ্রন্থে জেনারেল মইন বর্ণনা করেছেন ওয়ান ইলেভেনের বিস্তারিত। ওই বইয়ের কিছু অংশ প্রকাশিত হলো)

দিনে দিনে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তখন চূড়ান্ত সংঘর্ষের দিকে মোড় নিচ্ছিল। ৭-৯ জানুয়ারি সারা দেশে অবরোধ পালিত হলো। ভাঙচুর, বিক্ষোভ, মিছিল আর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে পুরো দেশ অচল হয়ে পড়লো। মহাজোট ঘোষণা করলো, সরকার যদি নির্বাচনী কর্মকাণ্ড নিয়ে এগিয়ে যায় তাহলে ১৪ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশে অবরোধ ও বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হবে।

২১ ও ২২ জানুয়ারি দেশব্যাপী সর্বাত্মক হরতাল। তাতেও কাজ না হলে এরপর থেকে শুরু হবে লাগাতার কর্মসূচি। মহাজোটের এরকম কঠোর হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সরকার তার অবস্থানে অনড় থাকলো। সংবিধানে উল্লিখিত নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা অবলম্বন করে চারদলীয় জোটও নির্বাচনের পক্ষে অনড় থাকলো। ত্রিমুখী এই অনড় অবস্থানের মধ্যে সমাধান খুঁজে পেতে সাধারণ মানুষের অলৌকিক কিছু কামনা ব্যতীত আর কিছুই করার থাকলো না।

অস্থির এ সময় আমার মনের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছিল। টেলিভিশনের পর্দায় বিক্ষোভ আর ভাঙচুরের ছবি দেখে আমার মনে প্রশ্নের উদয় হয়েছিল কার বিরুদ্ধে আমাদের এ ক্ষোভ? রাষ্ট্রের মূল্যবান সম্পদ ধ্বংস করে কার লাভ? অবরোধের মধ্যে ভাঙচুরের শিকার ট্যাক্সিক্যাবের ভেতর আতঙ্কিত যাত্রীর কোলে ছোট্ট শিশুর আর্তনাদ দেখে আমার মনে হয়েছিল এ শিশুটির কী অপরাধ?

এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর ছিল না আমার কাছে। আর উত্তর ছিল না বলেই গভীর রাত পর্যন্ত বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে নির্ঘুম যন্ত্রণাময় সময় কাটিয়েছি, আর কায়মনে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি যথাযথ দিক-নির্দেশনার জন্য।

সেনাবাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় দিন দিন দেশের মানুষের হতাশা আরো বাড়ছিল। তাদের অসহায় আক্ষেপ, সেনাবাহিনী কেন চুপ করে আছে? দেশের প্রতি কি তাদের কোনো দায়িত্ব নেই? আমাদের

এ দুঃসময়ে তারা কি আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে না? পত্রিকার পাতা ও টেলিভিশনের টকশোগুলোতে সাধারণ মানুষের এরকম হাজারো আর্তি আমাকে স্পর্শ করলেও আমি ভেবেছি আমাদের কী করার আছে?

রাষ্ট্রের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কী করতে পারি? কিন্তু কিছু করার জন্য আমার উপর চাপ বাড়ছিল। এমনকি আমি সেনাবাহিনীর ভেতরও একধরনের হতাশা লক্ষ্য করি। সেনাবাহিনী এ দেশের সাধারণ মানুষেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই সাধারণ মানুষের হতাশা, আশা-নিরাশা সেনাসদস্যদের ভেতরও সংক্রমিত হবে এটাই স্বাভাবিক। তবুও সর্বান্তকরণে আমি চেয়েছি রাজনীতিবিদরাই এ সমস্যার সমাধান করুক।

এক সময় ক্ষমতাধর কয়েকটি দেশের প্রতিনিধি আমার সাথে দেখা করে জানালো, সবদলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী সহায়তা করলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহারের জন্য তারা জাতিসংঘকে অনুরোধ করবেন।

প্রচ্ছন্ন এ হুমকির অবশ্যম্ভাবী পরিণতি অনুধাবন করতে আমার অসুবিধা হলো না। জাতিসংঘের কর্মকাণ্ডের নিয়ন্ত্রক এসব দেশের অনুরোধ ও মতামত যে জাতিসংঘ অগ্রাহ্য করতে পারবে না তা বলাই বাহুল্য। আমি এর পরিণাম চিন্তা করে শিউরে উঠলাম। আমার ১৯৭৫-এর ৬ ও ৭ নভেম্বরের কথা মনে পড়লো, যখন সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলা ভেঙে সিপাহিরা অস্ত্রহাতে রাস্তায় নেমে এসেছিল, সেদিন কোনো চেইন অব কমান্ড কাজ করেনি।

সেনাবাহিনীর সীমিত আয়ের চাকরিতে সৈনিকদের একমাত্র অবলম্বন জাতিসংঘ মিশন। তাদের সামনে থেকে যদি সেই সুযোগ কেড়ে নেয়া হয় তাহলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হয়ে পড়বে। সেই সাথে শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের এতোদিনের সুনামও ভূলুণ্ঠিত হবে। তারপরেও আমার একমাত্র চেষ্টা ছিল কী করে সেনাবাহিনীকে রাষ্ট্রযন্ত্রের কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখা যায়।

এ সময়কার রাতগুলো ছিল আমার জন্য খুবই কষ্টের। দিনগুলো কেটে যেত কর্মব্যস্ততায়। কিন্তু রাত হলেই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতো ভাঙচুর, ধ্বংসলীলা আর অসহায় মানুষের আর্তনাদের দৃশ্য। সারারাত ভেবে ভেবে ক্লান্ত হতাম, কী করে দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়? কিন্তু দেশের প্রতি আমার প্রেম, গণতন্ত্রের প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং রাষ্ট্রের প্রতি আমার আনুগত্য আমার মনকে শান্ত করতো।

একবার আমার মনে প্রশ্ন জাগলো, দেশকে বাঁচানোর জন্য যদি আমি কিছু করি তবে কি তা ম্যাডাম জিয়ার বিরুদ্ধে যাবে? তাহলে কি তা বিশ্বাস ভঙ্গের সামিল হবে না? তিনিই তো সেনাপ্রধান হিসেবে আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন। সাথে সাথে আমি আবার নিজের মধ্যেই উত্তর পেলাম, দেশ যেখানে ধ্বংসের মুখোমুখি সেখানে অন্য সবকিছুই গৌণ। দেশ থেকে বড় আর কিছুই হতে পারে না।

তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশের হয়ে সেনাবাহিনী প্রধানের উপর আস্থা রেখেছিলেন। সেই আস্থার অমর্যাদা আমি করছি না। বরং যদি কিছু করি তবে তা দেশের জন্যই করবো, সেখানে বিশ্বাস ভঙ্গের প্রশ্ন নেই। আমার কাছে প্রথমে দেশ তারপর অন্যকিছু। সেই সময় কিছু করার চেষ্টা করা মনে নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়া। তাই আমার মাঝে আরেকটি প্রশ্নের উদয় হলো, এই কারণে জীবনের ঝুঁকি নেয়া কি যুক্তিযুক্ত?

আবার উত্তর পেলাম, জন্মেছি যখন তখন কোনো একদিন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেই হবে। তবে সে মৃত্যু যদি দেশের জন্য, দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য হয় তবে তারচেয়ে বড় আর কিছু হতে পারে না। নিজের মনের সাথে এরকম হাজারো প্রশ্ন আর উত্তরে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি। আমার অস্থিরতা আমার স্ত্রী টের পেলেও সে কখনো কিছু জিজ্ঞেস করতো না।

আমিও নিজ থেকে তাকে কিছু বলতাম না। কারো সাথেই মনের এ কষ্ট ভাগ করে নেয়ার সুযোগ ছিল না। তবে ডিভিশন কমান্ডারদের দেশের অবস্থা সম্পর্কে নিয়মিত অবগত করতাম এবং তাদের মতামত শুনতাম। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দ্রুত কিছু করার তাগিদ দিতো।

বিশেষ করে সাভার ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী দেশের অবস্থা এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খুবই উদ্বেগ প্রকাশ করতেন। আমি তাদের বুঝাতাম রাষ্ট্র পরিচালনায় সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। -এমজমিন